অসুবিধা

একটি কালো রাত (মার্চ ২০২১)

gcbhattacharya
  • 0
  • ৫৯
গৌরবের পরিচয় মনে হয় আমাকে এখন আর নতুন করে দিতে হবে না…তবে ছেলেটা ছোট হলে কি হয় সে একটু বেশ অন্য ধরণের।
সে’দিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই দেখি যে আকাশের বেশ মুখ ভার মানে মেঘে ঢাকা… আমার আবার এই বর্ষাকালটা মোটেই পছন্দ হয় না কিন্তু উপায় কি? আমার অফিস আছে গৌরবের ও স্কুল আছে…যেতে তো হবেই তাই অসুবিধা যতোই হোক কোন উপায় তো নেই…অগত্যা উঠি… আর যাই… আগে ঘরদোর সব পরিষ্কার করে ফেলি তারপর ব্রাশ করে নিজের স্নান টান সেরে কিচেনে গিয়ে ব্রেকফাস্ট রেডী করে নিয়ে গৌরবকে ছটা বাজলে তখন ডেকে তুললেই হবে ঘুম থেকে…
গৌরব অবশ্য চট করে উঠে পড়ে…অন্য সব ছেলেদের মতন কোন ঝামেলা করে না… যেন কারো কড়া নিষেধ আছে তার ওপরে…কোন বায়না ও করে না…এমন কি কষ্ট বা শরীর খারাপ হলে একবার আমাকে বলে ও না…কখনো কোন কারণে মনে বেশী কষ্ট হলে তখন চুপচাপ নীরবে কাঁদে আর তাও আমাকে লুকিয়ে নিজের ঘরে গিয়ে তবে আমি সে ঠিকই টের পেয়ে যাই সব…. ছেলের শুধু মুখটা দেখলেই…
তাই অনেক চেষ্টা তো করি আমি সব সময় ছেলেটাকে সাজিয়ে আর বেশ হাসিখুশী করে রাখতে…এই যেমন কালকের কথা…অফিসে যাবার সময় আমি হেলমেটটা নিতে ভুলে গেছিলাম…আর অমনিই খালি মাথায় দরজা বন্ধ করে দিয়ে স্কুটার বের করে এনে স্টার্ট দিচ্ছিলাম আমি…..
গৌরব বললো-‘বাপী, বেশী করে টাকা নিয়েছো তো সঙ্গে ?’
ছেলের এই কথায় আমি চমকে উঠে বললাম-‘তার মানে? যাচ্ছি তো অফিসে…বেড়াতে তো আর নয় আর আজ তো তোমার স্কুলের ফীস ও জমা দেবার দিন নয়…তবে?’
এই বলেই আমি লাফিয়ে উঠে ছুট দিলাম…আবার দরজা খুলে ঘরে ঢুকে হেলমেটটি নিতে হলো কেননা নইলেই তো রাস্তায় আমাকে গুঁফো ট্র্যাফিক পুলিশে আটকাবে ও জরিমানা করবে আর তখন তো টাকা দিতেই হবে আমাকে…ওঃ…এইরকম সব ছেলে যার থাকে তার দফা গয়া হতে কি আর দেরী হয় না কি?
তবে তখন আমি ও আবার বেরিয়ে চলে আসবার আগে ঘরে সকালে বাগান থেকে তুলে রাখা সাদা সুগন্ধী বেলফুলগুলোকে মুঠো মুঠো করে প্লেটভাস থেকে তুলে দরজা থেকে বাথরুম অবধি ছড়িয়ে রেখে দিয়ে চুপচাপ করে বেরিয়ে এসে স্কুটার স্টার্ট করলাম…
বিকেলে যখন আমি অফিস সেরে গৌরবকে স্কুল থেকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ী এলাম তখন ঘরের দরজা খুলে আগে নিজে এয়ার ইন্ডিয়ার লোগো মহারাজার মতন ঝুঁকে গৌরবকে বললাম-‘দয়া করে আসতে আজ্ঞা হোক…আপনার চলবার পথে দেখুন এই ফুলেরা সবাই আপনা আপনিই কেমন সুন্দর ভাবে বিছিয়ে আছে আর বলছে…স্বাগতম…সুস্বাগতম..’
ভেবেছিলাম ছেলেটা মজা পেয়ে জলতরঙ্গস্বরে খিলখিল করে হাসবে… কিন্তু হলো ঠিক উল্টো…গৌরব ঘাড় হেঁট করে মুখটাকে নীচু করে বললো-‘বুঝেছি বাপী …এইসব তোমার কীর্তি আর এই খেলাটা তোমরা দু’জনে মিলে মজা করে খেলতে..’
‘ওরে বাবা…কি গেরো,,আমি আবার কখন কার সাথে কি খেলা করলাম?’
