২০১৭ সাল-
চাকুরীর সু-বাদে আমি তখন ময়মনসিংহে থাকি। ময়মনসিংহের আবহাওয়া তাদের আচার ব্যবহার আমাকে একধরনের মুগ্ধতা এনে দিয়েছিল । তাদের সাথে চলা ফেরা আত্মীয়তা ও বন্ধুতের সম্পর্কের রুপ দিয়েছিলো। আমার মেসের সদ্যস্যদের পেয়ে আমি যেন আমার দেশের বাড়ি বগুড়ার কথায় ভুলেই গিয়েছিলাম । যাই হউক আমি আমার মেসের বন্ধুদের পরিচয় করিয়ে দেয় সৌরভ,হাবিব ও আমি তিনজনে আমরা একে ওপরের খুব ভালো একটা বন্ধু । আমরা তিনজনে অবসর সময় পেলে রাতে বেলায় ঘুড়তে বের হতাম। আমাদের মধ্যে সৌরভ ছিল অনেকটা বুদ্ধিমান ও ময়মনসিংহের অলিগলি সব চিনত এজন্য আমি সৌরভকে সবসময় সাথে নিতাম।
এক দিন সৌরভকে সাথে রাত্রি ১১টায় ময়মনসিংহের গাঙ্গিনার পাড়ে একটা উদেশ্যে ওকে সাথে নিয়ে গেলাম। সৌরভকে বললাম লোকে মুখে শুনি এখানে রাত্রি বেলা দেহ ব্যবস্যা হয়। কথাটা শুনে সৌরভ আমার মুখে দিয়ে একদৃষ্টিতে অনেকক্ষন চেয়ে থাকল! আমিও একটু অবাক হয়ে বললাম আমাকে দেখার কী আছে? সৌরভ আমাকে বলতে লাগল, শেষ পর্যন্ত তুই আমাকে এই কথা বললি! আমি বললাম আমি কী এমন বলেছি তুই খেপে গেছিস, যা দেখত ওদের মধ্যে একটা অল্প বয়সী মেয়ে খুজে নিয়ে আয়। ওদের সাথে আমি একটু কথা বলে দেখব। সৌরভ তৎক্ষণাত বলে উঠল ওরা সহজে কথা বলতে চায় না!
তবে একটা কাজ করলে তুই ওদের নিকট থেকে সময় নিতে পারবি। আমি বললাম তাহলে সেই কাজটা তুই কর। সৌরভ খুব তাড়াতাড়ি একটা যুবতী মেয়েকে নিয়ে আসল, মেয়েটি বয়স ১৬-১৮বছরের মধ্যে হবে।মেয়েটে আমাকে খদ্দের ভেবে বলল বাবু ১ ঘণ্টার জন্য ৫০০টাকা আর সারারাতের জন্য ১০০০ টাকা দিতে হবে। আমি সারারাত থাকার জন্য রাজি হয়ে গেলাম আর আমি মনে মনে ভাবতে থাকলাম পতিতা মেয়েদের সম্পর্কে জানার আমার অনেক আগে থেকে এক ধরনের আগ্রহ। আর আমি মেয়েটির সাথে যেতে শুরু করলাম এর মধ্যে আমি মেয়েটিকে তার নাম জিজ্ঞাস করলাম মেয়েটি বলল তার নাম মৌসুমী আরও বলল “আমি এখানে ৩ বছর হলে আছি”। আমি তাকে আরও প্রশ্ন করতে শুরু করলাম কিন্তু তার দেশের বাড়ি জিজ্ঞাস করায় মৌসুমি রেগে গিয়ে আমাকে থেমে দিল আর আমাকে হুশায়ারি দিল আমি যে কাজে এসেছি সে করে চলে যেতে। আমি আর একটা প্রশ্ন করলাম না, তার পিছুপিছু চলতে শুরু করলাম। চলতে চলতে একটা গলির ভিতর দিয়ে ছোট্ট একটা টিনের ছাউনি নিচে নিয়ে গেল।
রাত্রি তখন ১২ টা-
ঘরের ভিতর ঢুকেই আমার বুকের ভিতরটা কেপে উঠল। আমি এর আগে কখনও এ সকল যায়গা আসি নি। মৌসুমি তার কাপড় খুলতে শুরু করল আমি কাপড় খুলতে না করলাম। আমি না করাতে মৌসুমি আমার দিকে এক দৃষ্ঠিতে চেয়ে থাকল । কিছুক্ষণ পর মৌসুমি বলল বাবু এখানে সবাই আসে আমার দেহটারে ভোগ করতে, আর বাবু তুই কি জন্যে এসেছিস। আমি যেন একটা সুযোগ পেয়ে গেলাম।
আমি আর দেরি না করে মৌসুমিকে বললাম আমার তোমার জীবনী সম্পর্কে জানতে চাই? মৌসুমি আমার কথা শুনে দ্বিতীয় বারের মতো আমার উপর রেগে গেল এবং আমাকে ঘর থেকে বের করে দিল। আমিও নাছরবান্দার মতো তার ঘরের পাশে বসে থাকলাম। সে আমার সামনে আরেকটা খদ্দের ধরে নিয়ে আসল।
রাত্রি তখন ১ টা-
মৌসুমির মনে হয় একটু দয়া সঞ্চয় হয়েছিল, আমাকে আবার তার ঘরে ডেকে পাঠাল। আমি এক মূহূত্য দেরি না করে তার ঘরে ঢুকলাম কারণ বাহিরে মশার কামড়ে হাত পা চুলকাতে শুরু করেছিল। যাই হোক আমাকে তার জীবনী সম্পর্কে জানতে হবে!
ঘরে ঢুকার সাথে সাথে মৌসুমি আমাকে বলল দেখে ‘ত’ মনে হয় ভদ্র ঘরের ছেলে আমার জীবনী সম্পর্কে জানার এতো ইচ্ছা কে বাবু! আমি মৌসুমিকে বললাম প্রত্যেটি মানুষের একটা করে ইতিহাস থাকে যে ইতিহাসের কারণে বর্তমান অবস্থায় পতিত হয়ে থাকে, আমি মনে করি তোমাদের এ কাজে আসার পিছনে বড় ধরনের কোন কারন আছে। আমার এ সব কথা শুনে ওর মনটা একটু হালকা হয়ে গেল। মৌসুমি আমাকে তার জীবনের পুরো ঘটনা বলতে আগ্রহী প্রকাশ করল।
বাবু তাহলে শুনুন এ কথা বলতেই তার চোঁখ দিয়ে জল চলে আসল! আমি তাকে একটা টিস্যু বের করে দিলাম মৌসুমি চোঁখ মুছতে থাকল ।
মৌসুমি পড়ম কষ্টে বলল আমার বাবা একজন সাধারণ ভ্যান চালক । আমাদের বাড়ি বগুড়ার মোকামতলায়, আমার পরিবারে ৪ জন সদস্য। আমি বড় মেয়ে, আমার বাবার কোন জমিজমা ছিল না বাবা আমাদের জন্য খুব কষ্ট করে টাকা পয়সা আয় করত। আমাদের সংসার সবসময় অভাব লেগে থাকত, অনেক সময় এমনও দিন গেছে আমাদের না খেয়ে স্কুলে যেতে হয়েছে। আমার মা আমাকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখত আমার বিয়ে হবে, আমার একটা সুন্দর সংসার হবে। এ কথা বলতে বলেতেই মৌসুমি যেন তার ভাষা হারিয়ে যেতে থাকল । আমি তাকে জিজ্ঞাস করলাম তার পর কী হলো । মৌসুমী চোঁখের জল মুছে আবার বলতে শুরু করল। আমি তখন ক্লাস এয়িটে পড়ি গ্রামের কিছু বখাটে ছেলে আমার পিছু নিত মাঝে মধ্যে তারা আমাকে বিরক্ত করত আর প্রেমের প্রস্তাব দিত। আমি ঘটনাটি সজ্য করতে না পেরে আমার বাবাকে কথাগুলি বলে দেয়। বাবা ওদের বাড়িতে গিয়ে নালিশ দিয়ে আশে,তার ফল স্বরুপ পরের দিন সকালবেলা স্কুলে যাওয়ার পথে আমাকে একটি মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়। আমি