কাগজ

ভয় (সেপ্টেম্বর ২০২২)

ওবায়দুল্লাহ সালমান
  • ৪৩
ভোরের আলো তখনো ফোটেনি। ল্যাম্প পোস্ট গুলো তখনও জ্বলছে। ফজরের আজান হবে আরও অনেক পরে।আজ একটু তাড়াতাড়িই বাসা থেকে বের হলাম।মসজিদের দিকে যাচ্ছি;হঠাৎ একটা গলির মাথায় থমকে দাঁড়ালাম। কেমন যেন পা খসখসানির আওয়াজ আসছে।দেওয়ালের আড়ালে লুকিয়ে পড়লাম।আবছা আলোয় স্পষ্ট দেখতে পেলাম দুটো লোককে। একজনের হাতে একটা পিস্তল ধরা;অপর লোকটাকে দেওয়ালে ঠেসে ধরেছে। শব্দটা শুনতে পেলাম;লোকটাকে গুলি করা হয়েছে ,তীক্ষ্ণ একটা চিৎকারের পাশাপাশি আরও একটা আওয়াজ পেলাম।শব্দটা আসছে আমার পিছন থেকে।কাঁধে কেউ একটা হাত রাখল।ভয়ে শরীর গরম হয়ে উঠলো।কিন্তু ততক্ষণে দেরি হয়ে গেছে, ভারী একটা আঘাত নেমে এসেছে আমার মাথায়। ক্রমশ জ্ঞান হারাচ্ছি মাথার ভিতরেও কেমন জট পাকিয়ে যাচ্ছে। দৃষ্টিও ঘোলা হয়ে আসছে,তবে সেই ঘোলাটে দৃষ্টিতে দেখতে পেলাম পিস্তল ওয়ালা লোকটাও আমার দিকে এগিয়ে আসছে আর আমার মাথার উপরে এখন দুটো লোক দাঁড়িয়ে।ফিসফিসিয়ে কিছু বলছে। সাদা কি যেন একটা খসে পড়ল ওদের কারো শরীর থেকে।অবচেতনে শক্ত করে মুঠোবন্দি করে নিলাম ওটা।শক্ত হয়ে আসছে মুঠোটাও।

হাসপাতালে জ্ঞান ফিরলো।মুঠোর ভিতরে এখনও আছে জিনিসটা;একটা কাগজ। কি ভেবে লুকিয়ে ফেললাম ওটা। এক সপ্তাহ পর বাড়ি ফিরতে পারলাম। এতদিনে খবরের কাগজ আর লোকমুখে সেদিন সকালের ঘটনার বাকি অংশ জেনেছি। খুন হয়েছেন এক শিল্পপতি।মনে পড়লো সেই কাগজটার কথা। হাতে নিলাম;কিন্তু এটা কি!
আপাদমস্তক একটা খুনের আদেশ নামা, নিচে একটা সাক্ষরও দেখা যাচ্ছে। সবকিছু বুঝতে না পারলেও এটুকু বুঝলাম যে ছোট্ট কাগজটা এখন অমূল্য।
সেদিনের ঘটনার জন্য বেশ কয়েকবার থানায় হাজিরা দিতে হয়েছে আজকে আবার নতুন ওসি সাব ডেকেছেন। কতক্ষণ নিরর্থক জেরা করলেন। টেবিলের উপরে রাখা একটা ফাইলের দিকে নজর পড়লো।নিচে ওসি স্যারের স্বাক্ষর।কিন্তু সাক্ষরটা খুবই চেনা চেনা লাগছে না!মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠলো।আবার মাথাটা জট পাকানো শুরু করেছে।

একটা অমূল্য জিনিস যে খোয়া গেছে তা বুঝতে গুন্ডাগুলোর বেশি সময় লাগলো না। সেদিন সকালে আমি ছাড়া জীবিত অন্য কোন প্রাণী যে রাস্তায় ছিল না তা তো সত্য। মাস্তানগুলো আমার উপর নজর রাখতে শুরু করল।বার কয়েক বডি সার্চ ও করল। বাসায় ঢুকে ভিতরটাকে ব্যবচ্ছেদ করেও কিছু পেল না। কারণ তারা তো জানে না যে আমি ওটা একটা ইলেকট্রিক সুইস-সকেট এর ভিতরে রেখে দিয়েছি।

গভীর রাত। অবিন্যস্ত কিছু শব্দে ঘুম ভেঙে গেল। কারা যেন জোরে জোরে দরজা ধাক্কাচ্ছে।বেশ বুঝতে পারলাম কারা, বাড়ির দরজাটা পাতলা লোহার তৈরি। দরজার ভীত কিছুক্ষণের মধ্যেই ভেঙে যাবে। এর মধ্যেই কিছু একটা করতে হবে। মাথায় একটা বুদ্ধি এসে গেল। একটা বৈদ্যুতিক তারে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে ধাতব দরজায় স্পর্শ করালাম। প্রায় 1 মিনিট; বাইরেটা নিরব হয়ে গেছে। দরজা খুললাম, সবকিছু প্রত্যাশা মাফিকই হয়েছে। দরজা বন্ধ করে আবার ঘুমিয়ে পড়লাম।

সকালে উঠে দেখলাম ওসি স্যার এসেছেন। মুখে অদ্ভুত অভিব্যক্তি। আর কেউ না জানলেও আমি জানি ওসি সাব তার ভাড়াটে গুন্ডাদের অবস্থা দেখে ভয় পেয়েছেন ।আর এও জানি যে আজকেই আমি আদালতে ওসির সাক্ষর করা খুনের আদেশনামাটা জমা দিব। ফোন আড়ি পাতা থেকে বাঁচতে কাগজ কলমের সাহায্য নিয়েছিলেন তিনি,তাও শেষ রক্ষা হলো কই?
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
ফয়জুল মহী খুব সুন্দর লিখেছেন
ভালো লাগেনি ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২
Tasnim RCT Rahman Amazing, splendid.
ভালো লাগেনি ১ সেপ্টেম্বর, ২০২২

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

খুন করে ধরা খাওয়ার যে ভয় মানুষকে তাড়িয়ে বেড়ায় সেই ভয়ের কাথাই তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।

২২ এপ্রিল - ২০২২ গল্প/কবিতা: ৯ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