বিপন্ন প্রহর

ভয় (সেপ্টেম্বর ২০২২)

দেবাশীষ কুন্ডু
  • 0
  • ২৬
মার্চের শেষ সপ্তাহ। চার্চের প্রার্থনার ঘন্টার সুরে যেন বিষণ্নতার ছোঁয়া ।
ফাদার ডেসমন্ড নারো খুবই বিচলিত বোধ করছেন আর ঘন ঘন চোখ মুছছেন।
তার চার্চের এগারটি অনাথ ছেলে মেয়ে আজ সুদূর ইউরোপের পোল্যান্ডে যাচ্ছে এক বছরের জন্য । এই সময়ের মধ্যে যদি পড়াশোনায় ভাল রেজাল্ট করতে পারে তাহলে পুরো বেসিক এডুকেশন পোল্যান্ডের কর্তৃপক্ষ দায়িত্ব নেবেন এই শিশুগুলির ।
মিসেস মারিয়া ওয়াজনিয়াকের গাড়িটি যথাসময়ে চার্চে পৌঁছালো ।
শুভেচ্ছা বিনিময়ের পর শিশুগুলোকে মিসেস ওয়াজনিয়াকের গাড়িতে তুলে দেওয়া হল । ডিমাপুর থেকে সন্ধ্যার ফ্লাইটে কলকাতা আর পরদিন মুম্বাই হয়ে দুবাই ছুঁয়ে ওয়ারশের ফ্লাইট ।
কলকাতা পৌঁছনোর পর শিশুরা কান্নাকাটি করছে দেখে মিসেস মারিয়া তার ফোন থেকে ফাদার নারোর সঙ্গে কথা বলালেন ও শিশুদের আশ্বস্ত করলেন ।

সদর স্ট্রিট অঞ্চলের একটি হোটেলে শিশুদের থাকার ব্যবস্থা হল, রাতটির জন্য সঙ্গে রইলো মারিয়া ওয়াজনিকের বিশ্বাসভাজন ফিলিপ রাজ ।
শিশুগুলি চার্চ এবং তাদের ফাদার কে ছেড়ে আসার কষ্টে খুবই মনমরা হয়ে রয়েছে । ওদের জন্য চিকেন চাওমিন আর বাটার স্কচ আইসক্রিম অর্ডার করলো ফিলিপ রাজ । পরদিন সকালের ফ্লাইটে মুম্বাই পৌছালো সকলে । মুম্বাই থেকে দুবাই এর ফ্লাইট মাঝরাতে তাই বরিভলির একটি বাংলোতে দিনটি কাটাবার ব্যবস্থা হয়েছে ।

মিসেস ওয়াজনিয়াক অবশ্য কলকাতা থেকেই অন্য বিলাসবহুল হোটেলে থাকছেন, মুম্বাই এসেও তার অন্যথা করলেন না । ফিলিপ বাচ্চাগুলোর সঙ্গে ব্রেকফাস্ট করে তারপর নিজস্ব কিছু প্রয়োজনে বেরিয়েছে ।
শিশুগুলোর মধ্যে লংগরি পামে একটু চালাক চতুর ফিলিপ তাকে ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে থাকতে বলল কিন্তু তাদের নিরাপত্তার কথা ভেবে বাইরে থেকে দরজায় চাবি দিয়ে গেল ।
দুপুর ২: ৩০ নাগাদ রাবুডি, থানে এলাকার মাদার ইন্ডিয়া বিল্ডিং এর পিছনের একটি গলিতে বছর পঁয়ত্রিশের একটি যুবকের গুলিবিদ্ধ লাশ পড়ে থাকতে দেখা গেল ।
মুম্বাইয়ে এসব ছোটখাটো ব্যাপারে কেউ মাথা ঘামায় না, পুলিশ এসে পঞ্চনামা করে বডি নিয়ে গেল । পুলিশ ইনভেস্টিগেশনে জানা গেল, বডিটা এক পুরোনো ক্রিমিনালের, মুকেশ চন্দ্রনাথ ধাবে ওরফে ছোটা চান্দু , যদিও তার নামে নতুন কোনো ক্রাইম রেজিস্টার্ড নেই ।