চিৎকার করার চেষ্টা করি ওরা আমার মুখের ভিতর কাপড় ঢুকিয়ে দেয় । আমি যেন জ্ঞান হারা হয়ে যায় । কিছুক্ষণ পরে আমার জ্ঞান ফিরে আসে দেখে চতুর পাশে শুধু গাছ আর গাছ বুঝতে পারি আমাকে কিডনাপ করে একটা বনের মধ্যে নিয়ে আশা হয়েছে। এরপরের ঘটনাটে বলতেই মৌসুমি থেমে গেল..! আমি বুঝতে পারলাম তাকে ধর্ষণ করা হয়েছে , এজন্য মৌসুমিকে আর জোর করলাম না । মৌসুমিকে বললাম পরে ঘটনাটি একটু যদি আমাকে বলতেন! মৌসুমি বলল আমাকে পরের দিন বাড়ির পাশে রাস্তায় নেমে দিয়ে আসা হলো, আমি বাড়িতে ঢুকতেই গ্রামের মানুষ আমাকে ছিঃ ছিঃ বলতে শুরু করল। গ্রামের সবাই বলতে লাগল এই ধর্ষিতা মেয়েকে কে বিয়ে করবে। বাবা কথাগুলো শুনে আমার সামনে না এসে ঘরের ভিতর ঢুকে পড়ল এবং সেখানে গলায় ফাঁস দিয়ে নিজেকে শেষ করে দিল। মা আমাকে গ্রামের মানুষের ছিঃ ছিঃ হাত থেকে বাচাতে আমার ফুপাতো ভাইয়ের বাড়ি ময়মনসিংহে পাঠিয়ে দিল । সেখানে কয়েক মাস থাকার পরে ফুপাতে ভাই আমাকে ব্লাকমেল করে দিনের পর দিন ধর্ষণ করতে লাগল । আমি সিন্ধান্ত নিলাম এখান থেকে আমি পালিয়ে যাব। পালিয়ে যাওয়ার জন্য আমি রাতের বেলা ময়মনসিংহ জংশনে গেলাম। সেখানে এক ভদ্র মহিলা আমাকে জিজ্ঞাস করল তুমি কোথায় যাবে, এখন কোন ট্রেন আসবে না । আমার সাথে চলো আজকে থেকে আগামীকাল সকালে চলে যাবে। আমি অন্ধভাবে বিশ্বাস করে তার বাসায় চলে গেলাম । বাসায় গিয়ে দেখি সেখানে আমাকে বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে । এ কথা গুলো শুনে আমি আর আমার চোখেঁর পানি ধরে রাখতে পারলাম না, দুচোঁখ দিয়ে যেন আমার চোখের জল গড়িয়ে আসছে , আর আমি ভাবছি হায়রে আমার সোনার বাংলা! এর মধ্যে ফজরের আযান দিয়ে দিয়েছে আমি মৌসুমিকে বিদায় যানালাম ।
কয়েক মাস পরে আমি মৌসুমির সাথে দেখা করতে যাই । সেখানে গিয়ে শুনি মৌসুমি একটা ছেলের সাথে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করছে । আমি শুনে অনেক খুশি হলাম কারণ অবশেষে সে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা
ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য
আমরা প্রতিনিয়ত পতিতাদের দোষ দিয়ে থাকি । আসলে ওদের এখানে আসার পিছনে আমাদের সমাজের মানুষ দায়ি । এখানে একটি পতিতার রাতের কথা তুলে ধরা হয়েছে কারণ প্রত্যেকটা রাতি একটা পতিতার জন্য কালো রাত ।
২২ ফেব্রুয়ারী - ২০২১
গল্প/কবিতা:
৫ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।