অসতর্ক

উষ্ণতা (জানুয়ারী ২০২২)

gcbhattacharya
  • 0
  • ২৫
স্নেহের উষ্ণতা ও কাল্লুজীর বিড়ম্বনা
জি০ সি০ ভট্টাচার্য্য, বারাণসী, উত্তরপ্রদেশ
আজ আমার স্কুলে শনিবারের ছুটি আছে আর কাকু ও কোন একটা দরকারী কাজে একটু বেরিয়েছে।
তাই আমি একলা ঘরে বসে এই ফাঁকে টপ করে সে’দিনের ঘটনাটা লিখে রাখছি।
নইলে আবার ভূলেই তো যাবো।
আমার নাম চঞ্চল। আমার পরিচয় গল্পের সাথেই মিলবে। আলাদা করে লিখতে গেলে তো অনেক সময় লাগবে।
শুধু এইটুকুই বলি যে কাল্লুজী আংকেল কাকুর বন্ধু যেমন বাদল আমার বন্ধু আর কি।
তবে সে’দিন যে তিনি হঠাৎ করে রেগে যাবেন তা বুঝতেই পারি নি আমি।আর কাকু ও পারেনি। কিন্তু এর জন্যে আমার কাকুর কিন্তু বিশেষ দোষ ও ছিলো না কেননা কাকু তো সকাল সাড়ে ন’টার সময়ে আমাকে আগে নাইয়ে খাইয়ে আর ব্যাকপ্যাকেতে আমার বই খাতা টিফিন বক্স জলের বোতল সব যথারীতি ভরে দিয়ে আমাকে স্কুলে পৌঁছে দিতে যাচ্ছিলো স্কুটারের সীটে সামনে বসিয়ে নিয়ে। যেমন রোজ যায় আর কি।
কাকু আমাকে নিয়ে আগে বাদলের বাড়ীতে যায় আর বাদলকে ও স্কুটারে তুলে নিয়ে তবে স্কুলে যায়। কাকু তখন বাদলকে নিজের সীটের সামনে বসিয়ে নেয় আর আমি গিয়ে তখন বসি পিছনের সীটে কাকুকে জড়িয়ে ধরে।
বাদল তো এখন গোটা স্কুল গ্রুপের মনীটর হয়েছে তাই তার বেল্টে যে এস জি এম লেখা সোনার চাকতিটা লাগানো আছে সেটা দেখলেই দারোয়ান গেটটা খুলে দেয় আর টানা সীটি বাজিয়ে দেয় সবাইকে সরে যাবার জন্যে সংকেত দিতে… ঠিক সেইভাবে যে’ভাবে প্রিন্সিপ্যাল স্যারের কার এলে তখন সে গেট খুলে সেলাম দিয়ে সীটি বাজায়।
কাকু পুরো স্কুল গ্রাউন্ডটা পেরিয়ে গিয়ে উত্তর দিকের বারন্দার কাছে আমাদের ক্লাশরুমের ঠিক সামনে এসে স্কুটার থামায় আর আমরা নেমে পড়লে তখন কাকু আমাদের…বাই…বাই… বলে স্কুটার ঘুরিয়ে নিয়ে চলে যায় আর ততোক্ষণ সব ছেলেমেয়েরা সেই রঙিন টাইল্স বসানো পথের দু’ধারে সরে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে …. কাকু চলে গেলে আবার মেন গেটটা বন্ধ হয় আর আবার সিটী বাজে আর তখন সব ছেলেমেয়েরা যে যার ক্লাশের দিকে আবার আগের মতন হৈ হৈ করতে করতে যেতে পারে।
এটা আমাদের ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের ডিসিপ্লিন।
বাদল যে আমাকে ও আমাদের ক্লাশের এ বি ও সি তিনটে সেক্সানের ক্লাশ মনীটর করে দিয়েছে ….সুতরাং আমার পরণে সে’দিন ছিল ক্লাস মনীটরের পোষাক মানে লালচে হাফ শার্টের বদলে দামী নীলচে সাদা রঙের চকচকে ফুলশার্ট আর কালো হাফপ্যান্টের বদলে নেভী ব্লু রঙের ফুলপ্যান্ট কালো স্যু আর মেরুন রঙের বড় স্কুলটাই…সে’সব তো আমি সিক্স ক্লাশের মনীটর হ’লে ও আমাকে পরতেই হ’তো।
তবে সে‘দিন যাত্রাপথের শুরুতেই কাল্লুজী আংকেল এসে হাজির হলেন আর তিনি কাকুকে দেখামাত্রই চেঁচিয়ে উঠলেন –‘আ…আরে ওটা কে? পন্ডিতজী না? আরে দাঁড়ারে বাপু দাঁড়া… দরকার আছে রে…’
কাকু তখন করে কি? বলেছিলো-‘এখন না কাল্লুজী… তুমি একটু দাঁড়াও.. .আগে..আমি ছেলেটাকে স্কুলে পৌঁছে দিয়ে আসি নইলে দেরী হয়ে যাবে তো আর মনীটরদের স্কুলে দেরী করে যাওয়া বারণ…’
কাল্লুজী আংকেল তখন হাঁ করে দাঁড়িয়ে আমার চকচকে শার্টের বুকপকেটের ওপরে লাগানো লাল ও নীল রঙের মীনে করা স্কুল মনো সমেত ক্লাশ VIII মনীটর লেখা ঝকঝকে গোল রূপোর তৈরী প্লেটটার দিকে চেয়ে ছিলেন। আমি অবশ্য হাত নেড়ে …বাই আংকেল… ও বলেছিলুম তবে তাইতে ও যে হিতে বিপরীত হ’বে সে কি আর আমি ছাই জানি না কি?
আমাদের ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে ছুটি হয় বিকেল চারটের সময়।
কাকু রোজ আমাকে স্কুলে পৌঁছে দেবার আর বাড়ী নিয়ে আসবার এই ডিউটি করে কেননা আমাকে কাকু কিছুতেই একলা ছাড়তে চায় না কখনো। স্কুলে বাদল আমার সঙ্গে থাকে। এইজন্যেই কাকু বাদলকে ও জোর করে অন্য স্কুল থেকে আমাদের স্কুলে এনে ভর্তি করে দিয়েছে নিজে সব খরচ দিয়ে।
সকাল দশটার অনেক আগে আমাকে আমার ঘরে পরে থাকা ড্রেসগুলো খুলে এই স্কুলড্রেস পরিয়ে তৈরী করে দেয় কাকু। ছুটির পরে আবার এসে আমাদের নিয়ে ও যায়। অবশ্য বৃষ্টি পড়লে সে’দিন তখন কাকু একটা ওলা ক্যাব বুক করে নেয় এই কাজের জন্যে।
সে’দিন ও ছুটির পরে যথাসময়ে বিকেলে কাকু এসে আমাকে স্কুটারে বসিয়ে নিয়ে বাড়ী ফিরে এলো বাদলকে বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে।
তবে সে’দিন বাদল সন্ধ্যেতে আমার সাথে খেলতে আসতে পারবে না সেটা সে কাকুকে জানিয়ে দিয়ে গেলো যাবার সময়েতে কেননা তার মা ছেলেটাকে সঙ্গে নিয়ে বাজারে না কোথায় যেন যাবে…
বাদলের কথা শুনে কাকু গম্ভীরমুখে বললো-‘আচ্ছা ভাই …ঠিক আছে..বাই বাইইইইই…’ আর আমাকে নিয়ে বাড়িতে চলে এলো।
একটুক্ষণ বিশ্রামের পরেই কাকু যখন আমাকে বাথরুমে নিয়ে যাচ্ছিলো তখন আমি আব্দার করে বেশ ভালোমানুষের মতন সরল মুখ করে জানতে চাইলুম –‘আচ্ছা কাকু… আজ তুমি সারা দুপুর বেলাটা ঘরে বসে কি করেছো বলো তো? কলেজে তো আজ তোমার ছুটি ছিলো …’
কাকু আমার এই সব মুখমুদ্রাগুলো দেখলেই হেসে ফেলে কেননা বাদল আমার নাম দিয়েছে পরীর দেশের রাজকুমার আমি না কি একটা খুব খুব সুন্দর ছেলে আর আমার অপরূপ সুন্দর মুখের এই মুখমুদ্রা আর হাবভাব নাকি বেশ উত্তেজক…
তবে মা তো দেখলেই বলে এই সব নাকি আমার হাস্যের মতন লাস্য….তবে আজ একটু ও হাসলো না কাকু…
শুধু বললো--‘হুঁ… বলছি …আগে চলো হাত মুখ ধুয়ে আসবে… জল খাবার ঠান্ডা হয়ে যাবে নইলে….’
এ ভারী মজা তো…
তবে তখন কাকু নীচু হয়ে আমার জুতো মোজা খুলতে বসলো…
আমার গল্প লেখার ও দেখি এই এক দোষ আছে ।
সব কিছু খুঁটিনাটি বিবরণ লিখে ফেলি আমি।
আরে দ্যুৎ…এইভাবে কি গল্প লেখা হয় না কি আবার? তা সে আর কি করা যাবে?
যার যা অভ্যাস…তা সেইভাবেই লিখি এখন বসে।
আমি স্কুলের ব্যাকপ্যাকটা টেবিলের ওপরে রাখলুম আর নিজের গলায় ঝোলানো মনীটরের স্পেশাল চকচকে রুপোর টাইপিন লাগানো মেরুন রঙের চওড়া স্কুল টাইটা খুলতে খুলতে বললুম-‘তাই চলো কাকু… যাচ্ছি… তবে আজ কিছু একটা বিশেষ ব্যাপার হয়েছে বলে মনে হচ্ছে আমার …তাই কাকু একটা কাজ করবে তুমি?’
‘তা বেশ.. বলো আমাকে কি কাজ করতে হবে চঞ্চল?’
কাকু তখন একটু একটু করে খুব সাবধানে টেনে টেনে আমার মুখে পরিয়ে রাখা বিদেশী স্পেশাল হিউম্যানয়েড ফেস কভারটা খুলছিলো…
সেইভাবেই কাকু জানতে চাইলো………..
