মস্তিষ্কের মৃত্যু

উপলব্ধি (এপ্রিল ২০২২)

সুপ্রিতি ভট্টাচারিয়া
  • 0
  • ৩০
ওর আঙুল টা নরছে বলে মনে হচ্ছে না অতনু ? অতনু দেখল এক দৃষ্টিতে তার সন্তান রনের দিকে । ওকিছুই বুঝল না । অতনু তবু মাথা নাড়ল নিনার কথায় ওকে সন্তুষ্ট করতে । নিনা –অতনুর এক মাত্র সন্তান রন । বয়স ১১ ।জীবন্মৃত অবস্থায় হাসপাতালের বিছানায় । ডাক্তার সব আশা ছেড়ে দিয়েছে।ঘোষনা করেছে রনের ব্রেন ডেড ।
কিন্তু মা নিনার মনে আশা রন ভাল হয়ে উঠবে । তাই সে সব কিছু ছেড়ে এক ভাবে রনের শিয়রে বসে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে চলে । কিন্তু এই ভাবে নিনা কি রনকে পৃথিবীর আলোয় ধরে রাখতে পারবে ? অতনুর মনেপরে যায় সেই শুভদিন টার কথা । যখন রনের জন্ম হল । কে ছিল না সেই মুহুর্তে অতনুর বাবা মা ,নিনার বাবা মা দাদা দিদি বাড়ি ভর্তি লোক । কত আনন্দের দিন ।
নিনার সাধের দিনিই প্রসব বেদনা ওঠে ,সেদিনই রাতে রনের জন্ম । রন ছোট থেকেই সুন্দর ফুটফুটে সুন্দর সাস্থের অধিকারি । বিশেষ কোন শারিরীক সমস্যা ছিল না ।যা নিয়ে তাদের মনে কোন দ্বন্দ বা অশান্তি ছিল । ওর যখন ৮ বছর বয়স তখন স্কুল থেকে tour এ দীঘা নিয়ে যায় একদিনের জন্য । সমুদ্রে স্নান করার সময় ঘটনাটি ঘটে । দীঘার সমুদ্র সেদিন খুব উথাল- পাতাল অবস্থায় ছিল । সাধারনত দীঘার সমুদ্র স্থির ভাবই বিরাজমান ,কিন্তু সেদিন প্রাকিৃতিক প্রতিকুলতা বশতঃ দীঘা যেন পাগল পার । , তাইস্কুলের প্রতিটি ছেলেমেয়ের সাথে নুলিয়া দিয়ে সমুদ্রে নাবিয়ে ছিল স্কুল কতৃপক্ষ্য । সবাইএর মত রন ও নুলিয়ার হাত ধরে সমুদ্রে নাবে ।ঢেউএর সাথে খেলতে তার আনন্দের সীমা পরিসীমা ছিল না । ঢেউ গুলি আছড়ে যতবার পরছিল তার ওপর সে চেষ্টা করছিল ঢেউ গুলির ওপর ঝাঁপিয়ে পরতে । নুলিয়া তাকে বলছিল খোকা এরকম করেনা ঢেউ যেমনি আসবে ,তুমি পিছন ফিরে যাবে ,তাতে মজা পাবে ,ওই রকম করলে তোমার লেগেযাবে । কিন্তু রন এমনিতে খুব দামাল প্রকৃতির ছেলে । ও ওইটাতেই আনন্দ পেতে লাগল ।দাপাদাপিতেই ওর আনন্দ । এই ভাবে কিছুক্ষণ চলার পর নুলিয়া দেখল ও আর দাপাদাপি করছেনা ।থেমে গেছে ।নুলিয়া ভাবল ও বোধহয় হাঁপিয়ে গেছে তখন সে ওকে বলল চল ,এবার জল থেকে ওঠ । নুলিয়া তার হাতটা ধরে টেনে নিয়ে চলতে লাগল । কিন্তু সে দেখল ছেলেটি যেন নিস্তেজ হয়ে গেছে । সে তারাতারি তাকে পাঁজাকোলা করে নিয়ে জল থেকে উঠে এল । পারে এসে সে চেঁচিয়ে সবাইকে ডাকতে লাগল । সবাই এসে দেখে রন আজ্ঞান হয়ে গেছে সঙ্গেঁ সঙ্গেঁ তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় । সেখানে ডাক্তার সব রকম টেষ্ট করে দেখে তার ব্রেনে আঘাত লেগেছে । তারা সবরকম চেষ্টা চরিত্র করে সুস্থকরবার জন্য ,কিন্তু ব্যর্থ হয় । তখন ডাক্তার বলে ওকে কোলকাতার কোন বড় হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে । এখানে চিকিৎসা সম্ভব নয় । এদিকে রনের বাড়িতেও খবর দেওয়া হয়েছে । অতনু –নিনা এমনই চিন্তিত ছিল । রন বাড়িতে না থাকাতে তাদের বাড়িটা খালি লাগছিল । যেন অঢেল সময় হাতে কোন কাজ নেই ,মনটা অসস্তির মধ্যে কাটছিল নিনার । ঠিক সেই সময় ওদের ফোনে এই দুঃসংবাদ টি এসে পৌঁছেছিল।
