' কাব্যিয়া, তু যব বাহার যায়েগি, লাইট ফ্যান বনধ করকে ডোর লক করকে যানা। মৎ ভুলনা। তু হামেশা ভুল যাতি হো।' ' হ্যাঁ। ঠিক আছে। আজ ভুল হবেনা।'
এই কথোপকথন চলছিল কাব্যপ্রিয়া ও অদিতির মধ্যে। কাব্যপ্রিয়া ব্যাঙ্গালোরের মেয়ে। অদিতি শিলিগুড়ির বাঙালি। এরা সল্টলেকের জি সি ব্লকের তপন বনিকের বাড়িতে নিজেরা মেস বানিয়ে থাকে। এদের সঙ্গে থাকে চেন্নাই এর নলিনী, মুম্বাইয়ের মাধবী ও সিমলার শৈলজা। কাব্যপ্রিয়া সল্টলেকের একটি হাসপাতালের রিসেপশনিস্ট। বাংলা ভালই বলে। বোঝার উপায় নেই যে ও অবাঙালি। কিন্তু অদিতি বাঙালি হয়ে ও ওর সঙ্গে মাঝে মধ্যেই হিন্দিতে কথা বলে। আশ্চর্যজনক হল যে কাব্যপ্রিয়া কিন্তু অদিতিকে বাংলায় উত্তর দেয়। এটা ওদের মধ্যে এক ধরনের মজাও বটে। অদিতি কলকাতার ই এম বাই পাশের এক নামী হাসপাতালের নার্স। নলিনী, মাধবী ও শৈলজা সল্টলেকের সেক্টর ফাইভে তিনটি আলাদা আই টি কোম্পানিতে কাজ করে। এই পাঁচ জনের কাজের ডিউটির কোন নির্দিষ্ট বাঁধাধরা সময় নেই। কখনও মর্নিং ডিউটি তো কখনও ডে ডিউটি। আবার কখনও নাইট ডিউটি।
এদের মেসবাড়িটা একতলায়। দুটো বেডরুম আছে। দুটো বাথরুম টয়লেট। একটি কমন। একটি অ্যাটাচ্চড। একটি বড় টানা লিভিং কাম ডাইনিং রুম। একটি কিচেন। আসলে এটি গেরস্থালি বাড়ি হিসেবে তৈরি কিন্তু বাড়িওলা তপনবাবুর স্থায়ী কোন আয় না থাকায় এই মেস বাড়ি হিসেবে ভাড়ায় দিতে রাজি হয়ে গেছেন। তার ওপর সবাই মেয়ে হওয়ায় ঝুট ঝামেলা ও কম হবে ভেবে এই সিদ্ধান্ত। বড় বেডরুমে তিনটি সিঙ্গল বেডে তিন জন থাকে। ছোট বেডরুমে দুটো সিঙ্গল বেডে বাকি দুজন থাকে। প্রত্যেকের জন্য ছোট্ট আলাদা আলাদা স্টীল আলমারি আছে। তাতে নিজেরা নিজেদের প্রয়োজনীয় জিনিস রাখতে পারে। প্রতিটির আলাদা চাবি ও আছে। লিভিং রুমে একটা টিভির ব্যবস্থা আছে। তবে কেবল্ এর খরচ মেসবাসিদের বহন করতে হয়। এই রুমে তিনটি সোফা আছে। দুটি সিঙ্গল ও একটি থ্রি সিটার। একটি সেন্টার টেবিল ও আছে। ডাইনিং স্পেসে একটি ডাইনিং টেবল ছাড়াও ছটি চেয়ার ও একটি ফ্রিজ আছে। মোটামুটি বলা যেতে পারে কমপ্লিট ফার্নিস্ট একটি মেসবাড়ি। সে তুলনায় কিচেন কিছুটা আনফার্নিস্ট। এখানে প্রাইমাসের ছোট্ট গ্যাস সিলিন্ডার লাগানো একটি স্টোভ আছে। অটো ইগনিশনের সুবিধা এতে আছে। আর আছে কিছু কাপ, ছোট ও বড় প্লেট। আসলে এখানে রান্না বারন। মাঝে মধ্যে চা কফি করে খাওয়া কিংবা ম্যাগী জাতীয় ফাস্টফুড তৈরি করে খাওয়ার জন্য এই ব্যবস্থা। মেসের