ফেস কভারটা সরে যেতে তখন আমার মুখটা একেবারে একটা সত্যিকারের পরীছেলের মতন ঝলমল করে উঠলো আর আমি একটু আবার দুষ্টুমি করবো বলে আমার টানা টানা পদ্মপাতার মতন বড়ো বড়ো কালো চোখদুটোকে আরো বড়ো বড়ো করে নিয়ে আমার দু’হাতের গোলাপী পাতা দু’টোকে উল্টে ধরে মুখে একটা অপরূপ কচি বাচ্ছা ছেলের মতন সরল ভঙ্গি করে বললুম---‘কাকু…আজ তো বাদল ও আসবে না যে ছাদে খেলতে যাবো তাই তুমি এখন আর আমাকে শুধু হাত পা মুখ না ধুইয়ে একেবারে বেশ ভালো ভাবে একটু চান করিয়ে দাও তো দেখি কেননা আজ একটা বিশেষ নতুন কিছু জিনিষ ঠিক আছে আমার জন্যে মনে হচ্ছে আমার…হিঃ…হিঃ…হিঃ…’
কাকু আমার সেই দুষ্টুমিভরা দুধবরণ হাস্যোজ্জ্বল চাঁদের মতন মুখের দিকে চেয়ে রইলো এক মিনিট সময় প্রায় আর তারপরে গম্ভীর মুখে আমার নরম মসৃণ চকচকে বাঁ হাতটা ধরলো আর আমাকে বাথরুমে নিয়ে চলে গেলো…
আরে যাঃ …এ আবার কি কান্ড রে বাবা? আমার অমন সব সময় হাসি খুশী থাকতে যে কাকু ভালোবাসে তার আজ হ’লোটা কি? আমার কাকু যে চুপ…… ভালো লাগে না….যাঃ…
এইবার কাকু আমার সামনে এসে আমার পরণের নীলচে রঙের স্কুলশার্ট থেকে রূপোর চকচকে প্লেটটা খুলে নিয়ে বাথরুমের সেল্ফে তুলে রাখলো আর আমার জামার বোতামগুলো সব এক এক করে খুলতে খুলতে বললো-‘চঞ্চল…. তুমি কি করে কি বুঝতে পারলে তাই বলো তো শুনি…’
আমি দুই হাতে ওয়াশিং মেশিনের কভারটা তখন তুলছিলুম তাই মুখটা নীচু রেখে ছিলুম..সেই ভাবেই বললুম-‘তোমার মুখ দেখে কাকু…’
‘সে আবার কি কথা?’ কাকু আমার টাই আর শার্ট দুটোই ওয়াশিং মেশিনে ফেলে দিয়ে বললো।
তারপরে আমার প্যান্টের পকেটে হাত ঢুকিয়ে আমার রুমাল আর ছোট পার্সটা বের করে নিলো। রুমালটা কাকু ওয়াশিংমেশিনে ফেলে পার্সটা তাকে রাখতে রাখতে বললো-‘কেন? আমার মুখে কি কিছু লেখা আছে?
আমি তখন নিজের পরণের নেভী ব্লু রঙের প্যান্টের বেল্টটা খুলছি…
আমি বললুম-‘হুঁ সে তো আছেই কাকু…’
‘হুঁ…যতো সব বাজে কথা আমার এই পরীছেলেটার……’
কাকু আমার বেল্টটা টেনে খুলে নিয়ে গোল করে তাকে রাখলো।
আমি বললুম-‘কাকু…আমার মনে হয় আজকে ঠিক কেউ এসে আবার কিছু যা তা সব বাজে কথা বলে তোমার মনটাকে রাগ আর বিরক্তিতে ভরে দিয়ে গেছে আর তাই তুমি আমার জন্যে ঠিক কিছু একটা দামী নতুন জিনিষ তৈরী করে বসে আছো কাকু…’
কাকু বললো—‘হুঁ….. তা ঠিকই…সে একজন এসেছিলো বটে…’
আমি বললুম-‘সে কে কাকু…’
‘সে আছে একজন…’
আমি প্যান্টটাকে টেনে খুলতে খুলতে বললুম –‘ও কাকু আমি আগে ব্রাশ করে নিই আর তুমি ততোক্ষণ তোমার অটোমেটিক স্পেশাল বাথটবটা রেডি করো… নির্দিষ্ট তাপের ওয়ার্ম ওয়াটার… লিকুইড জেসমিন সোপ আর ফোমার চালিয়ে দিয়ে…
আমি টুথব্রাশে পেস্ট লাগিয়ে ভালো করে ব্রাশ করে নিয়ে মুখ হাত ধুয়ে নিলুম…
কাকু তখন স্পেশাল বাথটবটা রেডী করছিলো…
আমি কাকুর পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে আমার পরণের অন্তর্বাসগুলো খুলতে খুলতে একটু হাসলুম আর সেই অটোমেটিক মানে কম্প্যুটার চালিত বাথটবে নেমে পড়লুম ….. আমি বাথটবের জলে বসতেই কাকু সোপ স্প্রিংকলার আর ফোমার চালিয়ে দিলো আর গোটা টবটার পরিস্কার ইষদুষ্ণ জল জেসমিনের সুগন্ধিত সাদা ফেনায় ভরে উঠলো….
কাকু একটা সাদা বাথস্পঞ্জ হাতে নিলো আর জলের ভেতরে নিজের হাতদু’টো ডুবিয়ে দিলো… সাবানের ফোমে ঢাকা আমার শরীরটাকে কাকু দু’হাতে রগড়ে বেশ ভালো করে স্পঞ্জিং আর রাবিং করতে শুরু করলো ….
দশ মিনিট পরে কাকু একটা নীল বোতাম টিপলো…তখন সব সাবান জল বের হয়ে গেলো আর কাকু টবেতে আবার নতুন পরিস্কার হাল্কা গরম জল ভরে দিলো আর আমি গায়ের সব সাবান ধুয়ে ফেলতে সচেষ্ট হলুম দুই হাত দিয়ে …
শেষে কাকু তৃতীয়বার টবে জল ভরলো আর তাইতে তিন চার ফোঁটা ডেটল আর পুরো বড়ো একটা শিশি ভর্তি গোলাপ জল ঢেলে দিলো..
সেই সুগন্ধিজলে স্নান করতে করতে আমি বললুম—‘ও কাকু…. লোকটা কি তোমার কোন পরিচিত না বন্ধু কেউ কাকু? ’
কাকু আমার জলে ভেজা হাতে হাল্কা গরম গোলাপজলের ফোয়ারাওয়ালা হ্যান্ডশাওয়ারটা এনে ধরিয়ে দিয়ে সোজা হয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বললো---‘হুঁ…অমন বন্ধুর না নিকুচি করেছে… যত্তো সব আপদ আর কি…’
আমি উঠে দাঁড়িয়ে আমার সারা শরীর শাওয়ারের গোলাপজল দিয়ে ধুয়ে ফেলে সেটা বন্ধ করে রেখে বাথটব থেকে সাবধানে বেরিয়ে এলুম যাতে পা না পিছলে যায় টবের ভেতরে আর কাকু নীল তোয়ালেটা দিয়ে আমার মিষ্টি গোলাপজলে সুবাসিত সারা শরীরটাকে মুছে শুকিয়ে দিতে লেগে গেলো…
এই হ’লো কাকুর পরীছেলের স্নানের আয়োজন…
তারপরে কাকু আমাকে অন্য একটা শুকনো গোলাপী রঙের পাতলা তোয়ালে এনে পরাতে পরাতে বললো-‘চঞ্চল….. আগে প্রসাধন করিয়ে ড্রেস করিয়ে দিই আমার ফেয়ারী বয় ডল মানে পরী পুতুল ছেলেটাকে তার পরে জলখাবার খেতে বসে সব বলছি…. ‘
এই বলে কাকু নীল তোয়ালেটা ও ওয়াশিং মেশিনে ফেলে তাইতে লিকুইড সোপ ঢেলে দিয়ে নব ঘুরিয়ে জল ভরে মেশিনটা চালিয়ে দিলো ……
ঘরররররর.… করে মৃদু শব্দ করে মেশিনটা চলতে রইলো আর বেশ কয়েক মিনিট পরে আমার সব পোষাক কাচা হয়ে বেরিয়ে আসতে তখন আমি এক এক করে সে’গুলোকে তুলে নিয়ে পাশের রোটেটিং হ্যাঙ্গারে ঝুলিয়ে দিলুম আর সেটার সুইচটা টিপে দিতেই সেটা ধীরে ধীরে ঘুরতে শুরু করলো স্ট্যান্ডের ওপরে আর আমি তখন সামনের দেওয়ালের ব্র্যাকেটে লাগানো হেয়ার ড্রায়ার মেশিনটা ও চালিয়ে দিলুম ….জোরে গরম হাওয়া ছুটে এসে বাথটবের সামনে ঝোলানো গোলাপী রঙের দামী বাথরুম লিনেন মানে পর্দাগুলোকে কাঁপিয়ে দিলো আর সেই হাওয়া এসে আমার গাটা ও পুরো শুকিয়ে দিলো তখন তবে পোষাক গুলো পুরো শুকোতে দশ বারো মিনিট সময় তো লাগবেই আর তারপরে অটোমেটিক ভাবেই ড্রায়ার বন্ধ হয়ে যাবে…
তখন কাকু এগিয়ে এসে আমার সামনে দাঁড়িয়ে নীচু হয়ে তার এই ১৪ বছরের সদ্যস্নাত ঝকঝকে দুধবরণ পরী ছেলেটাকে বেশ শক্ত করে নিজের বুকে চেপে ধরলো আর একটানে কোলে তুলে নিয়ে ড্রেস রুমে চলে এলো যেন আমার ওজন ২৪ কেজি নয় আমি কাকুর একটা তিন বছরের কচি ছেলে…
যাঃ… আমার কাকু কি যে সব কাজ করে না… কেউ দেখা তো দূরে থাক জানতে পারলেই বেশ মুশ্কিল হয়ে যাবে ঠিক…..
কাকু আমাকে ড্রেস রুমে নিয়ে চলে এসে আমাকে ড্রেস করাতে সুবিধে হবে বলে মাটিতে না নামিয়ে একটা ছোট টি টেবিলের ওপরে আস্তে করে নিজের সামনা সামনি করে দাঁড় করিয়ে দিলো ….
সেই ঘরে টি টেবিলটার বাঁপাশে একটা কাঁচের কেবিনেটে ভর্তি আমার নানা ধরণের সব পোষাক সাজানো ছিলো আর সামনে ছিলো একটা বিদেশী মানে ইটালিয়ান পুশ ব্যাক সফ্ট ব্রাউন সোফা। তার ডান পাশে সেই দেশেই তৈরী এল ই ডি লাইট লাগানো নীলচে আলো জ্বলা গ্লাশ টপ বড়ো একটা রোটেটিং টেবিল যাতে আমার জন্যে নানারকমের সব বহুমুল্য দেশী বিদেশী কসমেটিক্স মানে প্রসাধনের জিনিষপত্র সাজানো ছিলো….
যেমন কোল্ডক্রীম বিলক্রীম ভেসলীন গ্লিসারিন লিপ শাইনার ফেস শাইনার সুরমা থেকে শুরু করে বোরোলীন বোরোপ্লাস বোরোক্যালেন্ডুলা ও কয়েকটা অ্যান্টিসেপটিক ও অ্যান্টি ইনফ্লেমেটারী ইনারড্রেস ক্রীম… হীট এফেক্ট রিমুভার সান বার্ন ক্লিয়ারিং কম বডি হোয়াইটনার ফর বয়… মেল ডিও আর মেল সেন্ট আতর ও ভিট হেয়ার রিমুভার আর গ্লোবেনজি অ্যান্টিইরিটেশানাল ক্রীম… ভিকো টরমেরিকের সাথে আরো অনেক কিছু কসমেটিক্স….
