মে মাস । সারাদিন প্রচন্ড গরমের পর সজীবরা এখন বিশ্রামরত ।রাতের তারাভরা আকাশ পরিষ্কার । যদিও শান্তভাব চারিদিকে , মুক্তিযোদ্ধারা মনে করে সমুদ্র ঘুমায় শত্রু ঘুমায় না । কমান্ডার করিমের নেতৃত্বে দেশকে স্বাধীন করার শপথ নিয়েছে সজীব সহ আরো ১২জন । প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত আধুনিক অস্ত্র প্রাপ্ত পাকিস্তান বাহিনীর কাছে সজীবরা রোগা পাতলা , খালি পা লুঙি পরা কালো মানুষ । একমাত্র কমান্ডার করিমের চেহারা সুন্দর । তিনি পাকিস্তান এয়ারফোর্সের কর্পোরাল ছিলেন , ছুটিতে দেশে এসে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন । পাক বাহিনী আর রাজাকারদের কাছে মূর্তিমান আতঙ্কের নাম কমান্ডার করিম। কথাটা মনে করেই হেসে ফেলে সজীব ।
আজকে সজীবরা একটা অপরেশনে গিয়েছিল । কমান্ডার করিমের কাছে খবর আসে যে রাজাকাররা গ্রাম থেকে নারীদের তুলে নিয়ে আসছে । তাদের পরিকল্পনা ছিল রসুলপুর ব্রিজ ওরা বিস্ফোরক দিয়ে উড়িয়ে দেবে । সাধারণ মানুষের বেশে জায়গাটা রেকি করে সোহরাব রুস্তম দুই ভাই । তাদের কাভার দেয় সজীব সহ আরো ৫জন গেরিলা । রাজাকারদের দেখে পেয়ে মুক্তিযোদ্ধারা গুলি করতে শুরু করে । এতে রাজাকাররা মাটিতে পড়ে যায় যদিও তখনও তারা মারা যায় নি । সজীবরা তাড়াতাড়ি করে রাজাকারদের অস্ত্রগুলো তুলে নেয়। এদের নৃশংসতা আর অত্যাচারে এলাকার মানুষ এতটাই ক্ষুব্ধ ছিল যে তারা সেই রাজাকারদের মাটির বদনা দিয়ে পিটিয়ে মেরে ফেলে । পাকিস্তান প্রশাসনের শোষণ আর বঞ্চনার হাত থেকে বাংলার মানুষ মুক্তি চেয়েছিল । সজীবের মনে পড়ল স্কুলে বড় ভাইয়ারা তাদের বলেছিল পূর্ব পাকিস্তানে চলছে শোষন আর বৈষম্য । পাট আর চামড়ার আয় দিয়ে উন্নয়ন হচ্ছে পশ্চিম পাকিস্তানে । সজীব আব্বার কাছে শুনেছিল বাঙালী হলে সরকারী চাকরিতে বেশি দূর এগোতে পারবে না । সে জানত না যে চালের দাম পূর্ব পাকিস্তানে যখন ৫০ টাকা ছিল তখন পশ্চিম পাকিস্তানে ছিল ২৫ টাকা । রাজাকাররা পাকিস্তান প্রশাসনের কাছ থেকে অনেক টাকা পেতো বাংলার মানুষ সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে ,মুক্তিযোদ্ধাদের তথ্য দিয়ে হানাদারদের সাহায্য করে।
রাজাকাররা অবস্থান নিয়েছে গ্রামের একটি মাদ্রাসায়। খবরটা শুনেই কমান্ডার করিমের চেহারা উজ্জ্বল হয়ে উঠল । রাশেদ সেটা দেখে বলল ' করিম ভাই , আপনার কি হলো হঠাৎ করে ?'