‘আরেঃ… তোমরা মানে অন্য কেউ নয়…তুমি আর মা…মা তো খুব ফুল ভালোবাসতো আর তাই তোমরা রোজ একে অন্যের চলবার পথে এমনি করে ফুল ছড়িয়ে দিতে আর এখন সেটা ছেলের সাথে করা হচ্ছে…আমার সকালের কথার জবাব হিসেবে…কিন্তু বাপী…লোকে যে এইসব কিছুই বোঝে না আর তাই তারা অন্যের চলবার পথে বড়ো বড়ো সব কাঁটা এনে বিছিয়ে দেয়…ফুল নয়…তোমার ও কপালে তো তাই হয় বাপী আর সে হবে ও খুব তাড়াতাড়িই আবার…’
কি আর বলি আমি তখন? তবে গৌরব যখন একবার বলেছে তখন তার কথা তো মিথ্যে হয় না সুতরাং আমি যতোই ফুল ছড়াই না কেন আমার পায়ে কাঁটা বিঁধবেই…’
সে যাক…আমার রোজকার সব কাজ সেরে নিয়ে আমি তখন ছেলেকে তুলে ব্রাশ করিয়ে তারপরে তেল মাখিয়ে বেশ করে স্নানটান করিয়ে এনে দামী ময়েচ্শরাইজার ক্রীম পাউডার দিয়ে প্রসাধন করে জলখাবার খেতে বসিয়ে দিই আর আমার একটা কাজ হয়ে যায়।…
সবে নয় পেরিয়ে দশ বছরে পা দিয়েই ছেলেটা তো এখন দেখি অনেক কিছুই শিখে গেছে নিজে থেকেই… যেমন সে আমার থেকেও খুব ভালো চা ও কফি তৈরী করতে পারে যদি ও আমি তাকে প্রোটিনেক্স ছাড়া চা বা কফি কিছুই খেতে দিই না ছেলেটার সুগৌর সোনার বরণ উজ্জ্বল ত্বকের রঙ কালো মানে বাদামী হয়ে যাবার ভয়ে আর তাই তাকে রোজ সরষের তেল ও না মাখিয়ে আমি দামী বিদেশী সুপার ফাইন অলিভ তেল মাখাই…
সে একটু ও না ফেলে বা পুড়িয়ে দুধ জ্বাল দিতে পারে বেশ ঘন করে… অরেঞ্জ জুসের কনসানট্রেট থেকে গ্লাশে চিনি বা দুধ নিয়ে মিশিয়ে জুসড্রিংক…মিল্ককর্ণফ্লেক্স ও ওমলেট আর পপ অপ টোস্টার মেশিনে বাটার টোস্ট ও তৈরী করতে পারে…এমনকি পাটালী দিয়ে সুস্বাদু পায়েস আর ভুনিখিচুড়ী ও ভালোই তৈরী করে ছেলে আর সেই সাথে প্লেটওয়াশিং করতে মানে বাসন মাজতে ও পারে…লাইজল দিয়ে কিচেন ও ফ্লোরক্লিনিং করতে জানে এমনকি নিজে নিজেই ব্রাশ করে এসে সাবান মেখে স্নান করতে চুল আঁচড়াতে ও ড্রেস পরতে সবই সে এখন পারে তবে আমিই ছেলেকে এখন ও কিছুই করতে দিই না নিজে নিজে এই ভয়ে যে সে কখন কি করে বসবে…
চার ক্লাশে পড়া একটা ছেলের জন্যে এই সব ভয় আর কেউ করে না তা ঠিক কেননা ছেলেকে তো সব কাজ শিখিয়ে স্বাবলম্বী করে তুলতে হবে তাই কিন্তু আমার যে বড়ো ভয় করে কখন কি অঘটন ঘটিয়ে বসবে তখন কি হবে? আমার যে এই একটাই ছেলে আর সে ছেলেটা তার মায়ের মতন এতো বেশী সুন্দর মানে রূপবান ছেলে হয়ে জন্মেছে যে বলবার নয় আর আমি সত্যিই একলা হাতে ছেলেকে সেই ছোটবেলা থেকে মানুষ করতে গিয়ে নানা অঘটনে পড়ে বড়ো ভীতু হয়ে গেছি মনে হয় আর কি… ওর মা থাকলে আমার কিসের ভাবনা? ছেলেটার হঠাৎ কিছু হয়ে গেলে আমি তো গেছি তাই…
গৌরবকে গিয়ে ডাকলুম.. ছেলে চোখ খুলে দেখলো আর আবার বড়ো বড়ো চোখদুটো বন্ধ করে নিলো… উঠলো না .. আমি তখন ছেলের গায়ে হাত দিয়ে ডাকতে গেলাম আর তখন বেশ চমকে উঠলাম…সর্বনাশ… গৌরবের গা যে বেশ গরম… এখন উপায়? জ্বর হয়েছে রাতে আর আমাকে বলে ও নি…. দূর ছাই…আজ থেকে দেখছি এই ছেলেটাকে সঙ্গে নিয়ে আমার বিছানাতেই শুয়ে পড়তে হবে আর তখন ছেলের ঘুম না হলে না হবে…হ্যাঁ না তো…
আমি তাড়াতাড়ি হোমিওপ্যাথি ওষুধের বাক্স আনতে গেলাম…এখন তো ওষুধ চাই…বর্ষাকালের না নিকুচি কিয়া হ্যায়…থার্মোমিটার ও খুঁজতে হবে আর খানিকপরে ও যদি ছেলের জ্বর না ছেড়ে আরো বাড়ে তখন তো ডাক্তারকে কল দিতেই হবে…মহা মুস্কিল…অফিসে যাবো কি করে? উঃ… বিপদের ওপরে বিপদ…ঝমঝম করে বৃষ্টি পড়া শুরু হলো তখন আবার…নাঃ জ্বালালে দেখছি…একেই গৌরব ছোট বেলায় বলতো…’জ্বালিয়ে মাললে…পুলিয়ে খেলে… ওলে বাবা…কি আপদ…’
গৌরবকে আমি পারতপক্ষে বেশী কড়া এলোপ্যাথিক সব ওষুধ দিতেই চাই না সাইড এফেক্টের ভয়ে…ছেলের নাড়ির গতি পরীক্ষা করে একটা ওষুধ চট করে খাইয়ে দিয়ে তার নাড়ির গতি পরিবর্তনের আশায় গরম হাতটা ধরে বসেই রইলাম…আধঘন্টা পরে মনে হলো হঠাৎ যেন নাড়ির গতির বেগ একটু কম হয়েছে…তখন আমি ছেলেটার কপালে হাত দিয়ে দেখতে গিয়েই ভয় পেয়ে একেবারে চমকে লাফিয়ে উঠলাম…এ এ একি? গৌরবের কপালটা যে বরফের মতন ঠান্ডা…ভয়ে আমার কনকন করে ওঠা হাতটা সরিয়ে নিলাম আমি…এটা আবার কি রহস্য রে বাবা?