এই সবই কাকুর এই একটামাত্র পরী ছেলের জন্যে শখ করে কেনা…ভাবা যায়? তবে কাকুর শখ যখন সে আর আমি কি বলবো? সোফাটার দাম না কি ষাট হাজার আর টেবিলটার দাম আশী হাজার টাকা… সবই কাকুর অনলাইনে কেনা…
উঃ…কাকুর শখ বলিহারী বাবা….
কাকু আমার জন্যে তখন একটা ট্রে নিয়ে এলো।
তাইতে দেখি রয়েছে ডঃ জেম্স স্কিন হোয়াইটনিং ডে আর নাইট ক্রিমের দুটো প্যাক…এই ক্রীম সব শেষে না কি মুখ গলা ও ঘাড়ে লাগাতে হয় আর তা ও দিন আর রাতের জন্য আলাদা টিউব রয়েছে আর একটা কেফিনের স্কিন সাইন লোশন প্যাক যাতে আছে hyroquinone, tretinoine আর mometasone furoate cream…
সে’দিন আমার জন্যে রোজকার মতন সাধারণ ভেসলীনের বডি লোশনের বদলে একেবারে স্কিন শাইনিং কিট তৈরী…কি কান্ড বলো তো ।
স্প্রেটা হাতে তুলে নিলো কাকু….
এইবার আমার নতুন প্রসাধনের পালা…
আমি জানতে চাইলুম…ও কাকু..আজ এটা কি নতুন প্রসাধনী আমার?
হ্যাঁ চঞ্চল…এটা কেফিনের টিন বয় বডি টোনিং ও স্কিন শাইনিং বা পালিশিং কিট…কয়েকটা স্টেপ আছে এর ব্যবহারের…
‘যথা…’
‘মনে করো স্টেপ একেতে…পালিশের তেলটা স্প্রে করে প্রথমে তোমার সারা গায়ে মাখাতে হবে শুধু মূখে ছাড়া…মুখের জন্যে আলাদা ক্রীম রয়েছে সঙ্গে…’
‘তারপরে কাকু?’
‘তারপরে দ্বিতীয় স্টেপে তেলটা পুরো শুকিয়ে ফেলতে হবে দু’হাত দিয়ে রগড়ে আর হাত ঘুরিয়ে হাল্কা ভাবে মালিশ করে…সারকুলার মোশনে হাত ঘুরিয়ে মালিশ করা শেষ হ’লে তখন স্টেপ তিনে বডি স্ক্র্যাবিং করতে হবে এই ডায়মন্ড পিন হেড ফোমলাগানো স্ক্যাবার দিয়ে যাতে শরীরের সব সান বার্ন স্ট্রেচ মার্ক আর মেলাটোনিন ও স্কারমার্ক সব মিলিয়ে যায়’।
‘পনেরো মিনিট পরে বাড়তি তেল যা গায়ে তখনো লেগে থাকবে তা ভালো করে হাল্কা গরম জলে ধুয়ে ফেলে সারা গা মুছিয়ে নিতে হবে ..’
‘হুঁ …তারপরে কাকু?’
‘কফি বডি লোশন লাগাতে হবে। কফি গ্রুপের সব প্রসাধনের জিনিষই খুব দামী। লোশন শুকিয়ে গেলে তখন এই ক্রিমটা লাগিয়ে দিয়ে এই হ্যান্ড রাবিং মেশিন দিয়ে ঘষতে হবে কেননা এটা একটা প্যারাফিন জাতীয় ক্রিম…বডি রাবিং করলে তখন ত্বকের সব কাট ও স্ট্রেচমার্ক ভরাট হয়ে যাবে আর তাই তোমার সারা শরীর মসৃণ হয়ে ঝকমক করে উঠবে… ব্যস… আমার সিল্কি শাইনিং ফেয়ারী বয় ডল তৈরী…’
‘কাকু…তোমার এই কিটের দাম কতো বলো তো…’
‘সব বডি স্ক্র্যাবিং ও পালিশিংয়ের ডায়মন্ড পিনহেড মেশিন শুদ্ধু দশ হাজার টাকা…’
‘ওরে বাবা…ও কাকু…তুমি করেছো কি? এ তো সর্বনাশের মাথায় পা…’
কাকু চুপ।
আমার বডি শাইনিং শেষ হ’তে তখন আমার রূপোর মতন ঝকঝক করতে থাকা সারা গায়ে কাকু দামী ঠান্ডা মানে প্রিকলী হীট পাউডার লাগিয়ে দিলো….
এইবারে কাকু আমার মুখে গলায় আর ঘাড়ে সেই ডে ক্রীম লাগিয়ে দিলো আর আমার পাতলা লাল ঠোঁটজোড়ায় লিপ শাইনার লাগালো….. তারপর আমার টানা টানা বড় বড় চোখ দুটোতে খুব সাবধানে কাকু একটা বিদেশী মেশিন দিয়ে নিঁখুতভাবে সুরমা পরালো …
আমার জন্যে কৃত্তিম আই ব্রো লাইনার লাগে না কেননা সেইরকম সুন্দর ভ্রু তো এমনিতেই আমার আছে …আমি ধনুকের মতন সেই কালো ভ্রুজোড়া কুঞ্চিত করে বললুম—‘ও কাকু.. কি করছো? লোকে যে আমাকে শেষে একটা মেয়ে বলে ভাববে…. হিঃ…হিঃ…হিঃ…
কাকু একটা আই ব্রো শাইনার তুলে লাগিয়ে দিতে দিতে বললো…’নাঃ তোমাকে ঠিক একটা পরীর দেশের রাজপুত্র বলে ভাববে…’
আমার কপালে ছোট ছোট করে গোলভাবে চন্দনের টিপ আর তার মাঝখানে শ্রীকৃষ্ণের মতন করে কাকু পরালো লাল রোলির একটা ইয়ু টিপ.. দু‘টো বিশেষ স্টেন্সিল আর সফ্ট ব্রাশ দিয়ে …
বাদলের মতে আমি পরীর দেশের রাজকুমার ছেলে আর কাকু তো আমার নাম দিয়েছে শ্বেত কৃষ্ণঠাকুর আর মা বলে কার্তিকঠাকুর তাই সেইভাবেই আমাকে কাকু সাজিয়ে রাখতে চায় আর কি…যা আমার মায়ের ভাষায় যত্তো সব আদিখ্যেতা আর কি…….
কাকু আমার চুলে বিলক্রীম লাগিয়ে চুল আঁচড়ে মাঝামাঝি সিঁথি করে সেট করলো নতুন হেয়ার স্টাইলে আর সেই চকচকে শাইনিং অল্পকুঞ্চিত চুলের সরু সিঁথির ওপর দিয়েএকটা সোনার চেন সহ টিকলির মতন আমার কপালে যা পরালো দেখলুম সেটা মেয়েদের টিকলি নয়..একটা হীরে বসানো ঝকমকে আটকোনা সোনার স্টার…
আমার কালো ঘন চুলেতে মেয়েদের মতন সরু প্ল্যাস্টিক বো না লাগিয়ে কাকু একটা দুই ইঞ্চি চওড়া সোনার খুব চকচকে হেয়ার ব্যান্ড পরালো আর তার সাথে ক্লিপ করে পরালো একটা রুবী বসানো চার ইঞ্চি উঁচু সোনার তৈরী পদ্মফুলের টায়রা…..
তারপরে আমার কপালের ওপরে এসে এলো মেলো হয়ে ছড়িয়ে পড়ে থাকা নরম চুলগুলোকে আস্তে আস্তে সাবধানে আঁচড়ে নিয়ে একটা ছোট কাঁচি দিয়ে ছোট ছোট তরঙ্গমালার মতন করে ঢেউ খেলিয়ে কাটলো কাকু আর সেই কালো চুলের তরঙ্গওয়ালা আমার কপালটাকে ও টিপের মতন সাতটা গোল্ডেন চুমকির মতন ছোট ছোট স্টার লাগিয়ে সাজালো…
কাকুর এই অভিনব পুত্রসজ্জার সব কিছুই আমি সামনের ড্রেসিং টেবিলে লাগানো ফুলসাইজ বেল্জিয়াম কাঁচের আয়নাটাতে পরিস্কার দেখতে পাচ্ছিলুম…
কাকু আমার দুই গালে ও হাতের গোলাপী তালুতে রুজের মতন কিছু সফ্ট ব্রাশ দিয়ে লাগালো তবে পরে আমি জেনে নিয়েছিলুম যে ওটা কোন সস্তা রুজ নয়… বিদেশ মানে ফ্রান্সে তৈরী সানরাইজ কালার ফেস ও পাম শাইনার …যার একটা টিউবেরই দাম দেড়শো ডলার…..
এইবার আমার গায়ে মাস্ক সেন্টেড বডি ফ্রেসনার স্প্রে করলো কাকু…
তারপরে আমার দুই হাতে কয়েকটা চকচকে ঝকঝকে সোনার রিস্ট ও আর্ম ব্যান্ড আর গলায় একটা মুক্তোর সাতনরী হারের সাথে থাই ও লেগ ব্যান্ড পরালো কাকু গোদরেজের আলমারির লকার থেকে বের করে এনে এক এক করে…. এমনকি আমার কোমরে একটা সোনার মেখলা আর দুই পায়েতে দুটো রিন রিন করে বাজতে থাকা সোনার নুপূর অবধি পরালো আমার….
ওঃ সে কি এলাহি ব্যপার….
আমার স্নান প্রসাধন ও অলঙ্করণ পর্ব শেষ হ’লো।
তখন কাকু আমাকে স্পঞ্জের মতন বেশ নতুন ধরণের খুব পাতলা নরম নীল রঙের কাপড়ে তৈরী একটা গেঞ্জী আর বিদেশী সেই কাপড়েরই তৈরী একটা জাঙিয়া ও এনে তখন আমাকে এক এক করে পরিয়ে দিতে বসলো কাকু…
তারপরে আমার সেই স্পেশাল ইনারেতে ইন্টিমেট সেন্ট কাকু স্প্রে করে দিলো অনেকটা আর সুগন্ধে ঘরটা ভরে গেলো…
সবশেষে দেখি যে কাকু নিয়ে এলো আবার একটা নতুন ধরণের পোষাক।
ডীপ পিকক ব্লু কালারের একটা ঝকমকে পাজামা আর পান্জাবির বয় স্যুট যার গলায় বুকে হাতায় নীচে পায়ের কাছে আর দুই পাশে চার পাঁচ ইঞ্চি চওড়া সোনালী চকচকে জরীর কাজ করা পাড়বসানো রয়েছে।
সেই ঝকঝকে বিশেষ বয় স্যুট ও আমি জীবনে চোখে দেখিনি ……
আমি বেশ অবাক হয়ে গেলুম আর সেই পাতলা ইনার পরা অবস্থাতেই বলে ফেললুম –‘ও কাকু,….. এটাই কি আমার আজকের স্পেশাল ড্রেস কাকু?’
