পাড়াগাঁর অপরাহ্ন। সোনালি রোদের নিভু নিভু নরম আলোতে স্বপ্ন ও বেদনার গন্ধ লেগে আছে। বাতাসে ধানের শব্দ। জলসিঁড়ি নদীটির পাশের বিশীর্ণ বট গাছটি তার শাখা-প্রশাখা বিস্তার করে যেন গল্প-কাহিনী আর স্বপ্নের বাসা বেঁধেছে। জলে তার মুখখানা দেখা যায়। গাছের ঘন ছায়ার নিচে বিজন ঘাসের বুকে শুয়ে আছে এক তরুন। অপরাজিতা সদৃশ দূর আকাশ পানে চেয়ে কি জানি ভাবছে। দূরে নীল শুপুরির বন বাতাসের দোলায় ধীরে ধীরে কাঁপছে। নদীর ঘাটে তেমন কেহ নেই। ছোট্ট একটি ডিঙি ভাসছে জলে, মালিক কোথায়? কে জানে! তরুন তাঁর প্রেমিকার অপেক্ষায়। কখন আসবে জানা নেই। শেষবার তার সাথে যখন দেখা হয়েছিল মাঠের উপরে, তখন বলেছিল:
“জলসিড়ি নদীপারে দেখা করতে আসব, সন্ধ্যার কিছু আগে।”
হঠাৎ তরুণের চোখে পড়ল নদীর নিচু পার। যেখানে হেলেঞ্চার ঝোপ গড়ে উঠেছে। ওখান থেকে উঠে আসছে এক কিশোর। এক মাথা চুল। পরণে লুঙ্গি, গায়ে একটা চেক শার্ট। চোখে-মুখে উজ্জ্বল হাসির ঝলক। ডান হাতে তলতা বাঁশের ছিপ। ওর বাঁ হাতে ঝুলছে একটা ডুলা-তাতে মাছ। কিশোর আরো কিছুটা নিকটে এলে তরুণ জিজ্ঞেস করল: কি মাছ ধরলে?
হঠাৎ কথা শুনে কিশোর চমকে গেল। এরপর তরুণকে দেখতে পেয়ে আস্তে আস্তে সামনে এসে দাঁড়াল। তারপর মাথা নিচু করে তরুণের মুখপানে তাকিয়ে একগাল হেসে বলল: চিতল।
: বাহ্ বেশ। কয়টা?
: একটাই।
: থাক কোথায়?
: ঐ দিকে।
কিশোর বাঁশবনের পিছনের দিকটা ইশারায় দেখাল। এরপর শুকনো পাতা-ছাওয়া ঘাস মাড়িয়ে বাঁশঝাড়ের নিচের পথ দিয়ে চলে গেল ।
তরুণ উঠে বসল। রাঙা রৌদ্রে মাছরাঙার দল উড়ে চলছে ডানা ঝিলমিলিয়ে। এখুনি সন্ধ্যা আসবে। মেয়েটির জন্য অপেক্ষা করতে করতে তরুণ একসময় কাঁটাবহরের ফল আহরণ শুরু করল। তবে কিছু ক্ষণ পর পর পায়ের ধ্বনির দিকে কান পেতে
রাখল। হঠাৎ গোধূলির ম্রিয়মান আলোয় নদীর নরম মুখের পানে তার চোখ পড়ল। তরুণের মনে পড়ে গেল প্রেমিকার মুখখানি, আর প্রথম প্রেমের মুহূর্তটি।
সময়টা ছিল আষাঢ়ের দু’প্রহর। বাদলের কোলাহলে আকাশে মেঘের ছায়া ঘনিয়ে এসেছে। পাড়াগাঁয়ের পথে যেখানে আম-জাম-কাঁঠালের ঘন সারি, সেখানে দিয়ে তরুণ চলছিল বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে। হঠাৎ চোখে পড়ল নদীর চড়ার কাছে যে কাঁঠাল গাছটি, তার তলে একটা মেয়েটি দাঁড়িয়ে।
