কুমিল্লা শহরটিকে মাহফুজ একধরনের অভিশাপ মনে করে। অফিসের কাজের সূত্রে মাঝেমাঝেই এখানে আসতে হয়, কিন্তু প্রতিবারই তার মধ্যে এক অদ্ভুত অস্বস্তি কাজ করে। এবার মনে মনে স্থির করেছিল—এই হবে শেষ সফর। এবার সে পদত্যাগ করবে।
ঢাকা থেকে রওনা হবার আগেই রিজাইন লেটারটা খসড়া করে ফেলেছিল। ইমেইলে রেখে দিয়েছিল "ড্রাফট"-এ। শুধু পাঠানো বাকি। হৃদয়ের গোপন এক কোণে স্বস্তির বাতাস বইছিল—“এই শহর, এই অফিস, এই মানুষটা—সবকিছুর অবসান ঘটবে এবার।”
কিন্তু কুমিল্লায় পা রাখার পরপরই পুরনো সব টান যেন আবার জেগে উঠল। হোটেল রুমটা সেই পুরনো, যেখানে একদিন বস রুমানা বলেছিলেন,
“এটাই আমাদের অস্থায়ী অফিস।”
কোনোদিন চায়ের কাপে, আবার কোনোদিন রাতের নিস্তব্ধতায় অফিসের আলোচনা গড়াত অন্যখানে।
রুমানা—প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা, সাবলীল, তীক্ষ্ণবুদ্ধি, কখনো ঘরোয়া, কখনো শাসন-প্রবণ, আবার কখনো যেন শুধুই নারী। মাহফুজ জানে, তার এই দুর্বলতা তাকে পিছু টানে, পদত্যাগ করতে দেয় না।
সন্ধ্যার দিকে হোটেল রুমে একা বসে মাহফুজ বারবার মেইলের স্ক্রিনে তাকিয়ে থাকে।
“রিজাইন” বোতামে ক্লিক করলেই সব শেষ।
তারপর সে আর আসবে না।
এই শহরে নয়, এই হোটেলে নয়, এই বসের সামনে নয়।
ঠিক তখন ফোন বাজে। স্ক্রিনে ভেসে ওঠে রুমানার নাম।
– “তুমি এসেছো?”
– “হ্যাঁ। হোটেলেই আছি।”
– “আজ একটু দেরি হবে। অফিসে জরুরি কাজ পড়েছে। তুমি রেস্ট নাও। দেখা হবে রাতেই।”
রাত।
ঘড়িতে সাড়ে দশটা।
মাহফুজ জানে, সে আসবে। জানে, দরজায় নক হবে।
জানে, তখন আর কোনো অফিসের আলোচনার সুযোগ থাকবে না।
ঠিক তখনই মেইলের স্ক্রিন আবার জ্বলে ওঠে। হাত এগোয় “Send” বোতামের দিকে। আবার থেমে যায়।
বাইরে ভেসে আসে হালকা নক করার শব্দ।
– “মাহফুজ, আমি এলাম।”
তার মনের ভেতরটা কেঁপে ওঠে। এই কি সেই মুহূর্ত? সে কি এবার পারবে?
কিন্তু দরজাটা খুলে দেয় সে—একটু দ্বিধায়, একটু চুপচাপ।
রুমানা চুপ করে এসে বসে। চোখে ক্লান্তি, কণ্ঠে নরমতা।
– “তুমি কেমন আছো?”
– “ভালো... কিন্তু আমি পদত্যাগ করতে চেয়েছিলাম।”
রুমানা একটু হাসে।
– “তবু আসলে কেন?”
মাহফুজ কোনো উত্তর দিতে পারে না।
জানালা দিয়ে বাইরে তাকায়।
কুমিল্লার আকাশে ম্লান চাঁদ ঝুলে আছে—একটা বিষণ্ন শহরের মতো, যাকে বারবার বিদায় বলতে গিয়েও ফেরা যায় না।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা
ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য
অদ্ভুত এক মিলন। যেখানে পুরুষ বারবার এ মিলন থেকে পদত্যাগ করতে চায়, সেখানে বারবারই জড়িয়ে যায় নতুনভাবে! সে ছুটতে চায়, কিন্তু পারে না। আগের চেয়ে তীব্র হতে থাকে তাদের আলিঙ্গন।
২৮ জুন - ২০২১
গল্প/কবিতা:
৬ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
বিজ্ঞপ্তি
“ ” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ , থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।