অখিলেস সান্নালের সিঁদুরের কৌটাে

ভয় (সেপ্টেম্বর ২০২২)

জোনাকি জাহান বেলা
  • 0
  • ৫৪
সাত বছর চুটিয়ে প্রেম করেছি আমরা-
রাস্তার পাশের বিভিন্ন টঙ্গের দোকানে বসে কত চা খাওয়া দুজনের।
তুমি মাঝে মাঝে আমাকে রাগানোর সুযোগ খুঁজতে,
সিগারেট ধরতে ঠোঁটে;
আমিও কি ছেড়ে দেবার পাত্রী নাকি,আমিও যেতাম রেগে।
তুমি একগাল হেঁসে বলতে রাগলে তোমায় নির্ঘাত দেবী লাগে নীলু ;
আহ্লাদে তখন তোমার ঠোঁটের সিগারেটটা ফেলে দিয়ে আশ্রয় খুঁজতাম তোমার বুকে।
দু'জনের কলেজ ফাঁকি দিয়ে কত সমুদ্র বিলাস হতো আমাদের।
তোমার এখনও সমুদ্র ভালো লাগে অখিলেস?
তুমি এখনও সমুদ্র বিলাস করো?
তখন মাঝ রাতে নিয়ম করে আমার বাটন ফোনটায় ছোট্ট করে একটা এসএমএস আসতো!
নীলু ছাঁদে এসো আজ দুজনে একসাথে চাঁদ দেখবো।
তোমার কথামতো আমি মাঝরাতে ছাঁদেও আসতাম আর আকাশের দিকে তাকিয়ে চাঁদ ও দেখতাম আর তুমি তাকিয়ে থাকতে আমার দিকে।
বহুদিন হয়ে গেলো ছাঁদটার নিচে রাস্তার ধারের হলুদ সোডিয়াম বাতিটার নিচে এসে দাড়াও না আর তুমি।
তবে আমি কিন্তু এখনও নিয়ম করেই মাঝরাত্রে ছাঁদে আসি।
এখন আর চাঁদটার দিকে তাকিয়ে থাকি না আমি ;
একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকি সেই জায়গাটায় যেখানে রাত্রি দ্বিপ্রহরে এসে দাড়াতে তুমি।
কত মানুষই তো যায় দেখি এ রাস্তায়,
আর আমি দাঁড়িয়ে থাকি দুইতলা ভবনের ছাঁদটায়;
কই তুমি তো এ পথে আসো না অখিলেস?
চাতকের মতো চেয়ে থাকি একটিবার তোমার দেখা পাবো বলে;
সেই যে রাত্রি তিনটেই ভিজতে ভিজতে গেলে, আর তো ফিরে এলে না?
তাহলে কি ধরে নিবো ভুলে গেছো তুমি তোমার নীলু কে!
ভালবেসে নামটা দিয়েছিলে তুমি আমায়,বলেছিলে নীলাম্বরী নয়,নীলু ডাকবো তোমায়।
কতদিন কেউ এসে বলে না নীলু, আমি একসাথে দু'টো চাঁদ দেখতে পাচ্ছি;
তোমার মনে পড়ে অখিলেস,
বৃষ্টিভেজা দিনগুলোতে আমরা কতবার একসাথে ভিজেছি দুজনে ওই বেইলিরোডটাতে;
ছারখার করা দুপুরে একই ছাতার নিচে হেটে বাড়ি ফিরেছি কতদিন;
শীতের দিনে কলেজ যাবার পথে,
তুমি রাস্তার ধারে আগুন জ্বালানো দেখলেই বসে পড়তে তাপ পোহাতে;
আমি ঠায় দাড়িয়ে থাকতাম দুরের কোনো অশ্বত্থ গাছের নিচে;
তুমি তাপমাখা হাতটা এনে আমার মুখে গলায় ছুঁয়ে দিয়ে বলতে আর শীত করবে না আমার নীলুর;
আমিও সেই ছোঁয়া পাওয়ার লোভে বারবার দাড়াতাম এসে অশ্বত্থ গাছটার নিচে।
তোমার মনে আছে তো-অখিলেস-
গঙ্গার ধারে জ্বলে পা ডুবিয়ে রাখতাম আমি,প্রচন্ড বাতাস বয়ে গেলে আমার কাছে এসে মুখের উপরে থাকা চুলগুলো সরিয়ে দিতে তুমি;
তখন প্রচন্ড আবেগে তোমার কাঁধে মাথা রাখতাম আমি
এসব কথা তোমার মনে পড়ে অখিলেস?
কত মায়া,কত ভালবাসা,কত স্মৃতি সেদিন এক মূহুর্তেই সব জীবন থেকে হারিয়ে গেল কত সহজেই।
হঠাৎই আজ কোলাহল মুখর বন্দরে তোমার সাথে দেখা হলো আমার।
মাথাভরা সেই কোকড়ানো চুল,নেশায় আসক্ত করা সেই নীলচে দু'টো চোখ সব একই আছে।
শুধু চোখেমুখে আমাদের যে বয়স বেড়ে চলেছে তার ছাপ টা বসতে শুরু করেছে;
আমার সাথে সাথে দেখছি তোমারও বয়সটা বেড়েছে অখিলেস;