বাদলের জলে নদীর চড়ায় গাংশালিকের ঝাঁকরা খেলা করছিল। মেয়েটি তা দেখছিল একা দাঁড়িয়ে। মেয়েটি যেন আবহমান বাঙালি নারীর প্রতিরূপ। কড়ির মতন শাদা মুখ,তাতে মায়া-মমতা মাখা চাহনি। পাখির নীড়ের মত গভীর চোখে কাজল । ক্ষীরের মতো মৃদু দেহে জড়িয়েছে নক্সাপেড়ে শাড়ি। এলোচুল ছড়িয়ে রয়েছে পিঠে। হাতে কাঁকন।
তরুণ থমকে দাঁড়াল। তার স্বপ্নায়ত মনে নবীনাগতার মুখখানি নিয়ে এলো এক গভীর প্রেমের আহ্বান। মেয়েটিকে ভালো লাগল তার।
আস্তে আস্তে এগিয়ে গিয়ে তরুণ পাশে দাঁড়াল। মেয়েটি শুধু একবার ফিরে তাকাল তার পানে। কিছু বলল না। চুপচাপ নদীর দিকে চেয়ে রইল, তরুণও । কথা বলতে চাইল তরুণ, নাম জিজ্ঞাস করতে ইচ্ছা হলো। কিন্তু কিছুই বলতে পারল না, শুধু মনের মধ্যে ভাললাগার অনুভূতিটা ঝাঁপিয়ে উঠতে লাগল।
হঠাৎ মেয়েটি চলে গেল। তরুণ কিছুক্ষণ সেখানে দাঁড়িয়ে রইল। তারপর ফিরে চলল।
সেদিন তরুণ অনেকক্ষণ হেঁটে ছিল। বৃষ্টিতে শাদা ধুলো জলে ভিজে মলিন হয়ে ছিল পথ। ম্লান গন্ধ মাঠে ক্ষেতে। হাঁটতে হাঁটতে তরুন ভাবছিল রূঢ় পৃথিবীর কঠিন বাস্তবতায় হৃদয়ে প্রেমের দিন বেশী দিন স্থায়ী হয় না। রূপ, প্রেম- এগুলো খোসার মতন নষ্ট ম্লান, একদিন তাদের অসারতা ধরা পড়ে। এই বোধ মনের মধ্যে জাগ্রত হলেও, সব চিন্তা ছাপিয়ে মেয়েটির মুখ তরুণের চেতনায় জেগে উঠছিল বারবার। স্বাতীর মতন রূপের বিচিএ বাতি নিয়ে এসেছে সে যেন। যা মুহূর্তে তার মনকে গভীর শিহরণে ভরে দিয়েছিল।
এরপর মেয়েটির সাথে তরুণের আরেকদিন দেখা হয়েছিল জামরুল বনে । এক দুপুরে জনবিরল সে বনের হিজল গাছের ছায়ায় তরুণ ঘাসের বুকে মুখ গুঁজে পড়ে ছিল একা। হঠাৎ খসখস আওয়াজ। মুখ তুলে দেখল নীল শাড়ি পরে সেদিনের সেই
মেয়েটি। হয়ত দুপুরের অবসরে ডাঁশা আম, জামরুল ও কামরাঙা কুড়াতে এসেছে সে। তার মৃদু কাঁকনের শব্দ রিমঝিম বাজচ্ছে। তরুণকে দেখে কোঁচড়ের কামরাঙার কথা ভুলে মেয়েটি মুখ তুলে চাইল। তরুণ শুধাল: কি নাম?