কমান্ডার করিমের মুখে হাসি , বললেন ' শোন আমরা মা দ্রাসায় আক্রমণ করবো । জলিল তুমি মুরগিওয়ালা সেজে মাদ্রাসার আশেপাশে ঘুরে
দেখে আসবে , দেখবা কতজন আসে যায় সেখানে । আমি চাই রাজাকারদের পর্যুদস্ত করে পাকিস্তানী শাসকদের উপর মনস্তাত্তিক চাপ সৃষ্টি করতে ।'
পরিকল্পনা করা হয় মুক্তিযোদ্ধারা ৩টি দলে ভাগ হয়ে আক্রমণ করবে । নেতৃত্বে থাকবে কমান্ডার করিম , গোপাল দাস আর জলিল মাঝি । মাদ্রাসার পিছনের দিকে থাকবে সজীবরা সহ আরো ২টো দল রাখা হয় ।প্রতিটি দলে ৩-৪ করে গেরিলা যোদ্ধা থাকে । তারা ১টি জি ৩ রাইফেল , ২টি স্টেনগান , ৩-৪টি হ্যান্ডগ্রেনেড ার কিছু বিস্ফোরক নেয় । মাদ্রা সায় ঢোকার রাস্তায় জলিল মাঝি দেখে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাগরিবের নামাজ পড়ার জন্যে অযু করছেন সামনের টিউবওয়েল থেকে পানি নিয়ে ।গেরিলারা ক্ষিপ্রগতিতে এসে অধ্যক্ষকে জিম্মি করে ফেলে ।সঙ্গে সঙ্গে সজীবের দলও উপস্থিত হয়ে যায় সেখানে ।মুক্তিযোদ্ধারা ফাঁকা গুলি ছোড়ে এবং হামলা হামলা বলে উচ্চস্বরে চিৎকার করতে থাকে । এতে মাদ্রাসার ভিতরে থাকা রাজাকারের দলটি অত্যন্ত ভীত হয়ে উঠল ।
এরপরে কমান্ডার করিম স্টেনগান তুলে ধরেন
এবং বলেন , 'অধ্যক্ষ সাহেব আপনার মাদ্রাসার ছাত্রদের কাছে রাখা ২২টি রাইফেল আমাদের কাছে দিতে বলেন । নইলে আপনি আমাদের হাত থেকে বাঁচতে পারবেন না ।"
জিম্মি অবস্হায় অধ্যক্ষ মাগরিবের নামাজটা পড়তে চাইলেন । নামাজ পড়া শেষ করে অধ্যক্ষ মাদ্রাসার ছাত্রদের ডেকে এনে স্হানীয় ভাষায় বলেন ,'ওয়া ইতারা দেশের পোয়া মুক্তিযোদ্ধা তোয়ারা ছাত্র মানুষ এগুন দিয়েরে কি গরিবা, অস্ত্রগুন দি ফেল ।''
অর্থাৎ এরা দেশের ছেলে মুক্তিযোদ্ধা , তোমরা ছাত্র, এগুলো দিয়ে কি করবা, অস্ত্রগুলো দিয়ে দাও।"
অধ্যক্ষের আদেশে মাদ্রাসার ছাত্ররা অস্ত্রগুলো দিয়ে দেয় । মুক্তিযোদ্ধারা অধ্যক্ষকে শাসিয়ে যায় এই বলে যে , ভবিষ্যতে যেন এখানে কোনপ্রকার রাজাকার প্রশিক্ষণ না দেয়া হয় এবং পাকিস্তানী বাহিনীর সাথে কোনপ্রকার সহযোগিতা করা না হয় ।
এই অপারেশনে মুক্তিযোদ্ধারা ২২টি ৩০৩ রাইফেল ও প্রচুর গুলি পায় , বিভিন্ন আক্রমণে তাদের অনেক কাজে লাগে এই সব রসদগুলো । এই অপারেশনে রাজাকারদের মনোবল বেশ দুর্বল হয়ে পড়েছিল এবং মুক্তিযোদ্ধারা আরো আত্নবিশ্বাসী হয়ে উঠল যুদ্ধজয়ের জন্যে । সজীব আব্বার রেডিওতে বঙ্গবঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণটি শুনেই স্বাধীনতার ঘোষণা পান । যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে ঝাপায় পড় , এই ঘোষনায় মানুষকে স্বাধীনতা অর্জনে উজ্জীবিত করে । 'আর্মি আসতেছে '--শুনতে পেলেই গ্রামের মানুষ লাঠিসোঁটা , দা , বল্লম খুরপি নিয়ে প্রস্তুত হতো । পাকিস্তানী সেনা বাহিনীর স্টেনগান আর মেশিনগানের কাছে এসব কিছুই না এটাই তখন কারোরই মনে আসে নি ।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা
ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য
দেশকে স্বাধীন করার লক্ষ্য মানুষ উজ্জীবিত হয়েছিল , একতাবদ্ধ হয়েছিল । যারা দেশের মানুষের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে হানাদারদের সাহায্য করেছিল তাদেরকে দেশের সাধারণ মানুষ ঘৃণার চোখে দেখেছে আর যারা দেশের জন্যে জীবন দিয়েছে তারা পেয়েছে বীরের সন্মান ৷ দেশের মানুষের মনে তারা অমর হয়ে থাকবেন ।
২৪ নভেম্বর - ২০২১
গল্প/কবিতা:
৩ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।