আঁধারের প্রতিবিম্ব

মা (মে ২০২২)

ওবায়দুল্লাহ সালমান
  • ৩৮
1.দুপুরের চটচটে রোদে বড় রেস্তোরাঁটার পাশে ফুটপাথে বসে আছি। সকাল থেকে কিছুই জোটেনি আজকে। রেস্তোরাঁর খাবারের তীব্র সুগন্ধ নাক হয়ে সোজা মগজে প্রবেশ করছে। ঠিক এমন সময় কেউ একজনকে দেখে ভয়ানকভাবে চমকে উঠলাম। রেস্তোরাঁ থেকে বের হয়েছে আমার হারিয়ে যাওয়া মা, তাঁর সাথে মাঝবয়সী এক লোক এবং বছর পাঁচেক এক ছেলে। আমি হাঁ-হয়ে তাকিয়ে আছি, মা-ও আমার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছেন। মায়ের পাশে দাঁড়ানো ভদ্রলোক একটু অপ্রস্তুত হয়ে বলে উঠলেন, "কি ব্যাপার,সেলিনা, তোমার আবার কি হলো? রাস্তার ময়লা একটা পথ শিশুকে দেখে এত অবাক হয়ে কি দেখছ?
মা কিছু বললেন না, দেখলাম ওরা একটা অদ্ভুত সুন্দর গাড়িতে উঠে পড়ল। গাড়ির জানালা দিয়ে মা আরও একবার আমাকে দেখলেন, আমি সম্মোহিতের মতো তাকিয়েই আছি ...
2.সারারাত আর ঘুম হলো না। শুধুই মায়ের চিন্তা এসে ভিড় করছে মনে। মা কি আমাকে চিনতে পেরেছেন? প্রায় ছয় সাত বছর আগে আমি নিরুদ্দেশ হয়েছিলাম এক পাচারকারী চক্রের খপ্পরে। তার পর আর মায়ের সাথে দেখা হয়নি। আজ হঠাৎ মনে পড়ছে সেই দিনটার কথা, যেদিন বাবা মাকে ছেড়ে দিয়েছিল, আমি আর মা উঠে এসেছিলাম এই শহরে মামার বাসায়। স্কুলে ভর্তি হয়েছিলাম এখানেই। তারপর হঠাৎ একদিন পাচারকারীদের কালো হাত সব তছনছ করে দিল। ভাগ্যগুনে সেবার জানোয়ারগুলো বর্ডার পার হতে পারে নি তবে কি সব অবৈধ কাজের জন্য বিক্রি করে দিয়েছিল।কয়েক বছর পর সেখান থেকে পালিয়ে ঠিক এই শহরেই ফিরে এলাম কিন্তু মা'কে আর পাইনি। এখন কীটপতঙ্গের মতো বেঁচে আছি,পরিবেশে যার থাকা আর না থাকা সমান।
3.পরদিন ঠিক সেই সময় আবার রেস্তোরাঁর সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। কিন্তু আজ আর এলো না মা। কিন্তু আমি জানি মা আবার আসবেই ঠিক যেমনটা আমি অপেক্ষা করছি তাঁর জন্য। ঠিক তাই হলো মা আবার একদিন এলো, আজ সঙ্গে বাচ্চাটা নেই। শুধু ভদ্রলোক আর মা দু'জন। তাঁরা দুজন রেস্তোরাঁর ভেতরে ঢুকলেন। প্রায় একঘন্টা পর তাঁরা বের হলেন। আজ একটা অদ্ভুত ঘটনা ঘটল যার জন্যে আমি মোটেই প্রস্তুত ছিলাম না। ভদ্রলোক সোজা আমার দিকে আসলেন এবং বললেন, "তোমার নাম কি ছোকরা? আমি ভয়ে ভয়ে উত্তর দিলাম, "সবুজ " দুরে মা দাড়িয়ে ছিলেন ।দেখলাম আমার নাম শুনে তিনি একটু উত্তেজিত হয়ে উঠলেন।
ভদ্রলোক এবার বললেন, "বাসাবাড়ির কাজ করতে পার? এই যে যেমন:ঘড়-বাথরুম পরিস্কার করা, এটা সেটা কাজে সাহায্য করা এগুলো।
আমি বললাম, "পারি,স্যার "
:"তাহলে এসো আমার সাথে"
4.ভদ্রলোক আমাকে গাড়িতে উঠালেন। মা আমার ঠিক পাশে বসে আছেন। কোনো কথা বলছেন না। মা'কে ছোঁয়ার ইচ্ছা হলো, কিন্তু কেন জানি সাহস করে উঠতে পারলাম না। ভদ্রলোক সামনে বসেছেন। হঠাৎ ভাবলাম ভদ্রলোক আসলে কে? আমাদের কোনো আত্মীয় বলেও মনে হচ্ছে না, তবে কি মা আবার বিয়ে করেছে। আর উনি আমার সৎ বাবা? কিন্তু তাহলে উনি আমাকে বাসার কাজকর্ম করার জন্য নিচ্ছেন কেন? কোথাও একটা খটকা লাগল।
5.বাড়িটা অনেক বড়। আমি চারপাশটা অবাক হয়ে লক্ষ্য করছি। সৎ বাবা বলে উঠলেন, "তুমি আমাদের কি বলে ডাকবে তা বলে দিচ্ছি, আমাকে স্যার বলেই ডেকো আর ওনাকে ম্যাডাম বলে ডাকবে। এবার আমি আর স্থির থাকতে পারলাম না, অস্ফুট স্বরে বলে উঠলাম, "ম্যাডাম বলে? "
