দাদির সাথে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী

অভিমান (এপ্রিল ২০২১)

junairanuha
  • 0
  • ৩৯
রাত দুইটা ছুইছুই, চারিদিকে সুনসান নিরবতা। কোথাও কোন শব্দ নেই। আজ কী নৈশভোজী পোকারাও ঘুমের রাজ্যে লুকিয়েছে? রাতজাগা কুকুরটা কোথায় গেলো! ভাবতে ভাবতে জানালার ফাঁকা দিয়ে বাহিরের দৃশ্য দেখার চেষ্টা করলাম। একি! আজ বাংলার আকাশে যেন মেঘেদের মহাউৎসব। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জলদখন্ডের সম্মিলনে প্রস্তুত হচ্ছে বিপুল বর্ষনের। এইবুঝি ঝরো বাতাশ বইতে শুরু করেছে! ভয়ে হাত-পা শীতল হয়ে আসছে। তোমার দাদা বাড়িতে নেই। বেশ কিছুদিন হলো তিনি ট্রলার যোগে ঢাকায় পারি জমিয়েছেন।
সেদিন ছিলো, ১৯৭১ সালের ২৮মার্চ। গত ২৫শে মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী অতর্কিতে হামলা শুরু করে, হত্যাযজ্ঞ চালায় ঘুমন্ত বাঙালিদের উপর। তারা পিলখানায় পূর্ব পাকিস্তান রাইফেলসের (ইপিআর) সদর দপ্তর, রাজারবাগ পুলিশ ব্যারাক, খিলগাঁওয়ে আনসার সদর দপ্তর ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলে সশস্ত্র হামলা চালায়। নির্মমভাবে হত্যা করা হয় ইপিআর, পুলিশ, আনসার ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকদের। পাকিস্তানিদের চাপিয়ে দেয়া যুদ্ধ মোকাবিলা করতে গড়ে ওঠে মুক্তিযুদ্ধ। উচ্চারিত হয়, দীপ্ত কন্ঠের আরেকটি আওয়াজ ‘তোমাদের যার কাছে যা আছে তা নিয়েই ঝাপিয়ে পড়’

তোমার দাদা এ সংবাদ শুনে মুষ্টিবদ্ধ হাত গগণমুখে দন্ডায়মান করে বলেছিলেন, ‘এদেশের মানচিত্র শকুনেরা চিবিয়ে খেলে আমাদের রক্ত বৃথা যাবে। এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম।’ কে জানতো! এটাই হবে তার মুখ থেকে শ্রুত সর্বশেষ শব্দ।

সে রাতে আমার ঘুম উড়ে গেল অতিথি পাখির মতো । সকাল অবধি বসে রইলাম । পৃথিবীটা আমার কাছে বীভৎস অন্ধকার মনে হচ্ছে! চোখের সামনে ভেসে উঠছে তোমার দাদার নির্ভীক মুখাবয়ব। একবার দেখত ইচ্ছে করছে। দিনরাত একাকার করে আমি পথ চেয়ে থাকতাম। তিনি কী আর ফিরবেন?
এভাবেই কেটে গেলো ৯টি মাস। মধ্য ডিসেম্বরের রবিবার কলিমের বাবা এসে শোনালেন এক নির্মমতার গল্প, তারা যুদ্ধরত ছিলেন ময়মনসিংহের নারাঙ্গিতে। তখন ভোর রাত। পাকিস্তানি সেনাদের যাওয়ার পথে তিনচর নামক স্থানে মুক্তিযোদ্ধারা তাদের আক্রমণ করে। শুরু হয় মরণপণ লড়াই। প্রচণ্ড গোলাগুলি। কেউ ঘরের ও গাছের আড়ালে, কেউবা গর্তে এ লড়াইয়ে নিহত হয়। গোলাগুলিতে গ্রামের এক মায়ের একমাত্র ছেলে কিশোর শরীফ শহীদ হন। পাকিস্তানী মিলিটারীরা তোমার দাদাসহ ৪১জনকে বন্দি করে পরেরদিন নির্মমভাবে হত্যা করেছে। এ সংবাদে যেন গোটা পরিবারের মস্তকে নিরাশার অভ্রখন্ডের পতন অনুভব করলাম। আমরা সবাই শোকের সমুদ্রে হাবুডুবু করছি। আর তখনি শুনতে পেলাম, স্বাধীন বাংলার সুমধুর পয়গাম। পুরো গ্রাম যেন মহাউৎসবের গঙ্গায় আন্দোলিত হচ্ছে। আকাশ জুড়ে আনন্দের বারি বইছে। আমরা ভুলে গেলাম সব হারানো ব্যথা। কোটি কন্ঠে বেজে উঠলো, আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি।


তোমার দাদাদের রক্তে আঁকা হলো লাল-সবুজের পতাকা। বাংলা ফিরেছে স্বগৌরবে। এদেশের মানুষ পেয়েছে সবুজ শ্যামলের একটি স্বাধীন মানচিত্র। গ্রামের আলিম, কলিম সবাই ফিরেছে কিন্তু তিনি আজও ফিরেন নি। আমি অপেক্ষা করছি। আজ পঞ্চাশ বছরেও সে অপেক্ষার অবসান হয়নি।
ঊনিশশো একাত্তর সালের এই ভয়ংকর ঘটনার কথা বলতে বলতে দাদি ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠেন।

আমি নিগূঢ় মনোযোগে দাদির কথাগুলো শুনছিলাম। এতক্ষণে লক্ষ করলাম, দাদির চোখ বেয়ে অশ্রু ঝড়ছে।
আমি দাদিকে জড়িয়ে ধরে বললাম, আসছে ২৬শে মার্চ প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। একটি দেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তির দিনটি খুবই আনন্দের এবং গৌরবের। আর এই গৌরবের পথিকৃৎ তোমরাই। তোমাদের আত্নত্যাগ ও রক্তের তৈরী সু-মহান স্তম্ভে দাড়িয়ে স্বাধীনতার আনন্দে হাসছে বাংলাদেশ। এতে কী তোমার আনন্দ হয়না? মুচকি হেসে দাদি বলেলেন, ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আমরা শুরু করেছিলাম মহান মুক্তিযুদ্ধ।


৯ মাসের রক্তক্ষয়ী জনযুদ্ধ শেষে ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে (তৎকালীন রেসকোর্স ময়দান) হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী যৌথবাহিনীর কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করে এবং পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশ নামে নতুন রাষ্ট্রের অভ্যুদ্বয় ঘটে। বিশ্বের বুকে স্বাধীন দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে বাংলাদেশ। তোমার দাদাদের রক্তে অর্জিত আমাদের সেই স্বাধীনতারই আজ ৫০ বছর পূর্তি, সুবর্ণজয়ন্তী। এর চেয়ে আনন্দের দিন আর কী হতে পারে?
প্রখ্যাত চিন্তাবিদ মনীষী সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী লিখেছিলেন

‘আলোক ব্যতীত যেমন পৃথিবী জাগেনা, স্রোত ব্যতীত যেমন নদী টিকেনা, স্বাধীনতা ব্যতীত তেমনি জাতী কখনো বাঁচিতে পারেনা’

আমরাও সেই চিরন্তন সত্যের পথ ধরেই ১৯৭১ সালে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জণ করেছি আমাদের প্রাণপ্রিয় স্বাধীনতা। ৩০ লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা চির সমুন্নত রাখার ক্ষেত্রে ৫০ বছরের এ সুবর্ণজয়ন্তী আবহমান কাল ধরে তোমাদের মধ্যে প্রেরণা জোগাবে।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
Dipok Kumar Bhadra বর্তমান সংখার সাথে কি সামঞ্জস্যপূর্ণ???????তবে ভাল লিখেছেন। চালিয়ে যান।
ফয়জুল মহী অনুপম রচনাশৈলী। মুগ্ধতা অপার।

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

স্বাধীনতার সুবর্জয়ন্তী উপলক্ষে লেখাটি দিয়েছি। এটা আমার প্রথম জমা দেয়া কোন লেখা। লেখাটি পাবলিশ করলে অনুপ্রেণা পাবো।

০৭ জানুয়ারী - ২০২১ গল্প/কবিতা: ১ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "ছোটবেলা”
কবিতার বিষয় "ছোটবেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