উওর দিল না কিছু। শুধু মাথা নিচু করে হাসল। কতো কথা বলতে চাইল তরুণের। জানতে ইচ্ছে করল হাতে ধরা কামরাঙা সে কারে দিবে।
মেয়েটি চলে যাবার আগে আস্তে করে শুধু বলে: শঙ্খমালা।
সেই থেকে শঙ্খমালা ও তরুণের প্রেমের সূচনা । আরো কয়েকবার তাদের দেখা হয়েছে । একদিন সন্ধ্যাবেলা পুকুরের ধারে। কলমীদাম জন্মেছিল সে পুকুরে। তার জলে নীরবে পা ধুয়ে শঙ্খমালা নামের মেয়েটি চলে গিয়ে ছিল কুয়াশার আঁধারে। এরপর আরেকদির দুপুরের রৌদ্রের ভিতর জলসিড়ি নদীর ঘাটে ভালো করে পরিচয়। ধীরে ধীরে বাড়ল সখ্যতা। তারপর প্রণয় গাঢ় হল।
মৃদু ঘাসে একা একা বসে সে-সব স্মৃতি মনে করে তরুণের ভাল লাগছে। হঠাৎ ভাবনা জাগল: আজ কি দেখা হবে! আসবে কি শঙ্খমালা আজ এই পথে!
মনে পড়ে গেল কত দিন সন্ধ্যার অন্ধকারে তারা দু’জন দেখা করেছে। আনারসী শাড়ির আঁচলে কয়েকটা নাটাফুল তুলে শঙ্খমালা ফিঙ্গার পাখনার মতো কতদিন ঘাসের বুকে তার পাশে এসে বসেছে। দূর থেকে ভেসে আসতো গাজন গানের সুর। দু’জনে অন্ধকারে বসে তা শুনতে শুনতে দেখেছে বাদুরের অবিরত আসা-যাওয়া, বলেছে ছেঁড়াফাঁড়া কত মাঠ ও চাঁদের কথা। কখনও বা খড়ের চালের নিচে মুখোমুখি বসে প্রত্যক্ষ করেছে সন্ধ্যার ধূসর আলোয় কি আশ্চর্য এক খেলা চলছে হিজল-জামের ডালে।
সে এক দারুণ সময় কেটেছে। মাঝে মাঝে তাদের মধ্যে ঝগড়াও হয়েছে। একবার শঙ্খমালা আড়ি করে চলে গিয়েছিল- আসবে না আর বলে। ক্ষীরুই গাছের পাশে একাকী দাঁড়িয়ে তরুণ কতক্ষণ অপেক্ষার প্রহর গুনেছে। তারপর অভিমানহত হয়ে ফিরে যেতে যেতে ভেবেছে: কোনোদিন আর দেখা করব না তার সাথে।
ঘাসের বুকে বসে তরুণ সেসব কথা মনে করে হাসে। কতো দিনের পরিচয় তাদের। কত মান-অভিমানের মধ্য দিয়ে সময় কেটেছে তাদের।
এখনো সন্ধ্যা নামে নি। চাষিরা ফিরছে মাঠ থেকে। জলসিঁড়ি নদীর জল থেকে ভেসে আসা গন্ধে ভরে রয়েছে ভিজে সিগ্ধতীরের চারপাশ। তরুণ বসে থাকে চুপ করে। চারদিকে মৃদু কলরব। একটি গরুর গাড়ি মেঠো পথ ধরে ধীরে বেয়ে চলেছে। দূর একাকী মাঠের ঐধারে কে যেন দাঁড়ায়ে আছে। আরো দূরে একটা স্তব্ধ খোড়ো ঘর পড়ে আছে। সেখানে কেহ কি থাকে- কে জানে? শঙ্খমালার দেরি দেখে তরুণ ভাবছে: আজ এতো দেরি করছে কেন? ওর বাড়ির কাছে গিয়ে দেখব নাকি!