:"হ্যাঁ, কেন কোনো সমস্যা আছে?
আমি মায়ের দিকে তাকালাম, মা নিশ্চল পাথরের মতো দাঁড়িয়ে আছেন। আমি আর কিছু বললাম না।
:"আর আমাদের ছেলে রোহানের সাথে তো তোমার এখনও পরিচয় হয় নি। তোমাকে আমাদের বাসায় আনার মুল কারণ ও-ই, সারাদিন ওর ফরমায়েশ খাটতে খাটতেই তোমার দিন কেটে যাবে। "
5.দিনগুলো ভালোই কাটছিল। কিন্তু একটা ব্যাপার কিছুতেই বুঝতে পারছিলাম না যে মা কেন আমার পরিচয় গোপন করে রাখলেন, এমনটাও না যে তিনি আমাকে চিনতে পারেন নি। আমার জন্য আলাদা একটা ছোট রুমের ব্যবস্থা করা হয়েছে। একদিন ভোরবেলায় বিছানায় শুয়ে আছি।হালকা ঘুমঘুম ভাব এসেছে কেবল। এমন সময় অনুভব করলাম কেউ আমার মাথায় আস্তে আস্তে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। ধড়মড়িয়ে উঠে দেখি মা বসে আছেন আমার বিছানার এক পাশে।
:"কি ম্যাডাম, কিছু লাগবে? "জিজ্ঞেস করলাম। দেখলাম মা হাসছেন।
:কি মনে করেছিস, আমি তোকে চিনতে পারি নি,না?
খুব রাগ হয় মায়ের উপর তাই না? নিজের মাকে ম্যাডাম বলে ডাকতে হচ্ছে। আসলে কি করব বল? একটা ভুল করে ফেলেছি জিবনে। তুই যখন হারিয়ে গেলি তখন বড্ড একা হয়ে পড়েছিলাম, অনেক খোঁজাখুজির পরও তোকে না পেয়ে তোর আশা একরকম ছেড়েই দিয়েছিলাম। একদিন তোর মামা বললেন আমাকে নাকি আবার বিয়ে দিয়ে দিবেন। বড় ভাইয়ের কথা ফেলতেও পারি নি, আসলে তুই ও নেই আমার বাঁচার কি কোনো অবলম্বন ছিল বল? কিন্তু তোর মামা মস্ত বড় অন্যায় করেছিলেন জানিস? তোর এবং তোর বাবার কথা স্রেফ ধামাচাপা দিয়েছিলেন। এখন তোর উথ্থান যে সমাজের চোখে বড় বেখাপ্পা দেখাবে,তাই তোকে কাজের ছেলে হিসেবে ঘরে আনতে হলো, এছাড়া যে আর কোনো উপায় ছিলনা,বিশ্বাস কর। আমার অবস্থা একটু ভেবে দ্যাখ, চোখের সামনে ছেলেটা থাকা সত্ত্বেও তাঁকে একটু আদর করতে পারছি না, পারছি না বাবা বলে জড়িয়ে ধরতে। তুই আমাকে ক্ষমা করিস বাবা ,আমাকে ক্ষমা করে দিস। "এই বলে মা আমাকে জড়িয়ে ধরলেন, আমিও মা'কে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠলাম। এভাবে কতক্ষণ ছিলাম মনে নেই। তবে সম্বিত ফিরল একটা কর্কশ আওয়াজে। আমাদের কথার মাঝে সৎবাবা যে কখন রুমে প্রবেশ করেছিলেন খেয়াল করি নি।
6."তোমাদের সব কথা আমি শুনে ফেলেছি। এতসব কথা আগে বল নি কেন আমাকে? এখন এসব জানাজানি হয়ে গেলে কি হবে বুঝতে পারছ? মানসম্মান বলে কিচ্ছু থাকবে না আমার। কিছু জানাজানি হওয়ার আগেই ওকে বিদেয় করতে হবে। "বলেই সৎবাবা আমাকে টানতে টানতে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বাড়ির বাইরে বের করে দিলেন। শেষবারের মতো মাকে দেখার জন্য ঘাড় ফেরাতেই দড়াম করে দরজা বন্ধ হয়ে গেল।
হঠাৎ মনে হলো এই শহরের সবটুকু অন্ধকার যেন আমার দেহে প্রতিফলিত হয়েছে আর আমি সেই অন্ধকারের মাঝে প্রাণপণে কিছু একটা খুঁজে চলেছি কিন্তু মূহুর্তেই এক পশলা শুন্যতা এসে গ্রাস করছে আমাকে।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

হারানো পাওয়া আবার হারানো এই তিনে মিলেই গল্পটা। অবশ্যই মায়ের সাথে সম্পৃক্ত।

২২ এপ্রিল - ২০২২ গল্প/কবিতা: ৯ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