অবশ্য কাল বিকেলে ছেলেকে স্কুল থেকে এনে গৌরব গরম লাগছে বলায় তখন শুধু তার হাতমুখ ধুইয়ে না দিয়ে স্কুলড্রেস খুলে অটোমেটিক এলজির ওয়াশিং মেশিনে ফেলে দিয়ে ভালো করে গরম জলে স্নান করিয়ে দিয়েছিলাম আমি আর ছেলেকে হাত ধরে ঘরে নিয়ে এসে দামী বডি ময়েশ্চরাইজার ও ফ্রেসনার সব লাগিয়ে দিয়েছিলাম আর তার বড়ো বড়ো চোখে হাল্কা করে দামী বিদেশী সুরমা পরিয়ে দিয়ে একটা নরম প্ল্যাস্টিক দিয়ে আমার তৈরী বিশেষ স্টেনসিল দিয়ে গালে ও কপালে নিতবরের মতন করে চন্দন পরিয়ে সাজিয়ে দিয়ে গলায় একটা তিন ভরি সোনার লকেটযুক্ত হার আর কপাল ঘিরে মাথায় সোনার একটা ছোট ছোট ঝালরযুক্ত মেখলা ও পরিয়ে দিয়েছিলাম…তারপরে সেই অপরূপ সাজে সুসজ্জিত ঝকঝকে ছেলেকে দামী রেশমী পোষাক একটা পরিয়ে রেখেছিলাম তবে সেই পোষাকটা খুবই পাতলা বলে ঠান্ডা লাগবার ভয় ছিলো তাই তাড়াতাড়ি করে ছেলেকে তখন মোটা অন্তর্বাস মানে নরম তোয়ালের মতন দামী বিদেশী কাপড়ের ঘাম শুষে নেবার জন্যে তৈরী সবুজ রঙের স্পোর্টস জাঙিয়া আর নীল গেঞ্জীও পরিয়ে দিয়েছিলাম তাই সেই ঝলমলে রেশমের পোষাকে ঠান্ডা লাগবার তো কথা নয়… আর কপালটা ঠান্ডা হলেও ছেলের নরম মসৃণ ডানহাতটা তো এখনো আমি ধরেই বসে আছি…কই গৌরবের এই হাতটা তো অতো ঠান্ডা হয়ে যায় নি…
একটু পরে সাহস করে ডান হাতের তর্জনী দিয়ে চিকচিক করতে থাকা সোনার ঝালরটা একটু সরিয়ে দিয়ে আবার হাত দিলাম গৌরবের কপালে আর আবার চমক লাগলো জোর… কই কপাল তো ঠান্ডা নয়…বেশ স্বাভাবিক গরম…তবে? একটু যেন ভিজে মতন ও লাগলো…তবে কি ঘাম হয়েছে? মানে জ্বর ছেড়ে যাচ্ছে? দিই তবে আর এক ডোজ ওষুধ খাইয়ে…যা হয় হবে..
এই ছেলের জন্যেই আমাকে এক গাদা হোমিও প্যাথির বই সব পড়তে হয়েছে …সব ওর মায়ের জন্যে…সে মেটিরিয়া মেডিকা থেকে শুরু করে প্র্যাক্টিশনার্স গাইড আর হোমিও মেডিসিন অন পিকচার …হোম ডক্টর অনেক কিছুই…কি আর করা?…ওর মায়ের ছিল এলোপ্যাথির সাথে আড়ি…ওই সব বাজে ওষুধে না কি তার কচি ছেলের রূপ সৌন্দর্য্যের সাথে ক্ষুরধার বুদ্ধি ও কমে যাবে এই ভয়…সে আর আমি কি করবো?
বসেই আছি…ছেলের হাতটা ধরে…..
আধঘন্টা পরে গৌরব ধীরে ধীরে চোখ খুলে একটু ক্ষীণ হাসলো আর মৃদু স্বরে বললো-‘বাপী, তুমি কি ভয় পেয়েছো? নাঃ.. তুমি তো আমাকে ওষুধ ঠিকই দিয়েছো…তবে ভয় পেলে কেন?’
‘তোমার কপালটা তখন দেখলাম যে একেবারে বরফের মতন ঠান্ডা তাই…’
‘ও সব কিছু নয় বাপী…তুমি যখন থার্মোমিটার আর ওষুধের বাক্স খুঁজছিলে আর আমার মুখে সেই জ্বরকাঠি এনে দিচ্ছিলে…তখন আমার কপালটা একটু টিপে দিচ্ছিলো তো তাই…তা এখন তুমি ওঠো আর আমাকে দুধ সাবু করে এনে দাও…আজ আমার জন্যে যে এই পথ্যই বরাদ্দ করে দিয়েছে তার আর উপায় কি বলো? খেতেই হবে আমাকে আর অফিসে ও তো যেতে হবে তোমাকে…তাই…’
‘গৌরব…কে? কে তোমার কপাল টিপে দিচ্ছিলো আর তুমি তো চোখ বন্ধ করেই শুয়ে ছিলে… আমি যে কি করছি তা তুমি জানলেই বা কি করে?’
‘মাআআআআ…বলেই ছেলে এতো বড়ো করে জিভ কেটে মুখে হাত চাপা দিলো…
আমি ছেলেটার মুখে এই সব বাজে কথা তো প্রায়ই শুনি তবে আজ এই প্রথম এক অদ্ভূত নিদর্শন পেয়ে থমকে গেলাম…এ কি সত্যিই আমার ওষুধের গুণ না কেউ এসে জ্বরটা হাত দিয়ে টেনে নিলো ছেলের? এ তো বড়োই আশ্চর্য্য বাপার…
তবে মুখে বললাম-‘আজ আমি অফিসে কি করে যাবো? একে তো ঝমঝম করে বৃষ্টি পড়ছে তার ওপরে একলা ঘরে অসুস্থ ছেলে…কে দেখবে বলো তো? আমি এখনই ছুটি চাইছি ফোন করে’
‘তা বেশ তো বাপী.. দেখো যদি ছুটি পাও… আমার তো ভালোই হবে কিন্তু…’
‘তা এই কিন্তুটা আবার কিসের জন্যে গৌরব?’
