(১)
চোখের সামনে ল্যপটপের নীল আলোটা কেমন বয়স্ক মনে হচ্ছে নীলের। রাত মধ্য — দু’টো তেতাল্লিশ। হঠাত… আরেকটা কম্পনে নীল… যেন কোন আচ্ছন্ন ঘোর থেকে মাটির ঠান্ডা সংস্পর্শে নেমে এল। রাতে মোবাইলটা ভাইব্রেট করে রাখে নীল। তখন কোনও ফোন এলে মোবাইলটা বাজে না —শুধু কাঁপে। আর অনেক সময় সেই কম্পন টের পেতে পেতে পৃথিবী ঠান্ডা হয়ে আসে। ফোন কেটে যায় বেজে বেজে। তারপর সেই ইন-কামিং নম্বরটা মিসড-কলের বরাদ্দ খাতে গিয়ে নথিভুক্ত হয়।
একমনে পত্রিকার প্রুফ দেখছে নীল। সামনে প্রিন্ট-আউট করা কপিগুলো খোলা। হাতে পেন। আর চোখের সামনে খোলা ল্যাপটপের জানলায় পান্ডুলিপির লেখা। পাশে একটা লাল মলাটের ‘সংসদ বাংলা অভিধান’-এর ‘অ’-এর পাতাটা খোলা, উড়ছে ফ্যানের হাওয়ায়। লেখক অদ্ভুত উত্তেজনায় ‘অদ্ভুত’- বানানটিতে উ-কারের বদলে ঊ-কার দিয়ে লিখে ফেলেছেন। অনেক নামকরা, বিরাট-মাপের লেখক। পপুলার খুব। তাই নিজের সন্দেহকে যাচাই করতেই নীল অভিধান দেখে মিলিয়ে নিচ্ছে শব্দটা। বারবার। অনেক নামী লেখক কিনা! আমন্ত্রিত উপন্যাস লিখছেন ওদের পত্রিকার জন্য। ধারাবাহিক। ভুল করেও যেন নিজের ভুলের জন্য কোনও ভুল ছাপা না-হয়ে যায়। এমনই সময় ফোন।
নীল ল্যাপটপ থেকে চোখ না-সরিয়েই হাত বাড়িয়ে ফোনটা তুলে নেয়। ফোনটা কাঁপছে। সঙ্গে হাতের চেটোও। নম্বরটা না-দেখেই সুইচটিপে ফোনটা রিসিভ করে নীল। কানে ধরে…
— “কী খবর! ঘুমিয়ে পড়েছিলে নাকি? …তোমার কাজকম্ম কেমন চলছে ভাই? শোনো, আমার লেখাটা — আজ সকালে দেব বলেছিলাম… কিন্তু… কাল দুপুরের মধ্যেই কমপ্লিট করে ফেলব ভাই। তুমি আরেকটু ম্যানেজ কর। করে নাও। বিকেলের মধ্যেই পেয়ে যাবে। তোমাকে মেইল করে দেব” ।
অরুণ-এর গলা। এই প্রজন্মের প্রতিশ্রুতিমান লেখক ও কবি অরুণ মালাকার। নীলের থেকে সিনিয়র বছর তিনেকের। নীলের প্রিয়বন্ধু। অন্তত লেখালেখির জগতে আসার পর থেকে এই একটি মাত্র ছেলেকে মনের মতো মনে হয়েছে নীলের। আর অরুণও সময়-অসময়ে, প্রয়োজন-অপ্রয়োজনে নিঃস্বার্থভাবে প্রকৃত বন্ধুর মতো, গাইডের মতো করেই নীলকে সমস্ত ব্যাপারে সাহায্য করে এসেছে, করে। এখন নীলও তাই এরকম একটা অযাচিত কিন্তু দুর্লভ বন্ধুত্বের আমেজে অনেকটাই চার্জড হয়ে থাকে। নির্ধারিত বৃহস্পতিবারের আড্ডা ছাড়াও যখন-তখন, সপ্তাহের যে কোনও দিন অরুণের মেসের দরজায় গিয়ে টোকা দেয় নীল। ভেতর থেকে কোনও সাড়া পাওয়ার আগেই ভেতরে ঢুকে পড়তে পারে। জুতোও খোলার প্রয়োজন হয় না দরজার বাইরে — পরেই ঢোকে, সবাই।
