অপরিচিতা

ভয় (সেপ্টেম্বর ২০২১)

মোঃ রিয়াজুল ইসলাম
  • 0
  • ৩৩৩
ভোর রাত থেকে একটানা বৃষ্টি হচ্ছে। এত বৃষ্টি আগে কখনো হয়েছে কি না সন্দেহ? এমন অবস্থায় সকাল ৮ টায় অলসতা ভরা ঘুম ভাঙ্গে অপুর পুরো নাম অপূর্ব হাসান। সাদা সিদে মিডেল ক্লাস পরিবারের ছেলে। একটি বেসরকারি মেডিসিন কোম্পানি তে জব করে ভালোই বেতন পায়। ঢাকায় বন্ধু রাকিবের সাথে একটি ফ্লাট ভাড়া করে থাকে। যাই হোক সকাল বেলা ঘুম থেকেই উঠে অপু দেখলো ঘর পুরো অন্ধকার। এমন যে সকাল না রাতে বোঝা কষ্ট কর। মোবাইলের টর্চ অন করে ঘরের লাইটের চুইচ জ্বালানো কিন্তু কারেন্ট নেই। অপু রুম থেকে বেড়িয়ে রাকিব কে ডাকছে। কিন্তু কোন সারা পেল না। রাকিবকে ফোন দিল কিন্তু ফোন বাসায়। অপু মোবাইলের লাইট দিয়েই ফ্রেশ হয়ে নিল। প্রায় দশ মিনিট পড় কলিং বেল বাজলো। অপু দরজা খুলতেই দেখল রাকিব আধা ভেজা অবস্থায় এসেছে।
অপুঃ কি রে কোথায় ছিলি এতক্ষণ? ফোনও বাসায়।
রাকিবঃ আরে বলিস না চার্জার লাইট বন্ধ হয়ে গেছে তাই মোমবাতি আনতে গিয়েছিলাম। সাথে নাস্তাও নিয়ে আসলাম।
অপুঃ যাক ভালো করছিস তুই চেঞ্জ করে আয়।
রাকিবঃ ঠিক আছে।

অপু ও রাকিব নাস্তা করে নিল। প্রায় তিন ঘন্টা পার হয়ে গেছে। দিনের ১২ টা বাজে। বৃষ্টি কিছুটা কম। আজ অফিস ছুটি ছিল তাই কাজো নেই অপুর সময় কাটছে না কারেন্ট ও নেই।

তাই অপু বাহিরে গেল। ছাতা নিয়ে রাস্তায় এক পাশ দিয়ে হাটছে। কিছু পথ এগিয়েই অপুর সামনে একটি কালো রং এর গাড়ি থামলো। দেখেই বোঝা যাচ্ছে গাড়িটা বেশ দামি। গাড়ির সামনের কাচ একটু নিচে নামলো একটি মেয়ে ড্রাইভার সিটে ছিল মেয়েটির চেহারা তেমন দেখা যাচ্ছে না। মেয়েটি অপুকে ডাকলো।

মেয়েঃ হ্যালো ভাইয়া। একটু শুনবেন।
অপুঃ জ্বি আমাকে ডাকছেন?
মেয়েঃ আশে পাশে তো আর কেউ নেই আপনাকেই ডাকছি।
অপুঃ জ্বি বলুন (সামনে গিয়ে)।
মেয়েঃ এখানে আশে পাশে কোন এটিএম বুথ আছে?
অপুঃ এটিএম বুথ এই তো সামনে আছে কিন্তু সেটা বন্ধ।
মেয়েঃ ওহ তাহলে কি করব?
অপুঃ সামনে আরো একটা আছে কিন্তু একটু দুর হবে।
মেয়েঃ সমস্যা নেই আপনি বলুন আমি ম্যানেজ করে নিব।
অপুঃ এই তো সামনে গিয়ে টার্ন নিবেন একটু এগুলেই পেয়ে যাবেন।
মেয়েঃ ওহ থ্যাংকস ভাইয়া। আপনি কোথাও যাবেন ড্রপ করে দেই?
অপুঃ না সমস্যা নেই আমি হাটতেই বেড়িয়েছি। আপনি সাবধানে যাবেন।
মেয়েঃ নাইস টু মিট ইউ থ্যাংস এগেন। বায়।
অপুঃ বায়।