তোমার ঠিক বাম পাশেই একজনকে দেখলাম,মাথাভর্তি লাল রাঙ্গা সিঁদুর, পরনে লাল পেড়ে সাদা শাড়ি,বয়সের ভারে তোমার হাতে বৃদ্ধার হাত।
তোমার অর্ধাঙ্গিনী বুঝি?
কেন জানি না মনে হলো তোমার পাশে মানাচ্ছে না তাকে,সাদা চামড়াততেও বড্ড বেমানান লাগছে তাকে তোমার পাশে।
তুমি আমায় বলেছিলে অখিলেস;
শেষ বয়সে তুমি বুড়ি হলে আমি তোমার লাঠি হবো নীলু
হাতে হাত রেখে চলবো দুজনে;
তুমি তোমার কথা রেখেছো অখিলেস,শুধু নীলুর জায়গা টায় আজ অন্য কেউ দাড়িয়ে আছে।
তার নাকে যে সিঁদুর লেপ্টে পড়েছিল,তা আমি তোমাকে দেখেই বুঝেছি অখিলেস!
অথচ দেখো নিয়তির কি নির্মম পরিহাস,আমার সিঁথি টা আজও ফাকাই রয়ে গেলো।
আজ সাইত্রিশ বছর পরে তোমার সাথে আমার দেখা।
তোমার বাম পাশের মানুষটির রক্তলাল রাঙ্গানো সিঁথি দেখে কেন জানি বুক ফেটে কান্না এলো আমার।
নিজের অজান্তেই মাথায় হাত চলে গেলো, সিঁথিতে হাত ঠেকিয়ে চোখের সামনে এনে দেখি আজ বিচ্ছেদ এর সাইত্রিশ বছর পরেও আমার সিঁথি টা এখনও ফাকাই রয়ে গেছে।
সেদিন আমিও বিয়ের সাজেই সেজেছিলাম।
তোমার পছন্দ করে দেওয়া তোমার প্রিয় রঙ্গের লাল খয়েরী শাড়ি টাও পড়েছিলাম।
খোঁপায় গোঁজা ছিলো তোমার দেওয়া শিউলি ফুলের মালা টা;
আর হাতে ছিলো তোমার দেওয়া তোমাদের পারিবারিক সিঁদুর কৌটা টা।
সিঁথি রাঙ্গানোর একবুক বিশ্বাসের জোড়ে হেঁসেছিলাম সেদিন খুব;
তুমিও এসেছিলে, শুভদৃষ্টি ও হয়েছিলো শুধু হলো না মালাবদল আর সিঁদুরদান।
হাত পেতে সিঁদুর কৌটা টা চেয়ে বললে নীলাম্বরী আমার থেকে হাজার গুন ভালো ছেলে তুমি পাবে।
সেই প্রথম নীলু থেকে নীলাম্বরী ডেকেছিলে তুমি আমায় অখিলেস
মূহুর্তেই কত সহজ ভাবেই সেদিন তুমি তোমার নীলুর চিতা জ্বালিয়েছিলে অখিলেস?
আমিও আর কথা বাড়ায়নি সেদিন, মৃদু হেঁসে সিঁদুর কৌটা টা তুলে দিয়েছিলাম তোমার হাতে।
তুমি সেদিন আর একবারও পিছন ফিরে তাকালে না অখিলেস!
অথচ আমি মন্দিরের শেষ সিঁড়ি পর্যন্ত নেমে এসেছিলাম তোমার আমাকে ছেড়ে চলে যাওয়াতে;
জানো অখিলেস সেদিন কি নিষ্পলক তাকিয়ে ছিলাম চোখের জ্বল আটকে তোমার যাওযার প্রানে;
ভেবেছিলাম পিছন ফিরে তাকিয়ে ছুট্টে এসে জড়িয়ে ধরে বলবে নীলু সিঁথি রাঙ্গাবী না।
একবারও ফিরে তাকালে না অখিলেস
ঊর্ধ্বশ্বাসে এগিয়ে গেলে সামনে দিকে
পাড়া-পড়শির কাছে কম কথা শুনতে হয়নি আমাকে,সিঁথি রাঙ্গাতে পারিনি বলে।
ওই তো সমাজে এখন আমার পরিচয় নীলাম্বরী বা প্রয়াত গাঙ্গুলির মেয়ে নয়,
গলি পেরিয়ে বাড়ি ঢোকার সময়
লগ্নভ্রষ্টা, অপয়া,অলক্ষী,বাপখেকো প্রতিনিয়তই শুনতে হয়।
শেষ পর্যন্ত তোমার দ্বিতীয় চাঁদের গায়েও কলঙ্ক লাগলো অখিলেস ;
তোমার মনে পড়ে অখিলেস কি গভীর আবেগ নিয়ে কাছে ডেকে বলতে নীলু সিঁদুরে তোমার সিঁথি রাঙ্গিয়ে তোমাকে নিয়ে যাবো অখিলেস সান্নালের দক্ষিণমুখী দোতলার ঘরটায় ;;
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
ফয়জুল মহী অসাধারণ আবেগময়
ভালো লাগেনি ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২
doel paki nice.
ভালো লাগেনি ১ সেপ্টেম্বর, ২০২২

২৫ আগষ্ট - ২০২২ গল্প/কবিতা: ২ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