‘হুঁ….’
‘তা এটা কি দিয়ে তৈরী? ও কাকু…বলো না? এটা তো আমার মনে হয় যে কোন বিদেশী কটন বা সাধারণ সিন্থেটিক ফাইবারের তৈরী ড্রেস নয়….’
‘না চঞ্চল….এটা আসল স্বদেশী জিনিষ…’
‘তার মানে কাকু?’
‘খাঁটি রেশম দিয়ে বোনা হ্যান্ডিক্র্যাফ্ট মানে রেশমের সূতো আর সোনার তারের তৈরী জরী দিয়ে হাতে তৈরী সুক্ষ্ম কারুকাজ করা বিশ্ববিখ্যাত আসল বেনারসী সিল্কের শাড়ির কাপড় দিয়ে বানানো বিশেষ ইয়ং বয় স্যুট তবে ১৬ বছর বা তার বেশী বয়সের টিনএজার অন্য ছেলেদের ও এই পোষাক পরানোই যায়…’
‘তার মানে কাকু? কি যে বলো না তুমি কাকু…বেনারসী শাড়ির তৈরী স্যুট? সে আবার হয় না কি? যাঃ…’
‘হওয়ালেই হয় নইলে হয় না ….’
‘তার মানে? ও কাকু…’
‘মানে আবার কি চঞ্চল? তুমি হয়তো শোননি যে আজকালকার মেয়েরা সিল্কের ভারী বেনারসী শাড়ি ঠিক মতন পরতে বা পরলে ও সামলাতেই পারে না…তাই তারা শাড়ী কিনে এনে তাই দিয়ে সালোয়ার কামিজ আর দোপাট্টার স্যুট বানিয়ে নিয়ে পরে ……তাই আমি ও আজ তোমার জন্যে এই পাজামা পাঞ্জাবি ও কাঁধ থেকে পা অবধি ঝুলের এই লম্বা শোল্ডার শালের স্পেশাল বয় স্যুটের সেটটা বানিয়ে এনেছি একটা বেনারসী কাপড় দিয়ে…’
‘এই সেরেছে…আবার একটা সর্বনাশ করেছো তুমি কাকু…নাঃ.. তোমাকে নিয়ে দেখি যে আর তো পারাই যায় না…কি যে করো না তুমি কাকু? মহা মুশ্কিলের ব্যাপার তো…তা এই বয়স্যুটের দাম কতো কাকু?’
‘তা একটু বেশী বইকি…’
‘মানে?’
‘মেয়েরা সাধারণত যে সব বেনারসী কাপড় দিয়ে তাদের সালোয়ার স্যুট বানায় সেই শাড়ির দাম হয় আট দশ থেকে শুরু করে বিশ হাজার টাকা অবধি কেননা জরী আর সিল্ক কিছুই আসল থাকে না সেই কাপড়ে তবে আমি ব্যবহার করেছি এই যে আসল সিল্ক আর সোনার জরির কারুকাজ করা এক্সপোর্ট কোয়ালিটির বেনারসী কাপড়টা তার দাম পঁচানব্বই হাজার টাকা …. এই যা…একটু তফাৎ….’
‘ও রে বাবা রে… সে আবার কি কথা কাকু?…’
কাকু তখন আমাকে পান্জাবিটা পরিয়ে দিয়ে আমার কাঁধে একটা বড়ো সোনার শালক্লিপ দিয়ে আমার হাঁটু অবধি লম্বা আর ছয় সাত ইঞ্চি চওড়া করে ভাঁজ করা সেই রঙের বেনারসী কাপড়েরই তৈরী শালটাকে আটকে দিতে ব্যস্ত…
কাকু আমার কোমরের মেখলাটা ড্রেসের ওপরে তুলে দিলো।
আর্ম থাই ও লেগ ব্যান্ডগুলো তখন পান্জাবী ও পাজামাতে ঢেকে গেলে ও আমার দুই দুধবরণ চকচকে হাতে দু’টো সোনার রিস্টব্যান্ড পায়ের নুপূর আর গলার হারটার সাথে চওড়া মেখলা বা কোমরবন্ধটা ও ঝকমক করে উঠলো …
কাকু বেশ নির্বিকার ভাবে এইকথাগুলো আমাকে সুসজ্জিত করতে করতে সব বলে গেলো আর শুনে আমি আঁতকে উঠে বললুম---‘এই যাঃ কাকু.. তুমি আজ মহা সর্বনাশ করেছো কাকু…. উঃ… এখন সব কু’লোকে তোমার এইসব খেয়ালের কথা জানতে পারলে তখন আর দেখতে হবে না আমাকে আর এই ভারী রেশমী পোষাকে এখন যে আমার খুব গরম ও লাগবে কাকু….’
‘নাঃ… সে আর আজ লাগবে না চঞ্চল কেননা তোমার ডাইনিং রুমে আমি আজই একটা আধুনিক মানে নিউ ডিজাইনের টেবিল এ সী ও এনে লাগিয়ে দিয়েছি যে…চলো দেখবে…’
‘ওরে বাবা রে …গেছি রে …উঃ… সত্যিই কাকু তুমি হচ্ছো…এককথায় যাকে বলে … ইনক্রেডিবল …’
‘হুঁ…বললেই হ’লো না…’
‘তা হ’লোই তো কাকু তবে সে কি আর করা? তাই চলো এখন ডাইনিং রুমেই যাই…. কিন্তু আমার মনে হয় যে তোমার এই একটা ছেলেকে নিয়ে এই সব ভয়ানক পাগলামি আর টাকা অপচয় করবার জন্যেই কেউ আজ তোমাকে বেশ কিছু কথা বলেছে কাকু…. হিঃ…হিঃ…হিঃ….’
‘হুঁ…’
‘তা বলবে নাই বা কেন কাকু? নাঃ…. এইবারে দেখছি আমাকেই তোমার সমস্যাটা মেটাতে হবে…. উঃ….’
‘কেন বলবে?’
‘কেন বলবে না কাকু? বেশ….আমি মানছি যে তোমার ছেলে হচ্ছে অপরূপ সুন্দর আর একেবারে একটা সত্যিকারের পরীর মতন দেখতে কিন্তু তাই বলে তাকে সাজাতে আর তার পোষাকের পেছনে কি কেউ রোজ এইভাবে সময় পরিশ্রম আর এতো টাকা নষ্ট করে কাকু? যাঃ…’
‘হুঁ….তা করে বইকি চঞ্চল….’
‘আরে দুৎ কাকু…আমি তো একটা সাধারণ ছেলে তা সে তুমি আমাকে যতোই পরী সাজাও না কেন তাইতে কি হবে?’
‘হবে আমার পরী ছেলের রূপের আর সৌন্দর্যের চোখ ধাঁধানো জৌলুশের বাহার চঞ্চল…’
‘আরে যাঃ কাকু…সত্যিই এইসব তোমার যতো সব আদিখ্যেতা….নাঃ…মা ঠিকই বলে দেখছি…এতো বড়ো একটা ছেলে তো নিজেই বাথরুমে গিয়ে একটা তিরিশ টাকা দামের লাক্স সাবান নিয়ে পাঁচ মিনিটের মধ্যে শাওয়ার চালিয়ে নিজেই চান করে আসতে পারতো আর ঘরে এসে তখন না হয় গায়ে একটু পাউডার লাগিয়ে নিয়ে একটা রূপা বা লাক্সের সাধারণ সাদা গেঞ্জী নীল জাঙিয়া আর গোলাপী রঙের বয় টি শার্ট ও সাদা শর্ট পরে নিয়ে টপ করে কখন জলখাবার ও খেতে বসে যেতেই পারতো কাকু…’
‘হুঁ….সে’কথা যে ঠিক তা আমি মানছি চঞ্চল…সে অবশ্যই পারতো…তবে আমি করিয়েছি আমার ছেলেকে বাংলার নবাবের মতন গোলাপজলের শাহী স্নান… ’
‘আরে যাঃ কাকু …সবাই এমন কি বাদল ও তাই করে আর তোমার সেই কাজে লাগলো এই দেড় ঘন্টা সময় আর লাখ দেড়েক টাকা মানে শুধু এই পোষাক আর এসীটা নিয়েই…..’
‘হুঁ…’
‘কি হুঁ?...যাঃ…খালি বলে হুঁ……আচ্ছা…এই কাকু… আমার গলাতে তুমি যে এই সাতনরী মুক্তোর ঝকমকে মালাটা পরিয়েছো…তা এ’টার দাম কতো বলোতো দেখি কাকু? হিঃ…হিঃ…হিঃ…’
কাকু তুম্বো মতন গোমড়া মুখে বললো-‘সে সব থাক …শুনে আর কাজ নেই তোমার তবে এটা তোমার মায়ের সম্পত্তি চঞ্চল…যেমন শাল ক্লিপ হেয়ার রিংওয়ালা মেখলা টায়রা রিস্ট ও আর্ম ব্যান্ড আর নুপূরগুলো সব আমার মায়ের….’
এই বলে কাকু সেই ছয় সাত ইঞ্চি চওড়া ঝকঝকে সোনার জরীর কাজ করা নীলকন্ঠী রঙের বেনারসীর স্যুট আর সোনার আভরণের সাজে সুসজ্জিত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা সেই পরীরাজপুত্রের মতন দেখতে ছেলেটার দুই বগলে হাত দিয়ে শক্ত করে চেপে ধরলো আর একটানে আবার নিজের কোলে তুলে নিলো ঠিক একটা তিনবছরের বাচ্ছা ছেলের মতন করে…
ওঃ….সত্যি বাবা…….কাকু আমাকে নিয়ে কি সব যে করে না…তার কোনই ঠিক নেই…এই সব হচ্ছে কাকুর অভিনব পদ্ধতির ছেলে আদর….যা কেউ ভাবতে ও পারে না…
আরে দ্যুৎ…আমার যেন লজ্জা করে না….
আর এতো বড়ো একটা ছেলেকে কেউ কি সবসময় এইরকমভাবে মেয়েদের মতন করে এতো সাজায়? উঃ…..এমন সব অদ্ভূত কথা আমার তো জানা নেই বাপু তবে আমার কাকুর কথা আর কি বলবো? সব কাজই কাকুর আলাদা…
আর কাকুই যখন আমাকে সেই ছোট্ট কচি বেলা থেকে কষ্ট করে মানুষ করেছে আর সেইসাথে আমি ও যখন আবার ঠিক একটা সত্যিকারের দুধবরণ পরী ছেলের মতন এইরকম অনন্যসাধারণ রূপ নিয়ে জন্মেছি … তখন আর কি করা যাবে?…তবে আমার মায়ের ভাষায় এই সবই হচ্ছে আমার কাকুর ছেলে নিয়ে আদিখ্যেতা আর পাগলামিই বটে…….