এদিকে ফাদার ডেসমন্ড নারো ডিমাপুর এর এসপির অফিসে বসে আছেন আর উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় ঘনঘন মেন গেটের দিকে তাকাচ্ছেন কখন এস পি প্রতাপ রায় আসবেন । এমন সময় মোবাইলটা বেজে উঠল, এসপি সাহেব ফোন করেছেন, 'এভরিথিং টু ওরি ফাদার, আপনার চার্চের শিশুগুলোর মুম্বাই যাওয়ার পর থেকে আর কোন ট্রেস নেই, ওয়ারশ বা দুবাই গামী
কোন ফ্লাইটে মারিয়া ওয়াজনিয়াক বা আপনার চার্চের কোনো শিশুর নামে কোন ট্রাভেল বুকড নেই, শুধু তাই নয়, পোল্যান্ডের ওই এনজিওর সাথে আমরা যোগাযোগ করে জেনেছি, মারিয়া ওয়াজনিয়াক নামে ওদের সংস্থায় কেউ নেই । মিসেস ওয়াজনিয়াকের যে নম্বর আপনি আমাদের দিয়েছেন সেটি কোনো কম্পিউটার বা এন্ড্রয়েড অ্যাপ থেকে জেনারেট করা নম্বর, যাকে ট্রেস করা সম্ভব নয় ।
ফারদার ইনভেস্টিগেশন চলছে , কিন্তু আপনি আপাতত আমাদের না জানিয়ে ডিমাপুরের বাইরে কোথাও যাবেন না' ।

দুদিন পর সকালে এস পি প্রতাপ রায় ফাদার নারো কে ফোন করে সোজা এয়ারপোর্ট চলে আসতে বললেন । গন্তব্য কলকাতা হয়ে মুম্বাই । মুম্বাই এয়ারপোর্টের সার্ভিলেন্স ক্যামেরায় এগারোটি শিশু সঙ্গে লাল টি-শার্ট পরা একটি যুবককে দেখা গেছে । ফুটেজ চেক করে নিশ্চিত হয়ে মুম্বাই পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে টিভিতে মিসিং শিশুগুলির ফটো বারবার দেখানো হয় । জনৈক সঞ্জয় মহেশ্বরী কনফার্ম করেছেন এই শিশুগুলি কে একটি মেরুন বা চকলেট রঙের ভ্যান থেকে নামতে দেখেছেন তিনদিন আগে ভোরে তার বাংলোর পাশের বাংলোর গেটে ।
ফাদার নারো কে সঙ্গে নিয়ে এস পি প্রতাপ রায় ও মুম্বাই পুলিশের একটি টিম বরিভালির সেই বাংলোতে পৌঁছালো ।
বাংলোর কেয়ারটেকার কিন্তু দাবি করছে তাদের বাংলোয় এরকম কেউ এসেছিল বলে তার জানা নেই। এই বাংলোয় তল্লাশি করেও কিছুই পাওয়া গেল না । বরিভালি থানার ইনচার্জ সদাশিব রানে বললেন, শিশুগুলির সঙ্গে যে যুবকটিকে দেখা গেছে তার সঙ্গে সম্প্রতি মার্ডার হয়ে যাওয়া একজন ক্রিমিনাল এর চেহারার মিল আছে । আপনার বরং একবার থানের মর্গ টা ঘুরে যান ।
নিহত ছোটা চান্দু কে ফাদার নারো মারিয়া ওয়াজনিয়াকের সহকারী ফিলিপ রাজ বলে শনাক্ত করলেন ।