মেয়েরা এই সব মাঝে মাঝেই করে থাকে। তবে রান্নাঘরে একটি ওয়াটার পিউরফায়ার ও আছে। সকালের চা কফি আর ব্রেকফাস্ট সবাই মোটামুটি নিজেরাই বানিয়ে নেয়। ব্রেকফাস্টের মধ্যে বেশিরভাগ সময় বাটার টোস্ট, ওমলেট কিংবা বয়েলড এগ থাকে। কখনও কখনও ম্যাগী ওয়াই ওয়াই এসব ও চলে। মাঝেমধ্যেই সুইগি জোম্যাটোর ওপর ভরসা করতে হয়। দুপুরের লাঞ্চটা সবাই বেশিরভাগ সময় অফিসেই খেয়ে নেয়। আর ডিনারে ভরসা কেবল হোম ডেলিভারি।
এদের পাঁচজনের মধ্যে চারজনই ননবেঙ্গলি হলে কি হবে সবাই বাংলাটা ভালই বলে। অনেক দিন এখানে আছে কিনা! নিজেদের মধ্যে মাঝেমধ্যে হিন্দিতে কথা বললে ও এরা বেশি সময় বাংলাতেই কথা বলে। পাঁচ জন মেয়েই সুস্বাস্থ্যের অধিকারী। এবং সুন্দরী ও স্মার্টও বটে। আসলে নিজেদের মধ্যে বসে আড্ডা মারার সময় ও খুঁজে বের করতে হয় এদের। এতোটাই ব্যস্ত সবাই। অফিসে কাজের চাপ। সেই চাপ মাঝে মধ্যে বাড়িতে ও হানা দেয়। এ যেন রাত কাটানোর নীড়। সারাদিন পাখি যেমন উড়ে উড়ে বেড়ায়, সন্ধ্যায় বাসায় ফেরে। এদের কাছে মেসবাড়ি অনেকটা সেরকম। এরা সবাই মোটামুটি সম্মানজনক মাইনে পেলে কি হবে কাজের সময় ও পরিমাণের ব্যাপারে কোন বাঁধাধরা নিয়ম নেই। বরং বলা যায় এরা অনেকক্ষেত্রে এক্সপ্লয়টেড হয়। নাম কা ওয়াস্তে ছুটির ব্যবস্থা থাকলেও বেশিরভাগ সময় এটা না ওটার কারণে ডিউটিতে যেতে হয়। দিনের পর দিন মাসের পর মাস এমনকি কখনও কখনও বছরের পর বছর বাড়িঘর থেকে আত্মীয় স্বজনদের কাছ থেকে দূরে থাকতে থাকতে এই মেসবাসিদের শেকড়ের টান যেন আলগা হতে শুরু করেছে। আত্মীয় স্বজন মা বাবা ভাইবোনেরা ও এখন আর তেমন আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু নেই। হোমসিকনেস এখন কাজ ডিউটি দায়িত্ব এসবের কাছে হার মেনেছে। এই ভরা যৌবন ও তার চাওয়া পাওয়া চাহিদা সব কিছু ভুলতে বসেছে। এই মেসের সদস্যরাই এদের পরিবার। সুখ দুঃখের অংশীদার। আড্ডা ঠাট্টা গল্পগুজব মনের শরীরের চাহিদা এদের মধ্যে শেয়ার করা যায়। এটাই পরিবার।
' অ্যাই মাধবী, অ্যাই মাধবী' - শৈলজা ঘুমন্ত মাধবী বারে বারে ঠেলা দিয়ে ডাকতে থাকে। ' অ্যাই মাধবী, উঠ না ইয়ার।' শৈলজার বারবার ঠেলা ও ডাকে আড়মোড়া ভেঙে মাধবী চোখ বন্ধ অবস্থায় বলে ' ক্যায়া হুয়া। শোনে দে না ইয়ার।'
' তেরা পাস প্যাড হ্যা?'
' ক্যায়া?'
' তেরা পাস স্যানিটারি ন্যাপকিন হ্যা কি? মেরা স্টক খতম হো গিয়া। হো তো দে না? মেরা হেভি ফ্লো হো রহা হ্যা, জলদি দে না!'