সেইদিনটার কথা নিনা কিছুতেই ভুলতে পারেনা আজও । শরীরের মধ্যে একটা অস্বস্তি জাগে ,মনের মধ্যেক্রোধ জেগে ওঠে । খালি চিন্তা হতে থাকে তার কি ভুল বা দোষ ছিল যার জন্য তার এরকম দিনের সন্মুখিন হতে হল ।আত্মীয় স্বজন তখন আস্বস্ত করে তাকে, “দেখো ও আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে” ,তখন সে ভাবতে থাকে হয়ত তাই । সে সেইটাকেই ধরে রেখে আজ তিন বছর জীবন টাকে হাসপাতাল আর ঘরের মধ্যে সীমাবদ্ধ করে রেখে চলেছে । চিকিৎসাশাস্ত্রের কোন দিকিই বাকি রাখেনি রনের চিকিৎসায় । অতনুও সমস্ত ভাবে নিনাকে সাথ দিয়ে চলে । তার মনে কোন আশা না থাকলেও নিনার ইচ্ছে কে সে সন্মান দেয় তার মনেহয় এই আশায় নিনা ভুলে থাকলে অন্তত নিনা সুস্থ থাকবে । সন্তানের আশা সে ছেড়ে দিয়েছে । কিন্তু ,নিনাকে সেকথা সে বলতে পারে না ।
রনকে সে scientist বানাবে মনে মনে চেয়েছিল । তার ইচ্ছা ছিল রন space research centerএ research করবে । সবই তার জীবনের যে ইচ্ছা গুলি যা সে নিজে পুরন করতে পারেনি ,তা সন্তানের মধ্যে দিয়ে পুরন করার বাসনা । অতনু ছোট থেকে অনেক struggle করে আজ BURN CO.LTD. এর CEO.পদে আছে । মাসে 50,000 Salary .।তার ইচ্ছা সত্যি হত কারন রন ও খুব intellectual ছোট থেকে । তার IQ. Test করে অতনু । সেখান কার report খুবই সন্তোষ জনক । কোন রকম বাধা নাহলে অতনুর ইচ্ছা হয়ত fulfill হত । কিন্তু একটা দুর্ঘটানা জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিল । আজ রনের বিছানায় শোয়া ওই চেহারার দিকে অতনু চাইতে পারে না । তারও মনেমনে ধিক্কার আর ক্রোধ জন্মায় নিজের ওপর । মনে হয় কেবলি অতটুকু ছেলে তার, তাকে সে হারিয়েছে ,তারা কি নিয়ে সারা জীবন থাকবে । অতনুর বাবা মা খুব অবস্থাপন্ন ছিল না ,নিজেরা কষ্টকরেই ছেলেকে বড় করেছে । অতনু নিজেও অনেক struggle করে আজ এই পদে এসেছে ।
বাবামা গত হয়েছে আজ ৫ বছর হয়ে গেল । যদি তারা জীবিত থাকতেন ,তাদের এই দিন দেখতে হত । আর কষ্ট পেতেন । তার মনে পরে, রন হবার আগে থেকেই সে আর নিনা কত স্বপ্ন দেখত ,সন্তান কে নিয়ে । তারপর সেই শুভদিন এল যেদিন রনের জন্ম হল । পুঙ্খানু পুঙ্খ ভাবে সন্তান কে নিয়ম কানুন মেনে বড় করেছিল যেমন যেমন ডাক্তার বা বড়রা বলে ছিল ঠিক সেই সব নিয়ম কানুন তারা ফলো করে ছিল । মাসে মাসে child-specialist check-up করত । কোন ত্রুটি তার শরীরে ছিলনা । রন একটু বড় হবার পর তিন মাস অন্তর তারা বিভিন্ন যায়গায় বেড়াতে যেত । কি সুন্দর ভাবে দিন গুল কাটত । এই যে school এর সাথে tour এ রনকে ছেড়ে দেওয়া এটা অতনুর ইচ্ছা ছিলনা । কিন্তু রনের ইচ্ছা আর জেদাজেদির কাছে ও আর নিনা হার মেনে ছিল । কান্না কাটি দাপা দাপি করে বাবা মা কে বাধ্যকরেছিল ওকে যেতে দিতে ।সব বন্ধুরা যাবে ওযদি না যেতে পারে সেটা তো হবে না । ওকে যেতে দিতেই হবে, না হলে কারো রেহাই নেই । তাই তারা অনিচ্ছা স্বত্তেও তাকে যেত দিয়ে ছিল । ওরা এত জায়গায় tour করেছে কিন্তু কোনদিন কোন অঘটন ঘটে নি । তাই এই ঘটনা তার আর নিনার মনে সন্দেহ র উদয় হয় । কোন negligence নয় তো ? যাই হোক এই নিয়ে আর জল ঘোলা করতে চায় না অতনু –নিনা । কারন তাদের মনের কোনে এই ভাবনা জাগে বিবাদে জড়ালে তাদের ছেলের খারাপ হবে।

