একাকিত্বের মেওয়া ফল

একাকীত্ব (জুন ২০২১)

Arabi
  • 0
  • 0
  • ৬৩
বর্ষাপার হয়ে শরতের প্রায় শেষের দিকে, বিকেল না গড়াতেই রোদ আর মেঘের লুকোচুরি খেলা শুরু হয়ে গেছে। দুরে কোথাও বৃষ্টি হয়েছে। দক্ষিণ থেকে শীতল বাতাস আসছে। ডাঃ আব্দুল্লাহ চেয়ারটা নাড়িয়ে নাড়িয়ে ‘নয়া দিগন্ত’ পত্রিকার পাতায় চোখ বুলাচ্ছেন। কিছুটা থেমে তার মেয়ে নাফিফাকে জোরে ডেকে বললেন আমাকে এক কাপ চা দিও তো মা। তারপর তিনি আবার চেয়ারের সাথে গা মেলে দিয়ে পত্রিকাটা চোখের সামনে ধরলেন। হালকা বাতাসের মাঝে একটা জোরে বাতাস তার হাত থেকে পত্রিকাটা উড়িয়ে ছাদের কিনারায় ফেলল। মুহুর্তেই তার চোখ পত্রিকার দিকে না গিয়ে অসমি দিগন্তে শরৎ মেঘের বাগান দেখতে লাগলো। কালো মেঘ সাদাকে ধরছে আবার সাদা মেঘ কালোকে ধরছে। আবার যখন দু’জন একে অপরের থেকে সরে আসছে তখন নীল আকাশের ফাঁক দিয়ে সূর্যের আলো এদিকে ওদিকে গিয়ে লাগছে। যেন সেই আকাশ, রবি, সজিব, সানা এদের সাথে বরফ পানি খেলার মত। একথা ভাবতেই যেন তার শির দিয়ে রক্ত প্রবল বেগে বইতে লাগলো।

তখন আমি ক্লাস টেনে, সেদিন পড়া বাদ দিয়ে বন্ধুদের সাথে হলের মাঠে খেলতে গিয়েছিলাম তাও আবার বাবাকে না বলে। সন্ধ্যায় ঘরে ঢুকেই দেখি বাবা আমার টেবিলে বসে। বাবা আমাকে বেশ জোরে দু’টো চড় মারলেন আর কানটা টেনে দিয়েছিলেন। রাগে আমার বইগুলো মেঝেতে ফেলে দিয়ে বললেন, তোমাকে আর পড়তে হবে না তুমি সারাদিন মাঠে থাকবে। আমি তারপর আর কোনদিন খেলতে যাইনি। তার তিন মাস পর আমার পরীক্ষা শুরু হলো। আমার পড়া শোনার জন্য বাবা বাড়ি থেকে বেরুতেন না। সারাদিন একাকী থাকতাম আমি। অনেক কষ্টে পরীক্ষা দিলাম, মনে করলাম এবার দাদু বাড়িতে গিয়ে অনেক মজা করব। ঠিক তখনই বাবা আমাকে ইংরেজি শেখার জন্য কোচিং করতে দিলেন।

কলেজে ভর্তি হবার পর আমাদের নিয়ে শহরে চলে আসলেন। মনে করেছিলাম এবার বড় হয়েছি, নিজের মত খেলতে, ঘুরতে পারব। কিন্তু না বাবা তার পরিচিত বন্ধুর কলেজে ভর্তি করে বলেছিলেন ক্লাস মিস দিলে তোমাকে বাজারের কাজে লাগিয়ে দিব।