' মেরা আলমিরাসে লে লে। বটম ফ্লোরসে লে লে।' চোখবন্ধ ঘুমন্ত মাধবী এই কথা বলে পাস ফেরে শোয়।
' ক্যায়া রে শৈলজা, তেরা আভি তক পিরিয়ড হো রহা হ্যা? তেরা বয়ফ্রেন্ড ক্যায়া কর রহে রে?' অন্য দিক থেকে নলিনী মজা করে বলে। এদিকে শৈলজা তড়িঘড়ি মাধবীর আলমারি খুলে নীচের তাক থেকে ন্যাপকিনের প্যাকেট থেকে একটি ন্যাপকিন নিয়ে তাড়াতাড়ি বাথরুমে ঢুকে যায়। এইরকম ছোট্ট খাট্টো মজার মধ্যে এই পাঁচ যুবতীর দিন গুজরান হতে থাকে। তবে অন্য অনেক মেয়েদের মেসের মতো এখানে ও বিছানায় এদিক ওদিক ব্রা প্যান্টি ও অন্যান্য প্রসাধন সামগ্রী ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে। যেহেতু এখানকার সবাই যুবতী ও আধুনিকা, প্রত্যেকে নিয়মিত পারলারে যায়। প্রত্যেকেরই নিজস্ব আধুনিক শেভার আছে ও নিয়মিত গোপনাঙ্গ ও বহিরাঙ্গ শেভ করে পরিষ্কার করা এদের অভ্যাস। কর্মক্ষেত্রের প্রয়োজনের খাতিরে ও এটি দরকার। এদের সবাইকে পোশাক পরিবর্তনের সময় নগ্ন হওয়ার ব্যাপারে কখনও কোন হেজিটেশন করতে দেখা যায় নি। আসলে মেয়েদের মেসে এটাই তো স্বাভাবিক।
আজ কাব্যপ্রিয়ার হসপিটালে এক এনজিওর তরফে কাউন্সেলিং এর ব্যবস্থা ছিল। সঙ্গে ফল মিষ্টি বিতরণের ও ব্যবস্থা ছিল। সেজন্য কাব্যপ্রিয়া আজ শাড়ি পরে অফিসে এসেছে। শাড়িতে সুন্দর লাগছিল তাকে। সারাদিন অতিথি অভ্যাগতদের দেখভালে পরিশ্রম ও হয়েছে খুব। সেজন্য ছুটির পর আজ আর কোনো অজুহাত শোনে নি। সরাসরি মেসবাড়িতে ফিরে এসেছে। নিজের ব্যাগ থেকে ওয়ালেট বের করে চাবি নিয়ে দরজায় তালা খুলতে গিয়ে দেখে দরজায় তালা নেই। ভেতর থেকে বন্ধ। মনে মনে ভাবে এত তাড়াতাড়ি কে এল? অগত্যা কলিং বেল বাজায়। অদিতি দরজা খুলে দেয়। অদিতিকে ঘরের পোশাকে দেখে কাব্যপ্রিয়া জিজ্ঞেস করে ' অদিতি, তুই আজ অফিস যাস নি?'