আবার ভাবে: না থাক! কেহ যদি দেখে ফেলে! হয়ত ও এখনি আসবে।
সহসা সন্ধ্যা নামে। সোনার মতো আলো ছড়িয়ে পড়েছে সারা আকাশ জুড়ে। আশ্চর্য বিস্ময়ে তরুণ চেয়ে থাকে সেদিকে। কি রকম এক অনূভুতিতে ভেরে যায় তার মন। তরুণ ভাবে, তার বাঙালি মন প্রেমিকার অপার সৌন্দর্যের মতন এই বাংলার রূপেও মুগ্ধ । এই মুগ্ধতায় বাংলার প্রকৃতির সৌন্দর্যকে সে দেখল নারীরূপের চিএকল্পে। নীল সন্ধ্যার স্নিগ্ধ আলোকছটা কেশবতী কন্যার অজস্র চুলের বিন্যাসে হয়ে যেন তার চোখে-মুখে ভাসতে লাগল। তরুণ তার জীবনে চলার পথে অনেক ব্যথা-বেদনা সহ্য করেছে। মমতাময়ী দেশমাতার প্রকৃতি তার সে বেদনাকে ধুয়ে দিয়েছে। শ্যামা আর খঞ্জনার এই দেশে সে যে সুখ ও শান্তি খুঁজে পেয়েছে, এমনিটি আর কোথাও পায় নি।
তরুণের জীবন কেটেছে এই পাড়াগাঁয়ে। তার শৈশব-কিশোর দিনগুলো অতিবাহিত হয়েছে এই বাংলার পরিচিত বাঁশবনে খেলা করে, শুকনো পাতা-ছাওয়া মাটির পথে হেঁটে। সেই শৈশব থেকে সে দেখেছে জলসিড়ি নদী পারে বাংলার এই মাঠে মাঠে ধান কাটা হয়ে গেলে পড়ে থাকে শুকনো খড়। আর সেই শুকনো খড়কুটো থেকে চড়ুইিএর দল খুঁজে ফেরে খাদ্য। বাংলার পথে-প্রান্তরে ছড়িয়ে রয়েছে কত না গল্প-কাহিনী। যুগান্তরের সেই গল্প-গাথা উপেক্ষা করে সে কখনও বিদেশে যেতে আগ্রহী হয়নি। কারণ এ বাংলায় প্রাণের স্রোত বয়। তার বাঙালি মন সোনালি রৌদ্র, নীলাভ আকাশ আর নক্ষত্রের দেশকে ভালবাসে। বাংলার নির্জন আকাশ তলে কতদিন সে অকারণে ঘুমে ঢুলে পড়েছে। বাসকের গন্ধ পেয়েছে। দুপুরেরর রোদে শুয়ে আনারস ফুলে ভোমরের উড়াউড়ি দেখেছে। দেখেছে নদীর বুকে শাদা ছেঁড়া পালে কোন এক কিশোর ডিঙা বেয়ে যাচ্ছে। কৃষাণ বাড়ির উঠানে খইয়ের ধান ছড়িয়ে রয়েছে। এসব দেখেছে আর ভেবেছে এই ঘুঘু ডাকা রূপসী বাংলা আর এর নৈসগির্ক পরিবেশ তার খুবই প্রিয়।
তরুণের চোখে সমস্ত পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর হচ্ছে এই সবুজ ডাঙা। এর পদ্মা-মেঘনা-কর্ণফুলী- ধলেশ্বরীর অবিরল ধারার মধ্যে যে সৌন্দর্য আছে তা বিশাল পৃথিবীর অনেক অনেক সৌন্দর্যকে হার মানায়। নদীর ধারে ধানগুলো বাতাসের দোলায় যখন ঝিরঝির শব্দ করে তখন সেদিকে তাকিয়ে সে ভুলে যায় সব ক্লান্তি-বেদনা আর দুঃখবোধ। নিজেকে তার কবি মনে হয়, হৃষ্ট কবি। তার কবিমন ভালবাসে দুপুরের রাঙারোদ, শালিধান, ঘাস, কাশবন আর বাংলার নীল সন্ধ্যা। ওই দূর আকাশের নীল লাল তারা ও নক্ষত্রের শিখায় যেন মিশে আছে কোন এক রহস্যের কুয়াশা- সেদিকে তাকালে তার মন স্বপ্নের গন্ধে কেঁদে ওঠে।