এদিকে হসপিটালে ডাক্তার তাদের বলেছে আমাদের সব রকম চেষ্টা আমরা করেছি ,আমরা চাই আপনারা এবার তৈরি হন । আমরা এবার ওর life –supporting গুল আস্তে আস্তে খুলে দেব । আপনারা তৈরি হন । কিন্তু নিনা তাতে কিছুতেই রাজিনয় । তার ধারনা ওকে USA নিয়ে গেলে ও হয়ত ঠিক হবে । অতনু তখন ডাক্তারের কাছ থেকে এক সপ্তাহ সময় চাইল । ডাক্তার রাজি হল । অতনু net এবং video calling এর মাধ্যমে এইরোগের পৃথিবীর সব বিশেযজ্ঞর সাথে যোগাযোগ করল । তাদের সাথে আলোচনা এবং এখানকার ডাক্তার যে যে চিকিৎসা করেছে তার report দিল । সব শুনে তারা বলল আর কোন রাস্তা নেই । যেমন ডাক্তার বলেছে তেমনি চলতে হবে । অর্থাৎ life- supporting খুলে দিতে হবে ।
নিনা শুনে পাগলের মত অবস্থা । তাকে সামলানো তখন দায় হয়ে উঠল । এই সময় অতনুর এক office colleague প্রশান্ত,যে সম্প্রতি ice land এবং green land ঘুরে এসেছে ,সে সেখানে দেখেছে কেমন ভাবে পৃথিবীর শীতল তম স্থান যেখানে কোনদিন বরফ গলেনা সেইখানে মানুষ তাদের প্রিয় জন দের সজীব রাখবার জন্য igloo বানিয়ে রেখে দিয়েছে । সেই গল্প নিনা শুনেছিল। নিনা বলল “ অতনু আমরা ওই ভাবে রনকে পৃথিবীতে ধরে রাখতে পারিনা”? অতনু বলল “নিনা তুমি পাগলাম করোনা । এ অসম্ভব চিন্তা ভাবনা করোনা । তুমি তো জান কি ভাবে আমরা চলেছি । আজ তিন বছর আমাদের হসপিটল ঘর করার ফল স্বরূপ bank balance কোন জায়গায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে। আত্মীয় স্বজন আর নিকটজনেরা ধিরে ধিরে আশা কমিয়ে দিয়েছে । যে আত্মীয় স্বজন হামেশাই তোমার সাথে ফোনে যোগাযোগ রাখত তারা আজ কবার তোমায় ফোন করে খবর নেয় বল ? রনের বন্ধুর মায়েরা কত প্রথম প্রথম আসাযাওয়া করত তারা কি রনের একবারও খবর নেয় । তোমার মা বাবা, আমাদের দুজনের বাকি জীবন কি ভাবে কাটবে সেই চিন্তা টা তো করতে হবে” ? নিনা শুনে পাগলের মত চেঁচিয়ে উঠে বলল , “Stop it ,অতনু তাহলে তুমি ও কি ডাক্তারের মত নির্দয় ভাবে ছেলেটাকে murder করবে”?
অতনু হাঁ করে নিনার মুখের দিকে চেয়ে থাকে । সে উপলব্ধি করল নিনার ব্যাথাটা কোন স্তরে । নিনার মা বাবা সেই টানা তিন বছর নিনা-অতনুর বাড়ীতেই থাকে । মেয়ের এই দুঃখ বেদনা কি ভাবে প্রশমন করবে ভেবে পায়না ।
নিনা ও বোধহয় হসপিটল-ঘর করতে করতে আর হসপিটলে নানা মানুষের দুঃখ দুর্দশা দেখতে দেখতে নিজের মধ্যে নিজেকে পরিবর্তন করবার প্রক্রিয়ার পথে এগোতে থাকে । প্রথম প্রথম যে মনের জোর তার ছিল রন সুস্থ হয়ে উঠবে ,এখন সে সেই আশা আর করেনা । সে হারিয়ে ফেলে নিজেকে । ধীরে ধীরে সে চুপ হয়ে যায় । অবস্থা কে মানিয়ে চলবার চেষ্টা করে । আজকাল সে আর বিশেষ কথাবার্তা বলে না ।নিজের মনেই থাকে ।
অতনু ডাক্তার কে বলে তারা তৈরি । ডাক্তার তার processing শুরু করে দিক । অর্থাৎ life –suporting গুল খুলে দিক ।
আসে সেই শেষের দিন ,অন্তিম মুহূর্ত... রন কি জীবনে ফিরবে না ছবি হয়ে থাকবে অতনু—নিনার জীবনে ?????
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
শরীফ মুহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামান এটি আমার লেখা গল্প নয়।প্রিয় এডমিন কে অনুরোধ জানাচ্ছি কোথায় ভুল হয়েছে সেটা দেখার জন্য। ধন্যবাদ।

১১ মার্চ - ২০২২ গল্প/কবিতা: ৭ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