ছোটা চান্দু ওরফে ফিলিপ রাজ যেদিন খুন হয়, সেদিন রাত বারোটা কুড়ি, মুম্বাইয়ের সমুদ্র বন্দর থেকে একটি জাহাজ রওনা হল যাতে কন্টেনারে করে প্রসেসড মাছ ও মাংস পাঠানো হচ্ছে আবুধাবিতে । জাহাজটির একটি বিশেষ কন্টেইনার অন্য একটি জাহাজে তোলা হলো ভারতের জলসীমা ছেড়ে সামান্য এগোতেই ।
অপর জাহাজটি চীনের তাইপেই বন্দর থেকে ভারতের একটি পড়শী দেশে চলেছে ইলেকট্রনিকস যন্ত্রাংশ নিয়ে। মাঝসমুদ্রের জাহাজ বদল হওয়া কন্টেইনারে বিশেষ ভাবে তৈরী লুকানো চেম্বারে ইনজেকশন দিয়ে আচ্ছন্ন করে রাখা হয়েছে ১১ টি শিশুকে , অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা রয়েছে কন্টেইনারে আর আছে থামোস্ট্যাট নিয়ন্ত্রিত তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ রাখার বিশেষ ব্যবস্থা । দ্রুতগামী জাহাজটি পড়শী দেশের নির্দিষ্ট বন্দরে নোঙ্গর করল ভোররাত্রে ।
পড়শী রাষ্ট্রের ইন্টেলিজেন্স নিয়ন্ত্রণাধীন সামরিক হাসপাতালে অপারেশন করে শিশুগুলির ব্রেনে বিশেষভাবে প্রোগ্রাম করা মাইক্রোচিপ ও তলপেটে সিলিকন ক্যাপসুলে মোড়া একটি বিশেষ ভাবে ডিজাইন করা বিস্ফোরক ইমপ্লান্ট করা হলো ।
দীর্ঘ সময় ধরে অচেতন করে রাখা এবং জটিল অপারেশনের ধকল সইতে না পেরে ছয়টি বাচ্চা অপারেশনের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই মারা গেল । যার জন্য এই অপারেশনে যুক্ত ডাক্তারদের অশ্রাব্য গালিগালাজ করল প্রোজেক্টের ইনচার্জ, 'নামাকুল কাহিকা, শালো মেরে উমীদ পর পানি ফেক দিয়া , অব তু ভি জাহান্নাম মে যা ' বলে এলোপাথাড়ি গুলি চালিয়ে ফুঁড়ে দিলো।
নতুন একদল ডাক্তারদের উপর দায়িত্ব দেয়া হলো অবশিষ্ট পাঁচটি শিশুর।

এদিকে ডিমাপুরের এস পি প্রতাপ রায় এসেছেন কেরালার আর্চ বিশপ জন ডি কষ্টার কাছে । যাঁর গাড়ি দুর্ঘটনায় মারাত্মক জখম হয়ে দীর্ঘ সাত মাস কোমায় থাকার পর সম্প্রতি জ্ঞান ফিরেছে।
ডাক্তাররা কম কথা বলার জন্য বললেন কিন্তু ইন্টারোগেট তো করতেই হবে।
ফাদার নারোর বয়ান অনুযায়ী পোল্যান্ডের এনজিওটি কে রেকমেন্ড করে চিঠি এসেছিল ফাদার ডি কস্টার কাছ থেকে।

ফাদার তার সুপারিশ পত্রটি দেখে চিঠিটা জাল বলে জানালেন। অবিশ্বাসের কারণ নেই কারণ তথাকথিত পোলিশ মহিলা মারিয়া ওয়াজনিকের প্রথম বার নাগাল্যান্ড সফরের কদিন আগে ফাদার ডি কস্টা কে মারাত্মক আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয় ।
অ্যাকসিডেন্ট স্পটের অদূরেই একটি বেসরকারি ব্যাংকের শাখা অফিস । যার সিসিটিভি ফুটেজ দেখে যে জিপের সঙ্গে ফাদার ডি কস্টার গাড়ির অ্যাক্সিডেন্ট হয় তার ড্রাইভারকে অ্যাক্সিডেন্টের ঠিক আগের মুহূর্তে চলন্ত গাড়ি থেকে লাফিয়ে নামতে দেখা গেল । ক্যামেরায় মুখটা বোঝা যাচ্ছিল না, জিপের নাম্বার ট্র্যাক করা হয়েছে , নাম্বারটা ভুয়ো ।
ইঞ্জিনের নাম্বার ঘষে তুলে দেওয়া হয়েছে । ফরেনসিক টিম অনেক চেষ্টা করে শেষ দুটি ডিজিট বার করে জিপের মডেল মিলিয়ে গাড়ির রেজিস্ট্রেশন নাম্বার বার করতে পেরেছেন । যা থেকে জীপের মালিক তিরুবনন্তপুরম এর মোহনা কৃষ্ণা নাগরাজ কে শনাক্ত করা গেলো ।
মোহনা কৃষ্ণা নাগরাজ রাজনীতিবিদ, সঙ্গে রিয়েল এস্টেট এর ব্যবসা, পুলিশকে জানালেন যে আট মাস আগে গাড়ি চুরি যায় । রিপোর্ট থানায় করা আছে ।
স্থানীয় পুলিশকে মোহনা কৃষ্ণা নাগরাজের সম্পর্কে বিস্তারিত খোঁজ নিতে বলা হলো ।
বেআইনি সম্পত্তি মামলায় হাজিরার নোটিশ ইনি বারবার শারীরিক অসুস্থতা দেখিয়ে এড়িয়ে চলছেন এবং তার কয়েকটি ব্যাংক একাউন্ট এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট ফ্রিজ করেছে তা জানতে পারলেন এস পি প্রতাপ রায় ।

