চিঠি

বৃষ্টি ও বিরহ (আগষ্ট ২০২১)

dhrubo
  • 0
  • ৪৪
তারেক ঘুম থেকে উঠে। ডান দিকে তার স্ত্রীর দিকে তাকায়। এখনো ঘুম। ঘুমানোর কথাই তো। সকাল বাজে ৫ টা। তারেকের বিয়ে হলো তিন বছর হচ্ছে। রেহানার সাথে তার কাগজের জন্য বিয়ে। টার্জান ভিসা নিয়ে আমেরিকায় ঢুকার পর পার্মানেন্টলি থেকে যাওয়ার জন্য এই কাজ করা লাগছে। ১৮ টা দেশ ঘুরে নিউ ইয়র্কের কুইন্সে কাচাবাজার এ কাজ করতে গিয়ে মহিউদ্দিন সাহেবের (এখন শ্বশুর) সাথে পরিচয়। কাজ ঠিকমতো করতো। উনিও তারেক কে পছন্দ করতেন। সেই সুযোগে ইনিয়ে বিনিয়ে তারেক কাগজের কথা বলায় এক ধাক্কায় বিয়া দিয়ে দিছিলেন।
“একটা ভালো বাংলাদেশী ছেলের সাথে বিয়ে দিতে পারলে নিশ্চিন্ত থাকি।মেয়েটা উচ্ছৃংখল হয়ে যাচ্ছে”।

সেই থেকে কুইন্স এর সেমি বেইজমেন্টে শ্বুশুরবাড়িতে ঘর জামাই এর মতো করে থাকা হয়। সরকারি সাহায্য পায় তারেক আর টাকা জমাইতেছে একটা এপার্টমেন্টে উঠবে। সেইখানে আবার একটু আলো আসবে। হাটা হাটি করা যাবে। বারান্দা আর জানালার পাশে একটু গাছ রাখা যাবে। তারপর টাকা পয়সা জমাইয়া ডেলাওয়ার অথবা মিশিগান গিয়া বাড়ি কিনা হবে। গাড়ি থাকবে। আমেরিকান ফোর্ড মাস্ট্যাং। মিশিগান সেকেন্ড হ্যান্ড ভালো আর সস্তা ফোর্ড মাস্ট্যাং থাকে শুনছে ফেসবুকে। সেই মিশিগানের বাড়ির কথা কল্পনা করে তারেক। সামনে সবুজ উঠান। পিছনেও জায়গা থাকবে। নদীর পাশ ধরে লং ড্রাইভ করে লেকের পারে বিচে বইসা দিন কাটবে। স্ফটিকের মতো নীল পানির লেকে তাকায় থাকবে। চোখ বন্ধ করে তারেক কল্পনা করে। কিন্তু কোনোভাবেই তার পাশে নিজের বিয়ে করা স্ত্রী কে কল্পনা করতে পারে না। একটা শুন্যতা কাজ করে। মাঝে মাঝে কল্পনা তে সামিহা কে দেখে কিন্তু ইদানীং সামিহার চেহারাও ভুলে যাচ্ছে তারেক। সামিহা কে ফেসবুকে খুজে তারেক মাঝে মাঝে। কিন্তু পায় না। সামিহার কথা ভাবতে ভাবতে তারেক তার স্ত্রীর মুখের দিকে তাকায়। কি ব্যাপার সামিহা কেন ওর পাশে শুয়ে আছে। তারেক কাছে যায় কিন্তু ঠোটের দিকে যেতে যেতে মুখ টা আবার বদলে যায়। তারেকের স্ত্রীও ঘুরে যায় উলটো দিকে।

নুসরাত হইলো তারেকের স্ত্রীর নাম। নিউ ইয়র্কে জন্ম,বেড়ে উঠা। ফাকিং “নিউ ইয়র্কার” ওর কথা অনুযায়ী। এখানকার মেয়েদের মতোই রাতে ১টা-২টা পর্যন্ত বাইরে বাইরে ঘুরা ফিরা। হুক্কা বারে গিয়ে তাস পেটানো। মাঝেমধ্যে ফ্রেন্ডস দের সাথে মদ টদ খাওয়া। সর্বোচ্চ যেটা হইছিলো তা হলো গিয়া একবার পাকিস্তানি বয়ফ্রেন্ডের সাথে ম্যানহাটনে এক সপ্তাহ থাকছিলো। এখনো বিকাল সন্ধ্যা কাটায়। যদিও সেটা কেউ জানে না।এটা তারেক বিয়ের পর পর জানতে পারছে। যখন নুসরাত রাত বিরাতে হাওয়া হয়ে যাইতো তখন তারেক জিজ্ঞেস করে জানতে পারছে। তারেক কাজ করে এসে দেখতো নাই তার বউ। কোথায় হাওয়া হয়ে গেছে এবং কেউ জানে না সে কই। আস্তে আস্তে মেনে নিয়ে আগাইতে থাকে তারেক। জীবন তো আর বসে নাই।
মাঝে মাঝে বাসার সামনে গিয়ে চিতকার চেচামেচি করে নুসরাতের সাথে।
“কই ছিলা?”
“তোমার কি?আমি যেখানেই থাকি না কেন?”
“মানে, আমি তোমার স্বামী। আমাকে বলবা না তো কাকে বলবা?”
“ তুমি তো আমাকে কাগজের জন্য বিয়া করছো।”
তারেক থাপ্পড় মারার জন্য হাত উঠায় ফেললো।
“মারবি?মার। এখুনি ৯১১ এ কল দিয়ে ফ্রড ইমিগ্রেশন এর কথা বইলা নগদে চুদে দেশে পাঠায় দিবো।”
তারেক চুপ হয়ে যায়। এভাবেই চুপ করে সংসার নামের এই দিন গুলো কেটে যাচ্ছে। তারেক বিছানা থেকে উঠে। ফোন চেক করে। মেসেজ বক্সে বাবা মা বোনের টেক্সট জমে আছে। টাকা পয়সা জমি জমার ঝামেলা। ভাল্লাগেনা। ফ্রেশ হয়ে নেয় তারেক। সাইকেল বের করে। উবার ইটস এর ব্যাগটা কাধে নিয়ে রাস্তায় বের হয়ে যায়। জ্যাকসন হাইটস এর ভীড় ভাট্টা এখনো শুরু হয় নাই। সাইকেল চালায় প্রথমে যায় শ্বশুরের কাচাবাজারের দোকান টায়। সারাদিনে তিনটা জব করে তারেক। দুপুর তিনটা পর্যন্ত কাচাবাজারে। তিনটা থেকে আটটা পর্যন্ত একটা দেশী রেস্টুরেন্টে। সেইখানে রাত ১০-১১ টা পর্যন্ত উবার ইটস এর ডেলিভারির কাজ করে তারপর বাসায় গিয়ে ঘুম। সপ্তাহে ২ দিন কাজ করে না। টাকা জমাচ্ছে সে। কাগজ পত্র পার্মানেন্ট এই নিউ ইয়র্ক থেকে সে চলে যাবে। কুত্তার বাচ্চাদের শহরে আর একদিনও না। এটা আরেকটা ঢাকা। শুয়োরের খামার এর মতো করে বাংলাদেশীরা থাকে আর ভাবে কিছু একটা হয়ে গেছে। তারেক মিশিগান যাবে। আর ফিরে তাকাবেনা। ঠিক যেভাবে সে বাংলাদেশ ছেড়ে দিয়ে আসছিলো। খবিস খাটাস সন্দীপি আর নোয়াখাইল্লা দিয়ে ভরা। পকেটে হাত দেয় তারেক। মিশিগান লেখা একটা ফ্রিজ ম্যাগনেট। সেখানে গ্রেট লেকস এর ছবি। সেটার দিকে একবার তাকায় বিসমিল্লাহ বলে সাইকেলে উঠে যায় তারেক। একটানে দোকানে।
দোকানের সামনে দাঁড়ায় আছে। মহিউদ্দিন সাহেব চলে আসছেন। অপেক্ষা করতেছেন তারেকের জন্য।
“আপনি এত তাড়াতাড়ি চলে আসছেন?”