তা সে যাক … তবে শুনেছি যে অসামান্য রূপ ও রুপো দুটোর কোনটাই ভালো জিনিষ নয়… সে আমি ঠিক জানি কেননা আমি শুনেছি মানে আমার বন্ধু জিনিয়াস ছেলে বাদল বলেছে যে রুপোতে পড়ে শনির আর সোনাতে পড়ে রাহুর দৃষ্টি মানে যে গ্রহের যা প্রিয় জিনিষ আর কি…তবে অসাধারণ রূপ থাকা ও মোটেই ভালো কথা নয় কেননা তাইতে দৃষ্টি বা কুনজর পড়ে দুষ্টু সব কুলোকের… বাদলের ভাষায় যাকে বলে রূপদৃষ্টি…..
সে যাক গিয়ে…
তাই আমি বলি কি যে কাকুস্য শোচনা নাস্তি….হিঃ..হিঃ…হিঃ…হিঃ….
অনেক ভাগ্য করে আমি একটা কাকু পেয়েছি….উঃ…আর তাই নিজের এই ফেয়ারী বয় ডল ছেলেটাকে নিয়ে কাকু কখন যে কি করবে সেটা কাকুই ভালো বুঝবে … তার জন্যে আমি আর কি বলতে পারি? কাকুর যেমন শখ… ছেলেকে কোন সস্তা বা নকল গয়না বা পোষাক কিছু পরালে তো… কাকু বলে আমার ছেলেটা কি নকল যে আমি তাকে কোন নকল বা সস্তা আবরণ বা আভরণ পরিয়ে রাখবো…
উঃ রে বাবা…তাই বলে কোন ছোট ছেলেকে কেউ এতো সব মূল্যবান পোষাক আর মহার্ঘ্য অলঙ্কার পরায় না কি? যাঃ….
তা এই জগতে আমার কাকুর মতন আরো অনেক ছেলে পাগল লোক তো থাকতেই পারে….
কাকু আমাকে নিয়ে ডাইনিং রুমে চলে এসে একটা এসীর সুইচ অন করে দিলো আর একটা চকচকে নতুন চাকা লাগানো টেবিলে রাখা একটা সাদা লম্বা চৌক বাক্স ঘর ঘর করে উঠলো… কাকুর টেবিল এ সী…পোর্টেবল…
তারপরে কাকু মাইকা লাগানো ঝকঝকে ডাইনিং টেবিলে জল খাবার সব এক এক করে এনে সাজাতে শুরু করলো…
উঃ…পারে ও বটে বাবা আমার কাকু…
ডাইনিং টেবিলে সব জিনিষ….মানে খাবার দাবার জলের জাগ গ্লাশ প্লেট কাঁটা চামচ ন্যাপকিন সব এনে সাজানো হ’লে তখন কাকু তার সেই পরীর দেশের রাজকুমারের মতন সোনার সাজে ঝলমল করতে থাকা সুবাসিত ছেলেটাকে খুব আস্তে করে নামিয়ে একটা গদী মোড়া চেয়ারেতে বসিয়ে দিলো আর নিজে ও পাশে এসে বসে একটা চকচকে রুপোর প্লেটেতে সাদা পোর্সিলেনের বাউল থেকে জলখাবার তুলে সাজানো নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লো…….
‘ও কাকু…. এইবারে আগে আমাকে বলো না দেখি যে কে আবার কি শনির দৃষ্টি দিলো তোমার ওপরে….. নইলে জলখাবারের পরে তো তুমি তোমার এই রাজপুত্র ছেলের ভিডিওগ্রাফী আর ফটো সেশান নিয়ে ঠিক মেতে উঠবে… সে আর কি আমি জানি না আবার …’
‘হুঁ…’
‘অবশ্য কুনজর যে কেউ তো দিতেই পারে কেননা তুমি যা সব পাগলামী আর পুতুল খেলা করো না কাকু তোমার এই একটা অখাদ্য বাজে অকর্মার ধাড়ী ছেলেকে নিয়ে তার সেই ছোটবেলা মানে তিনবছর বয়স থেকে….উঃ…’
‘কে আবার? ওই কাল্লুজী ছাড়া?’
‘এই মরেছে…. শেষে কি না কাল্লু আংকেল? ….উঁহু….তবে তো ঠিক কোন জটিল ব্যাপার হবে নির্ঘাৎ কাকু…এখন তবে তুমি সবঘটনা খুলে বলো তো কাকু নইলে হবে না …আমি রবার্ট ব্লেক বা ফেলুদা নই কাকু…..তুমি শুরু থেকে এক এক করে সব বলো তো…’
কাকু একটা রুপোর চামচ দিয়ে আমার পছন্দের খাবার বাদাম পেস্তার হালুয়া একটু তুলে আমার মুখে দিয়ে নিজের মুখটা আরো ভারমতন করে বললো-
‘বলছি চঞ্চল…শোন…আমি তোমাকে বাদলের সঙ্গে যখন স্কুলে পৌঁছে দিয়ে ঘরে এলুম তখন বাজছে সাড়ে দশটা আর আজ আমি ঘরে ম্যাংগো শেক তৈরী করবো বলে একবার বাজারের দিকে যাবো ভেবে আবার বেরিয়ে পড়তে যাচ্ছি হঠাৎ বাজলো কলিংবেল ঝিঁ ঝিঁ করে আর বাইরে হাঁক শোনা গেলো ….
‘আরে ও পন্ডিতজী…. বলি বাড়িতে আছো না কি? আর যদি থেকেই থাকো তবে দেরী না করে একটা মোটা ধেড়ে ইঁদুরের মতন পেল্লায় এক লাফ মেরে তোমার ওই বারান্দা থেকেই ধপাস করে আমার সামনে এসে চিৎপাৎ হয়ে পড়ে একটু না হয় খাবি খেয়ে নাও খানিকক্ষণ …. আমার কোন আপত্তি নেই তাতে তবে দেরী করা চলবে না এক সেকেন্ড ও এখন….আরে আমি আজ একেবারে টোকেন নিয়ে এসেছি রে তোর জন্যে যে পন্ডিতজী…
‘হিঃ….হিঃ….হিঃ….কিসের টোকেন কাকু? ব্যাংকের?’
‘আরে ছোঃ….কাল্লুজী আনবে ব্যাংকের টোকেন? তবেই হয়েছে….’
‘তবে কাকু?’
‘তবে আর কি? আমার মাথা… আমি বেরোতেই কাল্লুজী কোন কথাই না বলে আমার একটা হাত চেপে ধরলো আর হিড় হিড় করে টানতে টানতে নিয়ে গিয়ে একটা অটোয় তুলে ফেললো …আমি যতো বলি যে ও কাল্লুজী তুমি কোথায় নিয়ে যাচ্ছো এখন আমাকে? আমি তো বাজারে যাচ্ছিলুম… ততোই কাল্লুজী বলে …আরে চুপ হো যা রে পন্ডিতজী… একদম মৌনী বাবা হয়ে বসে থাক তুই এখন… আজ আমি মৌকা পেয়ে গেছি কেননা আজ আমার ছুটি আছে আর দৈবযোগে সদা ব্যস্ত পন্ডিত নীলকন্ঠ শর্মা শাস্ত্রীজীর কাছ থেকে টোকেন ভি আদায় করতে পেরেছি এতোক্ষণ ধর্ণা দিয়ে… তাই আজ আর তোর নিস্তার নেই… যা হোক কিছু একটা হেস্তনেস্ত আজ করেই তবে ছাড়বো হ্যাঁ…হয় এসপার আর নয় তো উসপার….’
আমি বললুম-‘সে আবার কি? ও কাল্লুজী?’
‘কি আবার? তোর ওই গোল কুমড়োর মতন মাথা আর আমার এই মুন্ডু… আজ আমি তোর বিয়ে দিয়ে তবে ছাড়বো..’
‘আরেঃ …সে আবার কি কথা? আর হঠাৎ বিয়েই বা কেন কাল্লুজী?’
‘কেন যে তোর বিয়ের দরকার সেটা আবার তুই পুছ করছিস? তোর কি লজ্জা ও করে না? অ্যাঁ… একটা ১৩ কি ১৪ বছরের ধাড়ী পরের ছেলেকে সবসময় ওইভাবে সাজিয়ে গুজিয়ে আর রোজ ঝাঁ চকচকে সব দামী দামী পোষাক পরিয়ে স্কুটারে বসিয়ে নিয়ে ঘুরিস…লোকজন সব কে কি মনে করে সে খেয়াল ও তোর নেই? অ্যাঁ…. বলি তোর আক্কেল বলে কি কিছু আছে? এদিকে তো তোর বয়স ২৭ বছর কবে পেরিয়ে গেছে …তোর কি সেই কথা ও কিছু মনে আছে? বলি এরপরে কি একটা ৪৫ বছরের ধাড়ি মেয়েকে বিয়ে করে সারা জীবন বসে বসে আঙুল চুষবি না কি? তোর নিজের ছেলে মেয়ে আর হবেটা কবে তাই শুনি? আজ আর তোকে ছাড়ছি না রে পন্ডিতজী …এক মাসের মধ্যে আমি তোর বিয়ে না দিয়েছি তো আমার নাম কাল্লুরামই নয়…’
আমি বললুম--‘তা কাল্লুজী…মনে করো যেমন… বিবাহের সব জিনিষ এই দোকানেই পাইবেন… লেখা দোকানে গিয়ে… আমাকে একটা ভালো মেয়ে দেখান তো…এইকথা বললেই গলা ধাক্কা খেতে হয় তেমনই তোমার ওই শাস্ত্রিজীর বাড়িতে কি বিয়ের কনে কোন একটা কোণে ঘাপটি মেরে লুকিয়ে বসে আছে না কি? আর গিয়ে যদি চাই তখন সে চাইলেই ঘাড়ধাক্কা জুটবে নাকি?’
শুনেই তো কাল্লুজী রেগে টং …
আমাকে এক পেল্লায় ধমক দিয়ে দাঁত মুখ খিঁচিয়ে উঠে বললো-‘আরে চুপ থাক রে বুড়বাক… শাস্ত্রিজী পত্রা দেখবেন আর বলবেন যে কেন তোর কপালে বিয়ে জোটে না আর কি করলে তোর বিয়ে হবে… আরেঃ… এই তো এসে গেছি … এই অটো থাম থাম…আর কতো হয়েছে তোর ভাড়া বল…’
‘জী …তিশ রুপেয়া..’
‘এই নে..’