অফিস থেকে বাড়ি ফিরেই কোনও রকমে পোশাক বদলিয়ে নীল বসে পড়েছে প্রুফ দেখতে। কাল সকালেই রঞ্জিতদা-র কাছে গিয়ে কম্পোজ করিয়ে ফাইনাল প্রুফ-টা পাঠিয়ে দিতে হবে ম্যাডামের কাছে। তাই বাড়ি ফিরে আর রান্না-খাওয়া-ঘুম উপেক্ষা করেই নিজের কাজ নিয়ে বসে পড়েছে নীল। আর যেন কোনও ভুল না হয়ে যায়। অরুণের গলা শুনেই ল্যাপটপ থেকে চোখ সরায় নীল। চোখ বোজে। বন্ধ চোখের সামনে নীল-লাল সব ছোটো ছোটো আলোর ফুটকি গুলো বেলুনের মতো ফাটছে এক এক করে, আবার ফাটছে, তৈরি হয়ে যাচ্ছে আবার… সঙ্গে সঙ্গেই। একটা গভীর প্রশ্বাস নেয় নীল। যেন ফোনের ওপার থেকে বিশুদ্ধ অক্সিজেন-পূর্ণ একটা ঠাণ্ডা বাতাসের আদর এসে সরাসরি ওর ফুসফুসে ঢুকে পড়েছে। একটা মৃদু হাসি কেমন অজান্তেই নীলের ঠোঁটের ওপর স্বস্তির প্রলেপ লাগিয়ে দিয়েছে।
— “না ভাই। ঘুমোইনি। প্রুফ… কাজ করছি। বল”
— “কাজ? এখন? এত রাতে! ব্যাপার কী? সব ঠিকঠাক তো?”
— “হ্যাঁ… আসলে, কালকেই বারোটার মধ্যে ডিটিপি সেন্টারে পৌঁছতে হবে। নিজে সামনে থেকে সব ঠিকঠাক কম্পোজ করিয়ে ম্যাডামকে মেইল করে ম্যাটারটা পাঠাতে হবে। ম্যাডাম সেটা ফাইনাল-চেক করে ইলাস্ট্রেশনের জন্যে পাঠাবেন।”
— “কিন্তু… এই কাজ তো তুমি করতে না…”
— আসলে এটা তো টিম-ওয়ার্ক একটা! সব কাজই করতে হয় সবাইকে… সবাই মিলে! বুঝলে চাঁদু? ‘নির্ধারিত কাজ’ -বলে কিছু হয় না এসব ক্ষেত্রে। আসল হল পুরো ব্যাপারটা, মানে কাজটা সর্বাঙ্গীন নির্ভুল ভাবে করতে পারা। আর প্রুফ দ্যাখাটা একটা খুব সিরিয়াস ব্যাপার…” — বলেই নীল হঠাত অন্যমনস্ক হয়ে যায়। ভুরু টানটান হয়ে ওঠে। ঘন্টা তিনেক আগে পাওয়া ম্যাডামের ইমেল-এর অক্ষরগুলো হঠাত নড়েচড়ে ওঠে ওর বন্ধ চোখের পর্দায় — “প্রুফ দ্যাখাটা একটা খুব সিরিয়াস ম্যাটার নীল…” — অক্ষরগুলো যেন হঠাত করে জীবন্ত হয়ে উঠেছে! নড়ছে। ছুটছে। একে অপরের সাথে ধাক্কা খেয়ে ঝনঝন করে উঠছে ম্যাডামের ভাসাভাসা স্বরে — “প্রুফ দ্যাখাটা একটা খুব সিরিয়াস ম্যাটার নী……ল……”