স্বপ্ন দেখে তরুণ। বাংলার পার ছেড়ে সে কোথাও যেতে চায় না। এই ডাঙার রূপ-সৌন্দর্যে তার প্রাণ জুড়িয়েছে তাই পৃথিবীর রূপ খুঁজতে সে আগ্রহী নয়। তার ভালো লাগে জানালার ফাঁক দিয়ে ভোরের সোনালি রোদ দেখতে। শিশিরের জলে চালতা ফুল ভিজছে, অশ্বত্থের পাতা পড়ে আছে পাড়াগাঁয়ের ম্লান ধূলোময় পথে, চড়ুই খড়কুঠো উল্টায়ে ফিরছে- এ সমস্ত দৃশ্যের মাঝে সে খুঁজে পায় প্রশান্তি। এগুলো ছেড়ে সে কোথাও যেতে চায় না। রাতের আকাশে নক্ষত্র নীল ফুল হয়ে ফুটে রয়। তরুন ভাবে: যখন মরণ আসবে,এই বাংলার অবিরল সবুজ ঘাসের বুকে যে মউরির গন্ধ আছে, বুক ভরে তা নিঃশ্বাসে ভরে আমি ঘুমিয়ে পড়ব।
তরুণের ভাবনারাশি আকাশের যাযাবর মরালের মতো নতুন স্পন্দন খুঁজে ফেরে। অবিরাম চিন্তারাশি জেগে ওঠে তার মনে। তরুন ভাবে শঙ্খমালাকে ভালোবেসে সে আজ প্রেমিক। তবে শুধু প্রেয়সীর প্রেমিক নয়, স্বদেশ ও প্রকৃতির প্রেমিকও বটে।।
সন্ধ্যার শান্ত নীরবতায় চারদিক ছেয়ে যাচ্ছে। এখনও আসেনি শঙ্খমালা । তরুন যেন তলিয়ে যায় নিজের মনের মধ্যে। আকাশে কমলা রঙ ফুটে উঠেছে। আর হয়ত আসবে না মেয়েটি। কোথাও শব্দ নেই। ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক শোনা যাচ্ছে। কে যেন দূর থেকে হেঁকে উঠেছে: কে যায়, বাতাসে ঐ আওয়াজ থেকে থেকে কাঁপছে। তরুন এক দৃষ্টে চেয়ে রইলো পথের পানে। কোন মনোবেদনা নয় বরং এক প্রশান্তিময় অনুভূতিতে ছেয়ে যায় তার অন্তর।
ধীরে ধীরে তরুণ এগিয়ে চলে মাঠের কোণ দিয়ে। আর মনে মনে ভাবে: হয়ত একদিন কুয়াশার এই মাঠে তারে খুঁজতে শঙ্খমালা আর আসবে না। জ্যোৎস্নায় আসবে না, প্রভাতে আসবে না। দুপুরের রোদে কিংবা ধূসর সন্ধ্যায় নদীর ধারে আর তার দেখা মিলবে না । হয়ত পাড়াগাঁর পথে তার সাথে কোনোদিন আর দেখাই হবে না। তরুণ ভাবে: কি বা, হায়, আসে যায়, তারে যদি কোনোদিন না পাই আবার।
হয়ত একদিন শূন্যতায় স্তব্ধতায় ফিরে দেখবে কেউ নেই পাশে। কথা ফুরিয়ে যাবে। হৃদয়ের পথ- চলা শেষ হবে। প্রাণের গল্প ধীরে ধীরে মুছে যাবে। তরুণ ভাবে: একদিন আমিও মুছে যাব। সেই কথা ভেবে চোখ ভিজে আসে। তবু তরুণের মনে জন্ম নেয় না কোন অতৃপ্তিবোধ। কারণ মৃত্যুর পর বাংলার নীল তীরে সে শুয়ে থাকতে পারবে। এটা ভেবে মে শান্তি পায় মনে। তার ভাবে তাকে তৃপ্তি দিয়েছে এই বাংলার সোঁদা মাটির প্রকৃতি। যেখানে সে বেঁধেছে তার স্বপ্নের ঘর।