স্থানীয় থানার অফিসারদের কাছ থেকে প্রত্যাশামতো সহযোগিতা না পাওয়ায় ওদিন বিকালে প্রতাপ চৌধুরীর টিম চেন্নাই রওনা হয়ে গেলেন ।
পরদিন মোহনা কৃষ্ণা নাগরাজ স্থানীয় থানায় জানালো যে ভোর থেকে তার ছেলেকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, অথচ রাত্রে একসঙ্গে ডিনার করে শুতে গিয়েছিল ।
অজ্ঞাত পরিচয় অপহরণকারীরা ছেলের মুক্তির বিনিময়ে মোহনা কৃষ্ণা নাগরাজের মুখ খোলাতে সক্ষম হল । জানা গেল পড়শী দেশের এজেন্টরা এই শিশু পাচারের পিছনে রয়েছে ।

সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে প্রতাপ রায় গুয়াহাটির এসপি পদে ট্রান্সফার হয়ে এলেন । রাজনৈতিক বহু ভি ভি আই পি ও কর্পোরেট কর্তারা আসবেন অক্টোবরের শুরুতে দুর্গাপূজার সময় কামাখ্যা মন্দিরে পুজো দিতে, তাই নিরাপত্তায় যাতে কোন ফাঁক না থাকে তা কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করতে চাইছেন ।
সপ্তাহে একবার এসপি সাহেব কে নিজে মন্দির ও সংলগ্ন এলাকা পরিদর্শন করতে হচ্ছে ।
দুর্গাপুজোর তৃতীয়ার দিন মন্দির এলাকা পরিদর্শনের সময় তারা মন্দিরের সামনের চাতালে একটি শিশুকে একা বসে থাকতে দেখে ‘তোর সঙ্গে কে আছে?’ জিজ্ঞাসা করল মন্দির পুলিশ চৌকির কনস্টেবল হিতেশ শইকীয়া । শিশুটি কোন উত্তর না দিয়ে পাশ দিয়ে চলে যেতে চাইলো । সন্দেহ বসে তাকে পুলিশ চৌকিতে আনা হলো, মাইকে ঘোষণা করেও যখন কেউ যোগাযোগ করল না তখন পুলিশ হেডকোয়ার্টারে আনা হলো শিশুটিকে । এস পি প্রতাপ রায় সিসিটিভি ক্যামেরায় শিশুটিকে দেখতে পেয়ে, শিশুটির মুখ খুব চেনা লাগতে কি মনে করে নাগাল্যান্ডের নিখোঁজ শিশুদের ফটোগুলি দেখে নিখোঁজ শিশুদের একজন বলে শনাক্ত করলেন । কিন্তু শিশুটির মুখে কথা নেই, চোখ মুখ অভিব্যক্তিহীন । হাসপাতালের চিকিৎসক এমআরআই করে জানালেন শিশুটির মাথায় একটি মাইক্রোচিপ বসানো আছে আর তলপেটে বসানো আছে সিলিকন দিয়ে মোড়া অত্যন্ত শক্তিশালী বিস্ফোরক ।
বিস্ফোরকের সঙ্গে মাইক্রোচিপটি যুক্ত ন্যানোফাইবার দিয়ে ।
কিন্তু, বিস্ফোরক টি মাইক্রোচিপ নিষ্ক্রিয় না করে বের করতে গেলে শিশুটির সঙ্গে বহুলোকের জীবন সংশয় হতে পারে ।

গুয়াহাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিশেষজ্ঞ গবেষক ঋষিরাজ কৌশিক এম আর আই এর ত্রিমাত্রিক ইমেজ গুলি দেখে জানালেন, মাইক্রোচিপ টি শিশুটিকে পুরোপুরি হিউমানোয়েড রোবট এ পরিণত করেছে । আরো আশঙ্কা করলেন চিপটি স্যাটেলাইট সংযোগে নিয়ন্ত্রিত ।