' নারে, আজ আমার মর্নিং ডিউটি ছিল।' এই বলে অদিতি ডাকে ' কাব্যিয়া, তুই এ ঘরে একটু আয়।'
কাব্যপ্রিয়া অদিতির ঘরে ঢুকে দেখতে পায় এক সৌম্য দর্শন যুবক বসে আছে। তাকে দেখিয়ে অদিতি বলে ' কাব্যিয়া, মিট মাই ফ্রেন্ড মিলিন্দ। মিলিন্দ, সি ইজ কাব্যিয়া।' মিলিন্দ কাব্যিয়াকে 'হাই' করে। প্রত্তুতরে কাব্যিয়া ও 'হাই' করে। তিন জনের মধ্যে প্রাথমিক পরিচয়ের পর অল্পকিছু সময় আলাপ আলোচনা চলে। এরপরে মিলিন্দ সবার অনুমতি নিয়ে চলে যায়। এইক্ষণেই অদিতি কাব্যপ্রিয়াকে বলে ' কাব্যিয়া, আজতো তু বহুৎ সুন্দর লাগ রহে হো। কেয়া বাৎ রে? তুঝে থোড়া প্যায়ার করনে মন চাহাতা হ্যা। আ যা।' এই বলে অদিতি কাব্যিয়াকে জড়িয়ে ধরে চুমুতে কাব্যিয়ার ঠোঁট মুখ ভরিয়ে দেয়। জড়িয়ে ধরে পাগলের মতো আদর করতে থাকে। কাব্যিয়া ক্লান্ত শরীরে অসহায় বোধ করে। এদিকে অদিতি তাকে টেনে বিছানার কাছে নিয়ে যায়। হালকা ঠেলায় কাব্যিয়াকে বিছানায় ফেলে দেয়। লাফিয়ে তার শরীরের ওপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে। পাগলের মতো নিজের শরীরের ঘর্ষণের উত্তাপ কাব্যিয়ার শরীরে দিতে থাকে। এই অকস্মাৎ ও প্রচন্ড আক্রমণের বিরুদ্ধে অসহায় কাব্যিয়ার আত্মসমর্পণ ছাড়া অন্য কোন পথ খোলা ছিল না। এই প্রচণ্ড উত্তেজনা ও ধস্তাধস্তিতে দুজনের নিজেদের পোশাক স্থানচ্যুত হয়েছে। কাব্যিয়ার শাড়ি সায়া উঠে গিয়ে প্যান্টি বেরিয়ে গেছে। ব্লাউজের হুকগুলো পরাজিত সৈনিকের মতো পড়ে রয়েছে। ব্রা নিচে নেমে গেছে। কাব্যিয়ার দুই বুকের মাঝে অদিতি মুখ লুকিয়ে রেখেছে। অদিতির শরীরের অন্তর্বাস শূন্য একমাত্র হাউসকোট বিছানার এককোনায় জবুথবু হয়ে পড়ে আছে। অদিতির নগ্ন শরীর কাব্যিয়ার শরীরের উপর পূর্ণাঙ্গরূপে অবস্থান করছে। আবেশে এইভাবে কতক্ষণ ছিল দুজনেরই খেয়াল নেই। বাইরের কলিংবেলের আওয়াজে দুজনেরই সম্বিত ফেরে। তড়িঘড়ি উঠে পোশাক ঠিক করে দরজা খুলে দেয়। বাকি তিন জন কলকলিয়ে মেসে ঢোকে।
কয়েক মাস পর একদিন কাব্যপ্রিয়া তাদের হসপিটালে হঠাৎ মিলিন্দকে দেখতে পায়। এগিয়ে এসে মিলিন্দের উদ্দেশ্যে বলে ' এক্সকিউজ মি, আপনি এখানে?' কয়েক মুহূর্ত নীরব থাকার পর মিলিন্দ বলে ওঠে ' ও আপনি এখানে?'
' আপনি কি আমাকে চিনতে পেরেছেন?'
' অফকোর্স। আপনি অদিতির ফ্রেন্ড কাব্যিয়া।'
' তা আপনি এখানে কেন?'
' আমার এক রিলেটিভ এখানে ভর্তি আছে। আমি দেখা করতে পারছিনা। ভিজিটিং আওয়ার ইজ ওভার।'
' পেশেন্টের বেড নাম্বার বলুন।'
' দুশো এক।'
কাব্যপ্রিয়া মিলিন্দকে সঙ্গে নিয়ে পেশেন্টের কাছে যায়। কথা শেষের পর ফিরে আসে।
' আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। আপনি না থাকলে আজ পেশেন্টের সঙ্গে আমি দেখা করতে পারতাম না।'
' বন্ধু মনে করলে ধন্যবাদের প্রয়োজন হয় না।'
' কিছু মনে না করলে কাইন্ডলি আপনার নাম্বারটা একটু দেবেন? আমার হয়তো কাজে লাগবে।' মিলিন্দের এই অনুরোধে নিজেদের মধ্যে ফোন নাম্বার আদান প্রদান সম্পন্ন হয়। হসপিটালে আরও কিছু দিন এদের দুজনের মধ্যে নিয়মিত দেখা সাক্ষাৎ হয়। এমনকি কাব্যিয়া মিলিন্দের রিলেটিভের মেডিক্যাল বিল অনেকটাই কমাতে সাহায্য করেছে। মিলিন্দ ও যারপরনাই কৃতজ্ঞতা প্রকাশে কোন কার্পণ্য করেনি। এরপর থেকে এই দুজনের মধ্যে ফোন হোটাসআপের যোগাযোগ বেড়েছে। বন্ধুত্ব ও গাঢ় হয়েছে। কাব্যিয়ার স্বাভাবিক কিউরিওসিটি থেকে একদিন মিলিন্দকে জিজ্ঞেস করে বসে ' মিলিন্দ তুমি যদি কিছু মনে না কর একটা কথা জিজ্ঞেস করতে পারি?'