“সাবওয়ে লইছিলাম।ঘুম হইছে তুমার,বাবা?”
“যতখানি হওয়া দরকার হইছে। আজকে তো মুরগী আসবে শুনছি”।
“শুধু মুরগী না।গরু ও আসতেছে।জমিরের কাছে আসবে। আহমেদের সাথে কথা হইছে। ও রাস্তায়। বেশীক্ষন লাগবে না”।
“আচ্ছা”
এই ঠান্ডার ভিতরে কপাল দিয়ে ঘাম আসা শুরু করছে তারেকের। তারেক কপাল মুছে আস্তে আস্তে সাইকেল টা বাধে। হাত পা কাপাকাপি করতেছে একটু। তারেক ঢোক গিলে। একটু পানি খায়। ভার্সিটির কথা মনে পড়ে ওর। কত পলিটিকাল অপোনেন্ট দের নির্দ্বিধায় কাইটা কাইত করে দিছে। তার কোনো হিসাব নাই। যদিও কেউ জানেনা। কাইটা আবার দড়ি দিয়ে গাছের সাথে ঝুলায় দিতো। চড়চড় করে আওয়াজ হইতো। সেই আওয়াজ টা পাশ করার পর আর পাইতো না। চাকরি খুজতে খুজতে জুতার তালু শেষ হয়ে গেছে। এরপর তো নরকের মধ্যে দিয়ে দালাল দের রাস্তায় আমেরিকায় আসা। এখন যখনই গরুর বড় বড় রান দড়ি দিয়ে বেধে উঠাতে শুরু করে তারেক তখনই মনে পড়ে। হাত পা ঠান্ডা হয়ে যায়। গরুর রান এর জায়গা দখল করে ইয়াসির ভাইয়ের ডেডবডি নড়ে চড়ে। অন্ধকার চোখ গুলো তাকায় থাকে। গরুর মাথা কোপ দিতে গিয়ে একদিন তারেক আটকায় যায়। চোখ গুলো মনে করায় দেয় এক জুনিয়র এর কথা যার চোখ উপ্রে ফেলছিলো তারেক। মারামারির সময়। ভার্সিটির সময় গুলো অন্যরকম ছিল তারেকের জন্য। ক্ষমতা ছিল, নারী ছিল সব ছিল। কত দিকে কত দিকে মেয়ে খাইছে তারেক তার কোন হিসাব নাই। শেষদিকে এসে সামিহার জন্য নিজেকে বদলে ফেলছিলো। কিন্তু কি থেকে কি আর?
তারেকের চিন্তার সুতোয় ছেদ পড়ে। একটা ট্রাক এসে দাঁড়ায় সামনে। আরবী গান বাজতেছে।
“বাবা, আসো চইলা আসছে”
আহমেদ ট্রাকের ভেতর থেকেই জানালা নামায় ভারী প্যালেস্টিনিয়ান এরাবিক টানে বলে “আসসালামু আলাইকুম ব্রাদার, এইতো তোমার জিনিস রেডি। আমার বাকি টাকা কই?”
“ওয়ালাইকুম সালাম ব্রাদার। এই যে নাও।”
মহিউদ্দিন সাহেব ক্যাশ আগায় দিলেন আহমেদের দিকে।
তারেক ট্রাক থেকে জিনিস নিয়ে যায় ভিতরে।প্যাসেজ দিয়ে পাশে জমিরের দোকানে যায়। ওইখানে কাটাকাটি শুরু করে। প্রতিটা পিস কাটে আর তারেকের চোখ অন্ধকার হয়ে আসে। হাড় হাড্ডির গুড়োর সাথে সাথে অন্ধকার স্মৃতি গুলো ছিটকে ছিটকে আসতে থাকে। মেশিন দিয়ে মাংস আর হাড় হাড্ডি কাটার সময় প্রতিটা ধাক্কায় তারেকের সেইসব দিনের কথা মনে পড়ে যাইতেছিলো। প্রত্যেক সপ্তাহ এ নরকের ভিতর দিয়ে যাইতে হয় তারেক কে। প্রতিবার কাটা শেষ করে সে মার্কোস কে পিস গুলো বুঝায় দেয়। মার্কোস স্পেনিশ হারলেমে থাকে। কেন বাংলাদেশী দের সাথে কাজ করে কে জানে।
তারেকের শ্বশুরের অনেক পুরাতন পরিচিত লোক। কাটাকাটি শেষ করতে করতে বেলা দোকান খুলে গেল। ধরা ধরা কাস্টোমার রা এসে তাদের মাংস নিয়ে গেলো। নিয়াজ আর রশিদ আসলো। দোকানে এরা দুইজন কাজ করে। তারেকের শ্বশুর বাড়ির লোকজন এরা। নোয়াখাইল্লা কুত্তার বাচ্চা দুইটা। একটু একটু করে প্রতিদিনই টাকা পয়সা মারে ক্যাশ বক্স থেকে। মহিউদ্দিন সাহেব বুঝে কিন্তু কিছু বলেনা।
“ পরিবারের জন্য অনেক কিছু ছাড় দিতে হয় বাবা। আমি এদের কিছু করলে এরা কই যাবে?”
