পৃথিবীতে তথা বাংলাদেশে লিঙ্গ বৈষম্য বলতে কিছু নেই । এখন পৃথিবীতে সবাই সমান । বাচ্চারা স্কুলে শেখে - লিঙ্গ দুই প্রকার: জীব ও যন্ত্র। হ্যাঁ মানুষের বাহ্যিক চেহারাতেও বোঝার উপায় নেই যে কে নারী আর কে পুরুষ । আর সন্তান জন্মদানের কথা বলবেন? ৩১ শতকে এসে মানুষ কল্পনাই করতে পারেনা যে মানুষের গর্ভে সন্তান জন্ম নিতে পারে । তাদের কমিউনিটি ক্লিনিকে সন্তান জন্ম নেয় কম্পিউটার ল্যাব এ । আর শিশু জন্মানোর উপাদান উৎপন্ন করে গ্রামের দরিদ্র পরিবারের লোকজন । তারা তা বিক্রি করে, আর নিজেদের সন্তানের স্বাদ মেটায় যন্ত্র শিশু দিয়ে । শহরের লোকজন তা বিভিন্ন দরে কিনে সন্তান উৎপাদন করে এবং তা Fertality Lab এর মাধ্যমে । এ যুগে মায়ের মমতা কি তা কেও জানেনা ।
২৪ জানুয়ারি ৩০৮৯ ইং । রাত ১১ টা । চারদিকে অন্ধকার । বিজ্ঞানীরা ২দিন আগে জানিয়েছে যে ২৪ তারিখে কোন শিশুর জন্ম যেন দেয়া না হয়, কারণ মঙ্গল গ্রহে স্যাটেলাইটে রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করা হবে । যদি এদিন কোন শিশু জন্ম নেয় তবে তার মস্তিষ্কে অবাঞ্ছিত কিছু ভাইরাস ঢুকে যেতে পারে যা পরবর্তীতে জীব শিশু, যন্ত্র শিশু সবারই সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে । কিন্তু জনাব ইদ্রিস সাহেবের সন্তান এদিনে ভূমিষ্ঠ করতে হবে নইলে এ শিশুটি আর পৃথিবীর মুখ দেখতে পারবে না । ডাক্তার নিরুপায়, তাকে শিশুটি জন্ম দিতেই হবে । ডাক্তার প্রয়োজনীয় উপাদান সংগ্রহ করলেন। সন্তান জন্ম দিতে হলে, আগেই মস্তিষ্কে তথ্য দিয়ে দেয়া হয় যাতে সহজেই সে পরিবেশের সাথে মানিয়ে নিতে পারে । ডাক্তার খুব সতর্কতার সাথে কাজটি করছেন। কারণ আজ এই প্রোগ্রাম ইন্সটল করার সময় ভাইরাসও ইন্সটল হয়ে যেতে পারে যা আর অপসারণ সম্ভব নয় । যাই হোক ডাক্তার যথা সময়ে প্রোগ্রাম ইন্সটল শুরু করলেন । নির্দিষ্ট সময়ে প্রোগ্রাম ইন্সটল সম্পন্ন হল । সুস্থ একটি শিশু জন্ম নিল । শিশুটির নাম রাখা হল তুফান । মানুষের মাথায় প্রোগ্রাম zip করে রাখা হয়, যখন প্রয়োজন extract করে নিতে হয় । সমস্ত ব্যাপারটি খুব সূক্ষ্মভাবে করা হয় । যাই হোক ছেলেটি যদিও সুস্থ ভাবে জন্ম নেয় কিন্তু বড় হওয়ার সাথে সাথে কিছু সমস্যা দেখা দেয় যেমন খুব বেশি আবেগ প্রবণ, অল্পতেই কেঁদে ফেলা প্রভৃতি মানবীও বৈশিষ্ট্য । এছাড়াও মাথায় হাল্কা ব্যথা অনুভব হতে লাগলো । এভাবে জীব শিশু তুফান আস্তে আস্তে বড় হতে লাগলো ।
বয়স ১৫। এক রাতে হঠাৎ তার মাথায় প্রচণ্ড ব্যথা হয়, যার দরুন তাকে ডাক্তারের কাছে নেয়া হয় । ডাক্তারটি আমেরিকার বিখ্যাত bell laboratory থেকে পাশ করা । ডাক্তার পরীক্ষানিরীক্ষা করে দেখলেন যে mothirus নামের একটি ভাইরাস তার মাথায় ‘মা’ সম্পর্কিত তথ্য খুঁজে বেড়াচ্ছে। ডাক্তার এ কথাটি তার বাবাকে জানালেন । ডাক্তার এও জানালেন যে তারিখে তুফানের জন্ম হয় সেদিনই তার মাথায় ভাইরাসটি ইন্সটল হয়ে যায় । যা কিনা ডাক্তাররা আগে ধরতে পারেননি । সবাই ভীষণ চিন্তায় পরে গেল? ডাক্তার বলল যত দ্রুত সম্ভব মাদিরাসের এন্টিভাইরাস তার মাথায় ইন্সটল করতে হবে । মাদিরাস জন্মগত ভাবে তার মাথায় ইন্সটল হয়ে গেছে, ফলে এটি আনইন্সটল করা সম্ভব না । ডাক্তার এ রোগের প্রতিষেধক (অ্যান্টিভাইরাস) তৈরির ব্যবস্থা নিলেন । তিনি মাদিরাসের অ্যান্টিভাইরাস তৈরি