আশঙ্কায় কেঁপে উঠল প্রতাপ রায়ের অন্তরাত্মা, তিন দিন পরেই দুর্গাপূজার ষষ্ঠী, দেশজুড়ে মা দুর্গার আবাহন, এর পিছনে কি বড় কোনো ষড়যন্ত্র আছে?
হাসপাতালের চিকিৎসক ডাক্তার মনিরাম পাতগিরি প্রতাপ রায় কে বললেন, যদি কিছু মনে না করেন স্যার, আমার জানা একজন অলৌকিক ক্ষমতাসম্পন্ন যোগী রয়েছেন কামাখ্যাতে, তন্ত্র আচার্য আনন্দ , আপনি একবার কথা বলে দেখতে পারেন ।
শিশুটির ছবি সঙ্গে নিয়ে তন্ত্র আচার্য আনন্দের কাছে চললেন প্রতাপ রায় । ছবি টি হাতে নিয়ে কয়েক মিনিট ধ্যানস্থ হয়ে রইলেন, তারপর তীব্র যন্ত্রণায় যেন কুঁকড়ে গেলেন তন্ত্র আচার্য আনন্দ , 'একসঙ্গে পাঁচটি শক্তিপীঠে আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটানো হবে, কামাখ্যা , কালীঘাট, নয়না দেবী , কামকোটি কাঞ্চীপুরম আর ঢাকেশ্বরী, বাংলাদেশ, এমন একটা সময় বা দিনে যখন সবচেয়ে বেশি জনসমাগম হবে । তবে একে আটকানো একা আমার পক্ষে সম্ভব নয় ।
আপনি চাইলে আমার গুরুদেব আত্মারামের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন এখন উনি হৃষিকেশে আছেন । উনি উচ্চ কোটির যোগী এবং ওনার অলৌকিক ক্ষমতা সম্পর্কে আমি সম্পূর্ণ আস্থাশীল । এই দুঃসময়ে একমাত্র উনিই পারেন কোনো আশার আলো দেখাতে ।‘

প্রতাপ রায় ইতিমধ্যেই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে তাদের মনোভাব বুঝে নিয়েছেন , সেরকম হলে এ শিশুটিকে জনমানব বর্জিত কোন জায়গায় নিয়ে গিয়ে মার্সি কিলিং করে ফাইল ক্লোজ করে দেওয়া হবে ।
কোন তান্ত্রিক এর সহায়তা নেওয়ার বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি পাওয়া অসম্ভব বুঝে অত্যন্ত দ্রুত নিজস্ব সোর্স কাজে লাগিয়ে আত্মারামের সঙ্গে যোগাযোগ করলেন প্রতাপ রায় । আত্মারাম সংযুক্তি সিদ্ধির মাধ্যমে ভারতের ও বহির্বিশ্বের অন্যান্য সাধু ও যোগীদের সাথে মানসিক সংযোগ স্থাপন করলেন ও আসন্ন বিপদের কথা জানালেন ।
সংযুক্তি সিদ্ধি হলো পঞ্চতত্ব, যেমন, বায়ু, জল, ভূমি, অগ্নি ও আকাশ এর সাথে মানসিক শক্তি ও চিন্তা ধারাকে একত্রিত করার এক যোগ সাধনা যা বহু প্রয়াসে আয়ত্ব হয় ।
অতিলৌকিক এই চিন্তাশক্তির মহাসম্মেলনে জানা গেল অষ্টমী তিথি র রাত্রে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের ষড়যন্ত্রকারীরা এই বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নারকীয় হত্যালীলা চালাবে ।