আমি আর থাকতে না পেরে বলে ফেললুম-‘সে কি কাকু? কাল্লু আংকেল দিলেন অটো ভাড়া? বলো ক?…ওরে বাবা রে…এ নির্ঘাৎ বাদলের সেই রূপদৃষ্টির ঠেলা…নাঃ… গতিক মনে হয় মোটেই সুবিধের নয় কাকু… সে যাক…. তারপরে কি হ’লো তাই বলো কাকু…’
‘হ’বে আর কি? ছাই হ‘লো…কাল্লুজী আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে গিয়ে একটা লম্বা হল ঘরে ঢুকলো আর আমাকে একটা নীল রঙের প্ল্যাস্টিকের চেয়ারে ঠেলে এমনভাবে বসিয়ে দিলো যেন সেটা আমার বিয়ের পিঁড়ি…’
‘ও কাকু… সে কি? শেষে তোমার কপালে জুটলো একটা প্ল্যাস্টিকের চেয়ার বিয়ের পিঁড়ির জায়গায়? যাঃ…তবে আর হয়েছে তোমার বিয়ে…হিঃ…হিঃ…হিঃ…’
‘আরে যাঃ চলে….ওটা পিঁড়ি না ছাই… বললুম তো যে ওটা শাস্ত্রিজীর ওয়েটিং রুমের চেয়ার …কাল্লুজী এগিয়ে গিয়ে সামনের একটা হলদে পর্দা ঝোলানো দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা একজন লোককে বললো—‘ক্যা হুয়া? আভি বিশ নম্বর কা বুলাওয়া আয়া কি নহী রে ভাই?’
সেই লোকটা বললো—‘জী ..উন্নিশ চল রহা হ্যায়… আপ জরা দো মিনিট বৈঠ জায়েঁ ..’
কাল্লুজী বললো—‘বৈঠনে কা সময় নহী হ্যায় রে ভাই ..তু জরা জল্দি সে বুলবা লে…’
‘উ কৈসৈ হোগা সা’ব? আপ জরা বৈঠ জাইয়ে নহী তো পন্ডিতজী নারাজ হো জায়েঙ্গে… বহুত গুস্সেল হ্যায় পন্ডিতজী…. হামি বলতে গেলে রেগে গিয়ে উনি হামার নৌকরী ভি খতম করিয়ে দিবেন…’

।২।
‘তবে আমাদের ভাগ্য ভালো বলতে হবে…’
‘পাঁচ মিনিট পরেই সেই ঘর থেকে একজন লোক মুখটা চুন আর মাথাটা নীচু করে বেরিয়ে এসে ধপ করে আমার পাশের একটা চেয়ারে বসে পড়ে নিজের মনেই বললো— ‘আঁই রে বপ্পা রে…মর গইলি রে…অব পচাশ হজার হমে কঁহা সে মিলি কি যাগ হোই…’
আর তখনি দরজার লোকটা হাঁক দিলো—‘বিশ নম্বর টোকেন…আইয়ে..’
‘আমি আর তখন কি করি? কাল্লুজীর সাথে সুড়সুড় করে সেই ঘরটায় গিয়ে ঢুকে এক বিশাল বপু পেল্লায় ভুঁড়িওয়ালা লালচে মুখের কেশবিরল গোল মুন্ডুতে এই মোটা এক টিকিধারী পন্ডিতজীর সামনে গিয়ে পড়লুম কষাইয়ের সামনে ছাগলের মতন…’
‘গোড় লাগি পন্ডিতজী…’
‘আরে কলুয়া তু? রাম রাম …আ বৈঠ যা…আউর বতা কি অব তু ক্যা ফিন বিহা করবি কা রে কলুয়া?’
‘আরে নাহি পন্ডিতজী… হামার বিবি হমে মার ডারিস কি নাহী? হম ইস পন্ডিতজী কে লিয়ে আয়ল হই …আপ জরা পত্রা তো দেখে আউর বতাঁই কি ইনকি বিহা শাদী ভি কুছ হোই কি য়ে এসে হি ই মর যাই কুঁয়ারে হি …ই লইকা সলমান খান হ্যায় ক্যা?…’
‘হাঁ দেখত হই… জরা জন্ম তিথি সময় স্থান কুল বতাবল জায়ঁ…’
‘ও কাকু? তুমি সব বললে কাকু?’
‘আমি তখন নিরুপায় হয়ে সব বললুম আর পন্ডিতজী দশ মিনিট ধরে কয়েকটা পুঁথি পত্র ঘেঁটে মুখ তুলে বললেন-‘হোই কাহে নাহি বিহা? …হোই জরুর লেকিন উ কা হও কি একঠো মুশ্কিল বা…’
‘উ কা হও পন্ডিতজী?’
‘উ এহি কি একর সাতবেঁ স্থান পর কেতু কি সিধি সাতবী দৃষ্টি পড় যাথও জরা আর এহি সে ই বিপত্তি হোত বা… বড়া পাজী দুষ্ট আউর ক্রুর গ্রহ বা রে কলুয়া ….… অব হম তোকে কা বতাই রে কলুয়া? উ হও তো রাহু কা শরীর পর ওসে ভি জেয়াদা পাজী দুষ্ট গ্রহ হও ….লেকিন তু চিন্তা মত কর রে কলুয়া… য়ঁহা পর হম কাহে বৈঠলে হই …বস একঠো যাগ করেকে কে হোই আউর একঠো তাবিজ ভি বনা দেব… ব্যস…’
‘তাবিজ সে কাম হোই পন্ডিতজী?’
‘কাহে না হোই? ফিন তো তু সমঝ লে কি ছহ মহীনে কে অন্দর মে হোই একর শাদী আউর উ ভি হোই এক গোরী চিট্টি নওজওয়ান সুন্দর মর্ডান পঢ়িলিখি লইকি সে রে কলুয়া …হাঁ… আউর ফিন দেড় সাল কে অন্দর অন্দর ইনকর একগো বচ্চা ভি হো যাই পৈদা…’
‘ফিন পন্ডিতজী….কৈসা বচ্চা হোই পন্ডিতজী?’
‘আরে লইকা হোই রে …লইকা…ইনকর পহলা বচ্চা জরুর সে লইকা হোই রে কলুয়া…ই বাত তু শুন লে … লেকিন উ বচ্চা ভি হোই লাখো মে এক … বহুত অক্লমন্দ লৌন্ডা হোই রে ইনকর …’
‘সচ বাত পন্ডিতজী?’
‘আরে কলুয়া…তোসে কা হম ঝুট বোলত হই? উ হোই ইতনা হোনহার কি তোকে তো কা… চাহে তো হমে ভি উ চকমা লগা দেই আগে চল কর… ই ভি তু শুন লে… ‘
‘উ কাহে পন্ডিতজী?’
‘উ কাহে কি ইনকর লইকা হোই বহুত গোরা… বহুত হোনহার… বহুত সুন্দর… বহুত তেজ মতলব স্মার্ট রে কলুয়া…ইনকর পাঁচবে মে বড়া তেজ মতলব উচ্চ কা শুক্কর গ্রহ বৈঠলে বা …উ সাতবেঁ কা ভি মালিক হ্যায় রে আউর পাঁচবে কা মালিক ইনকর লগন মে বৈঠল বা…. অব বেটা রহি ভি হর সময় ইনকর হি সাথ…আপন মাই কে সাথ ভি নহী…ইসি সে ইনকো আপন বেটে কো পালনা পড়ি…ফির ইনকো বহুত ঝমেলা ঝেলে কে পড়ি কি নাহি তু হি বোল? আউর ই আপন বেটে পর পৈসা তো কা চীজ হও রে কলুয়া আপন জান ভি ছিড়ক দেই …ই সমঝ লে তু কি ওকে সিরিফ সজায়ে সবাঁরে মে হি ইনকর লাখো রুপেয়া সময় সব বরবাদ হো যাই রে কলুয়া অউর ইনকর বেটা তো ইনসে ভি দো কদম আগে নিকল যাই…’
কাকুর মুখে পন্ডিতজির ভবিষৎবাণী শুনে আমি তো একেবারে চুপ…কি কান্ড বলো তো? উঃ রে বাবা…কি সব সাংঘাতিক পুত্রপ্রিয় গ্রহযোগ আছে আমার কাকুর? নাঃ…একেই বলে …কম্ম কাবার…
‘তব ফিন পন্ডিতজী? হোই কা?’
‘হোই ফিন কা রে কলুয়া …তু আউর হম কা করব? বোল? ইনকর ভাগ মে যব য়হি লিখল বা….’
‘আরে নহী পন্ডিতজী? ইনকর বিহা কা উপায় কা হোই?’
‘হোই কা? যেইসন বাপ ওইসন বেটা…উ ভি আপন বাপ কা বেটা হোই… উ যো একঠো কহাবত হও না… কি …বাপ কা বেটা আউর সিপাহী কা ঘোড়া.. কুছ ভি নহী তো থোড়া থোড়া…ওহী বাত হও রে কলুয়া …ই হম সচ কহত হই …. ‘
‘আরে ক্যা মুসীবত হ্যায় পন্ডিতজী…পহলে ইনকর শাদী তো হোয় তব না বেটা পৈদা হোই …..কি পহলে হি বেটা হো যাই পৈদা…..?’
‘আরে হাঁ…হাঁ …বেটা ভি হোই আউর শাদী ভি হো যাই জরুর…ইনকর বেটে কে খাতির হি সহী….অব তু যা আউর দশ হজার রুপেয়া অফিস মে জমা করকে ঘর জো… সাতদিন বাদ অগলে শনিচরকে দিন দশ বজে সুবহ সে পহলে আ জায়ে ইনকো লেই কে …হম তাবিজ বনা ভি দেব আউর পেহনা ভি দেব… ফিন তু দেখবা হমার কমাল…’
‘ওঃ…কাকু ..তখন তুমি সেই দশহাজার টাকা ও জমা দিলে না কি?’
‘আরেঃ… যাঃ….শুধুই কি সেই দশহাজার? টোকেনের এক হাজার আর দক্ষিণার তিন হাজার আছে না সেই সঙ্গে আর অটো ভাড়াটা ও… ডেবিট কার্ড আর নগদে সব আমাকেই গুনতে হয়েছে রে ভাই চঞ্চল আর তাই তো আমার মেজাজ বিগড়ে গিয়ে এমন বিচ্ছিরী রাগ হয়ে গেলো যে সে আর আমি কি বলবো…মাথায় যেন আগুন ধরে গেল আমার….’
‘আর তাই তুমি আমার জন্যে এমন একটা নতুন পোষাক তৈরী করে এইসব কান্ড ঘটিয়ে বসে রইলে কাকু… হিঃ…হিঃ…হিঃ….’
‘তা সে আর আমি আর কি করবো চঞ্চল? আমার যে খুব রাগ হ’লো আর বেশী রাগ হ’লে তখন আমি যে কি করি আর কি না করি সে আমি নিজেই জানি না…মঙ্গলের ফল আর কি?’