তারেক এগুলোর উত্তর দেয় না। আজকেও দেখতেছে ওই দুইটা কাজে ফাকি দিতেছে। তারেক বাইরে দাঁড়ায় বিড়ি খাইতে। বালের আমেরিকাতে কোনো বিল্ডিং এর ভিত্রে বিড়ি খাওয়া যায় না।

বাইরে এসে দাঁড়ায়। মানুষের ভীড় বাড়তেছে ধীরে ধীরে। ট্রাকে করে বাংলাদেশীরা যাচ্ছে। ম্যানহাটনের দিকে। কন্সট্রাকশন এর কাজে। ভাবী আর আন্টিরা বাইর হইছে কাচাবাজার করতে। একপাশে কালাইয়া একটা রাস্তায় শুয়ে চিতকার করতেছে। দুই দিন পর পর আসে এইডা। কোনোদিন সভ্য হবে না এরা। তারেক তার ভাংগা ভাঙ্গা ইংরেজী তে বলে “এই মাদারচোদ উঠ। পুলিশ ডাকবো”।
কালা লোকটা তাকায় বলে কড়া টানে ইংরেজী তে বলে “ চুপ থাক মাদারচোদ। আমার দেশ আমার যেখানে খুশি শুয়ে থাকবো। যা শালার পুত ইন্ডিয়া চলে যা”।
তারেক আগায় যায়। কলার চেপে ধরে কালা বেডার।ওই মুহুর্তেই মহিউদ্দিন সাহেব পিছন থেকে ডাক দেয়।
“বাবা ছাইড়া দাও ওরে। পাগল ছাগল কি বলে না বলে।নতুন একটা কাস্টোমার আসছে আমাদের এলাকার।দেইখা যাও”।
তারেক দাতে দাত লাগায় চিবায় বলে “আজকের মতো বাইচা গেলি”
“গায়ে হাত দিলি? দেইখা নিবো তোকে।”
তারেক উঠে চলে আসে।
গালি দিতে থাকে কালা বেটা। তারেক পাত্তা দেয় না। উঠে ভিতরে চলে যায়। নিয়াজ রে দেখা যায় পিছে গাঞ্জা বিক্রি করতেছে লুকায়। এখন তো লিগ্যাল কিন্তু তাও কেন? বাংলাদেশী কমিউনিটি এখনো নিতে পারে না আসলে। নিয়াজ নিশ্চয়ই এখনো ফেসবুকে নিজেরে এন্টারপ্রেনার লিখে। ভিতরে গেলো তারেক। কাজে লেগে গেলো। ঘন্টা খানিক দোকানে কাম কাজ সারলো। কাজ শেষ করে রেস্টুরেন্ট এ গেলো তারেক। ওইখানেই খাবে তারপর কাজ শুরু করবে।
সাদা ভাত, খাইসসা দিয়ে রুই মাছ আর ডাল তারেকের প্রিয় মেনু। ভাত নিয়ে বসে ও টেবিলে। আরাম করে তারেক কাটা বেছে বেছে খেতে থাকে। আশেপাশে পরিচিত সব মুখ। তারেক এদের সবাইকেই কোনো না কোনো ভাবে চিনে। কেউ দোকানে কাজ করে, কেউ কিছুই করে না বসে বসে ওয়েলফেয়ার এর উপর চলে, কেউ ব্যবসা করে, কেউ কনস্ট্রাকশন এর কাজ করে। হঠাত দরজা খুলে যায় একজন ফোনে ইংরেজি তে কথা বলতে বলতে ঢুকে। তারেক জমে যায় সিটে বসে।গলায় খাবার আটকে যায় তারেকের। কাশতে শুরু করে।
ফোন ধরে রাখা ভদ্রলোক কাশির শব্দ শুনে তারেকের দিকে তাকায়। মুখ হা হয়ে যেতে থাকে ওই ভদ্রলোকের। স্পষ্ট আমেরিকান ইংলিশে ছেলেটা ফোনে বলে,
“হানি, আমি ফোন টা রাখতেছি। আমি তোমাকে একটু পরে কল দিচ্ছি। লাভ ইউ”।
ফোন টা পকেটে ঢুকিয়ে তাকায় থাকলো কিছুক্ষন ছেলেটা। কেমন একটা দ্বিধা দ্বন্দ কাজ করতেছিলো মনে হইলো। ডান বাম তাকিয়ে বসে পড়লো। তারেকের সামনে কিছু জিজ্ঞেস না করেই। তারেক ঢক ঢক করে পানি খেয়ে আধা খাওয়া প্লেট টা নিয়ে উঠে যেতে গেলে ছেলে টা বলে,
“তারেক ভাই বসেন।” ছেলেটার গলায় একটা অস্বাভাবিক জোর ছিল যা কিনা দোকানের বাকিদের কে তাকাতে বাধ্য করলো।তারেক বাড়তি মনোযোগ চাচ্ছিলো না। তাই বসে গেলো।
ছেলেটা ঈষত হাসলো “ভাই কেমন আছেন?কতদিন পর দেখলাম আপনাকে”
তারেক মুখ নিচু করে রাখলো কিছুক্ষন। চুপ করে থেকে তাকায় ছেলেটার দিকে। গাল থেকে শুরু করে গলা পর্যন্ত লম্বা কাটা দাগ।হাতেও লম্বা লম্বা কাটা দাগ।
“ভাই মনে পড়ে আমাকে?ওই যে দুই নাম্বার গেইটে?জুন মাসের মারামারিতে? শ্যামল যে মারা গেছিলো?খেয়াল আছে?”
তারেক চুপ করে থাকে।
“ভাই,তাকান আমার দিকে।”
তারেক চুপ।
“আরেহ ভাই, কত বছর আগের কথা।এত নার্ভাস হইয়েন না তো।”
“হ্যা,মনে আছে আমার”।
“আপনি আমারে মাটিতে ফালায় দিছিলেন। সামনাসামনি ছুরি মারছিলেন। মনে আছে?”
তারেক কিছু বলে না। আশপাশে তাকায়। সবাই তাকায় আছে। খুবই আন আমেরিকান ব্যাপার। বাংগালীর অভ্যাস বদলায় না। তারেক নিঃশ্বাস আটকে আসতে থাকে। মনে হচ্ছে চারদিকে অদৃশ্য দেয়াল গুলো চেপে ধরে আসতে থাকে।তারেক তাকায় ছেলেটার দিকে।
“হ্যা, শাওন আমার মনে আছে”।
তারেক চুপ করে থাকে এটা বলে।
“সবই মনে আছে আমার।দুইটা ছুরি ছিল।তোমার চোখে মারতে চাইছিলাম। সরে গেছিলা। তখন গালে দাগ পড়ছিলো।পরে পেটে মারতে গেছিলাম, হাতে লেগে গেছিলো।সোহরাওয়ার্দী হল দখলের সময় হইছিলো গেঞ্জাম টা”।
“আরেহ, মনে আছে দেখি আপনার। আর কি কি মনে আছে?”
গলা নামায় আশপাশ দেখে শাওন বলে “মুরগি জবাই করার মত করে কল্লা নামায় দিছিলেন যাদের সেগুলো মনে আছে?তড়পাইতেছিলো যে মাটিতে মনে আছে?”
তারেক এর প্রত্যেক এর কথা চোখে ভাসতে থাকে।একটার পর একটা ধইরা ধইরা কতল করছিলো। নিজের দলের ভিতরে বাইরে কেউ বাদ যায় নাই। একবার একটা মসজিদে গিয়ে ঢুকে একজন কে কুপাইছিলো তারেক। অন্ধকার ভরা একটা সময় গেছে তখন। ভাবতে পারে না এখন আর তারেক।
হাত কাপা শুরু হয়ে যায়।শাওন সেটা খেয়াল করে। হো হো করে হেসে দেয়।
“ভাই এর পিটিএসডি হইছে নাকি?”
“পিটিএসডি মানে?”
“বাদ দেন। বুইঝা লাভ নেই।আপনি আছেন কেমন সেইটা বলেন?”
“এই তো আছি”। তুমি কেমন আছো?”
“আমি মাশাল্লাহ ভালোই আছি।বিয়া শাদী করে এখন মিশিগান থাকি।ডেট্রয়েটের বাইরে।”
“মিশিগানে?মিশিগানে কি করো?”
“এইতো ভাই পিএইচডি করতেছি।প্রায় শেষের দিকে এখন ইন্টার্নশিপ করতেছি একটা। আশা করি চাকরি হবে”।
“ওহ, স্টুডেন্ট ভিসা?”
শাওন চুপ করে থাকে। একটু অবাক হয়ে তাকায়। চোখ ছোটো ছোটো করে।
“হ্যা,স্টুডেন্ট ভিসা। আপনি?”