নীল আর পারে না। চোয়াল শক্ত হয়। মন ভিজে আসে।
— “যাই হোক, তোমার লেখাটা কদ্দুর হল? কতটা এগিয়েছে?” — নীল বলে।
— “অনেকটাই… ওই কাল বিকেলের মধ্যেই… আমিও এই লেখাটা নিয়েই জাগছি, বুঝলে? তুমি ভেবোনা। আমি বলেছি যখন…”
— আচ্ছা, ঠিক আছে। পাঠিয়ে দিও ভাই। যতটা তাড়াতাড়ি সম্ভব। আর দেরি কোরোনা। এখন লেখো। শেষ করো লেখাটা।”
— “হ্যাঁ। রাখি তাহলে… গুড নাইট”
— “হ্যাঁ ভাই! গুড নাইট…”
ফোনটা রেখে নীল চোখ খোলে। ল্যাপটপের দিকে তাকায়। ততক্ষণে ল্যাপটপের নীল-আলোর পর্দাটা কালো হয়ে গেছে। স্ক্রিন টাইম-আউট। প্রুফের কপিতে কারেকশন করা অজস্র নীল কালির দাগ থেকে আলো ছিটকে আসছে। এই একেকটা আলো যেন ছুঁড়ে দিচ্ছে নীলকে কতগুলো অক্ষরের ভেতর — “প্রুফ দ্যাখাটা একটা খুব সিরিয়াস ব্যাপার নীল…”। চিৎকার করছে যেন অক্ষরগুলো।
ম্যাডাম খুব ভালোবাসেন নীলকে। স্নেহ করেন। সন্তানের মতো, নিজের ছোট ভাইয়ের মতোই স্নেহ করেন ম্যাডাম। খুব আশাবাদী উনি নীলকে নিয়ে। একটা গভীর বিশ্বাস, একটা বিরাট ভরসার জায়গা থেকেই নেহাত আনকোরা ছেলেটাকে এই চাকরিটা দিয়েছেন উনি। আর বরাবরের অভিমানী নীল, কর্পোরেট জগতের দরজায় ভালো স্যালারি-প্যাকেজের করিডোর থেকে বেরিয়ে আসার পর, দীর্ঘ তেরো মাস প্রায় না-খেতে পাওয়ার সংকটময় পরিস্থিতি থেকে একটা পরিত্রাণ পেয়ে যায়। সব চাইতে বড়ো ব্যাপার — জব-স্যাটিসফেকশন! নিজেও লেখালেখি করে। তার জন্যে প্রচুর পড়াশোনাও। সর্বপরি, এই কাজটা পেয়ে নীলের লেখালেখি করা এবং আর্থিক সুরাহার মেলবন্ধনে একটা জ্যাকপট যেন ওর ভাগ্যরেখার প্রকোষ্ঠে বরাদ্দ হয়ে গেছে। তার ওপর, উপরি-পাওনা হিসেবে মিলেছে ম্যাডামের অক্লান্ত স্নেহ আর প্রশ্রয়। উনিখুব ডিপেন্ডও করেন ওর ওপরে, ওর কাজের মানসিকতার ওপরে। তাই একটা অনায়াস কৃতজ্ঞতা-বোধে ম্যাডামের প্রতি শ্রদ্ধায় ওর আত্মা গদগদ হয়ে ওঠে। ম্যাডামের স্বপ্নের এই পত্রিকাটিকে নীল একান্ত আপনার করে ফেলে, নিজের স্বপ্ন করে নেয়। পত্রিকাটির প্রত্যেকটা উত্থান-পতনে ম্যাডামের গায়ে ছ্যাঁকা লাগে, প্রতিক্রিয়া হয়। আর সেই রিয়্যাকশন-এর ক্ষত তৈরি হয়ে যায় নীলের গায়ে আপনা থেকেই। তাই সে নিজের কাছেই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থাকে — যে করেই হোক, নিজের সততাআর পরিশ্রম দিয়ে এই পত্রিকাটিকে দাঁড় করাবেই, ম্যাডামের স্বপ্ন সে পূরণ করবেই।