অপু এবার বাসার দিকে হাটছে। আর মন মনে চিন্তা করছে যে মেয়েটার কথাগুলো ভালো. বড় গাড়িতে এসেছে। তাহলে দেখতেও ভালোঈ হবে। এভাবে চিন্তা করতে করতে অপু বাসায় এসে পৌছালো। অপু বাসায় পৌছে রাকিবের সাথে কথা বলছে। কারেন্ট এসেছে এখন খাবার নিয়ে চিন্তা করছে।

অপুঃ কারেন্ট আসলো কখন?
রাকিবঃ আসছে কিছুক্ষণ। দোস্ত এখন বল তো দুপুরে কি করা যায়?
অপুঃ বাইরে যা অবস্থা দেখলাম সব বন্ধ। কিছুই তো খোলা নেই। কি করব?
রাকিবঃ তাহলে! খালার ও তো খবর নাই।
অপুঃ তাহলে আর কি? চল আমরা নিজেরাই ভাজি ভর্তা করে চালিয়ে দেই।
রাকিবঃ চল তাহলে আমি কিন্তু একা রাধতে পারব না।
অপুঃ আচ্ছা ঠিক আছে আমিও হেল্প করছি। রাকিবঃ ঠিক আছে আয়।

রাকিব অপু রান্না করে খেয়ে নিল। কিছুক্ষণ পড় আবার বৃষ্টি শুরু হয়েছে তবে এবার খুব জোড়ে না আস্তেই হচ্ছে। অপু খেয়েই শুয়ে পড়েছে। বৃষ্টির দিনে ঠান্ডা আবহাওয়াতে বেশ ভালোই ঘুম আসে। সেই সুযোগটা হাতছাড়া না করে অপু কিছুক্ষণ শান্তির ঘুম ঘুমালো। রাকিব ও অবশ্য ঘুমিয়ে ছিল। সন্ধ্যা হয়ে এসেছে ছয়টা বাজে। অপুর ফোনে একটা কল এলো। অপু বস মি.ফজলে কবির কল করেছেন। মি.কবিরের ফোন দেখে অপুর ঘুম ভাঙ্গলো। অপু তাড়াতাড়ি ফোনটা রিসিভ করলো।
অপুঃ হ্যালো আসসলামুইলাইকুম স্যার। মি.কবিরঃ হুম ওয়ালাইকুমআসসলাম কেমন আছো অপু?
অপুঃ জ্বি স্যার ভালো আছি। আপনি ভালো আছেন?
মি.কবিরঃ ভালো আছি। রাকিব কি তোমার সাথে আছে?
অপুঃ বাসায় আছে স্যার কিন্তু অন্য রুমে। মি.কবিরঃ আচ্ছা ছুটির দিন তারপরও বিরক্ত করলাম তোমাদেরকে একটা কাজ করতে হবে।

অপুঃ কি কাজ স্যার?
মি.কবিরঃ তোমরা দুজনে একটু অফিসে চলে আসো। একটা জিনিস তোমাদের নিয়ে যেতে হবে। মানে ডেলিভারি করতে হবে।
অপুঃ কিন্তু স্যার ডেলিভারি দেয়া তো আর আমাদের কাজ না।
মি.কবিরঃ আমি জানি কিন্তু আপতত কেউ নেই যাকে পাঠাবো। আর খুবই ইনপরটেন্ট একটা কেস তোমাদের উপরই ভরাসা করছি। প্লিজ একটু তাড়াতাড়ি এসো তোমরা।
অপুঃ আচ্ছা ঠিক আছে স্যার আমরা আসছি।