“আমি এইতো ফ্যামিলি এর থ্রু তে”।
“ওহ,আংকেল আন্টি এইখানে তাইলে?”
“নাহ, আমার ওয়াইফ ইউ এস সিটিজেন”।
“আরেহ সেরা,তো ভাই তুমি। ছক্কা মাইরা দিছো।লাগাইলা তো লাগাইলা একদম সিটিজেন।আমিও এই ধান্ধায় আছি।দেশের খেলোয়াড় এখানেও খেলা ছাড়ো নাই।”
তারেক হাসে। অনেকদিন পর এরকম নির্ভার হাসি দিছে। পুরোনো যুদ্ধের সাথী শ্ত্রু হলেও তার সাথে একটা অদ্ভুত বন্ধন থেকে যায়। মিউচ্যুয়াল সাফারিং এর ভিতর দিয়ে গেলে একসাথে যা হয় আর কি।
“আরে নাহ,এরেঞ্জ”।
“আমিও চেষ্টা চালাইতেছি। বিয়া করলে কাগজের বিয়া করাই ভালা।ফিলিংস এর মতো বালছাল জিনিসের দাম নাই।”
এটা বলে সাদা চামড়ার সুইমস্যুট পড়া একটা লাল চুলের মেয়ের ছবি দেখালো তার ফোনে শাওন।
“আমি এইটারে সাথে লাগবার চেষ্টা করতেছি।একটু বলদ আছে।এখনো বয়স কম।মিশিগানে নেওয়ার ব্যবস্থা করতেছি।”
শাওন এরপর হাত দিয়ে কাটা দাগ গুলো ধরে বলে “আপনার দেওয়া এই উপহার গুলো খুব কাজে আসতেছে। খুব কুউল মনে করে। এখানে ট্যাটুর বদলে এইটা দিয়েই কাম চলতেছে।কত মেয়েরে যে এটা দিয়ে বশ করাইছি এইখানে।টাকা পয়সা খুজে অনেক কিন্তু কাগজ হইয়া গেলে আমার আর কি।চাকরি তো হবেই ইনশাল্লাহ।হেহে”।
শাওন এর কথা শুনে তারেক কিছু বলে না। তারেকের নিজের রেজাল্ট ভালোই ছিল শুরুতে। এরপর আস্তে আস্তে জড়ায় গেলো ক্ষমতার খেলাতে। দাবার ঘুটির মতো নিজেই ছকে আটকা পড়ে গেলো। তারেক ভাবছিলো সেই রাজা হইছে কিন্তু খেলাতে আসলে দেখা গেল সে এখনো সাধারন সৈনিক।
শাওন জিজ্ঞেস করে,
“আপনি কি করতেছেন?পড়াশোনার লাইনে তো আছেন নাকি?”
“নাহ, আপাতত নাই।প্ল্যান করতেছি।মিশিগানে মুভ করার ইচ্ছা আছে।ওইখানে গিয়ে টেকনিক্যাল কিছু পড়বো”।
“সেরা তো। মিশিগান চলে আসেন। অনেক বাংলাদেশী।ভাবী তো বাংগালী তাই না?”
“হা”
“তাইলে তো ভালোই হয়। আমিও ওইখানেই সেটল হবো।মিশিগান সেরা। লেইক আছে,নদী আছে,এত সুন্দর বরফ পড়ে,হরিন বের হয়।ড্রাইভ করে যে কি আরাম। ভালো সেকেন্ড হ্যান্ড গাড়ি সস্তায় পাওয়া যায়। আমি নিজেই মাত্র ৮০০ ডলারের ফোর্ড গাড়ি কিনছিলাম।কি যে ভালো ছিল।চলে আসেন,বুঝছেন।”
“সেটাই চেষ্টা করছি।আপাতত দোকানে কাজ করতেছি।টাকা জমাচ্ছি মুভ করার মতো”।
“ইনশাল্লাহ হয়ে যাবে।”
“তুমি এইখানে কার কাছে এসেছো,শাওন?”
“এক আত্মীয়ের সাথে দেখা করতে আসছি।আমাদের ভার্সিটিরই আপনাদের ব্যাচের হবে।”
“নাম কি?”
“সামিহা আপা আর উনার হাজব্যান্ড সুমন ভাই”। দুইজনই আপনাদের ব্যাচের।”
তারেক নিজের কান রে বিশ্বাস করতে পারলো না প্রথমে সামিহা নাম টা শুনে। তারপর আবার ভাবলো। আরেহ, কত সামিহা আছে। এটা কি আর সেই সামিহা হবে?তারেক তাও আশাবাদী হয়ে জিজ্ঞেস করে
“কোন সামিহা এটা?”
“আপনাদের ব্যাচের এটা শিওর। সোসিওলজি তে।হলে থাকতো। প্রীতিলতা তে।”
“তিন তলায়?”
“ভাই,সেটা তো জানি না।”
তারেক একটু আশাবাদী হয়।
“দেখি ছবি দেখাও তো।”
“এই যে ভাই”।
তারেক হার্টবিট বন্ধ হয়ে গেলো কিছুক্ষনের জন্য।এটাইতো।এইতো। সামিহা,তার জামাই একটা ফুটফুটে ছোট্টো বাচ্চা।রক্তশুন্য হয়ে তারেকের মুখ কিছুক্ষনের জন্য।কি বলবে বুঝে উঠতে পারছিলো না তারেক।
চোখ এ পানি চলে আসতেছিলো তারেকের। কিন্তু নিজেকে সামলে নেয়। পুরোনো কথা কিভাবে কি বলবে বুঝতে পারছে না। তারেক বড় একটা নিঃশ্বাস নেয়।
“হ্যা চিনেছি।”
“আমি জানতাম আপনি চিনবেন”।
“এখানে কি করতেছে?”
“সুমন ভাই টেক্সাস এ ভার্সিটি টিচার ছিলেন।এই এক সপ্তাহ আগে একটা এক্সিডেন্ট হইছে উনাদের। তাই উনারা চইলা আসছে নিউ ইয়র্কে ছুটি নিয়া। এক মাসের জন্য”।
“কি হইছে?”
“অনেক বড় সমস্যা হইছে”।
“উনার বাচ্চা মইরা গেছে।আমি ডিটেইলস জানিনা।যাইয়া শুনবো। আম্মা দেশ থেকে ফোন কইরা বলছে যাইয়া দেখা করে আসতে।তাই যাইতেছি।কাহিনী বুঝার জন্য।”
“আচ্ছা আচ্ছা।”
শাওন এরপর ফোন বাইর করে সময় দেখে। এরপর উঠে গিয়ে বলে
“ভাই উঠা লাগবে।এইখান থেকে মিষ্টী নিয়া যাবো।”
তারেক বলে , “আরেহ, বসো কই যাও।”
শাওন বলে “নাহ,ভাই আসলেই যাওয়া লাগবে।”
তারেক বললো “তুমি কি সামিহা দের ওইখানেই উঠছো নাকি?”
“হ্যা,ভাই ওইখানেই থাকবো। ২-৩ দিন থাকবো।”
“তাইলে আমাকে ঠিকানা টা দিয়া যাওতো। তোমার সাথে কথাই হইলো না ঠিকমতো। মিশিগান যাইতে হইবো তো আমার।তোমার সাথে কথা হবে এইগুলা নিয়া।”
“আরেহ সেরা। আপনার ফোন নাম্বার টা দেন। টেক্সট কইরা দিবো নে।”
তারেক ফোন নাম্বার টা বলে। শাওন সেভ করে নিয়ে টেক্সট করে দেয় ঠিকানা। শাওন মিষ্টি কিনে বের হয়ে যায় দোকান থেকে। তারেক অনেকদিন পর একটু এক্সাইটেড এবং ইয়াং বোধ করতে থাকে।
সামিহার সাথে তার শেষ দেখার কথা মনে পড়ে।
সামিহার সাথে তার অনেক স্মৃতি। বিছানা তে যাওয়া, পড়ালেখা করা,রাজনীতি থেকে পালায় ঢাকার দিকে চলে আসা। সবই ছিলো ওর সাথে। বিসিএস পড়েছিলাম দুইজন একসাথে। এর বাইরেও অনেক সরকারি স্পেশালাইজ চাকরির ইন্টারভিউ দিচ্ছিলো তারেক।
এন এস আই এর পরীক্ষার পর হঠাত সেন্ট্রাল কমিটি থেকে ডাক পড়ে তারেকের। ঢাকার একটা রেস্টুরেন্টে তিন চারজন সিনিয়র নেতা তারেক কে নিজেদের মাঝে বসায়। সবাই ফিটফাট হয়ে আসছে।চরম স্মার্ট,কোনো আঞ্চলিকতার টান নাই কথায়। দামী ব্রান্ডের ঘড়ি হাতে।
“তো তারেক,কেমন আছেন?” মাঝের জন বললেন।
“জি ভালো।”
“চাকরি খুজছেন,তাই না?”
“জি,এইতো চেষ্টা করছি।বাকিটা স্যার ম্যাডাম আর আপনাদের উপরে”।
সবাই একসাথে হেসে উঠে।
“তাই নাকি?”
একজন উঠে দাঁড়ায়, তারেক কে ঠাস করে থাপ্পড় বসায় দেয় গালে।আরেকজন ফাইলপ্ত্র গুলো নিয়ে নেয়। রেস্টুরেন্টের বাকি মানুষেরা তাকায় থাকে কিন্তু কিছু বলেনা। সবাই যার যার মতো চুপ করে নিজের খাওয়াতে মগ্ন থাকে।
“তারেক আপনার খবর আমরা সব রাখি।দেশে আপনার সরকারের কোনো চাকরি হবে না। আমি বলে দিচ্ছি।আপনি লিখে রাখুন। চেষ্টা বাদ দেন।”
“আমি কি করছি ভাই”?
আবার আরেকটা থাপ্পড় চললো তারেকের গালে।
“আবার জিজ্ঞেস করিস?”
তারেক মাথা নিচু করে ফেললো।
“একটা কথা মনে রাখবেন। পাপ কোনোদিন পিছু ছাড়ে না। আপনি যেই কুতুব হোন না কেন। সে আসবে।সে ফিরে আসবেই।আপনি নির্বাচিত লিডার কে মারছেন ক্ষমতার জন্য। মেরে ভাবছিলেন কিছু হবেনা?কেউ কিছু বলবেনা? সবাই আপনার চামচা?আমাদের কাছে একাধিক রিপোর্ট আসছে। বিরোধী দলের পোলাপান আমার ক্লোজ। তারপরও হিসাব এবং ইমেজ ঠিক রাখার জন্য আমরা সব চলতে দিছি।কিন্তু সরকারি অফিসে আপনার কোনো জায়গা নেই। মনে রাইখেন জিনিস টা।”
তারেক ওইখানে কান্নাকাটি করে,হাতে পায়ে ধরেও কিছু করতে পারেনা। পরে তাকে বের করে নিয়ে পাশের গলিতে নিয়ে এলোপাথাড়ি পেটানো হয়।
শেষে ওর কাগজ পত্র গুলো ছিড়ে ছিড়ে মাটিতে ফেলে দেয়।
“তুই আদম ব্যবসায়ী ধর।ওইভাবেই তোর ফিউচার আছে। এটা ছাড়া কিছু নাই।”
এটা বলে দুই টা লাত্থি মেরে চলে যায় এরা।
তারেক উঠে দাঁড়ায়। সরকারি চাকরি না হইলে সামিহা কে পাবে কিভাবে? সামিহার হাসি,সামিহার মুখ-চোখ তো ভুলতে পারেনা।সামিহা কে ছুয়ে দেখতে না পারলে কিভাবে রাত দিন কাটবে তারেকের? ওর ঠোটে ঠোট ডুবিয়ে চুলের গন্ধ না পেলে তারেক তো বাচবে না। কিন্তু সরকারি চাকরি ছাড়া সামিহা কে কিভাবে পাবে? সামিহার পরিবারের কাছে কি জবাব দিবে?
তারেক এইসব পুরান কথা চিন্তা করতেছে আর রুটি বানাচ্ছে।
“এই তারেক কি করো?পুড়ে যাইতেছে সব”
“ওহ,স্যরি স্যরি ভাই”
তারেক খেয়াল করে এখন যে তাওয়াতে রাখা রুটি পুইড়া কালা হয়ে গেছে। তারেকের জীবন টাও এখন এরকম হয়ে গেছে। রান্নাঘরে ইদুর দৌড়াচ্ছে। এর মাঝে ইউনিফর্ম পড়ে ও রুটি সেকতেছে। কি জীবন হতে পারতো কি জীবন হইলো।
কিন্তু সামিহা তো আসছে আবার। ওর শহরে। নতুন আশার সঞ্চার হয় ওর তারেকের মাঝে । শাওন ঠিকানা পাঠায় দিছে অলরেডি।এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। চিন্তা করতে থাকে তারেক কি করবে।
“কিরে তারেক?আবার রুটি পুড়ায় ফেললা?”
তারেক চিন্তা বাদ দিয়ে কাজ শুরু করে।
শেষ হয় দিনের কাজ। অন্ধকার হয়ে আসতেছে। এই ডে লাইট সেভিংস দিয়ে রাত ৯ টা পর্যন্ত সূর্যাস্তের অপেক্ষা টা কিরকম একটা ব্যাপার হইলো?
সিগ্রেট ধরায় তারেক। ঠিকানা টা দেখে সামিহার। খুব বেশি দূরে না। তারেক একটা বুদ্ধি আটে। ডেলিভারির ব্যাগ টা কাধে এনে রাখে। একটা পাকিস্তানি দোকান থেকে চাপালি কাবাব আর ভাত নেয়। এই দোকানের খাবার খুব চলে। এড্রেসে চলে যায়।
দরজায় নক করে। হাত পা কাপাকাপি চলছে তারেকের। তারপরেও তারেক আবার নিজেকে সামলায়। একটা ছেলে এসে দরজা খুলে।একদম নিউ ইয়র্কের স্টাইলে ইংরেজি তে বলে,
“আপনি কে? কাকে চান?”