‘হিঃ…হিঃ…হিঃ…ওঃ কাকু….তুমি ও না কাকু… তুমি ঠিক যেন একটা বাচ্ছা ছেলের মতন ইমোশনাল হয়ে সব কাজ করো…যাঃ………আর এইজন্যেই তো তোমাকে আমার কাকু বলে আর এখন ডাকতে ইচ্ছেই করে না…’
‘এই মরেছে…..সে আবার কি? ও চঞ্চল?…তবে তোমার আবার কি ইচ্ছে করে?’
‘তুমি যে খালি আমাকে বারণ করো তাই….. নইলে তো কবে থেকেই আমি ঠিক করে রেখেছি যে তোমাকে আমি বাবা বলে ডাকবো কেননা কোন ছেলের বাবা ও এমনধারা সব অদ্ভূত কাজ করে না তার ছেলের জন্যে তা সে যতোই রাগ হোক ……..হিঃ….হিঃ…হিঃ…’
‘আরে না না…ওরে বাবা রে গেছি রে …মরেছি রে…মোটেই না… থাক থাক…একে বলে শুধু এই কাকু ডাকেতেই আমার এই অবস্থা হয়েছে আবার বলে কিনা বাবা বলে ডাকবে? তাহ’লে তখন আর আমাকে দেখতে হ’বে না… ওঃ….তবে আমার মতন কাকু হ’লে আর তোমার মতন তার একটা ছেলে ও থাকলে তখন সে হয়তো তার জন্যে সব কিছুই করতে পারবে…’
‘কচু পারবে….তবে শাস্ত্রিজী হয়তো ঠিকই বলেছে কাকু যে তোমার প্রথম সন্তান ছেলে হ’তে ও পারে আর সেই ছেলেটা অনন্যসাধারণ ও হতেই পারে আর তুমি তাকে নিয়ে মেতে থাকতে ও পারো কাকু কেননা প্রথম সন্তান ছেলে হ’লে সে তার বাবার আর প্রথম সন্তান মেয়ে হ’লে সে তার মায়ের এমনিতেই খুব প্রিয় হয়ে থাকে বলে আমি শুনেছি কাকু আর আমার বন্ধু কিশলয়ের মতন যদি একমাত্র ছেলে হয় তখন তো আর কোন কথাই নেই কাকু…. আর তার ওপরে আবার তোমার সেই সন্তান যদি একটা রূপকুমার পরী ছেলে হয়….তখন কি হয় কাকু? হিঃ…হিঃ…হিঃ….হিঃ….’
‘ওরে বাবা রে..’
‘আমি তো জানি কাকু যে এটাকে গ্রহের ক্ষেত্র বিনিময়ে তৈরী-পুত্রপ্রিয় যোগ বলে …রাজা দশরথের কিন্তু এই যোগ ছিলো তবে তার ফল ভালো হয় নি আর ছিলো নন্দরাজার ও এই যোগ…. পন্ডিতজীর মতে তোমার ও আছে কাকু তবে একটা শর্ত ও আছে তা জানো কাকু?’
‘কি শর্ত চঞ্চল?’
‘সেই ছেলেটা কিন্তু তোমার নিজেরই সন্তান হওয়া চাই কাকু…. নন্দরাজার মতন অন্যের ছেলেকে নিয়ে তুমি তাকে শুধু মানুষ করলে সে কিন্তু চলবেই না …তখন সে ঠিক শ্রী কৃষ্ণের মতন চলে যাবেই তোমাকে ছেড়ে…শ্রীরামের মতন আর ফিরে ও আসবে না… হিঃ…হিঃ…হিঃ…হিঃ….’
‘ওঃ রে বাবারে …তবে এখন আমি কি করবো ও চঞ্চল আগে তুমি আমাকে তাই বলো …’
‘আমি এখন আর কি বলবো কাকু এই বিষয়ে? বরং তুমি এখন একটা ফটো সেশন আর ভিডিওগ্রাফী শুরু করতে পারো তোমার অতি আদরের এই পরী রাজপুত্রের সঙ্গে তবে শনিবার কিন্তু আমি ও তোমার সঙ্গে একবার যাবো সেই পন্ডিতজির দর্শনে কাকু …’
শুনেই কাকু বিড় বিড় করে বললো-‘ওওওরে বাবা…বলে কি? ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে যাবো নিজের বিয়ের জন্যে তাবিজ পরতে… উঃ… উঃ… কি সব ভয়ানক আর সাংঘাতিক কথা রে বাবা… শুনেই যে আমার মাথা ঘুরছে বন বন করে লাট্টুর মতন…নাঃ থাক …আমি না হয় যাই আর ক্যামেরাটাই নিয়ে আসি বরং…ওরে বাবা রে…কি সব যে কান্ড আজ হচ্ছে না …উঃ..’
কাকুর কথা শুনে আমি আমার স্পেশাল জলতরঙ্গ সুরে খিল খিল করে হেসে ফেললুম এইবার… আর কাকু ও আমাকে হঠাৎ দু’হাতে নিজের বুকে জড়িয়ে ধরে নিয়ে চুপটি করে বসে রইলো পুরো দশ মিনিট সময় ক্যামেরা আনবার আগে তবে আমার মুখের সব সাজ নষ্ট হয়ে যাবে এই ভয়ে তখন আর একটু ও আদর করতেই পারলো না আমাকে আর তাই দেখে আমার তো বেশ মজা লাগছিলো …
বেশ খানিকক্ষণ পরে কাকু আমাকে ছেড়ে দিলো আর দামী জাপানী ক্যামেরাটা আনতে গেলো….
আমি রাজপুত্র সেজে বসে রইলুম তবে মনে মনে বেশ রাগ করে বললুম… ‘হুঁ…বুঝেছি সব…আমি ও দেখাচ্ছি মজা ওই পন্ডিতজিকে… আমার কাকুকে জব্দ করবার ধান্ধা করা বার করছি আমি…. সরল ছেলে আমার কাকুকে ঠকিয়ে টাকা নেওয়া? বলে কিনা কেতুর দৃষ্টি ….বটে?…আমি এমন শায়েস্তা করবো না যে এই জোচ্চোর পন্ডিতের সব শয়তানী বেরিয়ে যাবে ঠিক……
কাকু তো আর আমাকে শুধু আদরই করে সাজায় আর হাস্য ও লাস্যই শেখায় তা তো নয়…. এই বয়সেই আমাকে ফলিত জ্যোতিষ …হোমিও প্যাথী চিকিৎসা ….সাইকোলজিকাল আই কিউ টেস্টিং, ফিলসফিক্যাল রিজনিং আর লজিক্যাল ডিডাকশান অনেক কিছুই বেশ করে শিখিয়ে রেখেছে প্রতি বছরের গরমের ছুটিতে বসে …আমার সঙ্গে চালাকী করলে তার খবর আছে…হ্যাঁ না তো…তবে আজই কাকুকে কিছুটি বলা যে যাবে না তা ঠিক…
তা সে যাক…এখন একবার আমার আজকের এই বেনারসীর বয়ড্রেসের ফটো সেশানটা তো হয়ে যাক আগে তার পরে আমিই না হয় কাকুকে ধরে বেশ করে আদর করে কাকুর মন ভালো করে দেবো … কাকুর পরী ছেলের আদর বলে কথা… মন ভালো হতে বাধ্য কাকুর… হিঃ… .হিঃ… হিঃ…
তবে তার আগে আমার মহার্ঘ্য এই ড্রেস আর নৌলখা হার আর অলঙ্কারগুলো সব আমাকে খুলে ফেলে তুলে রেখে দিয়ে আসতে হ’বে তা ঠিক….নইলে পান্জাবির ক্রীজ নষ্ট হয়ে যাবে আর কাচলে তখন তো আবার শুধু সফ্ট আয়রণ করলেই তো হবে না… হাজার টাকা খরচ করে পালিশ ও করাতেই হবে কেননা এই দামী বেনারসী কাপড়ের তাই নিয়ম শুনেছি যে…’.
সে যাক…
এখন আমি পরীদের নাচের মুদ্রায় কয়েকটা লাস্যময় পোজ তো দিই কাকুকে…

।৩।
শনিবারে আমার স্কুলের অফ ডে থাকে।
তাই সে’দিন কাকু আমাকে ড্রেস করাতে বসে একটা অতি সাধারণ কটন ড্রেস এনে পরিয়ে দিলো …আর সাবধানে আমার ডান হাতে বিদেশী সুরক্ষা গার্ড বালাটা পরিয়ে দিয়ে বোতাম টিপে সক্রিয় করে দিয়ে সেটা আমার দুধেরবরণ নরম মসৃণ চকচকে হাতের ওপরে তিন ইঞ্চি তুলে দিয়ে আমার ফুলস্লিভ বেগুনী রঙের জামার হাতার কাফলিঙ্কটা এঁটে দিলো…
তারপরে কাকু আমাকে একটা সাদা মাখন জিন্সের ফুলপ্যান্ট এনে পরিয়ে জামাটা ভেতরে গুঁজে কালো চামড়ার বেল্টটা আটকে দিলো আর আমার মুখে একটা বিদেশী হিউম্যানয়েড ফেসকভার যথারীতি পরিয়ে আমাকে সেই ঝলমলে পরী ছেলের বদলে একটা সাধারণ ফর্সা ছেলে বানিয়ে ফেললো চট করে..
কাকু আমাকে তারপরে তখন মোজা জুতো টুপি সব পরিয়ে হাতধরে সঙ্গে করে নিয়ে অটোয় উঠে কাল্লু আংকেলের সাথে গিয়ে শর্মাজীর চেম্বারে হাজির হ’লো…
আমি স্কুলের প্রিন্সিপাল স্যারের মতন বেশ গম্ভীর হয়ে বসে রইলুম আর ডাক পড়তে তখন উঠে কাকুর সাথে ভেতরে চলে গেলুম…
সেই ঘরের ভেতরে গিয়ে কাকু আগে আমাকে নিজের ডান পাশে সরিয়ে নিয়ে এলো আর আমার নরম চকচকে বাঁ হাতটা শক্ত করে ধরে রইলো যাতে কাল্লু আংকেল বা অন্য কেউ কাকুর বাঁ পাশ থেকে আমাকে ছুঁতে বা ধরতে না পারে…
সে কাকু ঠিকই করলো কেননা নইলেই তো কেউ আমার হাত একবার চেপে ধরলেই তো চিত্তির.. সে আমার হাতে পরিয়ে দিয়ে সক্রিয় করে রাখা সুরক্ষা গার্ড স্টিলের চকচকে রাশিয়ায় তৈরী বালাটার খাবে এক মোক্ষম ইলেক্ট্রিক শক… তবে কাকুর টাচ ও স্কিন বায়ো ইনফর্মেশন সব লোড করা আছে বালাটার চিপসের মেমোরিতে তো… তাই আমার কাকুকে অ্যাক্টিভ বালাটা ও কিছুটি বলে না…সে কাকু আমার হাতই ধরে থাক বা আমাকে ধরে একটানে কোলেই তুলে নিক……
‘আরে কলুয়া যে রে …’
‘গোড় লাগে পন্ডিতজী…’
‘আরে কলুয়া আ...যা…রাম রাম ভাই…’
‘পন্ডিতজী আপ আজ হমে বুলায়ে থে ..’