‘না…ও কিছু না তবে অনেকেই তো আজ রেনী ডে করবে আর তাই হয়তো …’
আমি অফিসের ম্যানেজারকে ফোন করলাম আর একটু পরেই ফোন রেখে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়তে গৌরব একটু হেসে উঠে বললো-‘আমি তো আগেই জানি বাপী…..তুমি এই নিয়ে আর মন খারাপ করো না…ওঠো…কাজে যাও…তোমার এই অতি আদরের সুন্দর ছেলেটা এখন বেশ ভালো হয়ে উঠেছে তাই তার কিছু হবে না একলা থাকলে…সে তো এখন বেশ বড়ো ও হয়ে গেছে বাপী তবে…সে যাক…’ ‘
‘ওরে বাবারে…এরপরে আবার ও তবে আছে? তার মানে আজ আমার কপালে আরো দুর্ভোগ নাচছে মনে হয়…সে যা হয় তা হবে আমি যাই…এখন আগে তো দুধসাবু তৈরী করে এনে গৌরবকে খাইয়ে দিই আর তারপরে একটু হাল্কামতন করে খিচুড়ী আর ফুলুরীভাজা তৈরী করি …তাই খেয়েই এখন অফিসে যেতে হবে আর গৌরব ও পরে ক্ষিদে পেলে দুপুরবেলায় একটু খেতেই পারবে…
তাই করলাম আমি…
যখন হেলমেট হাতে নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে আসছি…গৌরব বললো-‘তুমি বাইরে থেকে দরজা লক করে দিয়ে যাও বাপী…আমার কাছে আরো একটা চাবী তো আছেই…আর বেশী করে যেন পরের দায়িত্ব নিজের ঘাড়ে নিতে যেও না…বাই…বাই…’
আমি মুখ ভার করে ছেলের উপদেশ শুনে স্টার্ট দিলাম স্কুটারে তবে গৌরব যতোই বলুক অফিসে নানা ধরণের সব দায়িত্বের কাজ তো করতেই হয় এস ওকে… না বলবার কি উপায় থাকে? গিয়ে দেখি যে ম্যানেজার নিজেই রেনী ডে করে বসে আছেন…এখন উপায়? ক্যাশিয়ার নিজেই দৌড়ে গেল তাঁর বাড়িতে আমাকে চার্জ দিয়ে ক্যাশে বসিয়ে রেখে…সে গেল সেফের চাবী দুটো আনতে…নইলে টাকার লেনদেন যে বন্ধ হয়ে যাবে… সে ফিরে এলে তবে আমার ছুটি… তবে ঝামেলা কি একটা? সেদিন ছিল শনিবার … সব ব্যাংক বন্ধ সেকেন্ড স্যাটারডে বলে … তাই দিন শেষে ক্যাশের চার লক্ষ আশী হাজার নশো পঞ্চাশ টাকার কি হয়? হিসেব লিখে কপি করে এক কপি ফাইলে আর অন্য কপি সেফেতে টাকা সমেত রেখে সেফ বন্ধ করা হ’লো আর একটা চাবী রইলো ক্যাশিয়ারের কাছে আর অন্যটা আমাকে রাখতে দেওয়া হলো কেননা দুপুরে বৃষ্টি থামতে তখন ম্যানেজার চলে গেছেন গাজীপুরে কি একটা মিটিংয়ে… ফিররেন অনেক দেরী করে …মিটিং আটটায় শেষ করে আর আসতে ও তিনঘন্টা লেগে যাবেই…
অগত্যা সোজা বাড়ী চলে এলাম কেননা গৌরবের জন্য মনটা বেশ উতলা হয়েছিল …কিন্তু গিয়ে দেখলাম যে ছেলেটা বেশ সুস্থই আছে আর বসে একলাই ক্যারম খেলছে যেন কার সাথে …আমি ঘরে ঢুকতেই গৌরবকে বলতে শুনলাম-‘এই যাঃ…আবার তুমি লাল কুইনটা জিতে নিলে …তবে তো আমি এখন হেরেই যাবো ঠিক…আরেঃ…তুমি কখন এলে বাপী? আর নাঃ… তোমাকে নিয়ে তো আর দেখি পারা যায় না ….আবার এক ঝামেলা পকেটে করে নিয়ে এসেছো …উঃ…’
‘ওরে বাবা…এ সব আবার কি কথা? ঝামেলা কি টাকা যে আমি পকেটে করে নিয়ে আসবো? নাঃ.. এইবার তো লোকে ঠিক পাগল বলবেই…’
‘মোটেই আমার পা গোল নয় বাপী… সে বেশ তো লম্বাই আছে… তুমিই দেখো না… আর সে যাক … তা অতো বড়ো চাবিটা কিসের শুনি?’
‘কিসের আবার? অফিসের সেফের?
‘তা সেটা তুমি কেন রেখেছো পকেটে? তোমার পকেটটাতে মনে হয় টাকা অথবা নোটবুক কিছু আছে আর তার ওপরে চাবিটা রেখেছো বলে এখান থেকে ও সেটা বেশ স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে…অবশ্য তোমার প্যান্টটা জিন্সের হলে বোঝাই যেতো না… তা ওটা তোমার কাছে কেন বাপী?’
‘ম্যানেজারে অফিসেই আসে নি আজ তাই…’
‘রেনী ডে?’
‘না মানে মিটিং ছিলো একটা তাই…’
‘বেশ …তা কোথায়?’
‘গাজীপুরে….’
‘বাজে কথা …’
‘কেন গৌরব?’