“ডেলিভারি সামিহার জন্য”
“ও,আচ্ছা।আমাকে দেন”
“নাহ, পিন কোড প্রটেক্টেড ডেলিভারি। উনাকেই ইন পার্সন দেওয়া লাগবে,স্যরি”।
“আচ্ছা,ঠিকাছে।”
ছেলেটা চিতকার করলো,
“সামিহা আপু, তোমার জন্য ডেলিভারি আসছে”।
তারেক দাঁড়ায় থাকে।চুল ঠিক করে। মুখ থেকে ঘাম মুছে। হাসিহাসি মুখ করে দাঁড়ায় থাকে সামিহার জন্য। সামিহা সিড়ি দিয়ে নামে। চোখের নিচে কালি জমে আছে। সামিহা আরো সুন্দর হয়ে গেছে। শরীর টা যেনো আরো ভরাট হয়ে গেছে। নীল রং এর হাতে কাজ করা একটা থ্রি পিস পড়া। সময় যেন অনেক দীর্ঘ হয়ে গেলো। প্রতিটা স্টেপে সামিহাকে এগিয়ে আসা টা যেন তারেক স্লো মোশনে দেখছে। সামিহা মুখ উঠিয়ে তারেক কে দেখে। প্রথমে একটু কনফিউজড হয়ে যায়। এটা কে? এখানে কেন?
নিজেকে সামলায় সামিহা বলে “তারেক তুমি এইখানে কেন?”
“সামিহা,কেমন আছো?” তারেক সামিহার চোখে চোখ রাখে।
“তুমি কেমন আছো?” সামিহার অবাক হওয়া গলা টা পরিবর্তিত হয়ে যায়। ওর গলায় সেই ভার্সিটির তরুনী প্রেমের প্রেমময় কন্ঠ চলে আসে। মাসল মেমোরি আর আমাদের মস্তিষ্ক আসলে খুবই অদ্ভুত একটা জিনিস। তারেকের চেহারা দেখামাত্র কেন সামিহার গলার স্বর সহ এভাবে বদলে যাবে? হার্টবিট এর গতি প্রকৃতি বদলে যাচ্ছে কেন?
“তুমি ঠিকানা পেলে কিভাবে?”
“শাওন দিয়েছে। ওর সাথে একটা দোকানে দেখা হয়েছে।”
সামিহা তার পিছনে দরজা টেনে দেয়। ওর ভিতরে সেই বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের তরুনী যেন মাথাচাড়া দিলো। ইদানীং সময়ের ঘটে যাওয়া ভয়ংকর জিনিস গুলো যেন হারিয়ে গেলো মস্তিষ্কের অন্ধকারে।
“তারেক তুমি এখানে কেন আসছো?”
“তোমাকে দেখতে”।
“আমার হাজব্যান্ড আর ফ্যামিলি সবাই এইখানে।এখনো তোমার সেই সাহস গেলো না”।
“তুমি দেখতে আরো সুন্দর হইছো,সামিহা।কেমন আছো তুমি?”
সামিহা একথা টা শুনে নিজের মাথা ঠিক রাখতে পারেনা। কিন্তু বাসার দিকে তাকায়। নাহ,এখনো কেউ আসছে না। রাস্তাতেও কেউ নাই। কিছু সাদা মানুষ জন হাটাহাটি করতেছে।কিন্তু এছাড়া আর কেউ নাই।
“আমি ভালো নেই,তারেক। তুমি আমাকে রেখে চলে আসলা কিভাবে?তুমি আমাকে রেখে চলে আসলা কিভাবে?”
তারেক উত্তর দেয় না। মাথা নিচু করে রাখে।
“আমার আর কোনো উপায় ছিলো না।দেশে আমার কিছু হচ্ছিলো না। তোমার সামনে মুখ দেখানোর উপায় ছিলো না আর।”
সামিহা ঠাস করে থাপ্পড় মারে।
“আমার বাচ্চা টা মারা গেছে,তারেক। ওর চোখ উঠায় ফেলছে।সব তোমার দোষ”। বলে আরেকটা থাপ্পড় মারে সামিহা ওকে।
তারেক চুপ করে থাকে।
“আমার সাথে যাবা?মিশিগানে?”
সামিহা বলে “কি?”
“যাবা আমার সাথে?নতুন জীবন শুরু করবো দুইজনে?লেকের পাড়ে বাসা হবে আমাদের। বরফ পড়বে।ফুটফুটে বাচ্চা থাকবে আমাদের একটা বরফে হাটবে। লেকে সাতার কাটবো আমরা একসাথে”।
সামিহা শুনে সব কথা। ওর ভেতর টা কেমন করে উঠে।ও যেন তারেক কে জড়ায় ধরতে চায় দৌড় দিয়ে।আবেগগুলো একটা দলা পাকিয়ে গলা দিয়ে কান্নার মতো বের হয়ে আসতে চায়।পিছনে বাসার দরজার দিকে তাকিয়ে নিজেকে সামলায়।
“আমি এখানে আর এক মাস থাকবো। কালকে দেখা করি ম্যানহাটনের দিকে। ওইখানে বাংলাদেশী কম থাকবে। বসে সময় নিয়ে কথা হবে।”
সামিহা ফোন নাম্বার টা দেয় তারেক কে।
তারেক খাবার টা দিয়ে বের হয়ে আসে।মনের ভিতর নতুন করে বেচে থাকার আশা নিয়ে সাইকেলে চড়ে বসে। কিছুদূর গিয়ে আরেকটা সিগ্রেট ধরায়। ধোয়া ছাড়ে।সেই ধোয়ার ভিতরে নিজের ভবিষ্যত দেখে। ধোয়ার পাকে তারেক লেইক মিশিগানের নীল পানি দেখে। একটা ফোর্ড মাস্ট্যাং কনভার্টিবল দেখে। কনভার্টিবল এ ও নিজেকে আর সামিহা কে দেখে। ডেট্রয়েট রিভারের নীল পানি তে মাছ ধরা দেখে।
বরফের ভিতর মোটা জ্যাকেট পড়ে হাটাহাটি করতে দেখে নিজেদের কে।
তারেক সাইকেলে উঠে যায়। ট্রেইনে উঠে। ম্যানহাটনে যায়। চায়নাটাউনে। ওইখানে অনেক ভালো ডেলিভারি খাবারের মার্কেট। এপ অন করে। পিং করে আওয়াজ আসে। খাবার পিক করে। নতুন তাড়নায় আগাইতে থাকে।নতুন স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে যায়। আরো টাকা হবে,আরো, আরো। তখন মিশিগান যাবো আমরা… সামিহাকে টেক্সট করে তারেক এই স্বপ্ন গুলোর কথা।
হঠাত করে ঠাস করে ছিটকে মাটিতে পড়ে তারেক সাইকেল থেকে। সামনে একটা ফোর্ড মাস্ট্যাং গাড়ির দরজা খোলা। সেই দরজার সাথে লেগেই উলটে পড়ে তারেক। দাড়াইতে পারেনা আর তারেক। চারজন বের হয়ে আসে সেইখান থেকে। তারেক প্রথমে দেখে না তাদেরকে। সাইড ওয়াকে ছিটকে পড়ছে। হেলমেট ছিল দেখে মাথা টা ফাটে নাই তারেকের। হাটু আর কোমড়ে ভয়ংকর ব্যাথা পাইছে সে। উঠে দাড়ানোর চেষ্টা করতে থাকে। পারেনা। আফ্রিকান আমেরিকান টানে একজন বলে
“খাবার গুলো নিয়ে নে। খুদা লাগছে ভালো। ওই দোকান টা ভালো আছে আমার খুব প্রিয়”।
আরেকজন আগায় আসে। তারেক ওর মুখটা দেখে। এটা তো মহিউদ্দিন সাহেবের দোকানে কাজ করে ছেলেটা। নিয়াজ নাম। গা থেকে গাঞ্জা আর এলকোহলের গন্ধ । সেই গন্ধে তারেকের নাড়িভুড়ি উলটে বমি আসতে থাকে।
নিয়াজ কাছে আসে তারেক কে দেখে। হাহা করে হাসে।
ইংরেজীতে বাকি দের বলে,
“এই যে দেইখা যা। এই শালার পুতের কথা বলতেছিলাম। আমার কো ওয়ার্কার। খালি ফাপড় ধরে। নিজেকে কিছু একটা মনে করে।”
নিয়াজ তারেক কে দেখে। তারপর কষে দুইটা লাথি মারে পেটের মাঝে।তারেক ককিয়ে উঠে। এরপর বাকি দুইজন আসে। সাদা দুইটা ছেলে। সারা গায়ে উল্কি করা। কালো ছেলেটারও একইরকম। নিয়াজ বলে এরে কি করা যায়। এ তো আমাকে চিনে।
আইরিশ ইংলিশ টানে সাদা ছেলে গুলোর একজন বলে
“তোরা আমেরিকান হিস্ট্রি এক্স সিনেমাটা দেখছিস?”
