1.লোকটার গায়ে ছেঁড়া ময়লা কাপড়। ভাঁজ হওয়া দাড়ি-চুল জট পাকানো,জবুথবু শুন্য দৃষ্টি। এতসকল বিশেষণ দ্বারা লোকটার একটা পরিচয় স্পষ্ট হয় , তবে আমি লোকটার দিকে কেন জানি গভীর দৃষ্টি দিয়ে দেখলাম অবশ্য রাস্তায় একটা পাগলকে দেখে অনেকেই এভাবে তাকায়। দুদিন হলো অফিসের কাজে ময়মনসিংহ এসেছি, আমার চাকরীটাই এরকম ,ছন্নছাড়ার মতো এখানে ওখানে কাটিয়ে দিতে হয় ঠিক যেন ওই পাগলটার মতো।
2.আমার যদিও পরিবার বলতে মা আর আমি, তাই কোথাও এলে মাকেও সাথে নিয়ে আসি। মাস তিনেক মতো থাকা হয় এক একটা জায়গায়। ময়মনসিংহে দিন কতেক হলো। একদিন সকালে অফিসে যাচ্ছি, হঠাৎ একটা দৃশ্য দেখে থমকে দাঁড়ালাম, দেখি সেই পাগলটা, হাতে একটা পাউরুটি; পাউরুটিটা সে দুভাগ করে অর্ধেক মুখে পুড়ে দিল বাকী অর্ধেক রাস্তার একটা কুকুরকে দিয়ে দিল। ভাবলাম কত কষ্ট করে রুটিটা জোগাড় করেছে আর সেটা নিজে সব না খেয়ে অন্যকে খাওয়াচ্ছে, আসলে দয়াকে অবলম্বন করে যারা বাঁচে তাঁরা হয়ত অধিক দয়ার্ত হয়।
3.দুপুরের লাঞ্চ মা ই বানিয়ে দিয়ে দেয়, কিন্তু আজ এক কলিগ হোটেলে নিয়ে গেল জোর করে, তাই লাঞ্চের খাবারটা সম্পূর্ণই রয়ে গেল। ভাবলাম যাবার সময় পাগলটাকে খাবারগুলো দিয়ে যাব। হটপটটা একটা নীল শপিং ব্যাগে দিয়েছে মা। পাগলটা ফুটপাথেই বসে ছিল, আমি আস্তে আস্তে কাছে গিয়ে ব্যাগটা এগিয়ে দিয়ে বললাম, "এই যে তোমার জন্যে খাবার এনেছি " ও নিল ঠিকই কিন্তুু পরক্ষণেই ব্যাগটা পাশের ড্রেনে ফেলে দিল। আমি বেশ তাজ্জব হয়ে গেলাম একটু বিরক্ত ও হলাম। কিন্তুু ভাবলাম পাগলে কত কিছুই তো করে। পাগলটা দেখলাম আমার দিকে রুক্ষ দৃষ্টিতে তাকিয়ে ঘড়ঘড় করে কি যেন বিড়বিড় করছে। অস্পষ্টভাবে যেটুকু শুনতে পেলাম তা এরকম, "ওফফ, আবার সেই ,বুঝেছি আমাকে না মেরে ছাড়বে না, এই দ্যাখোছ না তুই, "নীল চোখ, নীল পায়জামা" তোকে মারবে, রিহ রিহ হোহ"
4.এই হটপটটা কি করেছিস, হ্যাঁ? মা খাবার রেডি করে আমাকে জিজ্ঞেস করল। মাকে বললাম কালকে পাগলটার পাগলামির কথা। মা'কে যখন "নীল চোখ, নীল পায়জামা"কথাটা বললাম মাকে দেখলাম কেমন অন্যমনস্ক হয়ে গেলেন। আর জানতে চাইলেন "কোথায় থাকে পাগলটা?