মি.কবিরঃ ঠিক আছে বায়। অপু ফোনের দিকে তাকালো দেখলো ৬টা বাজে। অপু বিছানা থেকে নেমে হাত মুখ ধুয়ে নিল। তারপর রাকিবের রুমে গিয়ে রাকিবকে ডাক দিলো।
অপুঃ রাকিব এই রাকিব দোস্ত দরজা খোল। রাকিবঃ হুম বল কি হয়েছে? (দরজা খুলে)
অপুঃ আরে কবির স্যার ফোন করছে অফিসে যেতে বলল আমাদের তাড়াতাড়ি।
রাকিবঃ কেন? ছুটির দিনে আবার কি? তাও এত বৃষ্টিতে?
অপুঃ আমি এত কিছু জানি না। বলল ইনপরটেন্ট একটা জায়গায় যেতে হবে।
রাকিবঃ ধুর ছুটির দিনো শান্তি নাই। যা রেডি হয়ে আসছি।
অপুঃ আচ্ছা আয় তাড়াতাড়ি।

অপু আর রাকিব বাসার নিচে নামলো। এবার তারা গাড়ির জন্য দাড়িয়ে আছে। বৃষ্টি নেই দোকানও খুলেছে। অপু বলে উঠলো ।

অপুঃ যাক বাবা বৃষ্টিও নেই আর দোকান পাটও খুলেছে।
রাকিবঃ তাতে কি হয়েছে? অফিসতো যাওয়া লাগছে।
অপুঃ তাও ঠিক।
অপু একটি CNG দেখতে পেয়ে দাক দিলো।
অপুঃ ঐ দেখ একটা CNG।
অপু রাকিব CNG তে উঠে অফিসের জন্য রওনা দিল।

কিছু সময় পর তারা অফিসে পৌছালো। অফিসে গিয়ে সোজা মি.কবিরের রুমে ঢুকলো।

অপুঃ মে আই কাম ইন স্যার? (গেট নক করে) মি.কবিরঃ আরে অপু প্লিজ কাম। সিট।
রাকিবঃ থ্যাংক ইউ স্যার।
মি.কবিরঃ সরি বয়েজ ছুটির দিনও তোমাদের ডাকলাম। কিন্তু চাকরিটাই এমন। নাহলে আমিও তো আসতাম না। উপর থেকে খুব চাপ দিচ্ছে।
অপুঃ না স্যার বলুন কি কাজ?
মি.কবিরঃ তোমাদের দুজনকে একটা জায়গায় যেতে হবে। ঘন্টা ২ এর পথ। গিয়ে দুইটা জিনিস দিতে হবে। এই তার ঠিকানা। (একটা কাগজ হাতে দিয়ে)
অপু আর রাকিব কিছুটা আশ্চর্য হলো। এমন একটি জায়গায় কি দিতে হতে পারে?
অপুঃ কিন্তু স্যার এটা তো মর্গের ঠিকানা। মি.কবিরঃ আমি জানি। এটা একটা মর্গেরই ঠিকানা। তাই তো আমি তোমাদের পাঠাচ্ছি। কোন সাধারণ ডেলিভারি বয় এই মেডিসিন নিয়ে যেতে পারবে না। অপু রাকিব কথা গুলো শুনে অবাক হচ্ছে।