“হ্যা”।
“ওইখানে একটা জায়গা আছে । এডওয়ার্ড নর্টন একটা কালাইয়া কে রাস্তার কিনারে দাত লাগায়া লাথি মেরে মুখ ভেঙ্গে দেয়। আমরা এইটা করতে পারি।”
“মার্ডার করবো?”
“হ্যা”
“কিন্তু পুলিশ যদি জানে?”
“জানলে কালাইয়ারে আর নিয়াজ পাকি রে বলবো টিভিতে গিয়া ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার লিখে নিয়ে কান্নাকাটি করতে আর পুলিশ এবিউজ ফুটফাট দুইটা কথা বলতে।এখানে কেউ নাইও আমাদের দেখবে। ওর ফোনটা নিয়ে হাডসনে ফালায় দিমু।ব্যস”
এইটা বইলা আরো কিছুক্ষন এলোপাথাড়ি লাত্থি ঘুষি চলে তারেকের উপর। তারেক ভাবতে থাকে।এভাবেই শেষ হবে তাইলে সবকিছু?তারেক তার নিজের ভিক্টিম দের কথা ভাবে। তাদের কিরকম লাগছিলো? তারেকের কান্না আসতে থাকে।মিশিগান,সামিহা,ফোর্ড মাস্ট্যাং সব ভেবে চোখে পানি আসে। হাউমাউ করে কাদতে থাকে।
“নিয়াজ ভাই,আমার আমি কাউরে কিছু বলবো না।আমি ছাইড়া দে,প্লিজ”
“এই চুপ।একদম চুপ। শাট আপ মাদারফাকার”। বলে নিয়াজ আবার মারে তারেক কে।
সাদা পোলাটা আগায় আসে। তারেকের গলায় ছুরি ধরে। তারেক ওই ছেলের জায়গায় নিজের মুখ দেখে। আতংকে চোখে পানি অঝোরধারে পড়তে থাকে।
“প্লিজ প্লিজ প্লিজ,আমি সবকিছু করতে রাজি আছি।” তারেক ভাংগা ভাঙ্গা ইংরেজি তে বলে।
“চোপ,মাদারচোদ। মুখ হা কর। হা কর বলতেছি।নইলে জিহবা টাইনা কাইটা ফেলবো।” তারেক কে ধরে মুখ হা করায় নিয়াজ। আরেকজন ধরে সাইডওয়াকের উচা জায়গা তে মুখ টা লাগায় তারেকের। তারেক কিছু করতে পারেনা। অস্ত্রের সাথে সাথে সে ট্রেনিং টাও জমা দিয়ে আসছে।নিজের ভিক্টিম দের কতা মনে পড়ে। কি মিনিংলেস সব মৃত্যুর কারন ছিল ও নিজে। আজকে নিজের অর্থহীন এই মৃত্যুর স্বীকার হবে ও নিজে।

তারেক চিতকার করার চেষ্টা করে। দুইটা চায়নিজ কে চোখের কোনা দিয়ে দেখে তারেক কিন্তু ওরা এই গেঞ্জাম দেখে সরে যায়।
তারেক মনে মনে দোয়া পড়তে চেষ্টা করে। হঠাত একটা মৃদু আওয়াজ আসলো। একটা ডিম কে হাতের মুঠোয় নিয়ে টিপে ফাটালে যেরকম আওয়াজ হয় ঠিক তেমন। তারেক মুখ এর যন্ত্রনা শুরু হলো। রক্ত গড়াতে থাকে। তারেক ধীরে ধীরে সংজ্ঞা হারায়। নীল পানির মিশিগান লেকে ডুবে যায়। ভগ্ন মুখে একটা অস্পষ্ট হাসির রেখা আসে।
কানে শেষ শব্দ যেটা শুনে তারেক সেটা হইলো আইরিশ টানের ইংলিশে
“আরেহ সেরা ছিল। THIS WAS FUCKING AWESOME”

সামিহা ফোন হাতে বসে আছে। টেক্সট দেখে তারেকের। সামিহা তার হাজব্যান্ড সুমনের দিকে তাকায়। সুমন দাড়ি কাটে না অনেক দিন। সামিহা দের বাচ্চা টা মারা গেছে এক মাসের মতো হচ্ছে। টেক্সাস এ প্রতিবেশি একজনের বাসায় রেখে সামিহা ক্লাস করতে গেছিলো। আন্টি রা নিউ ইয়র্ক থেকে আসছেন ৬ মাসের মতো হচ্ছে। সামিহা ক্লাস শুরু করছে মাত্র। আন্টি ক্যাশে বেবিসিটিং এর কাজ করতেছিলেন। সুমন গেছে অফিসে। নতুন জব।পিএইচডি শেষ করার আগেই জব। সুমন তারেকের এন্টিথিসিস পুরুষ একদম। প্রফেশনাল জীবন থেকে শুরু করে বেড পর্যন্ত। তারেকের বিপরীত পুরুষ একদম। বোরিং, সৎ, প্রচন্ড হার্ডওয়ার্কিং,একদমই স্বপ্নালু নয়। প্রচন্ড রকমের বাস্তববোধ সম্পন্ন।
নিজেদের বাচ্চার সুন্দর একটা ভবিষ্যতের জন্যই সে কাজ শুরু করে।
রেগুলার যার কাছে বাচ্চা রেখে যায় উনি মাত্রই বাংলাদেশে গেছেন তাই এই আন্টির কাছে রেখে সামিহা কাজে যায়। ওই আন্টির ২১ বছরের ছেলে আসছে। সামিহা তখনো বুঝে নাই। ওই বাড়িতে আন্টির দুই মেয়ে,আন্টির শ্বাশুড়ি সবাই থাকে।সবাই মিলে মিশে সামিহার বাচ্চা কে দেখে রাখে।
ওইদিন সে প্রতিদিনের মতোই রেখে যায় বাচ্চা কে।তারপর ভার্সিটি চলে যায়। ক্লাস চলতে থাকে। বিকালের দিকে ফোন তারস্বরে বাজা শুরু করে। প্রফেসর কে এক্সকিউজ মি বলে সামিহা বাইরে আসে।
“আপু তুমি এখুনি আসো।এখুনি আসো তুমি।” কান্না মাখা একটা গলার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে।প্রথমে সামিহা চিনতে পারেনা।
সামিহা পরে বুঝে এবং চিনে। এটা সেই বেবিসিটার আন্টির মেয়ের গলা।
সামিহাও ভয়ে কান্না শুরু করে চিতকার করে,
“কি হইছে?কি হইছে?বলো আমাকে।বলো প্লিজ”
প্রফেসর বের হয়ে আসে। শুদ্ধ ইংরেজি তে বলে
“কি হইছে?সামিহা?কি সমস্যা?”