-"এই তো থাকে এখানে সেখানে, তবে চৌরাস্তার চায়ের দোকানটার পাশেই বসে থাকে বেশিরভাগ সময়"
মা দেখলাম আনমনে কোনো হিসাব করে চলেছেন যেন।
5.মাথাটা আজ গরম তামার মতো হ'য়ে আছে। কোথ্থেকে বলা নেই কওয়া নেই অফিসে এসে কি কান্ডটাই না করল ছেলেটা,বলে আমি কিনা টাকার জন্য ফাইল সরিয়েছি! নেহাত বসের ছেলে বলে কিছু বলতে পারলাম না। এত অপমান আর হেনস্তা আগে কখনো হতে হয়নি। রাগ আর আত্মসম্মানের জ্বালা থেকে থেকেই ফুঁসে উঠতে চাইছে। সামনের কিছুই দেখতে পাচ্ছি না, চোখ দুটোও যেন অনশন করছে। হঠাৎ তীব্র একটা ধাক্কা অনুভব করলাম, আবছাভাবে দেখলাম চৌরাস্তা, চায়ের দোকান, তারপরে সব যেন অদৃশ্য।
6.জ্ঞান ফিরল মনে হয়, একি এতো হাসপাতাল। এখানে আমি কি করছি। হঠাৎ নিজেকে দেখে খুব অচেনা মনে হলো, সারা গায়ে ব্যান্ডেজ, একটু নাড়াচাড়া করতে গিয়ে দেখলাম প্রচন্ড ব্যাথায় শরীর কুঁকড়ে উঠছে। মাকে দেখতে পেয়ে জিজ্ঞেস করলাম সব। মা বলল,"তুই অ্যাকছিডেন্ট করেছিস বাবা, একটা ট্রাক চৌরাস্তা অতিক্রম করার সময় তোকে ধাক্কা দেয়, ঘটনাটা যেভাবে হয়েছে তাতে তোর মৃত্যুই হয়ত নিয়তি হতে পারত; কিন্তুু বেঁচে গেছিস।" এই মুহূর্তে কে যেন মাকে কিছু বলে গেল, মা দেখলাম ঝরঝর করে কেঁদে উঠলেন।
7.হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেলাম। বেশ কয়েকদিন হয়ে গেছে পাগলটাকে দেখছি না। আশপাশের লোকজনকে জিজ্ঞেস করে যা জানলাম তাতে আমার প্রবল হাহাকার ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না।কোনোমতে বাড়িতে এসে মাকে সব বলতে লাগলাম, "মা জান ওই সেই পাগলটা আমাকে ট্রাকের সামনে থেকে সরিয়ে দিতে গিয়ে নিজেই ট্রাকের তলায় পড়ে মারা গেছে। "
-"হ্যাঁ, সবই জানি, করবেই বা না কেন? ও যে তোর বাবা ছিল। "বলেই মা ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলেন।
-"বল কি মা? আমার বাবা তাহলে জীবিত ছিলেন! কিন্তু তুমি এতদিন আমাকে মিথ্যা বলে আসছ কেন?
-"যদিও তোর বাবার সাথে তোর জন্মের কয়েক মাস পরেই আমার ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। বড্ড উন্মাদ হয়ে গিয়েছিলেন, আর একটা বিষয় মনে আছে আজও, নীল কোনো কিছু দেখলেই তেঁড়েফুড়ে আসতেন, বিড়বিড় করে কি সব বলতে থাকতেন "নীল চোখ; নীল পায়জামা " নাকি তাকে শেষ করে দিবে। তারপর আর কি,একটা বড্ড উন্মাদ পাগল কি ঘর করতে পারে নাকি?
-"কিন্তুু তুমি আমার কাছে এতদিন এগুলো গোপন করেছ কেন?
-"একটা পাগলকে বাবা বলে স্বীকার করতে তোর কষ্ট হতো না? তাছাড়া ওর আর খোঁজও পাচ্ছিলাম না। "
8.পুরো ব্যাপারটাই পরিস্কার বুঝতে পারলাম কিন্তু একটা ব্যাপারে খটকা লাগল যে বাবার তো আমাকে চেনার কথা নয় তাহলে আমাকে বাঁচানোর জন্য এভাবে জীবন দিলেন কেন? আশ্চর্য বৈ কি।
লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা
ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য
পাগল হয়ে যাওয়া বাবাকে ফিরে পাওয়া নিয়ে গল্পটি।
২২ এপ্রিল - ২০২২
গল্প/কবিতা:
৯ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