রাকিবঃ স্যার যদি কিছু মনে না করেন একটা কথা জানতে পারি কি?
মি.কবিরঃ এমন কি নিয়ে যেতে হবে যে আমাদেরই পাঠাচ্ছেন?
মি.কবিরঃ রাকিব তোমরা তো মানুষের ঔষধ বানাও কিন্তু এখন যেটা নিতে হবে সেটা লাশের জন্য।
অপুঃ লাশের জন্য মানে? স্যার আমাদের কোম্পানি তো লাশের কোন কেমিক্যালই বানায় না।
মি.কবিরঃ আমাদের কোম্পানি এইটা নতুন তৈরী করেছে। এ তৈরির জন্য আলাদা লোকও আছে। এটা সেই ভাবে ডাক ঢোল পিটিয়ে বাজারে ছাড়া হয় নি। খুব বেশি ক্ষতিকর না। কিন্তু রাস্তা ঘাটের যে অবস্থা সাবধানতার জন্য তোমাদের পাঠাচ্ছি।
অপুঃ তাহলে স্যার কি করব?
মি.কবিরঃ এই তো সব ডিটেইলস। এগুলো তোমাদের নিতে হবে তোমরা এক্সপার্ট মানুষ পড়লেই বুঝবে। বাহিরে তোমাদের জন্য একটা গাড়ি রেড়ি আছে। গাড়িতে দুটো কন্টেনার আছে সেফলি সেখানে নিয়ে যাও বাকিটা সেখানে গেলেই বুঝবে।
রাকিবঃ কিন্তু স্যার!
মি.কবিরঃ আর কোন কিন্তু না রাকিব। কোন চিন্তার কিছু নেই। শুধু যাবে দিয়ে চলে আসবে।
রাকিবঃ না স্যার তেমন কিছু না। আসলে বৃষ্টির দিন। বাসায় যেতেও সমস্যা হবে গাড়িটা যদি বাসায় নিয়ে যেতাম তাহলে ভালো হতো আর কি।
মি.কবিরঃ হাহাহা তাই বলো যাও যাও নিয়ে যাও সমস্যা নেই।
অপুঃ ঠিক আছে স্যার।
মি.কবির অপুর হাতে গাড়ির চাবি দিলেন। মি.কবিরঃ এ নাও গাড়ির চাবি। অল দা বেষ্ট বয়েজ।
অপুঃ জ্বি স্যার আল্লাহ হাফেজ।
তাদের যাবার পড় মি.কবির কাকে যেন কল করলেন।
মি.কবিরঃ হ্যা ওরা বেড়িয়ে পড়েছে। অনেক কষ্টে যেতে রাজি করলাম। কিছু হবে না। আমি বললাম না ওরাই বেস্ট অপশন। রাখছি তাহলে।
অপু গাড়ির চাবিটা নিয়ে বাহিরে গেল রাকিব তার পিছনে আসলো। দাড়োয়ান কে গাড়ির কথা জিজ্ঞেস করলো। দাড়োয়ান গাড়ি দেখিয়ে দিল। তারপর অপু গাড়ির ড্রায়ভার সিটে বসলো রাকিব তার পাশের সিটে বসলো। অপু গাড়ি স্টার্ট করলো এবং রওনা হলো। পাঁচ মিনিট পড়েই বৃষ্টি শুরু হলো। এবার মনে হচ্ছে আগের থেকে বেশি বৃষ্টি হচ্ছে। রাকিবের এখন চিন্তা হচ্ছে।
রাকিবঃ ভালো লাগছে না। মাত্র গাড়িতে উঠলাম আবার বৃষ্টি। এমন হলে কেমন লাগে?
অপুঃ আরে ওসব কিছু না।
রাকিবঃ আপনার খুব মজা লাগছে না।
অপুঃ আচ্ছা তোর কি ভয় করছে?
রাকিবঃ আমার ভয় করবে কেন? কোন ভুত পেতনি আছে নাকি। আমি এমনিতেই বললাম। তাও মর্গে যাওয়াটা আমার ভালো লাগছে না।
অপুঃ আমারও কেমন যেন আজব লাগছে। হঠাৎ করেই কি এমন মেডিসিন তৈরি হলো যে আমরা জানি না? কোন হিসাব মিলছে না।
রাকিবঃ দেখলি তো তোরও খটকা লাগলো তো। কি এমনে হতে পারে বল তো?
অপুঃ আচ্ছা চল যাই দেখি কি হয়? গেলেই তো বোঝা যাবে।
রাকিবঃ চল আল্লাহর নাম নিয়ে যা হবে দেখা যাবে।