অষ্টমীর সকালের সন্ধিপুজোর শুভ লগ্নে পাঁচটি শক্তিপীঠ ছাড়াও কাশীতে আত্মারাম এর অঘোরী সাধু দের নিজস্ব আখড়ায় নিকুম্ভিলা মহাযজ্ঞ শুরু হলো ।
নিকুম্ভিলা দেবী মহাঘোরা, কৃষ্ণবর্ণা, সিংহ সদৃশ ভয়ানক মুখমণ্ডল, ক্রোধোন্মত্ত আরক্ত দুটি চোখ , শ্বদন্ত বেরিয়ে এসেছে ঠোঁটের বাইরে দুপাশে , যা তাঁকে আরো ভয়ানক রূপ দিয়েছে , দশ হাতে ভয়ানক সব মারণাস্ত্র ।
কথিত আছে দেবী পার্বতীর ভয়ংকরতম রূপ এই নিকুম্ভিলা । রামায়ণে এই দেবীর বর্ণনা আছে । লঙ্কাধিপতি দশানন রাবণের কুলদেবি ছিলেন নিকুম্ভিলা ।
বাবলা ও তমাল কাঠ ছাড়াও বিভিন্ন কাঁটা গাছের ডাল যেমন, বেগনে লতা, কুল প্রভৃতির ডাল দিয়ে হোমাগ্নি প্রস্তুত করা হল । আহুতি দেয়া হলো লাল মরিচ, গোলমরিচ, পিপুল, কুচ, লবঙ্গ, কাবাব চিনি, রাম তিল, আলকুশি বীজ, সরিষা বীজ, মধু ও ঘি ।
উত্তম লক্ষণযুক্ত চাল কুমড়ো কে মন্ত্র দ্বারা অভিষিক্ত করে বলি দেয়া হলো । রক্তকরবী ফুলে সম্পন্ন হলো দেবীর পূজা । দেবীর মন্ত্রোচ্চারণ পূজাস্থল ছাড়াও সংযুক্তি সিদ্ধির মাধ্যমে অষ্টপ্রহর করে চলেছেন যোগী গণ, ইথার তরঙ্গে অনুরণিত হচ্ছে দেবীর মহামন্ত্র :
“নিকুম্ভিলায় নম: নিকুম্ভিলে,
সকল সত্তানি সাধয় সাধয়
মম রক্ষা কুরু কুরু
সর্বান শত্রুন নাশয় নাশয়
ওম হ্রিং হুম ফট স্বাহা”
যার অবসান হলো সন্ধিপূজার বিশেষ ক্ষণে নিকুম্ভিলা দেবীর পূজা কলসে রঙ্গন ফুলের মালা পরিয়ে ।


দেবীকে মালা অর্পণের পর মুহূর্তেই তপশক্তি আর মাতৃ শক্তির মহামিলনে
পাঁচটি অসহায় শিশুর মাথায় ইমপ্ল্যান্ট করা বিধ্বংসী মাইক্রোচিপ গুলি নিষ্ক্রিয় হয়ে গেল ।

ইতিমধ্যে বাকি তিনটি শিশুকে খুঁজে বার করা গেছে তিনটি আলাদা পীঠস্থান থেকে । ঢাকেশ্বরী মন্দির সংলগ্ন এলাকা থেকে উদ্ধার হয়েছে লংগরি পামে। কূটনৈতিক হটলাইন ব্যবহার করে সব কিছু ব্রিফ করা হলো। ঢাকার আধিকারিকদের সহযোগিতায় তাকে অত্যন্ত দ্রুততার সাথে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হল।
সবকটি শিশুরই চেতনা ফিরে এসেছে ।
প্রতিবেশী রাষ্ট্রের কুচক্রীদের স্যাটেলাইট এর সঙ্গে সংযুক্ত কম্পিউটার মনিটর থেকে চিরতরে হারিয়ে গেল পাঁচটি বিধ্বংসী মানব বোমা ।
শিশুগুলির প্রয়োজনীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা নেয়া হলো।

দশমীর রাতে, ভারতের গোয়েন্দা বিভাগ একটি হটলাইন কে হ্যাক করলেন, তাতে
ভারতের উত্তরের প্রতিবেশী রাষ্ট্রের একটি বিশেষ দপ্তর থেকে পশ্চিমের প্রতিবেশী রাষ্ট্রের
ইন্টেলিজেন্স বিভাগের উর্ধতন পদাধিকারী কে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগালি করা হচ্ছে, এত উন্নত মানের ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (SIIED) কে ব্যবহার করে চিহ্নিত স্থান গুলিতে হত্যালীলা সংঘটিত না করতে পারার জন্য!
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন

১৮ আগষ্ট - ২০২২ গল্প/কবিতা: ১ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "ছোটবেলা”
কবিতার বিষয় "ছোটবেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