“বেবিসিটার এর মেয়ে আমাকে কল করে আসতে বলতেছে।আমার খুব ভয় লাগতেছে,প্রফেসর। আমি যাইতে পারি?”
“শিওর শিওর।যাও।”
সামিহা দ্রুত বের হয়ে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে ফুল এক্সিলিরাটর দিয়ে সাই করে চলে গেল। পুরোটা রাস্তায় কাদতে কাদতে দোয়া পড়তে পড়তে যায় সামিহা। বাসার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে দেখে পুলিশের গাড়ি তে পুরো রাস্তা বন্ধ। সামিহা নামে গাড়ি থেকে আর দৌড় দিয়ে যায়।
“আমার বাচ্চা,আমার বাচ্চা কই?”
মেয়েটা দৌড়ে আসে।
“আপু সবাইকে মেরে ফেলছে।ভাইয়া সবাইকে মেরে ফেলছে। আম্মা,আব্বা,দাদী,বড় আপু আর শামাকেও মেরে ফেলছে”
সামিহা স্তব্ধ হয়ে যায়।সুমন মাত্র এসে পৌছায়। পিছন থেকে সামিহা কে জড়ায় ধরে।
সবার ডেডবডি বের করে আনা হয়। সবার বুকে গুলি আর চোখ উপড়ানো। বেবিসিটার আন্টির মেয়ে শেষপর্যন্ত ল্যাম্প দিয়ে মেরে ছেলেটাকে অজ্ঞান করে আশপাশের সবাইকে ডেকে জড়ো করে।পুলিশ কে কল দেয়। ছেলেটা এগুলো দেখে আত্মহত্যা করে।
সামিহা শামার লাশ খুজে পায়। লাশ হাতে নিয়ে দেখে শামার চোখ গুলোও উপড়ানো। স্বর্গ থেকে নেমে আসা দেবদূত যেন মানুষের অন্ধকার দিক দেখে নিজের চোখ উপড়ে ফেলছে।
যাতে আর এসব দেখতে না হয়।খুনী ছেলেটার ব্যাকগ্রাউন্ড খবর নিয়ে দেখা যায় অনেকদিন ধরেই স্কিতজোফ্রেনিক। কিন্তু কেউ জানতো না। ড্রাগস ও নেয় অনেকদিন ধরে। এইখানে এসে বিগড়ে গেছিলো। সেইখান থেকে এই হত্যাযজ্ঞ। সামিহা আর পারে নি এইসব কাহিনী ফলো করতে।

সামিহা আর সুমন ছুটি নেয়। নিউ ইয়র্কে পরিবারের কাছে চলে যায়। অশান্ত মনে সামিহা তারেক কে দেখে আসলে বুঝতে পারে নি কি করবে? তাই ডেটিং এর কথা বলে ফেলছে। নিজের জীবন থেকে পালানোর জন্য অতীতের চেয়ে ভালো অপশন কি হতে পারে? তারেক তো ওর অতীতের পার্ফেক্ট প্রতিচ্ছবি। তারেক চলে যাওয়ার পর দরজা খুলে যেন সামিহা ফিরে আসে বর্তমান ও বাস্তবতায়। সুমন বসে আছে ঘরের কোনায়।চুপচাপ। সামিহার কাজিন রা লাফালাফি চেচামেচি করতেছে। রান্নাঘরে জামাইয়ের জন্য রান্না চলতেছে। সামিহা সব দেখে।তারেকের দেওয়া খাবার গুলো ডাইনিং টেবিলে রেখে দেয়। সামিহা শুয়ে পড়ে। তারেকের কথা মনে করে। ভার্সিটির ওদের উত্তাল সময়।ঘরে বাইরে,রিকশা তে,অন্ধকার গলিতে,রেস্টুরেন্ট এর বুথে।এসব চিন্তা করতে করতে সামিহার শরীর গরম হয়ে উঠে,দুই পায়ের মাঝে অদ্ভুত এক অনুভূতির সৃষ্টি হয় আবার অনেকদিন পর।বাচ্চার মৃত্যুর পর থেকে এই অনুভূতি হারিয়ে গিয়েছিল কতদিনের জন্য।
কিন্তু আবার মনে পড়ে যখন তারেক ওকে কিছু না বলে চলে যায়। বাবা তখন কতরকমের প্রেশার শুরু করে কিন্তু কিছু করতে পারেনা সামিহা। তখন সে সুমন কে খুজে বের করে। সুমনের কাছে হাত জোর করে।সুমন ওকে আগেই পছন্দ করতো। একবার বলার পরেই রাজি হয়ে যায় সে।
সুমন খালি একটা প্রশ্নই করে,
“তারেক ফিরে আসলে কি তুমি আমার সাথে থাকবা?”
সামিহা তখন নিজের দিক ঠিক রাখার জন্য,চোখের পাতা না ফেলে বলে “হা,তোমাকে বিয়ে করেছি তোমাকে ছাড়বো না আর আমি”।
সামিহার ঘুম ভাঙ্গে।ভোর হয়ে আসছে। সুমন পাশে ঘুমাচ্ছে। সামিহা তার ফোন চেক করে। তারেকের টেক্সট দেখে।
সামিহা একবার সুমনের দিকে তাকায়। তারপর টেক্সট লিখে,
“তারেক তোমাকে দেখে অনেকদিন পর আমার মনে হয়েছিল আমি আবার আগের সেই সামিহা হয়ে গেছি।আমাদের হলের সামনে সন্ধ্যাবেলায় প্রথম চুমু।আমার জীবনে প্রথম পুরুষের স্পর্শ ছিলে তুমি। কত স্মৃতি,কত স্বপ্ন ছিলো আমাদের। কিন্তু সব স্বপ্ন ভেংগে তুমি চলে গেলা। তুমি পুরুষ থেকে গেছো।স্বামী হও নি আমার।আমি কালকে আবেগ থেকে যা বলছি তা ভুলে যাও।যোগাযোগ করো না আমার সাথে আর কখনো”।
এটা লিখে সামিহা টেক্সট করে। ফোন বন্ধ করে। সুমন কে জড়ায় ধরে। সামিহা হিসাব করে দেখে ওর আজকে অভুলেশন চলছে।সবকিছু ঠিকভাবে করলে প্রেগন্যান্ট হওয়ার সুযোগ অনেক। সুমন কে জড়িয়ে ধরে চুমু খায় ঠোটে।
নতুন করে জীবন শুরু করা দরকার সামিহার।খুব দরকার...
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
ফয়জুল মহী সুন্দর উপস্থাপন। । বেশ লাগলো ।

১৬ ফেব্রুয়ারী - ২০২১ গল্প/কবিতা: ২ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "ছোটবেলা”
কবিতার বিষয় "ছোটবেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