অনেকটা পথ পাড়ি দিয়ে অপু ও রাকিব তাদের গন্তব্যে পৌছালো। মর্গের গেট দিয়ে ঢুকতেই তারা দেখলো পুলিশের গাড়ি। অপু ও রাকিব গাড়ি থেকে নামলো। তাদর দুজনকে দেখে একটি লোক তাদের কাছৈ ছুটে চলে আসলো।
ব্যাক্তিঃ আপনারা কবির স্যারের লোক না? লোকটির কথা শুনে অপুর একটু আজব লাগলো। অপুঃ হ্যা আমরা তার আন্ডারে কাজ করি। কিন্তু আপনি আমাদর চিনলেন কি করে?
ব্যাক্তিঃ স্যার বলছিলো আপনাদের কথা। আমি আগের স্যারের কাছেই কাজ করতাম। এখন এখানে কাজ করি।
রাকিবঃ আচ্ছা ভাই এখন আমাদের কি করতে হবে?
ব্যাক্তিঃ ভিতরে বড় স্যার আছেন তার কাছে কাগজ পত্র জমা দিয়ে তিনি যা বলেন তাই করতে হবে।
অপুঃ তো কোথায় আপনাদের স্যার?
ব্যাক্তিঃ স্যার ভিতরেই আছেন। আপনারা আসেন স্যার আমার সাথে। গাড়ির জিনিস পত্র আমি বের করার ব্যাবস্থা করছি।
রাকিবঃ চলেন যাই তাহলে।
অপু, রাকিব লোকটির সাথে যাচ্ছে। যেতে যেতে তারা কিছু পুলিশের লোক দেখতে পেল। একটু ঢুকতেই মর্গের লাশ কাটা ঘরের দরজা দেখতে পেল অপু। রাকিব কৌতুহল বসতো সে লোকটিকে সব জিজ্ঞাসা করলো।
রাকিবঃ ভাই আপনার নাম তো জানা হলো না। ব্যাক্তিঃ স্যার আমার নাম হল আমিন।
অপুঃ আচ্ছি আমিন ভাই কিছু মনে না করলে একটা কথা বলি।
ব্যাক্তিঃ বলেন স্যার। কোন সমস্যা নাই।
অপুঃ বাইরে এত পুলিশের লোক দেখলাম কোন সমস্যা হয়েছে?
রাকিবঃ আমিও বাইরে পুলিশের গাড়ি দেখলাম। ব্যক্তিঃ এটা তো আর কারো বাসা বাড়ি না এটা মর্গ। এখানে তো পুলিশ আসা যাওয়া করেই। অপুঃ প্রতিদিনই আসে?
ব্যাক্তিঃ না স্যার লাশ আসলে আসে।
রাকিবঃ তার মানে আজ কারো লাশ এসেছে নাকি?
ব্যাক্তিঃ হ্যা। কিছুক্ষণ আগেই একটা অল্প বয়সী মেয়ের লাশ নিয়ে আসছে। কোটিপতির মেয়ে বাড়িতেই মারা গেছে। পুলিশ বলছে হয় তো সুইসাইট করছে। কিন্তু ফ্যামিলির লোক বলছে যে সুইসাইট করে নি।
রাকিবঃ আমাদের মরার দিনেই আসতে হলো। অপুঃ কি রে কি বলিস এসব?
রাকিবঃ স্যার কি মর্গে প্রথমবার আসছেন?
অপুঃ হ্যা ভাই এই প্রথম এলাম।
ব্যাক্তিঃ আমার ও আগে ভয় করতো এখন অভ্যাস হয়ে গেছে।
রাকিবঃ আর অভ্যাস হওয়া লাগবে না।
অপুঃ ভাই আপনি লাশের খবর এত কিছু জানলেন কিভাব?
ব্যাক্তিঃ বাইরে পুলিশরা বলাবলি করছিলো তাই শুনলাম। আরে কথা বলতে বলতে বেশি আগে চলে আসছি। ঐ যে পিছনে স্যারের কেবিন।
অপুঃ চলেন তাহলে। অপু ও রাকিব কেবিনে পৌছালো।