‘কেননা আমি ইন্টারনেটে গুগল সার্চ করে দেখেছি যে গাজীপুরে এখন ও তেড়ে বৃষ্টি হচ্ছে আর রাস্তা ঘাট সব জলে তলিয়ে গেছে আর তাই সেখানে আজ স্কুল কলেজ কোর্ট কাছারী সব কিছুই বন্ধ…ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে তাই’…
‘হুম…তবে আমাকে সবই মিথ্যে কথা বলেছে ক্যাশিয়ার…’
‘কিন্তু কেন?’
’যাতে তুমি চাবিটা নিজের কাছে রাখতে বাধ্য হও তাই …’
‘তা ওই সেফের চাবির সেট কটা চাবির বাপী?’
‘দুটো…’
‘হুঁ…সেই দ্বিতীয় চাবিটা কার কাছে আছে বলো তো ..’
‘কেন? ক্যাশিয়ারের কাছে…’
‘তা বেশ… তবে এখন যদি একবার ওই চাবিটা আমার হাতে দাও তা হলেই আমি ঠিক বুঝতে পাররো যে ওটা সত্যিই একটা সাধারণ চাবী না ঝামেলা …’
‘এই নাও দেখো… সাধারণ চাবী ছাড়া আর কি হবে?’
চাবিটা হাতে নিতেই গৌরবের সরু ভ্রু জোড়া ধনুকের মতন বেঁকে গেল…
‘ওঃ বাপী.. এটা তো মহাঝামেলা…তুমি এখনই এই আপদকে ঘর থেকে বিদেয় করে দিয়ে এসো তারপরে জল খাবো আমরা…’
‘সে কি? যাঃ,, ভালো জ্বালাতন যা হোক…আমি তো কিছুই বুঝছি না বাবা…জল স্পর্শ করবো না আর চিতোর রাণার পণ… না কি রে বাবা? তা যাই এখন তবে আবার…তা এই মহা ঝামেলাটি কি বস্তু আর কিসের?’
‘বড়ো বিদ্যার আর অর্থম অনর্থমের…হিঃহিঃহি…আর খানিকটা হয়তো প্রতিহিংসা.. আর কি?’
আমি যখন ফিরলাম তখন সাতটা বেজে গিয়েছিলো আর তখন ও গৌরব না খেয়ে রোগা শরীরে আমার জন্যে বসেই আছে দেখে মনে বড়োই কষ্ট হলো …
আমি বললাম-‘ম্যানেজার বাড়িতেই ছিলেন …বৃষ্টির জন্যে মিটিং ক্যানসেল হয়ে গেছে আর কাল তাঁর ছেলের জন্মদিন তাই আমাদের নিমন্ত্রন…তবে আমি ছেলে অসুস্থ বলে যেতে পারবো না বলে দিয়ে এসেছি …শুনে তিনি বললেন যে আমাদের ক্যাশিয়ারের বাবা ও খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছে হঠাৎ… ফোন আর মেসেজ এসেছে …দেখালো…আর তার চাবিটি জমা দিয়ে তিনদিনের ছুটি নিয়ে বাড়ী চলে গেলো আর তাই সেও আসতে পারবে না বলেছে…’
‘হুম… তা বাপী…এখন চলো তবে দুর্ভোগ আসতে দেরী আছে বেশ…’
‘কি করে বুঝলে?’
‘কেন? ওই যে বললে জন্মদিন…তার তো দেরী আছেই আর…’
‘আর কি? তুমি তো আমাকে আর তোমার জন্মদিনটা ও পালন করতে দাও না গৌরব তোমার যেন সবেতেই অসুবিধা হয়… আমি তোমাকে সঙ্গে নিয়ে আমার বিছানায় শুয়ে পড়লেও তোমার অসুবিধা হয় … ঘুমই আসতে চায় না…’
‘নাঃ…ঘটা করে জন্মদিন পালনের কি দরকার বলো তো বাপী?…তবে তুমি যা চাও তাই করবে আজ থেকে… আমার কোনই অসুবিধা হবে না.. আমি তো শুধু মায়ের জন্যেই ….এই যাঃ… তা বাপী তুমি কি আমাকে কিছু কম উপহার দাও? আর আমি তো অন্যের উপহার নিই ও না…তাই…আর আমি তো এখন জন্মদীন…তার আবার জন্মদিন কিসের?’
ছেলেটা দুটো হাত উল্টে গোপাল ভাঁড়ের ভাষায় বললো…
রাতে গৌরবকে নিয়ে নিজের ঘরেই বিছানায় উঠে শুয়ে পড়ে বললাম-‘আচ্ছা গৌরব… চাবী তো একটা বস্তু তা সেটা আবার ঝামেলা…মহাঝামেলা এই সব হয় কি ভাবে বলোতো..’
‘কেন? দুষ্টুলোকের দুষ্টুমিতেই হয় বাপী …তুমি তো খালি অন্যমনস্ক হয়ে থাকো… ভাল করে কিছুই তো দেখো না তাই বুঝতেই পারো না কিছু… ..এই বলে নিজের ডানহাতের তর্জনী আর বৃদ্ধাঙ্গুষ্ট ঘষে দেখালো আমাকে…
এবার এখন বোঝ ঠ্যালা…ছেলের সংকেত বুঝি কি করে ছাই? নাঃ সত্যিই বেশী বুদ্ধিমান মানে অতি বুদ্ধি থাকা ভালো নয়… যাঃ….
তবে পরের দিন রাত তখন আটটা… হঠাৎ ফোন বেজে উঠলো আর গৌরবের সঙ্গে বসে আমার লুডো খেলা ও মাথায় উঠলো…কি হয়েছে? না ম্যানেজার ডাকছেন …অফিসে না কি বিরাট এক চুরী হয়ে গেছে … গার্ড ফোনে জানিয়েছে আর পার্টি মাথায় উঠে গেছে জন্মদিনের … ম্যানেজার এখন নিজেই জন্মদীন হয়ে গেছেন কেননা সেফের দুটো চাবিই ছিলো তাঁর কাছে আর সেফ না কি ভাঙা হয় নি চাবী দিয়েই খোলা হয়েছে যে …তাই আমাকে এখুনি যেতে হবে আর গৌরবকে সঙ্গে নিয়েই… এ যে দেখছি সেই… দুর্গম কাম জগতকে যেতে…সুগম অনুগ্রহ তুম্হরে তেতে অবস্থা… চুরী হয়েছে তো পুলিশ ডাকলেই তো হয় একটা কচি রোগা ছেলে কি করবে সেখানে গিয়ে? যত্তো সব আদিখ্যেতা আর কি…
আজ ছুটির দিন বলে আমি গৌরবকে একটা পাঠান ছেলে সাজিয়ে রেখেছিলাম… দামী শেরওয়ানী চুড়িদার থেকে শুরু করে মাথায় গোল টুপী অবধি … নিখুঁত ড্রেস…খুব সুন্দর দেখাচ্ছিল ফর্সা ঝকঝকে ছেলে গৌরবকে… এখন সব চেঞ্জ করতে হবে বসে …জ্বালাতন…
তাড়াতাড়িতে আজ কচি কলা পাতা রঙের নতুন সাফারী স্যুটটাই এনে গৌরবকে পরাতে বসতে হলো…আমি তো ধুতি পাঞ্জাবী যা পরে আছি তাই পরেই যেতে পারি তবে আসল হীরো বা স্টারকে তো সাজাতেই হবে একটু…হলোই বা সে একটা ছোট্ট ছেলে…তবে..হীরো ইজ অলওয়েজ হীরো… এখন আমি বেশ হাড়েহাড়ে টের পাচ্ছি যে চাবির মতন একটা সামান্য বস্তু মহাঝামেলা হয় কি করে.. ওঃ…বড়ো জোর বাঁচান বেঁচে গেছি আমি তা বেশ বুঝতে পারছি এখন…
এখনি ম্যানেজারের গাড়ী এসে যাবে..
‘আংকল,…আমরা এসে গেছি.. গুড ইভনিং…’
‘এসেছো...? ওঃ… থ্যাংক গড…এখন তুমি আমাকে বাঁচাও ভাই…নইলে এই বয়সে এখন আমার এতোদিনের চাকরী তো যাবেই সেই সাথে আমাকে জেলে ও যেতে হবে পুলিশ এলেই আর সে তো তাদের ডাকতেই হবে সকাল হতেই..’
‘আংকল,..আপনি অতো বেশী আপসেট হবেন না… আগে তো চলুন যাই আপনাদের অফিসে গিয়ে একটু চোখের দেখা দেখি আমি সব কিছু আগে…’
‘চলো তাই.. ড্রাইভার কার লে আও জল্দি সে অফিস চলনা হ্যায়…’
ঘোর অন্ধকার নিকষ কালো রাত…
আজ আবার অমাবস্যা কি না তাই বা কে জানে ছাই… তবে আকাশে ঘোর কালো মেঘ ছেয়ে আছে আর ভিজে হাওয়া ছুটছে জোর… হয়তো এখনই আবার ঘোর বৃষ্টি নামবে… খানিকক্ষণ পরেই… উঃ… কি অসুবিধা রে বাবা… কোথায় ঘরে বসে ঝালমুড়ি আর পাঁপড় ভাজা খাবো তা নয় ছোট এই ভালো এক চুরির দায়ে পড়ে … একেই বলে গেরোর ফের আর কি…
নির্জন পথে ঘোর কালো রাতে আমরাই একা যাত্রী….বলে বেশ মনে হচ্ছে আমার তখন…
হু…হু..করে গাড়ী ছুটছে আর আজ সেই গাড়িতে না চলছে এ সি আর না বন্ধ করা হয়েছে জানলার কাঁচ …এমনই মনের অবস্থা ম্যানেজার আর ড্রাইভারের …
আমি ও ভেবে কোনই কূল কিনারা দেখতে পাচ্ছি না যে চুরিটা হলো কি ভাবে তবে শুধু গৌরব অচঞ্চল অবিচল হয়ে বসে আছে মুখ শক্ত করে… জলো ভিজে হাওয়াতে অসুস্থ ছেলেটার এখন একটুতেই ঠান্ডা লাগবার ভয়ে আমি ছেলের গায়ে নিজের কাশ্মিরী শালটা জড়িয়ে দিতে তখন সে একটু হাসলো মাত্র যা আমি অন্ধকারে ও বেশ বুঝতে পারলাম ছেলের মুখে মৃদু …যাঃ… শুনে … চল্লিশ মিনিট পরে গাড়ী থামলো আর আমরা নামলাম
দারোয়ান এসে গেট খুলতে লাগলো … আমরা ভেতরে গিয়ে আগে নিচেই গার্ডের ঘরে বসলাম …অফিস তিন তলায়… গৌরব গার্ডকে ডেকে বললো-‘গার্ড আংকল আপনি এইখানে এসে বসুন আর বলুন আজ বিকেল থেকে কি কি হয়েছে’
’আরে ববুয়া… কি বলবে হামি?.তুমি পুছ করলে তবে বলতে পারবে হামি…
‘বেশ তো কটার সময়ে ডিউটি জয়েন করেছেন আজ?’
‘পাঁচ বজে..’
‘বেশ আপনারা কতজন গার্ড আছেন?’
‘তিন জন …আট ঘন্টা ডিউটি আছে …পাঁচ বজে সে রাত মে এক বাজে তক’
‘ভালো… আপনি চার্জ নিয়ে সব ঘুরে ভালো করে দেখে নিয়েছিলেন তো? তখন সব ঠিক ছিলো?’
‘হঁ…ববুয়া…’
‘আমাদের অফিসে তখন কোন চুরী হয় নি তো?’
‘না ববুয়া …’
‘মনে করে বলুন… পুলিশ কিন্তু আপনাকেই সন্দেহ করবে এই কথায়…’
‘হঁ ববুয়া…’
‘বেশ,..এখন বলুন যে সব কিছু ঠিক আছে দেখবার পরে আপনি কি করলেন?’
‘হামি তে কি করবে? আধিঁয়ারা ভি হলো আর হামি ভি লাইট অন করে দিলো … তারপরে ছয় বাজে হঠাৎ আমাদের সব আলো নিভিয়ে গেলো তো হাম হাথ মে টর্চ লিয়ে মেন চেক করলো কেননা সব বিল্ডিং মে আলো ছিলো…দেখলোম কি যে ফিউজঠো পুড়িয়ে গেছে… তা হামি শঙ্কর মিস্ত্রিকে ফোন মেরে দিলোম আউর আধা ঘন্টা বাদে উ আসিয়ে পড়ে ফিউজ ঠো ঠিক করে দিলো আর হামি ও কে সার্ভিস বুকে চার্জ লিখে সহি করে দিয়ে চলে যেতে বললোম…’
‘শঙ্কর তখনি চলে গেলো?’
‘না ববুয়া… নিজেদের সব সুখ দুঃখের ঘর পরিবারের কথা হলো …’
‘কতোক্ষণ?’
‘সে আধা ঘন্টা হবে…ববুয়া’
‘হুঁ…তারপর?’
‘হঠাৎ উপরে একটা হড়াম সে আওয়াজ হলো আর হমলোগ লাঠি লিয়ে দৌড়ে গেলো ..তো দেখলো যে এহি সাবের অফিস খুলা পড়ে আছে আর কোই আদমী না আছে … হামলোগ ভিতর মে গেলো … আলো জ্বেলে দেখলোম যে বড়া সেফঠো খুলা পড়ে আছেন আর খালি হাঁ হাঁ করছেন তো হামলোগ চোর চোর করকে সব জগহ ঢুঁড়লো পর কোইকেভি পেলোম না দেখতে তো নীচে এসে ম্যানেজার সাবকো ফোন দিলোম আর তখন শঙ্কর ভি চলিয়ে গেলো আউর এক ঘন্টা বাদ হাপনারা এসে পড়লেন…’
‘সব অফিসেই কি সি সি টি ভি আছে?’
‘হঁ……ববুয়া তব বাত্তি যখন ছিলো না তখন তো টি ভি বন্ধ হয়ে গেলো…’
‘আর কিছু কি তুমি জানো বা দেখেছো?’
‘না ববুয়া ..’
‘বেশ চলো তবে এখন ওপরে অফিসে যাওয়া যাক …’
‘চলেন ববুয়া …’
অফিসে কোন কিছুই না ছুঁয়ে আমরা সব দেখে নিলাম..
তখন গৌরব বললো-‘আংকল, আপনি কি ক্যাশের হিসেব কোন ফাইলে রাখা হয়েছিলো সে দিন তা জানেন?’
‘নাঃ…সে’দিন তো আমি ছিলামই না তা জানবো কি করে বলো?’
‘হুঁ… গুড পয়েন্ট…বাপী..সেটা তবে কে কে জানতো বলতে পারবে?’
‘হ্যাঁ… শুধু দু’জন…আমি আর ক্যাশিয়ার’
‘তা ভালো…এখন বাপী…তুমি আর কিছুই না ছুঁয়ে আর হাতে একটা রুমাল জড়িয়ে নিয়ে
আলতো করে শুধু একবার সেই ফাইলটা ক্যাবিনেট থেকে বের করে দেখে বলো যে ফাইলে কি হিসেবের কাগজটা আছে?…কেননা সেফ তো খালি… কিছুই পড়ে নেই …’
‘আমি সেই ভাবে একটা নীল ফাইল ক্যাবিনেট থেকে বের করে এনে দেখে বললাম-‘নাঃ .. ফাইল থেকে ওই কাগজটাকে কেউ ছিঁড়ে নিয়েছে …’
‘খুবই ভালো কাজ করেছে আর এতেই বোঝা গেলো যে চোর অফিসেরই লোক নইলে সে জানবে কি করে যে ঠিক ওই কাগজটা সেদিন কোন ফাইলে রাখা হয়েছিলো আর সেটা তো সেদিন আংকল আপনি ও দেখেননি তাই জানতেন ও না … তাহলে আপনি শুধু আপনার কাছে দুটো চাবিই ছিলো বলে টাকা চুরী করতে যদি ও পারেন তবু ও ওই কাগজটাকে খুঁজে পেলেন কি করে আর তা ছিঁড়লেনই বা কি করে?’
‘নাঃ এ এ এটা তো অসম্ভব কাজ…’
‘আমার দ্বিতীয় পয়েন্ট… চুরির সময়ে আপনি তো ছেলের জন্মদিনের পঞ্চাশজন আমন্ত্রিত লোকের সামনে বাড়িতেই ছিলেন… এখানে চলে এসে চুরী করলেন কি করে? একে বলে কাস্ট আয়রণ অ্যালিবাই…ছেলের জন্মদিন আপনাকে বাঁচিয়ে দিয়েছে আংকল …’
‘এইবার আমার থার্ড পয়েন্ট…
টাকাটার কি তবে কোন হিসেবই নেই আর এখন আংকল?’
‘না না তা আছে বইকি কেননা তোমার পাপা বুদ্ধি করে সেই কাগজটার গোপনে একটা ফটো তুলে নিয়ে আমাকে হোয়াটস আপ করেছিলো বলে সেটাই আছে প্রমাণ…’
‘ভেরী গুড … কেস ক্লিয়ার…’
‘এইবারে আপনি চাবিদুটো খুব সাবধানে বের করুন হাতে রুমাল জড়িয়েই …আমার লাস্ট পয়েন্ট দেখাই আপনাকে আংকল…’
‘এ এ এই যে ভাই…’
‘হু…এইবার চাবি দুটোর ওপরের গোল রিংয়ের ভেতরে ভালো করে দেখুন …খুব অল্প পরিমানে একটু সাদা মতন কি চটচটে জিনিষ লেগে আছে দেখুন…’
‘হ্যাঁ তা আছে… তা এটা কি জিনিষ ভাই?’
‘মনে হয় মোম… প্যারাফিন হোয়াইট যা একটা বক্সে ঢেলে রেখে তার ওপরে কোন চাবী চেপে ধরে তার ছাঁচ তোলা হয় আর এই জিনিষটা প্রথম দিন আমার হাতের দুই আঙুলে লেগে গিয়েছিলো যখন পাপা ওটা আমাকে দেখবার জন্যে আমার হাতে দিয়েছিলো…তা আংকল আপনি কি চাবিদুটোর কোন ছাঁচ তুলেছিলেন কখনো?’
‘কভি নেহী…আমার তো চাবী হারিয়ে যাবার কোন ভয় নেই…’
‘তাহলে এটা ও সেই চোরই করেছে তবে সে চাবিদুটো হাতে পেলো কি করে? নিশ্চয়ই আপনি তাকে কোন কারণে দিয়েছিলেন আর তাই আপনি ভালোকরেই জানেন যে সে কে? অবশ্যই সে আমার পাপা নয়…’
‘না…কভি নেহী…’
‘তবে হড়াম শব্দ করে কি পড়েছিলো? নিশ্চয়ই কোন কিছু পড়েছিল বা দড়াম করে হলে হয়তো কিছু তখন বন্ধ হয়েছিলো…সেটা কি কোন দরজা? আপনি গোটা অফিস এখন একবার চেক করুন আংকল…’
চেক করে দেখা গেলো যে পাশের অফিসের একটা ঘরের দরজার গা তালা ও খোলা…শুধু ভেজানো আছে…
‘এইবারে আংকল …এখন আপনি লোকাল থানার ও সি কে ফোন করুন দেখি পুলিশই এই খোলা দরজা ও হঠাৎ ফিউজ উড়ে যাবার কারণ সব কিছুই ঠিক খুঁজে দেখবে কেননা ওই ঘরে একটা লাইটের সুইচ বোর্ড দেখা যাচ্ছে যার কোন প্লাগপয়েন্টে একটা তার ঢুকিয়ে দিয়ে শর্ট সারকিট করা হয়ে থাকতেই পারে আর সে লিফ্ট দিয়ে গার্ড আংকল যখন উঠছেন তখন সে সিঁড়ি দিয়ে পালাতেই পারে তবে শব্দটা আধ ঘন্টা পরে হয়েছিলো যে কেন…সময় এতো বেশী লাগলো কেন?...আরেঃ আপনাদের অফিসে সি সি টি ভি তো দেখছি বন্ধ...তাহলে এটা ও চোরেরই কীর্তি...তবে এই কলিং বেলের বক্সটা কেন লাগিয়ে ছিলেন বলুন তো আংকল…’
‘আরে…ওটা তো ম্যানেজারের চেম্বারের কলিংবেল …সব অফিসেই লাগানো থাকে..’
‘তা থাকতেই পারে তবে তার ঠিক নীচে এই চেয়ারটা রয়েছে কেন? এইটাই কি তবে উল্টে পড়েছিলো?...’
‘আংকল…আমার এখন একটা স্ক্রুড্রাইভার চাই… পাওয়া যাবে?’
‘সে জন্যে তো শঙ্করকে ডাকলেই হয়…’
‘তবে তাই ডাকুন…’
ম্যানেজার ফোন করলেন তবে তার মোবাইল সুইচ অফ …
শুনে গৌরব বললো-‘আংকল আপনি শুধু আাপনার গাড়ির টুল কিট থেকে আমাকে একটা স্ক্রুড্রাইভার এনে দিলেই হবে…’
‘আরে সে কাজ তো আমার ড্রাইভারের…বোলা ও কিষণ কো আভি…’
তখন কিষণ এলো টুলকিট নিয়ে আর সেই চেয়ারে উঠে দাঁড়িয়ে বেলবক্সটা খুলে আনতেই তার ভেতরে দেখা গেল ছোট একটা বান্ডিলে রয়েছে সব দু’হাজার পাঁচশো আর পঞ্চাশ টাকার নোট …টাকাটা গোনা হলো আর দেখা গেল যে সব ঠিকই আছে…’
গৌরব বললো-‘আংকল…আশাকরি আপনিই এখন পুলিশকে সব কথা সমস্ত প্রমাণসমেত বুঝিয়ে দিতে পারবেন আর তাই আমাদের আর তো কোন দরকার নেই… ভেরী সিম্পল কেস …’
‘তুমি কি বলছো ভাই? এখন তুমি আমার বাড়ী যাবে আমার ছেলের জন্মদিনে তোমার নিমন্ত্রণ তো আছেই… চলো…’
‘না আংকল…আজ আমার শরীরটা তেমন তো ভালো নেই তাই…নেহাৎ আপনার আদেশ তাই আসতে হলো…নইলে….আমি এখন বাড়ী যাবো…আংকল…’
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
GolpoShare - গল্পশেয়ার অনেক ভালো হইছে নিয়মিত গল্প কবিতা পরতে আমাদের সাইটে ভিজিট করেন www.golposhare.com
ফয়জুল মহী খুব ভালো লাগলো
Dipok Kumar Bhadra খুব সুন্দর লিখেছেন । ভোট দিলাম।

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

এই গল্পটি একটি বর্ষার কালো অন্ধকার রাতের ঘটনার সাথে যুক্ত

১২ ফেব্রুয়ারী - ২০২১ গল্প/কবিতা: ৫ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