গর্ভধারিনী সরুচাকলী

মা (মে ২০২২)

সুপ্রিতি ভট্টাচারিয়া
মোট ভোট প্রাপ্ত পয়েন্ট ৪.৪
  • 0
  • ৫১
হ‍্যাঁ সুস্মিতার এখন সরুচাকলীর মতোই চেহারার আকৃতি। সরুচাকলী যেমন পাতলা ফিনফিনে, ঠিক তেমনি গঠন সুস্মিতার।
তার সন্তান এখন ২৫ বছর। তার বয়স ৫০ এর কোঠায়। সৌমিক,তার একমাত্র সন্তান। মানসিক ভারসাম্যহীণ। সুস্মিতার মনে খেদ থাকলেও কিছু করার নেই। Psychiatrist এর Prescription অনুযায়ী ওষুধ চলে তার। সৌমিক এর বাবাদের জমি সম্পত্তি নিয়ে বিবাদ, যা তার কিশোর বয়েসে ঘটে। সৌমিক লেখা পড়ায় ভালোই ছিল। result ও ভালোই করতো। কিন্তু পারিবারিক সম্পত্তি নিয়ে বিবাদের জেরে আজ সৌমিক মানসিক রুগী।প্রথম প্রথম সে জিনিস পত্র ভাঙতো, মারমুখী ব‍্যবহার করতো, এখন সে অনেক ঠান্ডা। মাঝে মাঝে একটু উগ্র হলেও মা সুস্মিতা বুঝিয়ে ঠিক করে। সম্পত্তি নিয়ে ঝামেলা হামেশাই তাদের বাড়ির মধ্যে তখন সৌমিকের বাবা জ‍্যেঠাদের মধ্যে লেগেই থাকত। তার চোখের সামনেই তার জ‍্যেঠার ছেলে তার মায়ের বাসন পত্র লাথি মেরে ভাঙে। নানা রকম অসমাজিক কাজ তার জ‍্যেঠার ছেলে যেমন ড্রাগ নেওয়া আর ড্রাগ নেওয়ার জন্য গয়না চুরি। এই সব করতো। তখন joint family. তার জ‍্যেঠার ছেলে সুস্মিতার শ্বাশুড়ির,সুস্মিতার নিজের গয়না চুরি করে নেয়। সুস্মিতা কে এইসব সহ‍্য করতে হয় মুখ বুজে। সুস্মিতা তার থেকে আড়াল করে রাখে সৌমিককে। সুস্মিতা তার ছেলেকে মানুষ করার জন‍্য কিছু দিন তার মামার বাড়ি অর্থাৎ সুস্মিতার বাপের বাড়ি পাঠায়। কিন্তু সৌমিক খুব বুদ্ধিমান। সে কিছুদিন ওখানে থেকে তারপর একদিন হাঁটতে হাঁটতে চলে আসে। এখানে তার মায়ের সঙ্গে কি হচ্ছে দেখার জন্য। পরবর্তী কালে সেও ঘরের মধ্যে বাসন পত্র আছড়ে ভাঙে। প্রথমটা না বুঝলেও সুস্মিতা পরে Psychiatrist এর সঙ্গে আলোচনা করে বুঝতে পারে এটা মানসিক রোগ। সেই মতো তার চিকিৎসা করাচ্ছে সুস্মিতা। তার বাবা বলে ও বদমেজাজি, বদমাইসি করছে। সুস্মিতার মন মানে না। সে সবার সঙ্গে আলোচনা করে সৌমিক কে ডাক্তার দেখায়। ডাক্তার তখন বলে ও মানসিক রোগগ্রস্ত।ওকে চিকিৎসা করিয়ে যেতে হবে। ঘরে পয়সার টানা টানি থাকলেও সুস্মিতা টাকা পয়সা জোগাড় করে ওকে ওষুধ খাওয়ায়, ডাক্তার দেখায়।সৌমিকের লেখা পড়া বন্ধ। কোন কাজও করেনা। মা সুস্মিতাই তাকে চালায়।যতই হোক ‘মা তো’। অথচ এই সৌমিক ছোট বেলায় সুন্দর স্বাস্থ ও বুদ্ধিমান, পড়াশুনায় যথেষ্ট ভালো ছিল। স্কুলের রেজাল্ট ভালো করত।
সুস্মিতারও বিয়ের আগে কত সুন্দর শারীরিক গঠন ছিল। বিয়ে হয়ে আসার পর থেকে শ্বশুরবাড়ির নানা ষড়যন্ত্রের স্বীকার হয়ে, ছেলেকে নিয়ে নানা অশান্তি পুইয়ে আজ তার এই হাল শরীরের। সবাই তার নাম দিয়েছে সরুচাকলি। বিশেষত তার বাবার বাড়ির সবাই।
সুস্মিতা কোন দিনই বড় দের সঙ্গে নিজের থেকে লড়াই ঝগড়ায় জড়ায়নি। কারন সে জানত এতে তার সন্তানের অমঙ্গল হবে। সম্পত্তি নিয়ে সৌমিকের বাবাদের লড়াইয়ে সে মাথা গলায় নি। তবু সে শ্বশুর বাড়ির নানা ষড়যন্ত্রের স্বীকার হয়েছিল । চুপচাপ হজম করেছে সন্তানের কথা ভেবে। তার বাবা বড় ব‍্যবসাদার। ছোট থেকে সে বিষয় বৈভবের মধ্যে মানুষ। ইচ্ছা করলে সে শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে বাপের বাড়ি উঠতে পারতো। কিন্তু সে সেটা করেনি সন্তানের কথা ভেবে। কিন্তু তার সন্তান আজ মানসিক রুগী।
সুস্মিতা আজ নিজেই মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত। তার কেবলই মনে হয় সে যদি তখন শ্বশুর বাড়ি ছেড়ে গিয়ে বাপের বাড়ির অন্য পরিবেশে তার ছেলেকে মানুষ করত তবে তার ছেলেটা অন্তত মানসিক রোগগ্রস্ত হতো না। সে মন্দির মঠ করে বেরিয়েছিল ছেলের মঙ্গলের কথা ভেবে। কিন্ত ছেলের মানসিক রোগ সারেনি।ডাক্তারের ওষুধ খেয়েই ঠিক আছে। এখন তার ভগবানে বিশ্বাস ভক্তি সবই কর্পুরের মতোই হাওয়া।এখন সে অনেক বিজ্ঞান মনষ্ক। সে জানে আজ ডাক্তারের ওষুধ না হলে তার ছেলে সুস্থ থাকত না। সে এখন বোঝে genetic ব‍্যাপার টা কি জিনিস। সৌমিকের অসুখটা কিছু টা genetic ও বটে। এই রকম মানসিক রোগ তৈরি হয় Family background থেকে।সুস্মিতার বাবা, মেয়ে ভালো থাকবে এই ভেবে সম্পত্তি জমি দেখে বিয়ে দেয়। কিন্তু যা হয় আরকি মেয়ের খাওয়া পরার চিন্তা থাকবে না এই ভাবনা নিয়ে তার বিয়ের সন্মন্ধ করে। বিরাট সম্পত্তির অধিকারী। কিন্তু এইসম্পত্তি প্রথমত Joint property, তা ছাড়াও আরো অনেক গণ্ডগোল।
সুস্মিতা শিক্ষিত । সে আস্তে আস্তে বুঝতে পারে যে জমি সম্পত্তির অর্ধেক দখল করা অন্য লোক দিয়ে। জমি সম্পত্তি যত ছিল তা আজ পারিবারিক শিক্ষার অভাবে সবই হাতছাড়া।এদের এখন অবস্থা হলো সেই প্রবাদ বাক্যের কথা ‘তাল পুকুর নাম, কিন্তু ঘটি ডোবে না’ -- সম্পত্তির থেকে লাঠা-লাঠি মারামারি টাই বেশি।
আসলে পূর্ব পুরুষ থেকে শুনে এসেছে সম্পত্তির গল্প, কিন্তু এদের কেউ শিক্ষা দেয়নি কিভাবে সম্পত্তি রক্ষা করতে হয়।তাই তারা ঘরে এসে লাঠালাঠি মারামারি করে।আর ঘরের শান্তি নষ্ট করে।