ব্যাক্তিঃ স্যার আপনারা বসেন আমি স্যার কে বলে আসি।
রাকিবঃ ঠিক আছে। চল বসা যাক।
অপুঃ হুম। প্রায় ১০ মিনিট পড় ভিতর থেকে লোকটি এসে তাদের ডাকলো।
ব্যাক্তিঃ চলেন স্যার আপনাদের ডাকছে।
অপু রাকিব রুমের ভিতরে গেল।
সাদা কোর্ট পড়া একটি ভদ্রলোক বসে আছেন। তার টেবিলে নেম প্লেটে নাম লেখা আছে। ডাঃ সুমন বিশ্বাস। মর্গের হেড। রুমে ঢুকতেই তার সাথে অপু রাকিবের কথা শুরু হলো।
অপুঃ হ্যালো স্যার।
ডাঃসুমন: হ্যালো। প্লিজ সিট ডাউন। আমি ডাঃ সুমন বিশ্বাস। এখানের ইনচার্জ।
অপুঃ স্যার আমি অপূর্ব হাসান আর এ আমার কলিগ রাকিবুল ইসলাম। আমরা লাইফ কেয়ার ফার্মাসিটিক্যালস এর রির্সাচ অফিসার। মেডিসিনের টেকনিক্যাল দিকটা আমরা সমলাই।
ডা: সুমনঃ নাইস টু মিট ইউ। আপনাদের বস মি.কবির পেপারজ গুলো দিয়েছেন নিশ্চয়?
অপুঃ জ্বি স্যার। এই নিন।
অপু ডাঃ সুমনকে একটা ফাইল দিল। ডাঃ সুমন সব কাগজ পত্র চেক করে নিলেন।
ডাঃসুমন: আচ্ছা সব ঠিক আছে। আপনি এই কপি গুলো নিয়ে যান। আর এ হলো চেক। এটা আপনি আপনার বসকে দিয়ে দিবেন।
অপুঃ ওকে। আর কিছু কি করা লাগবে স্যার?
ডাঃসুমন: না আর কিছু করা লাগবে না।
অপুঃ তাহলে স্যার আমরা এখন বিদায় নিচ্ছি।
ডাঃসুমন: একটু চা খেয়ে যান।
অপুঃ না স্যার ঠিক আছে। বাহিরে বৃষ্টি আর আমাদের যেতেও সময় লাগবে।
রাকিবঃ ইট ওয়াজ নাইস মিটিং ইউ স্যার।
ডাঃসুমন: সেম হেয়ার। এই আমিন এনাদের বাহিরে ছেড়ে দিয়ে আসো। ওকে দেন।
অপু ও রাকিব বেরিয়ে গেল। আস্তে আস্তে আমিনের সাথ তারা এগিয়ে যাচ্ছে।
রাকিবঃ যাক বাবা বাচা গেল কাজ শেষ। এখন বাসায় চল তাড়াতাড়ি। হঠাৎ করেই কারেন্ট চলে গেল।
রাকিবঃ আরে কারেন্ট যাবার আর সময় পেল না।
আমিনঃ মনে হয় কোন সমস্যা হইসে। স্যার কিছু যদি মনে না করেন তাহলে আপনারা একটু আস্তে আস্তে আসেন। আমি দেখে আসি কি হলো।
অপুঃ যান ভাই কোন সমস্যা নেই।
আমিন ফোনের লাইট নিয়ে দৌড়ে বাইরে গেল। অপু আর রাকিব ও নিজেদের ফোনের টর্চ অন করলো।
রাকিবঃ এ কি হচ্ছে বল তো?
অপুঃ কি?
রাকিবঃ এই যে একটার পর আজব ঘটনা ঘটছে।
অপুঃ হু তা ঠিক। কিছুক্ষণ পরেই কারেন্ট চলে এলো।
অপুঃ কারেন্ট ও চলে আসছে। এক কাজ করলে কেমন হয়?
রাকিবঃ কি কাজ? যাবার পথে দুজনে কাচ্চি খেয়ে যাই।
রাকিবঃ খেতে পেলে তো ভালোই হয়।
অপুঃ চল আমি ট্রিট দেব।
রাকিবঃ তাহলে তো আরো ভালো।
অপুঃ হ্যা শালা টাকা দেয়া লাগবে না তাই ভালো না। চল এবার।