'নিশ্চিন্তে করতে পার।'
' তুমি কোথায় জব কর?'
' আই অ্যাম আ প্রফেশনাল।' মিলিন্দের এই সংক্ষিপ্ত উত্তরে কাব্যিয়া আর কোন প্রশ্ন করে না।
কিছু দিন পরের ঘটনা। হসপিটাল থেকে কাব্যিয়া একটা রিকশা নিয়ে মেসে ফিরছিল। ব্রডওয়ে ক্রশ করার সময় হঠাৎ একটি বাইক এসে রিকশার পেছনে প্রচণ্ড জোরে আঘাত করে। রিকশা আরোহী কাব্যিয়া ছিটকে ফুটপাতে পড়ে। প্রচণ্ড যন্ত্রণা সত্বেও ব্যাগ থেকে মোবাইল করে প্রথমে মিলিন্দকে ফোন করে। সংক্ষেপে ঘটনার কথা ও স্পট জানায়। অল্প সময়ে বাইক নিয়ে হাজির মিলিন্দ। পাঁজাকোলা করে কাব্যিয়াকে তুলে বাইকের পিলিয়নে বসায়। বাইক চালিয়ে কাব্যিয়ার হসপিটালে নিয়ে যায়। যেহেতু স্টাফ সবাই দৌড়ে আসে। জলদি ট্রিটমেন্টের ব্যবস্থাও হয়। ভগবানের কৃপায় সবকিছু ঠিক আছে। প্রাথমিক চিকিৎসার পর কাব্যিয়াকে ছেড়ে দেওয়া হয়। মিলিন্দ তার বাইকে কাব্যিয়াকে তার মেসে পৌঁছে দেয়।
এর পর গঙ্গা দিয়ে অনেক জল গড়িয়ে গেছে। মিলিন্দ কাব্যিয়ার মধ্যে বন্ধুত্ব আরও প্রগাঢ় হয়েছে। কাব্যিয়ার সেদিন নাইট ডিউটি। কি মনে হল দুপুরে বাকি সবাই যখন অফিসে কাব্যিয়া ফোনে মিলিন্দকে তার মেসে আসতে বলে। মিলিন্দ ও একটু সময় নিয়ে চলে আসে। দুজনে বসে অনেকক্ষন গল্পগুজব করে। অনলাইনে আনানো খাবার মিলিন্দকে খেতে দেয়। নিজে হাতে কফি বানিয়ে মিলিন্দকে খাওয়ায়। এই গল্পের মধ্যে কাব্যিয়া বলে ' জানো মিলিন্দ, আজ আমি আমার বন্ধুকে আমার মনের কথা বলতে চাই। আজ আমার মন বড়ই খুশি। আমি বলে হালকা হতে চাই।' মিলিন্দ বুদ্ধিমান ছেলে। সে বুঝতে পারে কাব্যিয়া কি কথা বলতে চায়। সে বলে ' হ্যাঁ। ঠিকই বলেছ। মনের কথা শেয়ার করতে পারলে মনটা বড্ড হালকা হয়। কাব্যিয়া, তুমি খুব ভাল মেয়ে। আমার খুব ভাল বন্ধু তুমি। তুমি কখনও আমার ব্যক্তিগত কিংবা পারিবারিক কথা জানতে চাওনি। কিন্তু তোমার ভাল বন্ধু হিসেবে এ কথা আমাকে বলতেই হবে। তুমি শুনতে না চাইলেও আমাকে বলতেই হবে।'
' বল না বল।' কাব্যিয়ার গলায় ঔৎসুক্যের সুর।
মিলিন্দ বলতে থাকে ' আমি তোমায় কখনও কোন মিথ্যা বলিনি। তবে আমার সম্পর্কে সত্যটাও তুমি জানোনা। আমি তোমার মতো ভাল বন্ধুকে ঠকাতে পারব না। আমি তোমায় বলেছি আমি প্রফেশনাল, তবে কি প্রফেশন তা কিন্তু বলিনি। আজ বলব। তার আগে আমার জীবনের গল্প তোমায় শোনাচ্ছি। আমার বাবা ব্যাঙ্গালোরবাসী হলে কি হবে তিনি কলকাতার একটি প্রাইভেট ফার্মে চাকরি করতেন। সেই আয় থেকে তিনি আমাদের পাঁচ জনের পরিবার চালিয়েছেন। আমাকে