সুস্মিতা জানে যেখানে শান্তি নেই সেখানে প্রগতিও নেই। তাই তার ছেলেকে কষ্টকরেও ডাক্তার দেখিয়ে ওষুধ খাওয়ায়। আর যত টা সম্ভব ঠিক ঠাক বুদ্ধি টা মাথায় ঢোকায়। এইভাবেই বেশ অনেকগুলো বছর কেটে যায়। কিন্তু সৌমিক এখন বড় হয়েছে। সে তার আর পাঁচটা আত্মীয় কে দেখে ভাবে তারা বিয়ে করেছে সেও বিয়ে করবে। তার মাকে আবারও সমস্যার সন্মুখীন হতে হয়। এবার আলাদা রকম ঝামেলা। সব সময় তার মাথায় ঘোরে তার বিয়ে দেওয়া হচ্ছেনা কেন? তখন সে প্রথমে মেয়ে দেখে। কিন্তু সুস্মিতা তাদের বলেই দেয় সৌমিকের সন্মন্ধে এবং ওর বাবাদের familyর অবস্থান সন্মন্ধে। কারন এই সব কথা গুলো পরিষ্কার ভাবে না জেনে সুস্মিতার বাবা সুস্মিতাকে বিয়ে দেওয়ার জন্য আজ সুস্মিতার জীবনে এত ঝামেলা সৌমিক কে নিয়ে। সুস্মিতার আজ যে ঝামেলা সেটা যেন অন্য কোন মেয়ের জীবনে না হয়। সে ইচ্ছা করলেই সব কথা চেপে সৌমিকের বিয়ে দিতে পারতো। কিন্তু সে সেটা করেনি। সুস্মিতা বুদ্ধি করে সৌমিক কে একদিন বলে ‘ তুই কোন রোজগার করিস না,তাই জন্য কোন মেয়েই বিয়ে করতে রাজি হচ্ছে না।আগে রোজগার করতে হবে, মানুষ হতে হবে তবেই মেয়েরা বিয়েতে সন্মতি দেবে।‘
সুস্মিতা বলে বটে, কিন্তু সৌমিককে কে কাজ দেবে? তখন সে কিছু টাকা পয়সা সংগ্রহ করে , লোকের বাড়ি বাড়ি খাবারের অর্ডার নিয়ে খাবার সাপ্লাই করতে লাগল। ছেলে গিয়ে খাবার পৌঁছে দেয়। বাজার দোকান করে। এই ভাবে তাকে কিছুটা মানুষ করবার প্রচেষ্টা চালিয়ে যায়। মাঝে মাঝে মাথা গরম করলেও আবার বোকে বুঝিয়ে ঠিক ঠাক করে কাজে মন বসাতে হয় সুস্মিতা কে। এই ভাবে কিছু টা রোজগার হলে সৌমিকের হাতে কিছু টাকা পয়সা আসায় তার মনটা একটু শান্ত হয়। কাজেও মন বসে।
সুস্মিতা জানে না কবে তার সন্তান পুরোপুরি ঠিক হবে। কিন্তু এই ভাবে সে প্রচেষ্টা চালিয়ে যায়। কারন সে গর্ভধারিনী মা। দশমাস দশদিন গর্ভে ধারন করেছে।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
doel paki অভিনন্দন।
সুপ্রিতি ভট্টাচারিয়া ধন‍্যবাদ আপনাদেরকে । আপনারা যে আমার লেখাটি পড়েছেন এতেই আমি অভিভূতো।
ফয়জুল মহী সুন্দর উপস্থাপন করেছেন।
শাহ আজিজ আগত সন্তানের জন্য কত রক্ষা কবচ। ভাল লেগেছে আপনার লেখা ।

১১ মার্চ - ২০২২ গল্প/কবিতা: ৭ টি

সমন্বিত স্কোর

৪.৪

বিচারক স্কোরঃ ১.৪ / ৭.০ পাঠক স্কোরঃ ৩ / ৩.০

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