অপু রাকিব নিচে নেমে এলো। তার সাথে সাথেই মি.কবির ফোন করলেন। অপু ফোন রিসিভ করলো।
অপুঃ জ্বি স্যার।
মি.কবিরঃ হ্যা অপু কাজ হয়েছে?
অপুঃ জ্বি স্যার এই তো আমরা বের হচ্ছি। মি.কবিরঃ আচ্ছা ঠিক আছে। সাবধানে যেও কেমন।
অপুঃ জ্বি স্যার।
মি.কবিরঃ ওকে বায়।
অপু রাকিব এখন বের হবে। যাবার আগে তারা আমিনের সাথে কথা বলে নিলো।
অপুঃ আচ্ছা আমিন ভাই তাহলে এখন আসি।
রাকিবঃ আপনার সাথে দেখা হয়ে অনেক ভালো লাগলো।
আমিনঃ আমারও অনেক ভালো লাগছে স্যার আবার আসবেন।
অপুঃ মর্গে আর আসা হবে না। আসি ভাই। আমিনঃ খোদা হাফেজ।
অপু আর রাকিব গাড়িতে করে চলে গেল। বৃষ্টি হচ্ছে। আর তাদের ক্ষিদে ও লেগেছে। রাকিবঃ আগে কোন হোটেল দেখে রাখিস অনেক ক্ষিদে পেয়ে গেছে।
অপুঃ আমার ও তো একই অবস্থা। চল দেখি। কিছু দূর এগিয়েই রাস্তার পাশে একটি হোটেল দেখতে পেল রাকিব।
রাকিবঃ দোস্ত থাম বামে একটা দোকান আছে।
অপুঃ আচ্ছা চল যাই। অপু আর রাকিব সেখানে থামলো। হোটেলে গিয়ে অপু আর রাকিব খেয়ে নিল। আবার তারা বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলো। রাকিব ঘুমিয়ে গেছে। অপুও অনেকটা ক্লান্ত অনেক কষ্ট করে অপু গাড়ি চলিয়ে বাসায় এলো।
অপুঃ এই রাকিব ওঠ বাসায় এসে গেছি। রাকিবঃ আরে ভালো ঘুম আসছিলো রে। অপুঃ রুমে গিয়ে ঘুমা। তুই গিয়ে রুম খোল আমি গাড়ি রেখে আসি।
রাকিবঃ আচ্ছা আয়।
রাকিব উপরে চলে গেল আর অপু গাড়ি নিয়ে বিল্ডিং এর ভিতর ঢুকলো। অপু গাড়িটি লক করে রেখে চলে যাচ্ছিলো হঠাৎ করে সে কি যেন একটা শব্দ পেল। আর সাথে সাথে গাড়ির এর্লাম বাজা শুরু হলো।
অপু পিছনে তাকালো আর বলল
অপুঃ কে? কে ওখানে? কেউ আছে?
অপু আরো সামনে গেল আশে পাশে দেখলো কিন্তু কেউই ছিলো না। গাড়ির কাছে গিয়ে দেখলো গাড়ির বোনেট টা খোলা। সে মনে মনে ভাবলো বোনেট তো বন্ধ ছিল খুললো কিভাবে? অপু বোনেট বন্ধ করে চলে গেল। ফ্লাটে গেলে রাকিব দরজা খুলল। রাকিবঃ কি রে এত দেরি কেন?
অপুঃ তেমন কিছু না। খুব টায়ার্ড দোস্ত ঘুমাবো।
রাকিবঃ যা রুমে গিয়ে শুয়ে পড় আমি ও ঘুমাবো গুড নাইট ।
অপুঃ হুম গুড নাইট।
রাকিব চলে গেল আর অপুও নিজের রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পড়লো। অপু সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে দেখে ৭টা বাজে আজ আর বৃষ্টি নেই। ৯টা বাজে অফিসে যেতে হবে তাই তাড়াতাড়ি ব্রাশ করে রেডি হয়ে গেল অপু। বাহিরে আসতেই দেখে রাকিব রান্না ঘরে।