বিটেক অব্দি পড়িয়েছেন। একটা ছোট্ট ফ্ল্যাট ও কিনেছেন এই আয় থেকে। ছাত্র হিসেবে আমি খুব একটা খারাপ ছাত্র ছিলাম না। আমি তখন সদ্য বিটেক পাশ করেছি, হঠাৎ একদিন খবর এল কার অ্যাকসিডেন্টে বাবা মা দুজনেই মারা গেছেন।' কাব্যিয়া দুই হাতের তালুর মধ্যে চিবুক রেখে মনোযোগী ছাত্রের মতো মিলিন্দের কথা শুনছিল। হঠাৎ বলে উঠল ' মিলিন্দ, সরি। তোমার লাইফ যে এত প্যাথেটিক আমি আদৌ জানতাম না।'
' এ কতটুকু শুনলে? আসল ঘটনা তো এখনো শুরু হয় নি।'
' ঠিক আছে। তুমি বল। আমি শুনব তোমার জীবন যুদ্ধের কাহিনী।'
একটা দীর্ঘঃশ্বাস ফেলে মিলিন্দ আবার বলা শুরু করে। ' তখন আমার পাগলের মতো অবস্থা। সংসারে আমিই বড়। ভাই বোন দুজনেই অনেক ছোট। ফ্ল্যাট কেনা ও আমার পড়ার পেছনে খরচের পর বাবার যা কিছু সঞ্চয় সবই নিঃশেষ। সংসার চালানোর কপর্দকশূন্য অবস্থা। মরিয়া হয়ে আমি একটা কাজের জন্য হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছি। আত্মীয় স্বজন ও কেউ নেই যাদের থেকে এই সময় কিছু সাহায্য পাওয়া যাবে। অগত্যা বাবার চেনা এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে তার অফিসে দেখা করি। আমার সমস্যা শোনার পর তিনি বলেন ' তোমার সৌম্য সুন্দর চেহারার মত পরীক্ষার রেজাল্ট ও ঝকঝকে। তুমি অনেক ভাল চাকরি পেয়ে যাবে। তাছাড়া অ্যাকাউন্টস বা অন্য কোন কাজ তো তোমার দ্বারা হবে না। '
' না। আপনি যেকোন কাজ দিয়ে দেখুন না। আমি ঠিক করতে পারব। আসলে আমার বাড়িতে উনুনে হাঁড়ি চড়ার কোন সুরাহাই নেই। একটা কিছু ব্যবস্থা আপনাকে করে দিতে হবে স্যার।'
' ঠিক আছে। কাল একবার এসো। দেখি তোমার জন্য কি করা যায়।'
কাব্যিয়া ভারাক্রান্ত গলায় জিজ্ঞেস করে ' তারপর কি হল?'
' পরপর দুদিন ওনার অফিসে গিয়ে জানতে পারি উনি অসুস্থ। অফিসে আসছেন না। নিরুপায় হয়ে ওনার বাড়ির ঠিকানা জোগাড় করে বাড়িতে হানা দিই। ভদ্রলোক ডাক্তারের কাছে যাওয়ার জন্য তখন রেডি হচ্ছেন। আমায় দেখে বললেন ' আমি একটু বেরুচ্ছি। ডাক্তারের অ্যাপয়ন্টমেন্ট আছে। তুমি প্রথম আমার বাড়িতে এলে। চা জল না খেয়ে যাবে না।' এই বলে ভদ্রলোক তার স্ত্রীকে আমাকে চা ও খাবার দিতে বলে বেরিয়ে গেলেন। ওনার সুন্দরী, তরুণী, আধুনিকা স্ত্রী নিজে হাতে চা জলখাবার নিয়ে এসে আমায় বসতে বলেন। তারপর আমার সব বিষয় খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে জেনে নেন। আমায় প্রশ্ন করেন ' তোমার কি মনে হয় উনি তোমার কোন আর্থিক সুরাহা করবেন?'