করার জন্য কয়েকটি সফটওয়্যার কোম্পানির সাথে যোগাযোগ করলেন । অবশেষে বাংলাদেশের বিখ্যাত সফটওয়্যার প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাসফট এই রোগের অ্যান্টিভাইরাস তৈরির উদ্যোগ নিল । তারা এন্টিভাইরাসটির নাম দিল মা । তারা গবেষণায় বের করলো মাদিরাসের কার্যকারিতা নষ্ট করতে হলে অবশ্যই মায়ের গুণাবলী সম্পন্ন সফটওয়্যার তাদের তৈরি করতে হবে । সবই ঠিক আছে কিন্তু মায়ের গুণাবলী কার কাছে পাবে, মায়ের গুণাবলী সম্পন্ন কোন জীব তো এখন পৃথিবীতে নেই। তারা অনেক কষ্ট করে হাজার বছর আগের ই-বই ঘাটতে লাগল এবং কিছু তথ্য পেতে সক্ষম হল । তারা বিভিন্ন ভাবে চেষ্টা করতে লাগল একটি পরিপূর্ণ মা তৈরি করতে । তারা প্রায় ২ মাস চেষ্টা করে সফলতা পেলো । তারা একটি মা বানাল । এই মা হাজার বছর আগের মায়েদের মত সন্তানকে আগলে রাখতে সক্ষম হবে এমনটিই তাদের ধারনা । এদিকে তুফানের অবস্থা দিন দিন খারাপ হতে লাগল । ৬ মাসের মধ্যে মা ইন্সটল করতেই হবে, নয়তো ও মারা যাবে । এরই মধ্যে মিডিয়াতে ব্যাপারটি দারুণ সাড়া ফেলল। সবাই অধীর আগ্রহে মায়ের জন্য অপেক্ষা করতে লাগল ।
বাংলাসফট এর তৈরি মা তুফানের মাথায় ইন্সটল করা হল টেস্ট পারপাস হিসাবে। দুই মাস নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হল তাকে । কিন্তু যতটা আশা করা হয়েছিল ততটা কার্যকরী হয়নি মা। সবার ঘুম হারাম । একটি ভাল মা কিভাবে পাওয়া যাবে? তারা আবারো গবেষণা শুরু করলো। তারা আগের যুগের মায়েদের প্রতিটি বিষয় আবারো ভালভাবে পর্যালোচনা করলো । তারা মায়ের ভালোবাসা, স্নেহ, মায়ের ত্যাগ প্রভৃতি বিষয় এই সফটওয়্যারটিতে যুক্ত করলো । এভাবে তারা একটি পূর্ণাঙ্গ মা বানাতে সক্ষম হল ।
আজ তুফানের মাথায় অ্যান্টিভাইরাসটি ইন্সটল করা হবে পরিপূর্ণভাবে । মিডিয়াও চেয়ে আছে তার দিকে। কি হবে, কি হবে রব পরে গেল চারদিকে । তুফানের মাথায় ইন্সটল করা হল অ্যান্টিভাইরাসটি । ২ ঘণ্টা লাগলো ইন্সটল হতে । ডাক্তার চেক করলো, সব ঠিক ঠাক । এবার অ্যান্টিভাইরাসটি extract করা হল । Mothirus আস্তে আস্তে তার কার্যকরীতা হারাতে লাগলো । ডাক্তার আধ ঘণ্টা নিবিড় পর্যবেক্ষণ করলেন, mothirus এখন পুরপুরি নিষ্ক্রিয়। চারিদিকে উল্লাস ছড়িয়ে পড়লো, সেই সাথে মায়ের অবদান । মিডিয়াতে ফলাও করে প্রচার হতে লাগলো মায়ের জয়ধ্বনি । সবাই বলতে লাগলো মানুষের জীবনে মা কতটা প্রয়োজনীয় । আর তা জন্ম থেকে বেড়ে ওঠা পর্যন্ত অপরিহার্য । সবাই বুঝতে সক্ষম হল মায়ের প্রয়োজনীয়তা এখনো ফুরিয়ে যায়নি । মায়ের অবদান এ পৃথিবীতে রয়ে যাবে চিরকাল । আমরা যত আধুনিকই হইনা কেন, মা আমাদের লাগবেই । আসুন আমরা মায়ের কাছে গিয়ে আরেকবার মা বলে ডাক দেই ।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
নাজমুল হাসান নিরো
আমি ঠিক বুঝে উঠতে পারলাম না প্রথম লেখা গল্প এমন হয় কী করে! চর্চা করলে কল্পবিজ্ঞানে উন্নতি করা সম্ভব। তবে জৈবিক মস্তিষ্কে ভাইরাস বা প্রোগ্রাম ইন্সটল খুব একটা মিল খায় নি। সেস্থলে জৈবিক মস্তিষ্কের সাথে চিপ জাতীয় কোন কিছুর কম্বিনেশন এর উল্লেখ থাকলে আরো সামঞ্জস্যপূর্ণ মনে হত। আর বর্ণনার সাবলীলতার যে ঘাটতিটুকু আছে তা আমার মত আরো দু' একটা লেখা লিখলেই ঠিক হয়ে যাবে।
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।