(২)
ম্যাডাম ফোন করলেই মনটা ঝলমল করে ওঠে নীলের। খুব খুশি হয়। উনি যখন এই পত্রিকা নিয়ে বিভিন্ন পরিকল্পনা করে ওর সঙ্গে —প্রতিবার ওর আত্মবিশ্বাস বাড়তে থাকে হাওয়ার বেগে। নিজেকে এই পত্রিকা আর ম্যাডামের আত্মীয় মনে হয়। আরও দৃঢ় হয় ওর মানসিকতা এবং ম্যাডামের প্রতিশ্রদ্ধার মাত্রা বাড়তে বাড়তে পারদের ঊর্ধ্বসীমা অতিক্রম করে নিজের ভেতরে আনন্দে ফেটে পড়তে থাকে। যা স্যালারি পায়, তাতে কর্পোরেট-প্যাকেজের মতো বিরাট অঙ্কের না-হলেও ঠিকঠাক ভাবে চলে যায় ওর। কোনও অভাব থাকে না মোটে। তার চাইতে বড় পাওনা হল আত্মতৃপ্তি — যেখানে কাজ করার, কাজ নিয়ে পরিশ্রম করার মানসিকতা নিজে থেকেই বাড়তে থাকে। ক্লান্ত লাগে না, হাঁফ ধরে না। আর ম্যাডামের ব্যাবহার, ওর কাজের প্রতি ওনার আস্থা-বিশ্বাস এবং নির্ভরতার জন্য নীল আন্তরিক ভাবেই ভীষণ ঋণী হয়ে পড়ে ম্যাডামের কাছে। কিন্তু ভালো লাগে।
প্রতিদিন সকালে অফিস পৌঁছেই আগে ল্যাপটপ অন করে নীল। নেট কানেক্ট করে মেইল চেক করে। তারপর ঠাণ্ডা জল খায়। আজ সকালে রুটিন মাফিক মেইল চেক করতে গিয়েই প্রথম ঝটকাটা আসে। একটা মেইল এসেছে —ম্যাডামের। একটা প্রুফ। অজস্র ভুল। তাতে ম্যাডামের নিজের হাতে কারেকশন করা। তাতে লেখা — “এটা কী হয়েছে? প্রুফ কি তাহলে একেবারেই দ্যাখা হয়নি?…” — এটা কী হল? কী করে সম্ভব? — নীল ভাবতে থাকে। নিজের চোখকেই যেন বিশ্বাস করতে পারছে না। গত সপ্তাহে সে নিজে প্রুফগুলো দেখে, কারেকশন করে অফিসের ড্রয়ারে রেখে এসেছে। পরদিন প্রলয়দার নিয়ে যাওয়ার কথা। তারপর প্রলয়দাই তো রঞ্জিতদাকে দিয়ে ঠিকঠাক কম্পোজ করিয়ে ম্যাডামের কাছে পাঠিয়ে দেবেন। এদিকে হাতে সময়ও কম। এখন, এক সপ্তাহ বাদে ম্যাডামের কাছ থেকে এরকম একটা মেইল সত্যিই কল্পনাতেও ছিল না নীলের। আর ম্যাডাম যেটা কারেকশন করে পাঠিয়েছেন, সেটাও তো প্রুফের প্রথম কপি-টা। নীলের কারেকশন করা প্রুফের কপিটা তারমানে জমাই পড়েনি ম্যাডামের কাছে! এবারে আস্তে আস্তে সবকিছু পরিস্কার হয়ে যায় নীলের সামনে… সব সমীকরণ জলের মতো পরিস্কার মিলে যাচ্ছে… বুঝতে অসুবিধা হয় না এটা কেন হল… নীলের কপাল কুঁচকে যায়। ঘামতে থাকে। শেষ পর্যন্ত এত প্রাণপণ করেও ম্যাডামকে এরকম হতাশ হতে হল… ভেবে অস্থির হয় নীল। কষ্ট হয়।
সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে যে দ্বিতীয় ধাক্কাটা আসে, সেটা প্রথম ধাক্কারই প্রতিক্রিয়া স্বরূপ একটা জোরালো ছিটকে পড়া। চোট পাওয়া। ম্যাডামের মেইলের দিকে হা-করে ড্যাবড্যাবিয়ে তাকিয়ে থাকে নীল। মেইল-এর ভেতর থেকে যেন ম্যাডামের নরম, তুলতুলে মনটাকে স্পষ্ট দেখতে পাওয়া যাচ্ছে —সেখানে একটা গভীর ক্ষত। সেই ক্ষত থেকে রক্তক্ষরণ হচ্ছে সমানে, কষ চুইয়ে পড়ছে। আর সেই রক্তক্ষরণের প্রবল ঝনঝনানি যেন চিৎকার করে ঘা-মারছে নীলের বুকের ভেতরে। ওর প্রতি ম্যাডামের অগাধ বিশ্বাস আর ভরসার সেতুটাকে ভেঙে, গুঁড়িয়ে দিয়ে, একটা বিরাট দূরত্ব তৈরি করে দিয়ে এই দুটো মানুষকে যেন পৃথিবীর দুটি ভিন্ন গোলার্ধের অন্তিম কিনারায় দাঁড় করিয়ে দিয়েছে কেউ — “প্রুফ দ্যাখাটা একটা খুব সিরিয়াস ম্যাটার নীল…”
(৩)
কম্পনের কম্পাঙ্কটা বাড়ছে। ক্রমশ…
নীল চোখ মেলে আর তাকাতে পারছে না — ঘুমে, ক্লান্তিতে আর নেশায়। আজ আবার তুমুল বৃস্তি-ঝড় হয়েছে। বাতাসের স্নায়ুর ভেতর যেন ঠাণ্ডা ছুঁচের ফলা কেউ গেঁথে দিয়েছে পরম মমতায়, অথবা প্রগাঢ় আক্রোশে। এখনও বৃষ্টি পড়ছে —ঝিরিঝিরি — ধরে এসেছে প্রায়। ফ্ল্যাটের ছাদে সিঁড়িঘরের ছাউনিতে বসে বৃষ্টি দেখছে নীল। পাশে দুটো কার্লসবার্গ বিয়ারের ক্যান। হাতের সিগারেটে ছাই জমতে জমতে প্রদর্শণী যোগ্য দৃশ্যের সৃষ্টি করেছে — যেটাতে আর একটাও সুখটান অবশিষ্ট নেই… পুরোটাই ছাই। শেষ চুমুক দিতেই বিয়ারের দ্বিতীয় ক্যানটাও খালি হয়ে গেল। বৃষ্টির ছোঁয়ায় আজ হাওয়াও টলছে নেশাগ্রস্তের মতো। নিলেরও বেশ একটা ঝিমঝিম-ভাব এসেছে। হাওয়া কাঁপছে। কাঁপছে নীলও।
আজ আর কোনও রিপ্লাই-মেইলের দরকার নেই নীলের। সে জানে, সেই মেইল-টা হয়ত আর আসবেও না। আর আসলেও সেখানে কোনও হতাশামাখা আত্মার মর্মর কাটিয়ে একটা বিশ্বাস, ভরসা আর স্নেহের উষ্ণতা বয়ে আনবে। অথচ, সেটা উপভোগ করার মতো উত্তেজনা এই মুহূর্তে যেন ঠিক খুঁজে পাচ্ছে না নীল। আজ খুব ব্যক্তিগত মনে হচ্ছে ওর নিজেকে — ভীষণ একার কেউ। খুব ক্লান্ত লাগছে। প্রচণ্ড খিদে আর ঘুমে যেন আরও একটু রং চড়িয়ে দিয়েছে এই বৃষ্টি, আর বৃষ্টির গায়ে বিশ্রামের চাদর মুড়ি-দিয়ে নীলের আত্মার ওপরে ভর করেছে বিয়ারের আমেজ।