আমার সব বন্ধুরা আমাকে ঘুরতে যাবার জন্য অনেক অনুরোধ করত কিন্তু আমি তাদের সাথে যাবার সাহস পাইনি। স্বেচ্ছায় একাকিত্ব বেছে নিয়েছিলাম বাবার ভয়ে। ভাল ফল করে এইচ.এস.সি শ্রেণিতে ভর্তি হবার পরে আমার মনে হলো চার দেয়াল আর হাজতের মধ্য থেকে বের হলাম। আল্লাহ আমাকে রক্ষা করেছেন। সেদিন সকালে আমি হলে উঠলাম। আনন্দে আমার মন নেচে উঠল। কতদিন পর নিজের মত চলতে পারব। আবার সবার সাথে মজা করতে পারব। কতদিন নাহিদ, শোয়াইব এদের সাথে নদীর ধারে যাওয়াই হয়নি, এবার যাবই। আমি সবাইকে বললাম, আজ রাতে আমরা অনেক মজা করবো। খাবার বাইরে খাবো। সে জন্য সন্ধ্যায় গোসল করে বাইরে যাবার জন্য ঘরে ঢুকে নাচতে নাচতে কাপড় পরছি তখন আমার দরজায় দু’টো শব্দ হলো। আমি খুলেই দেখি বাবা। আমি বললাম, বাবা তুমি এখন কেন, আমি তোমাকে না বলেই এসেছি।

তোমার জন্য একটা মোবাইল কিনলাম। আর আজ আমি তোমাদের সাথে থাকব। আমি আমার রুমের বড় ভাইয়ের মোবাইল থেকে ওদের ফোন দিয়েছিলেন তখন আমার ফোন ছিলোনা তাই। সে রাতে প্রায় ৫০ টা কল এসেছিলো। পরদিন সকালে বাবা চলে গলেন আর বলে গেলেন বাইরে যাবা না, পরীক্ষা খারাপ হলে পরের মাস থেকে টাকা পাঠাব না। আমি তখন খুব ভয় পেয়েছিলাম কারণ আমি অন্য কোন কাজ করতে পারতাম না। আমার অবস্থা তখন টালমাটাল। আবার শুরু হলো একাকিত্বের জীবন। যদি পরীক্ষা খারাপ হয় আর বাবা যদি আমাকে টাকা না দেন। তাই কোনদিন ঘুরতে যেতাম না।

বাবা প্রতিদিন আমাকে রুমে ৩ বার কল দিতেন। সকালে ক্লাসে গেলাম কিনা, ক্লাস করে আসলাম কিনা, রাতে পড়তে বসলাম কিনা। আবার আমার স্বপ্নগুলো দেয়াল দিয়ে বেষ্টিত হলো। কাল নববর্ষে ঘুরতে যাব তাও বাবা নয়বার কল দিয়ে আমায় বারণ করেছেন, নানা ভয় দেখিয়ে। আজ তারা কত মজা করতো কিন্তু আমি শুধু চেয়ারে বসে ঔষধের নাম পড়তে পড়তে নববর্ষের ঔষধ তৈরি করেছি। আজ আমি একজন ডাক্তার। কিন্তু আজ বাবা নেই। আজও তাকে মনে পড়ে-
কল্পনাতে বাবা তোমায়
মনে পড়ে খুব
পুরনো স্মৃতি মনে পড়ে
কাঁদো কাঁদো বুক
ছোট থেকেই শুনে আসছি একাকিত্ব যন্ত্রনাদায়ক। আমার জন্যও ছিলো। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে সাময়িক একাকিত্ব চূড়ান্ত সফলতারই অংশ। এটি আমাকে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করেছে। আমি আজ আর একা নই। আমি একটি মুক্ত সাদা পাখি। যেখানে খুশি যেতে পারি। আর এসব কিছুর জন্য আমি বাবার কাছে ঋণী। হঠাৎ বাবার কথা মনে পড়তেই চোখ বেয়ে পানি পড়তে লাগলো। তিনি দেখলেন তীব্র রোদ তার চোখে লাগছে। এরইমাঝে তার চায়ের কথা পড়ল কিন্তু ততক্ষণে তার চা ঠা-া হয়ে গেছে।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন

২০ মে - ২০২১ গল্প/কবিতা: ১ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "ছোটবেলা”
কবিতার বিষয় "ছোটবেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