' মনে তো হয় কিছু একটা করবেন।'
' কক্ষনো না। উনি স্বার্থ ছাড়া কক্ষনো কিছু করেন না। তুমি কি জান ওনার প্রথম পক্ষের স্ত্রীর সঙ্গে ডিভোর্স হয়ে গেছে। ওনার আগের পক্ষের ছেলে মেয়ে সব আছে। তারা সব অন্যত্র থাকে। আমি ওনার দ্বিতীয় পক্ষ। উনি প্রায় আমার কাকার বয়সী। আসলে আমার বাবার ক্যান্সার চিকিৎসা করাতে গিয়ে ওনার থেকে আমাদের অনেক ঋণ হয়ে যায়। সেই ঋণ শোধের শর্ত হিসেবে আই ওয়াজ কম্পেল্ড টু ম্যারি হিম, অলমোস্ট আ সিক্সটি ইয়ার্স ওল্ড ভালচার। এনিওয়ে, আমি তোমার একটা নিয়মিত আর্থিক উপার্জনের ব্যবস্থা করে দিতে পারি। কিন্তু আমার একটা শর্ত আছে। তুমি যদি সেই শর্তে রাজি হও। তবে আমি ভেবে দেখতে পারি।'
' বলুন আপনার কি শর্ত। সে যেই শর্ত হোক আমি তাতে রাজি। আমার টাকার দরকার। না হলে আমার সংসার চলবে না। ছোট্ট দুই ভাইবোনের পড়াশোনা কিছুই হবে না। আপনি বলুন কি শর্ত আপনার।'
' তুমি তোমার এই সৌম্য কান্তি, ফুটন্ত যৌবন দিয়ে আমার শরীরের অতৃপ্ত ক্ষুধা তোমাকে মেটাতে হবে। এবং তা হতে হবে নিয়মিত। এই কাজে কোন খাদ বা ফাঁকি থাকা চলবে না। তোমার পারিশ্রমিক হিসেবে নিয়মিত যথেষ্ট পরিমাণ আর্থিক সাহায্য তুমি পাবে। তাতে তোমার সংসার স্বচ্ছলভাবে চলে যাবে আশা করি। বল, তুমি এই শর্তে রাজি? '
' আমার কাছে অন্য কোন রাস্তা তো খোলা নাই। আমি রাজি।'
' তাহলে কাল থেকেই লেগে পড়। তোমার নাম্বারটা আমায় দাও। আমি যোগাযোগ করে নেব।'
ভাবলেশহীন নির্বাক কাব্যিয়া অপলক দৃষ্টিতে মিলিন্দকে দেখতে থাকে। কন্ঠরুদ্ধ তার। মিলিন্দ কিন্তু বলেই চলে
' সেই আমার হাতে খড়ি। তার পর থেকে আর ফিরে তাকানোর সুযোগ হয়নি। একে একে আমার ক্লায়েন্টের সংখ্যা বেড়েছে। কাব্যিয়া, তোমার মেসের বাকি চারজন ও আমার ক্লায়েন্ট। আমি একজন প্রফেশনাল। আমার প্রফেশন-প্রস্টিটিউশন। আই অ্যাম আ মেল প্রস্টিটিউট। আমি একজন পুরুষ গনিকা। কাব্যিয়া, তুমি একজন ভদ্র, ভাল মেয়ে। পারলে আমায় ক্ষমা করে দিও।' এই বলে মিলিন্দ ধীর পায়ে মেস থেকে চলে যায়।
ভাবলেশহীন কাব্যিয়া মিলিন্দের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। মেসের খোলা দরজা দিয়ে পড়ন্ত সূর্যের আলো এসে পড়েছে কাব্যিয়ার সুন্দর মুখে। কাব্যিয়াকে যেন নিষ্পাপ মেরির মতো লাগছে। কিন্তু কাব্যিয়ার কানে তখনও অনুরণিত হতে থাকে ' পুরুষ গনিকা.....পুরুষ গনিকা............'।
১৯ জুন - ২০২১
গল্প/কবিতা:
২৩ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