‘হাঁ…আউর হামার তাবিজ ভি তৈয়ার আছে…লে যা…ই লে …’
‘দাঁড়ান এক মিনিট আংকেল…’ এইবার আমি দৃঢ়স্বরে বললুম …
পন্ডিতজী চমকে উঠে বললেন-‘কেঁও বেটা?’
‘আপনি পত্রাটা একবার আবার ভালো করে এখন দেখে নিন পন্ডিতজী …’
‘উ কাহে বেটা?’
‘হয়তো ভূলটা ধরতে পারবেন আপনি তাই আবার দেখতে বলছিলাম আর কি…’
‘ক্যা? ভূল? মানে গলতী ? পন্ডিত শাস্ত্রির গলতী? কভি নেহী…’
‘আঃ…হতে ও তো পারে আংকেল..’
‘অসম্ভব…’
‘তা বেশ… তবে আপনি বলুন যে রাহু বা কেতুর অন্য সব দৃষ্টির কথা এখন যদি ছেড়ে ও দেওয়া হয় আর আমার কাকুর সপ্তমে যদি কেতুর সোজা মানে সপ্তম দৃষ্টি থাকে তবে কাকুর জন্ম চার্টেতে কেতু কোথায় বসে আছে?’
‘কেঁও? লগন মে…’
‘ঠিক…আর রাহু? সে কোথায় আছে?’
‘সপ্তম মে…’
‘শ্রীকৃষ্ণের ও তো সপ্তমে রাহু ছিলো আর সেইখানে কেতুর দৃষ্টি ও ছিলো…তা আপনি জানেন তো?’
‘অ্যাঁ…’
‘অ্যাঁ নয় হ্যাঁ…আর তাই তাঁর ১০১০৮জন রাজকুমারী মেয়েদের সাথে যে শুধু বিয়েই হয়েছিলো তাই নয় সেই প্রত্যেকটি বৌয়ের দশটি করে ছেলে আর ১ টি করে মেয়ে ও হয়েছিলো …গুগলে সার্চ করলেই আপনি জানতে পারবেন যে আমি ঠিক কথা বলছি কি না….আর তা হ’লে এখন আপনি বলুন যে শ্রীকৃষ্ণের সবশুদ্ধ কয়টি ছেলে মেয়ে হয়েছিলো? বলুন তো দেখি পন্ডিতজী?’
পন্ডিতজী বললেন-‘ক্যা গজব বাত …আরে বেটা হামার তো সব গণনা ভি গুলিয়ে যাচ্ছে …’’
‘তা কেন যাবে পন্ডিতজী? এ তো খুব সোজা হিসেব…. ১১x১০১০৮ মানে সহজ ভাবে হ’লো ১০১০৮০+১০১০৮ = ১১১১৮৮ মানে এক লক্ষ এগারো হাজার একশো অষ্টআশী জন নিজের ছেলে মেয়ে হয়েছিলো তাঁর আর যা পরে বেড়ে দাঁড়ায় ৫৬ কোটি যদু বা যাদব বংশে…’
‘ওরে বাপরে…’
‘এখনি বাপরে বলছেন কেন পন্ডিতজী? আরো যে বাকী আছে…’
‘আউর ভি আছে? তার মানে বেটা?’
‘মানে আর কি পন্ডিত আংকেলজী? আপনি বলেছেন যে সেই যোগে আমার কাকুর কি না একটা ও বিয়ে হবে না যদি আপনার ওই তাবিজ ধারণ না করে কাকু? সেটা কি সম্ভব?’
পন্ডিতজী চুপ…চোখমুখ সব রাগে লাল আর কাল্লুজী আংকেল তখন সন্ত্রস্ত হয়ে উঠে দাঁড়িয়েছেন অবস্থা দেখে…
আমি ভ্রুক্ষেপ ও না করে আবার বললুম—‘আগে আপনি আমাকে দয়া করে বলুন যে এই কেতু কি রাহুর ধড় না অন্য কিছু মানে অন্য কোন গ্রহ?’
‘অন্য কিছুই না রে বেটা…শ্রীহরি বিষ্ণুকে যব রাহু ঠকিয়ে অমৃত পান করিয়ে ফেললো তব তিনি সুদর্শন চক্র চালিয়ে দিলেন আর সে বেটা ভি দু’খন্ড হ’য়ে দুই বিপরীত দিকে ছিটকে চলে গেলো….মুন্ড পুরব মে গেলো তো ধড় চলিয়ে গেলো পশ্চিম মে আর তাই অভি ভি এই দুই গ্রহ ১৮০ ডিগ্রী দূরে পড়িয়ে আছে এক দুসরে সে লেকিন উ তো অমৃত পিয়ে নিয়ে ছিলো কি না…তাই বলে আর তো মরলো না বেটা…’
‘হুঁ…সে সব তো ঠিক আছে পন্ডিতজী আংকেল… তো আসল কথা হ’লো যে রাহু হচ্ছে শুধু মূন্ডু তার শরীর মানে ধড় নেই আর কেতু হচ্ছে শুধুই একটা ধড় তার কোন মুন্ডই নেই …এই তো?’
‘হাঁ…ঠিক বাত …জরুর বেটা…’
‘বেশ…তবে আপনি এখন এইটুকু শুধু আমাকে বুঝিয়ে দিন যে যার কোন মাথা বা মুন্ডুই নেই তার তো চোখ ও নেই… কি ঠিক তো?’
‘হাঁ… হাঁ বেটা..’
‘তবে আপনিই বলুন যে যখন কেতুর কোন চোখই নেই তখন তার আবার দৃষ্টি হয় কি করে? বলুন…’
‘অ্যাঁ….?’
‘অ্যাঁ আবার কি পন্ডিতজী আংকেল?…. আমার কাকুর কোন মাদুলি মানে তাবিজের দরকার নেই …ওটা আপনিই রেখে দিন পন্ডিতজী আংকেল আর আমার কাকুর ১৪ হাজার টাকা আপনি ফিরিয়ে দিন দয়া করে…’
‘আরে ও ববুয়া… হম মর যাইবি রে ববুয়া কাহে কি উ পয়সা তো সব তাবিজ বনানে মে যাগ পূজা মে খরচা হইয়ে গেলো …উ হামি কি করে লৌটাইবে?’
‘তা বেশ …তবে শুনুন…আমার বাপী কিন্তু একজন বড়ো পুলিশ অফিসার আর এখন তাই আমি সব কথা বাপী আর প্রেসকে আর টিভি চ্যানেলগুলোকে জানিয়ে দিই গিয়ে …’
আমার এইকথা শোনামাত্র যেন রাগে জ্বলে উঠলেন পন্ডিতজী আংকেল…
‘তবে রে বদমাস লৌন্ডা …হামাকে পুলিশ দেখানো হচ্ছে? হামাকে জোচ্চোর সাবিত কোরবার চেষ্টা? হামার বেওসা নষ্ট করে দেবার ধান্ধা করা হচ্ছে? হামি পাগল আছি? হামিতে লোক ঠকায়? আজ হামি তোকে ধরে তোর গলা টিপিয়ে একদম সে মেরে ফেলবে আভি…’
এই কথা শুনেই কাকু লাফিয়ে উঠলো ---
‘আরে …আরে পন্ডিতজী…আপনি দয়া করে একটু শান্ত হোন …. আপনি এ কি করছেন? না না না…. দূরে থাকুন…প্লীজ …একটু দূরে…’
পন্ডিতজী তখন দারুণ রাগে অন্ধ হয়ে চোখ মুখ সব লাল করে লাফিয়ে এসে দু’হাতে আচমকা আমার গলা টিপে ধরেছেন আর সঙ্গে সঙ্গে তিনি এক বিকট স্বরে… আহ… আঁ… আঁ… আঁ… আঁ… আঁই… করে এক চিৎকার দিয়ে তিনি দমাস করে সশব্দে মেঝেতে আছড়ে পড়েছেন…
আমি গলায় হাত বুলোতে বুলোতে রাগ করে বললুম-‘এইখান থেকে তুমি এখনি চলো কাকু… যত্তো সব জোচ্চোরের দল…’
‘তাই চলো…চলেই না হয় যাই চঞ্চল… ওরে বাবা রে…এ’সব আবার কি কান্ড? উঃ…উঃ…’
আমি আবার রাগতভাবে বললুম--‘আর হ্যাঁ কাল্লুজী আংকেল…. ওই টাকাটা পন্ডিতজী আংকলের জ্ঞান ফিরলে আপনি চেয়ে নিয়ে আমার কাকুকে ফিরিয়ে দেবেন কিন্তু ঠিক মনে করে … হয়তো একটু শিক্ষা এইবার ওনার হয়েছে মনে হয় আর সে না হ’লেই বা কি?’
‘হ্যাঁ…তা.. মানে….’
‘কোন মানে টানে আমি জানি না আংকেল আর জানতে চাই ও না। আপনি ওনাকে একটু দয়া করে বলে দেবেন যে কাকুর টাকা ফেরৎ না দিলে কিন্তু আমি আবার আসবো ওনার কাছে আর সেদিন কিন্তু উনি আর শুধু অজ্ঞান হ’য়ে পার পাবেন না…… কেননা তখন আমার সঙ্গে থাকবে প্রেস আর টেলিমিডিয়ার রিপোর্টার ক্যামেরাম্যানদের সাথে রেকর্ডিংয়ের লোকজন…লিভ টেলি কাস্টিং ও শুরু করবে তারা তখন আর….’
‘আবার আর কি ববুয়া?’
‘আর আমার বাপির অর্ডারে সেই সাথে আমার সাথে থাকবে সি আই ডি ইন্সপেক্টর আর বিশ জন বন্দুকধারী পুলিশ সার্জেন্ট……মনে করে বলে দেবেন কিন্তু আংকেল। এক সপ্তাহ সময় আমি দিয়ে যাচ্ছি ওনাকে। ব্যস…..চলে এসো কাকু…’

০৯৪৫২০০৩২৯০
bhattacharyagc@rediffmail.com
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
সারোয়ার শোভন ভালো লাগল। ভোট রেখে গেলাম। আমার কবিতা পড়ার আমন্ত্রণ রইলো।
ফয়জুল মহী দারুণ অনুভূতির নান্দনিক প্রকাশ

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

স্নেহের উষ্ণতার পরিচয় আছে গল্পটিতে

১২ ফেব্রুয়ারী - ২০২১ গল্প/কবিতা: ৫ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