মাঠের কোণে অশত্থ গাছটির কাছে এসে থমকে দাঁড়াল তরুণ। ভাবল, তার হৃদয় থেকে স্বদেশ, প্রকৃতি ও শঙ্খমালার প্রতি এই যে ভালবাসা ও প্রেমানুভূতি তা শেষ হবার নয়। প্রেম যে শুধুই প্রেম । স্বপ্ন নিয়ে বেঁচে, বাঁচতে সে জানে। বাঙালি নারীকে সে ভালবেসেছে। তার কাছে মন বিকিয়ে দিয়ে সে শান্তি খুঁজে পেয়েছে। আবার বাঙালি নারীর কাছ থেকে পাওয়া বেদনাবোধ থেকে মুক্তি পেতে তাকে সাহায্য করেছে বাংলারি নৈসগির্ক পরিবেশ।
তরুণ ভাবে: যদি মরণ আসে-তবু কোন দুঃখ থাকবে না আমার মনে। কারণ জীবন আমার কেটেছে এই বাংলায়।
বাঙালিদের ভীড়ে, কীতন ভাসান যাএা পাঁচালী আর রূপকথার নিবিড় ছন্দে কাটিয়েছে তার জীবন। বাংলার প্রকৃতির নিবিড় সান্নিধ্যে আর বাঙালি নারীকে ভালবেসে। যদি মৃত্যু আসে তবে অন্ধকারে নক্ষত্রের আলো জ্বলা আকাশের নিচে আম-জাম-কাঁঠালের এই দেশে এই বাংলায় সে শুয়ে থাকতে পারবে। এর চেয়ে বেশী আর কোন সাধ তার নেই ।
তরুন এগিয়ে চলে অন্ধকারে । যেতে যেতে দেখে বাবলার আঁধার গলিতে জোনাকির কুহকের খেলা। তার চোখে এই সবুজ ডাঙা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ রূপসী বাংলা। জন্ম-জন্মান্তর ধরে এই দেশের প্রতি তার নিরন্তন ভালবাসা। বাংলার ফুল-ফল, পাখি, তরুলতা, মেঠো চাঁদ- সব কিছুর মাঝে সে খুঁজে পেয়েছে অপার প্রশান্তি। এক শুদ্ধ প্রেমিকের মতো সে তার প্রেয়সীর সাথে সাথে স্বদেশের সৌন্দর্য ও ঐশ্বর্যেও মুগ্ধ ও পরিতৃপ্ত।
স্বদেশের প্রতি বিনম্র ভালবাসায় জলাঙ্গীর ঢেউয়ে ভেজা এ সবুজ ডাঙায় আবার ফিরে আসার আকুতি তরুণের মনোলোক জুড়ে বার বার ধ্বনিত-প্রতিধ্বনিত হতে থাকে।
নতুন স্পন্দন, নতুন আগ্রহ ও স্বপ্ন নিয়ে সে ফিরে চলে ঘরে।
লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা
ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য
রূপসী বাংলা কবি জীবনানন্দ দাশের আতীব্র দেশপ্রেমের কাব্য। কবিতার পর কবিতায় বাংলাদেশের রূপ-প্রকৃতির বন্দনা যেভাবে করা হয়েছে, আধুনিক কালে তা হয়নি। সেই কবিতাগুলোর আলোকে কল্পনার রঙ মিশিয়ে একটি ছোটগল্প লেখার সামান্য প্রয়াস। ধন্যবাদ।
১৯ আগষ্ট - ২০২১
গল্প/কবিতা:
১৬ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