গতকাল সারারাত জেগে আজ সকাল এগারোটা অব্দি একটানা প্রুফ দেখেছে নীল — না-খেয়ে, না-ঘুমিয়ে। তারপর কোনও রকমে ব্রাশ করে, ফ্রেশ হয়েই বেরিয়ে পড়েছে — সোজা রঞ্জন্দার ডিটিপি সেন্টারে। কারেকশন করা প্রুফটা ঠিকঠাক কম্পোজ করিয়ে ওখানে বসেই পুরো ম্যাটারটা মেইল করেছে ম্যাডামকে। ম্যাডামের রিপ্লাই আসেনি তখনও। রঞ্জনদা বলেছে — “কী! এবারে হয়েছে তো”? উত্তরে কিছু বলেনি নীল। নিজেকে তার সম্রাট মনে হচ্ছিল সেই মুহূর্তে। শুধু এক টুকরো হাসি ঠোঁটের কোণায় মৃদু ভাবে লেপ্টে বলেছিল — “থ্যাংকস রঞ্জনদা…” । রঞ্জনদা খুশি হয়েছিল। আর অবাক হয়ে বলেছিল — “গতকাল প্রলয় এসে এই প্রুফটাই কারেকশন করে গেল — আর তুমি তার ভেতর থেকেও এতগুলো ভুল খুঁজে বের করলে! এত নিখুঁতভাবে! আমি আশ্চর্য হয়ে গেলাম…”
নীলের পারিপার্শ্বিক জুড়ে এখন শুধু বৃষ্টিকালীন নিস্তব্ধতা, ভেজা মেঘের গন্ধ। একটা ক্লান্তির আস্তরণ একেবারে আষ্টে-পৃষ্টে জড়িয়ে রয়েছে ওর নেশায়। একটা নির্মেদ ঘুমের কয়েকটা জাদুফোঁটা ওর চোখের পাতাগুলোকে ক্রমশ ভারী করে তুলছে। একটা অজানা অস্তরাগ এসে নীলের নবপরিকল্পিত জীবনটাকে আবার যেন টানতে টানতে কোনও নতুন উদাসীনতার দোটানার দিকে গড়িয়ে দিচ্ছে। হাতের সিগারেটটাকে ছাই-সমেত একটা বানানো কাগজের নৌকোর মধ্যে সযত্নে স্থাপন করে ছাদের ওপর জমা বৃষ্টির জলে ভাসিয়ে দেয় নৌকোটা। দুহাতে খালি বিয়ারের ক্যানদুটো নিয়ে মুখের দিকটা ফাঁকা করে আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়ায়। তারপর ছাউনি থেকে বেরিয়ে এসে ছাদের মাঝখানে এসে দাঁড়িয়ে হাত দুটোকে ক্যান সমেত আকাশের দিকে মেলে ধরে। এদিকে তখন নীলের দুচোখ ছাপিয়ে আকাশ-আকাশ ঘুম। আকাশ ছাপিয়ে বৃষ্টি… আবার মুষলধারায় শুরু হয়ে গেছে..
২৯ জুন - ২০২১
গল্প/কবিতা:
২ টি
সমন্বিত স্কোর
৫.৫২
বিচারক স্কোরঃ ২.৫২ / ৭.০
পাঠক স্কোরঃ ৩ / ৩.০
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