অপুঃ গুড মরনিং।
রাকিবঃ গুড মরনিং। কি রে তুই তো পুরো রেডি।
অপুঃ হ্যা কিন্তু কখন উঠলি? আর এ খাবার কে বানালো খালা আসছে?
রাকিবঃ একটু আগে উঠে বাইরে থেকে নিয়ে আসলাম। খালার সাথে কথা হইছে খালা গ্রামে গেছে কয় দিন আসতে পারবে না। অপুঃ হুট করে কি হলো?
রাকিবঃ তার মা অসুস্থ নাকি।
অপুঃ তাহলে আরো কয়দিন ম্যানেজ করতে হবে।
রাকিবঃ হু দোস্ত খাবার গুলি নিয়ে যা আমি একটু রেডি হয়ে আসি।
অপুঃ আচ্ছা যা তাড়াতাড়ি আয় টাইম বেশি নাই।
অপু খাবার রেডি করছে তার কিছুক্ষণ পরেই দরজার নিজ দিয়ে নিউজ পেপার আসলো। অপু পেপার টা উঠালো এবং টেবিলে বসে পড়া শুরু করলো।
অপুঃ চলো দেখি আজকে কি আছে।
অপু একটি হেডলাইন দেখতে পেল আর যা পড়লো তা সে ভাবতেই পাড়ছে না কি করে সম্ভব? রাকিবও চলে এসেছে। অপুকে কেমন যেন চিন্তিত দেখাচ্ছে তাই রাকিব বলল।
রাকিবঃ কি রে কি হয়েছে তোর?
অপুঃ কালকে যে মর্গে গেছিলাম সেখান থেকে একটা লাশ চুরি হয়ে গেছে।
রাকিবঃ কৈ দেখি?
রাকিব অপু হাত থেকে পেপার টা নিলো এবং পুরো খবর পড়লো।
রাকিবঃ মর্গের থেকে যুবতির লাশ চুরি। কাল রাতে মর্গের থেকে লাইভ কেয়ার গ্রুপের চেয়ারম্যান এনায়েত রহমানের একমাত্র মেয়ে সার রহমানের লাশ চুরি হয়ে গেছে। গতকাল সন্ধ্যা ৬ টার দিকে নিজ বাড়ি সারার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। সারা আত্মহত্যা করেছে বলে ধারণা পুলিশের কিন্তু এমন কোধ প্রমাণ না থাকায় তদন্ত করবার জন্য লাশটি মর্গে নিয়ে যাবার পড় প্রায় সাড়ে ১০টায় মর্গ থেকে লাশটি নিখোজ হয়। ঘটনা টি তদন্ত করবার জন্য ডিটেকটিভ ব্রান্চ থেকে একটি টিম তৈরি করেছে পুলিশ। এর মানে?
অপুঃ এর মানে লাশটা গায়েব হবার সময় আমরা সেখানেই ছিলাম।
রাকিবঃ কিভাবে?
অপুঃ সময়টা দেখলি না।
রাকিবঃ তাহলে মর্গে আমরা যে লাশের কথা শুনলাম সেটা আমাদের কোম্পানির মালিকের মেয়ে?
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
ফয়জুল মহী চমৎকার শব্দ চয়নে মনোমুগ্ধকর প্রকাশ ।

১৯ আগষ্ট - ২০২১ গল্প/কবিতা: ৪ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

বিজ্ঞপ্তি

“মে ২০২৪” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ মে, ২০২৪ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী