চাইন্দাউ মারমা

মুক্তিযুদ্ধ (ডিসেম্বর ২০২৫)

মোঃ মাইদুল সরকার
  • 0
  • 0
চাইন্দাউ মারমা একজন উপজাতী নারী। নামেই তার পরিচয় বুঝা যায়। মুক্তিযুদ্ধের সময় থলিপাড়া, মহালছড়ি, খাগড়াছড়ির চাইন্দাউ মারমা বয়স ছিল সাতাশ বছর। রূপ, যৌবনে অনন্যা এক নারী।

সত্তর সালের নির্বাচনে যারা নৌকায় ভোট দিয়েছিল, সমগ্র পাহাড় কাঁপিয়ে যারা স্লোগান তুলেছিল তাদের মধ্যে ছিল চাইন্দাউ মারমার ভাই থৈসাপ্রু মারমা। এই থৈসাপ্রু মারমা যখন স্বাধীনতার পক্ষে বিভিন্ন কাজে জড়িয়ে পড়ছিল তখন শান্তি কমিটি খুঁজে খুঁজে বের করছে পাহাড়ে কে কে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কাজ করে। কে বা কারা মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য সহযোগিতা করে।

একটি তালিকা পৌছে যায় হানাদার বাহনীর ক্যাম্পে। জুন মাসের বৃষ্টির এক দিনে অপারেশ চালিয়ে থলিপাড়া থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয় থৈসাপ্রু মারমাকে। দিনের পর দিন চলে তার উপর অত্যাচার। কিন্তু একদিন সে ঠিকই পালিয়ে আসতে সক্ষম হয় হানাদারদের নরগ থেকে। কিছু দিন যাওয়ার পর আবার থৈসাপ্রুকে ধরতে হানা দেয় তাদের বাড়ি। তাকে না পেয়ে তার বড় বোন চাইন্দাউ মারমাকে তুলে নিয়ে যায় পাকবাহিনীর সৈন্যরা।

সেই থেকে প্রায় দুই মাস চাইন্দাউ মারমাকে আটকে রাখা হয় ক্যাম্পে। তার উপর চলে পাশবিক নির্যাতন। এভাবে অন্য অনেক যুবতী, তরুণীর মত চাইন্দাউ মারমা হয়ে যান বীরাঙ্গনা। কিন্তু পাহাড়ী নারী চাইন্দাউ মারমা জানতেন না মুক্তিযুদ্ধে যেসব নারী পাশবিক নির্যাতনের স্বীকার হয়েছেন তাদেরকে বীরঙ্গনা বলে।
তিনি নিজে যেমন সম্ভব হারিয়েছেন তেমনি অগনিত নারী, তরুণীকে দেখেছেন পাসবিক নির্যাতনের স্বীকার হতে। রাত-দিন কেয়ামত নেমে আসতো তাদের উপর। কেউ যাতে আত্মহত্যা করতে না পারে তাই পরনের কাপড়টুকু খুলে নেওয়া হতো তাদের কাছ থেকে। সেই নরগে বসে পাকিস্তানী হায়ানা নামক নরকের কীট গুলো উল্লাসে মেতে উঠতো। সেই লজ্জাজনক কথা মনে হলে আজও মর্মে মরে যায় চাইন্দাউ।

এক সময় যুদ্ধ শেষ হয়। দেশ স্বাধীন হয়। কিন্তু হাজার হাজার বীরাঙ্গনার মত দুঃভাগ্য নেমে আসে চাইন্দাউ মারমার জীবনেও।
সমাজের মানুষের নানা কটু কথা, লজ্জা, ভয় আর অতীত স্মৃতির আতঙ্ক যেন বেঁচে থাকার ইচ্ছেটুকুকেও মেরে ফেলে।
তারপর সময়ের পরিক্রমায় বাবা মা, ভাই বোন এবং স্বামীকেও হারান জীবন থেকে এবং নিজের কোন সন্তান না থাকায় সম্পূর্ণ একা হয়ে যান চাইন্দাউ।

শেষ জীবনে আর লোকলজ্জার ভয় ছিল না এই নারীর। তিনি চাইতেন স্বীকৃতি। অত্যন্ত সরকারী স্বীকৃতি থাকলে দুবেলা দুমুঠো ভাত তো জাগাড় হবে। ক্ষিধার জ্বালা বড় জ্বালা। বয়স আশি হলেও তাকে কাজ করে খেতে হয়। কাজ না করতে পারলে উপোস থাকেন। কখনো কখনো পাড়া প্রতিবেশিরা খাবার দিয়ে যান। তিনি শুনেছেন সরকার বয়স্ক ভাতা চালু করেছে, আর কত বয়স হলে সে ভাতা ভাবেন ভেবে পান না পাহাড়ী এই নারী।

বিধবা ভাতাও নাকি অনেকে পয়ে থাকেন, তবে তিনি কেন পান না, তিনি কি বিধবা নন ? এই প্রশ্নের উত্তর তার জানা নেই।
আহা! দেশের জন্য যে তার জীবনের সবচেয়ে দামী জিনিসটা বিসর্জন দিলেন। দেশ তাকে মূল্যায়ন করেনি, মনে রাখেনি। তার খোঁজ খবর নেয়নি। এই আফসোস নিয়েই মরে যেতে হবে চাইন্দাউ মারমাদের মত অসংখ্য বীরাঙ্গনাদের।

এই অবহেলা, এই অযত্নে তিলে তিলে শেষ হয়ে যাওয়া চাইন্দাদের জন্য আমরা কিছু করতে পারিনি এ জন্য কি বিবেক আমাদের ক্ষমা করবে, না ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আমাদের ক্ষমা করবে।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

মুক্তিযুদ্ধে এক পাহাড়ী নারীর দুঃখগাথা।

২৪ আগষ্ট - ২০২০ গল্প/কবিতা: ১১৯ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

বিজ্ঞপ্তি

“ ” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ , থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী