কাটফাটা রোদে রিক্সা নিয়ে ফারহানা কলেজে পৌঁছেই ফারহানকে খুঁজতে লাগলো। নেই, সে কোথাও নেই। মোবাইল বন্ধ। প্রচন্ড বিরক্তি নিয়ে ফারহানা বার বার মোবাইলের দিকে তাকাচ্ছে আর গজ গজ করছে-কোথায় গেল। ভাপে, তাপে, ঘামে তাকে বেশ অস্থির দেখাচ্ছে।
অথচ তার দিনটি আজ এভাবে শুরু হওয়ার কথা ছিলনা। ভোরের শিশিরে শিউলি কুড়াতে কুড়াতে সে ফারহানকে তার মনের কথা বলে চলেছে আর তার দিকে বেশ মুগ্ধতা নিয়ে তার প্রেমিক পুরুষ তাকিয়ে আছে। ফারহানার পানপাতার মত স্নিগ্ধ মুখটি যেন জীবনবাবুর বনলতা সেনের কবিতা মনে করিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু স্বপ্ন ভঙ্গের পর সকালটা বুঝি দুঃস্বপ্নের মত শুরু হলো।
ফারহানের মা বেশ অসুস্থ। ফারহানের মুখে ফারহানার কথা শুনে তিনি কতবার ছেলেকে বলেছেন- ‘আরে পাগল যখন বিয়ে শাদি হবে তখন না হয় ঘটা করে বউ দেখবো। এখন তুই ফারহানাকে নিয়ে একদিনের জন্য হলেও বাড়িতে আয়। আমি দেখি তোর মনের মানুষটারে। খালি মনের ভিতর কু ডাক ডাকে । কে জানে কবে মইরা যাই। মরনের আগে মাইয়াডার মুখ একবার দেখনের বড় শখ।’
মায়ের এমন আকুতি ফারহান ফিরিয়ে দিতে পারেনি। সে কথা দিয়েছে যে করেই হোক একদিন ফারহানাকে নিয়ে চলে আসবে ময়মনসিংহের ভালুকার ডাকাতিয়া গ্রামে।
ফারহানাও সব শুনে বেশ উৎসাহিত। সারা জীবন শহরে বাস করা মেয়ে সে। গ্রাম তাকে খুব টানে। কিন্তু গ্রামে যাওয়া হয়নি কখনো। কোন আত্মীয় স্বজন গ্রামে নেই, সবাই শহরে নয়তো প্রবাসে গড়েছে শিকড়।
ফারহানা তার মাকে রাজি করিয়েছে এই বলে যে, ‘এক বান্ধবীর গ্রামে বাড়ি যাবে তারা কয়েকজন মিলে। দুই তিন দিন থেকেই চলে আসবে। কোন ঝামেলা হবেনা, কোন সমস্যা হবেনা।’
সে মাকে খুঁজতে গিয়ে দেখে মা ড্রয়িং রুমে বাসা দেখতে আসা দুই ভাড়াটিয়া মহিলার সাথে কথা বলছেন।
ফারহানার মা নিরিবিলি টাইপ মানুষ পছন্দ করেন। মহিলা দুটির ভাব গতিক দেখে ওনার মনে যেন সন্দেহে দুলে উঠলো। তিনি মহিলা দুটিকে বললেন-
Ñতোমরা কি আত্মীয়? তোমাদের সাথে পুরুষ কেউ নেই ?
কথা শুনে শাকিবা ও লায়লা একে অপরের দিকে তাকালো। শাকিবা মুখ খুলল।
Ñজ্বী আন্টি। ও আমার জা। আমরা একসাথে ময়মনসিংহ শহরে ছিলাম। সম্প্রতি আমার স্বামী ও দেবর বদলী হয়ে ঢাকায় এসেছেন। তাই আমাদের ঢাকা স্যাটলড হওয়া জরুরী হয়ে পড়েছে। আপনার চার তলার ফø্যাটটা পছন্দ হয়েছে। ভাড়াটা যদি একটু সেক্রিফাইস করতেন তাহলে সন্ধ্যায় আমার স্বামী ও দেবর এসে ফাইনাল কথা বলবে।
Ñতোমার জায়ের তো বয়স কম। দেখে মনে হয় কিশোরী। ওর কি অল্প বয়সে বিয়ে হয়েছে?
Ñ না তা কেন। ওতো এবার অনার্স ফাইনাল দিবে। আসলে ওর শরীরের গঠনটাই এমন। যেখানেই যাই কেউ বিশ্বাস করেনা যে ও আমার জা। সবাই ভাবে আমার মেয়ে। যতই বলি আমার দেবরের বউ । কেউ বিশ্বাস করতে চায়না ভাবে আমি বানিয়ে বলছি বা ফান করছি। এ পর্যন্ত অনেক বাসা দেখেছি সবার একই কথা-ও তো বাচ্চা মেয়ে। এত বড় বাসা নিয়ে কিভাবে আমি একা থাকবো ? উত্তর দিতে দিতে জান শেষ। এবার যদি আন্টি একটু দয়া করেন তবে এই ঝামেলা থেকে মুক্তি পাই।
Ñঠিক আছে দুই হাজার কমালাম। পনের হাজার দিবে। প্রতিমাসে নিজে এসে ভাড়া দিয়ে যাবে আমাকে যেন তাগাদা দিতে না হয়। দশ তারিখের মধ্যে সব ক্লিয়ার করবে।
-অনেক অনেক ধন্যবাদ আন্টি আপনাকে।
পনের থেকে বিশটি বাসা দেখে ফারহানাদের বাসাটাই শাকিবা ও লায়লা শেষ পর্যন্ত নিল। এডভান্স করে রাতেই তারা ময়মনসিংসের বাস ধরল। কারণ ঢাকা শহরে নামকা ওয়াস্তে আত্মীয়র বাসায় থেকে বাসা খুঁজতে যাওয়ার মত তিক্ত অভিজ্ঞতা দুই জাকে বাস্তবতার কঠিন রূপটা দেখিয়ে দিয়েছে।
ফারহানার মা মহিলা দুটিকে বিদায় করে বলল, কিরে কিছু বলবি ?
Ñমা, আমি একটু গ্রামে বেড়াতে যেতে চাই।
Ñকোথায় ? কোন গ্রামে !
ফারহানা বানিয়ে বানিয়ে মিথ্যাটাকে সত্যর মত বলল। ফারহানার মা প্রথমে অমত করলেও শেষে রাজি হয়েছে। মেয়ের আদুরে আবদারে রাজি না হয়ে পারেন নাই। মেয়ে এমন করে আবদার করে যে মোমের মত গলে না গিয়ে উপায় থাকেনা।
ফারহানা মায়ের অনুমতি পাওয়ার পর রাতেই ফারহানকে খবরটা দেওয়ার জন্য ফোন দিয়েছে-
Ñকাল সকালেই তোমার গ্রামের বাড়ি যেতে চাই।
Ñবাহ। মেঘ না চাইতেই জল। মাকে রাজি করাতে পেরেছ তাহলে।
Ñআমি ভেবে ছিলাম আন্টি রাজি হবেনা।
Ñপ্রথমেতো রাজি হয়নি। পরে আবদারে গলে গিয়ে অনুমতি দিলেন। দেখতে হবেনা আমি কে ?
Ñওরে বাবা কে তুমি? মহারানী ভিক্টোরিয়া.............
Ñযাহ্। ফাজলামি করবানা। আমি মহারানী ভিক্টোরিয়া হবো কেন ? আমি তোমার হৃদয়ের রানী। তোমার মন পবনের শব্দ।
Ñওয়াও। দারুন বলেছতো। মন পবনের শব্দ। একটা কবিতার আইডিয়া চলে এল তোমার কথা শুনে।
কপট রাগ করে ফারহানা বলে- রাখ তোমার কবিতা। আগামীকাল সকালে আমরা যাচ্ছি। এটাই ফুল এন্ড ফাইনাল। মনে থাকে যেন মিষ্টার ফারহান। আবার আমাকে রেখে তুমি একাই চলে যেওনা।
Ñসকালে রেল স্টেশনে যাবার আগেই ফোন দেবে। শাহবাগের মোড় থেকে একসাথে সিএনজিতে উঠবো।
ঠিক আছে বলে ফোন রেখে দিয়েছিল ফারহান। তারপর সকাল থেকে ফারহানা আর ফোনে পাচ্ছে না ফারহানকে। কলেজে গিয়েও যখন পেলনা তখন একটা হাহাকার যেন ঘিরে ধরলো তাকে। উদভ্রান্তের মত সে হেটে চলল রেল ষ্টেশনের দিকে।
ভূত দেখার মত চমকে উঠে ফারহানা। একটা ব্যাগ হাতে প্ল্যাটফর্মের বাদিকে বসে আছে ফারহান। যেন ট্রেন নয়, প্রেমিকা নয়, কবিতা নয় কার অপেক্ষায় স্বপ্নভাঙ্গা যুবকের মত ব্যাথিত নীলাভ চোখে চেয়ে আছে সামনে লাল আগুনের বন্যা বয়ে যাওয়া কৃষ্ণচূড়া গাছটার দিকে।
Ñএই ফারহান, এই তোমার কি হয়েছে?
আলতো স্পর্শে ফিরে দেখে ফারহানা তার পাশে দাড়িয়ে।
Ñসব শেষ হয়ে গেছে। আমার সব শেষ হয়ে গেছে।
কথাটা বলেই চোখ বন্ধ করে ফারহান আর চোখের কোনায় দেখা দেয় অশ্রæ।
Ñমানে ?
Ñমা নেই। রাতের শেষ প্রহরে মারা গেছে।
বজ্রাহতের মত ফারহানা মুখে হাত দিয়ে ফুপিয়ে কেঁদে উঠে। বলে, ‘আমি ওনাকে একটি বারের জন্যও দেখতে পারলামনা। এই আফসোস সারা জীবন পোড়াবে আমায়।’
ট্রেন চলে আসায় উঠে পড়ে দ’ুজন। সকালে আসার পথে মোবাইলটাও হারিয়ে গেছে তাই আর ফারহানার সাথে যোগাযোগ করতে পারেনি ফারহান।
ট্রেন ছেড়ে যাচ্ছে স্টেশন। প্লাটফর্মে অনেক মানুষ। একজন অন্ধ ফকির খালি গলায় গান গেয়ে ভিক্ষা করছে-
দান করে যান
দান করে যান সকলে
মাতা পিতার নামে
দান করিলে দান কারীর
মাতা পিতা সুখে থাকে কবরে
..................................
ফারহান পকেট হাতড়ে দশ টাকার একটা নোট ছুড়ে দিল। না দিলেও পারত। কেন দিল সে নিজেও জানেনা।
বাড়িতে পা দিয়েই দেখে শিউলী তলায় লাশের খাটিয়া। ঘরের ভিতর ও বাহিরে পাড়া-পড়শীরা ভিড় করছে।
মা বলে মর্মভেদী এক চিৎকার করে মায়ের খাটিয়ায় ঝাপিয়ে পড়ে ফারহান। কেঁদে কেটে কিছুক্ষন পর স্বংবিৎ ফিরে পেয়ে বলে-‘দেখ মা তোমার ফারহানা এসেছে। একটিবার দেখ তাকে।’
ফারহানা ধীরে ধীরে ফারহানের মৃত মায়ের মুখের দিকে ঝুকে বলে-‘মা, সেইতো এলাম, তবু দেখা হলনা। বড় দেরি হয়ে গেল। অনন্তের ওপারে ভাল থাকবেন।’
নিয়তি বুঝি এমন খেলার আয়োজন করে রেখেছিল। ফারহানের মাও মারা গেলো, ফারহানাও তাদের বাড়ি এলো। রাতে পুরোবাড়ি ফাঁকা। ফারহানের চাচতো বোন রাহেলা জানাল, ‘রাতে সে চাচীর সাতেই ঘুমিয়েছে। তাকে অনেক কথা বলেছে চাচী। হয়তো মরে যাবে বলেই এত কথা বলেছে।’ কান্নায় তার কন্ঠ রুদ্ধ হয়ে এল।
একটা লাল বেনারসী শাড়ি, সোনার কিছু গহনা ফারহানার হাতে দিয়ে রাহেলা বলল- ‘এগুলো পড়লে তোমাকে কেমন মানায় সেটা দেখার খুব শখ ছিল চাচীর। হায়রে কপাল তা আর পূরণ হইল কই ?’
শোকের মধ্যেও জীবনকে চালিয়ে নিতে হয়, শত আঘাতেও থেমে থাকেনা জীবনের প্রয়োজন। মায়ের শেষ ইচ্ছার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ফারহানাকে শাড়ি আর গহনা পড়তে বলে ফারহান।
রাহেলা বেশ তড়িৎকর্মা মেয়ে। সে ফারহানাকে শাড়ি পড়তে ও সাজতে সাহায্য করলো এবং রাতের খাবার রাহেলা নিজেই রান্না করে নিজেদের ঘর থেকে ওদের জন্য নিয়ে এল। শত হলেও মরা বাড়ি। মরা বাড়িতে তিন দিন চুলায় আগুন জ্বলেনা। খাওয়া-দাওয়া হয়ে গেলে সবকিছু গুছিয়ে রাহেলা নিজের ঘরে চলে গেল। যাওয়ার আগে ফারহানার কানে কানে বলে গেল-ভয় পেওনা রাত আরও বাড়লে তোমার সাথে ঘুমাতে আসবো।
শিউলী তলায় ফারহান-ফারহানা মুখোমুখি বসে আছে চেয়ার পেতে। চাঁদের আলোয় ধরনী ভেসে যাচ্ছে। এমন বাধ ভাঙ্গা জোছনার আলোতেই বুঝি মানব মন বিবাগী হয়। ফারহানের স্মৃতির পর্দায় ভেসে উঠছে নানান ছবি। বিশেষ করে মায়ের সাথে কাটানো দিনগুলোর কথা। অনেকক্ষন পরে ফারহানার হাতের স্পর্শ পেয়ে কথা বলে উঠে ফারহান।
Ñ মায়ের সাথে সুন্দর সময় কাটানোর কথা ছিল আমাদের গ্রামে তোমার কিন্তু কষ্ট আর বিষাদে ছেয়ে আছে সব।
Ñহয়তো ভবিষ্যতে সুন্দর সময় কাটাবো তোমাদের গ্রামে । তোমাদের ঘরে। কিন্তু মাকে আর পাবনা এটাই বড় দুঃখের, বড় কষ্টের ব্যাপার।
দু’জন যখন কথা বলায় ব্যস্ত তখন অদূরে কোন এক বাউলের কন্ঠ থেকে ভেসে আসে গান-
মন পবনের শব্দ তুমি
গহিন বনের ফুল
হাত ছেড়ে দিওনা কভু
যদি আমি করি ভুল।
.....................
.....................
দ্বিতীয় দিন ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে ঘুরতে বেড়িয়েছে ফারহান, ফারহানা ও রাহেলা। বেশ সুন্দর সময় কাটায় তারা। হিমালয় থেকে বয়ে আসা এ নদীর অদ্ভুত সৌন্দর্য মোহিত করে সবাইকে।
সন্ধ্যার আগে ফারহান চা-নাস্তার জন্য অদূরে দোকানে গেলে রাহেলা ফারহানাকে এক কিচ্ছা শোনায়। ব্রহ্মপুত্র নদের জন্ম কিচ্ছা।
ঋষি শান্তনুর স্ত্রী অমোঘার গর্ভে স্রষ্টা ব্রহ্মার একটি পুত্রসন্তানের জন্ম হয়। কিন্তু পুত্র সন্তানটি একটি জলপিÐ হিসেবে জন্ম নেয়। অনেক চিন্তা ভাবনার পর ঋষি শান্তনু একটি বুদ্ধি বের করেন- তিনি পুত্রকে কৈলাস, গন্ধমাদনা, জারুধি, সম্বর্তক নামক চারটি পর্বতের মাঝে রেখে আসেন।
সেখানে সেই পুত্র নামক জলপিÐ ‘ব্রহ্মকুÐ’ নামক হ্রদে পরিণত হয়। ত্রেতা যুগে বিষ্ণুর ষষ্ঠ অবতার পরশুরামের জন্ম হয়। পিতা মুণি জমদগ্নির আদেশে তিনি তার মাকে হত্যা করেন। মাতৃ হত্যার মতো অন্যায় কার্য ও গুরুপাপের কারণে তার হাতে থাকা মারণাস্ত্র কুঠারটি আঠার মতো লেগে যায়। অনেকভাবে চেষ্টা করেও হাত থেকে কুঠার ছাড়াতে না পেরে পিতার কাছে আসেন পরশুরাম। জানতে চান পরিত্রানের উপায়।
তার এই অবস্থা দেখে পিতা তাকে বলেন, মাতৃহত্যার মতো জঘন্য পাপের কারণে এই কুঠার তার হাতে লেগে আছে। এর থেকে পরিত্রান পাওয়ার একটি মাত্র উপায় আছে আর তা হল তীর্থযাত্রা করা। পরশুরামকে তার পিতা অবিলম্বে তীর্থ যাত্রার নির্দেশ দেন।
পিতার নির্দেশে পাপমোচনের জন্য পরশুরাম তীর্থযাত্রা করেন। তীর্থযাত্রার একপর্যায়ে হিমালয়ের সেই ব্রহ্মকুÐ হ্রদে স্নান করেন পরশুরাম। এর ফলে তার পাপ মোচন হয়। পাপ মুক্তির ফলে তার হাত থেকে কুঠার নেমে আসে। পরশুরাম যেন প্রান ফিরে পেলেন বহুদিন পর।
তিনি ভাবলেন, এমন স্বর্গীয় পানি সকলের জন্য সহজলভ্য করা দরকার। যে পানি পাপমোচন করতে পারে তা সাধারণ মানুষের জন্য হয়তো উপকার বয়ে আনবে। হাতের কুঠার দিয়ে পাহাড়ের একপাশ ভেঙে দিয়ে হ্রদের পানি হিমালয়ের পাদদেশ পর্যন্ত বিস্তৃত করেন। লাঙ্গল দিয়ে মাটি কর্ষণ করে সেই জলধারাকে প্রবাহিত হওয়ার পথ করে দেন।
এভাবে হিমালয় থেকে হাল টানতে টানতে পরশুরাম একসময় ক্লান্ত হয়ে পড়েন। বিশ্রাম করার জন্য বাধ্য হয়ে লাঙ্গল টানা বন্ধ করেন। তার এই লাঙ্গল টানা বন্ধ হয় বর্তমান নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার লাঙ্গলবন্দ অঞ্চলে।
আর সেই থেকে এই অঞ্চলটির নাম ‘লাঙ্গলবন্দ’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। ব্রহ্মপুত্রের ধারা হিমালয় থেকে লাঙ্গলবন্দ পর্যন্ত প্রবাহিত হচ্ছে বলেও সনাতন ধর্মের অনুসারীরা বিশ্বাস করেন। সনাতন ধর্মানুসারীদের কাছে এই কারণে ব্রহ্মপুত্রের পানি অত্যন্ত পবিত্র বলে গণ্য হয়। প্রতিবছর লাঙ্গলবন্দ ঘাটে বিভিন্ন দেশ থেকে হিন্দুরা এসে স্নান করার মাধ্যমে পাপমুক্ত হন। ব্রহ্মার সন্তান থেকে জলেরধারা এসেছে বলে এই নদের নাম হয় ব্রহ্মপুত্র নদ।
রাহেলার মুখে কাহিনী শুনে ফারহানা মুগ্ধ হয়। বলে আপনিতো সুন্দর কাহিনী বলতে পারেন। রাহেলা বলে,
Ñএই কাহিনী কিন্তু আমি আমার চাচীর কাছ থেকেই শুনেছি। তিনি বেঁচে থাকলে তোমাকেও হয়তো শুনাতেন।
সন্ধ্যার পর সবাই একসাথে ফিরে যায় বাড়িতে। সাথে নিয়ে যায় কিছু আনন্দঘন সময়ের স্মৃতি।
ঢাকায় ফেরার পর ফারহানা ভুলতে পারেনা গ্রামের সেই রাত, সেই স্মৃতি, সেই নদী, সেই কাহিনী। তার মা জানায় তার পরিচিত আত্মীয়ের ছেলের সাথে ফারহানার বিয়ের কথা। ছেলে আমেরিকা থাকে, বিয়ের পর ফারহানাকেও নিয়ে যাবে। শুরু হয় মা-মেয়ের দ্ব›দ্ব। ফারহানা কোনমতেই দেশ ছেড়ে যাবেনা এবং এখনই বিয়ে করবেনা।
মা জানতে চান সমস্যা কোথায় ? চাপে পড়ে একসময় বলতেই হয় ফারহানের কথা। মা বলেন- বন্ধু থাকতেই পারে কিন্তু ভালোবাসা, বিয়ে এগুলো স্রেফ আবেগের বসে করে ফেললে সারা জীবন ধরে এর মাসুল দিতে হয়।
তোমার বাবার সাথে আমার বিচ্ছেদ কি তোমাকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়না। নারী মানেই একটু ভুলের জন্য জীবন যুদ্ধের ময়দানে অপরাজয় মেনে নেওয়া।
আমেরিকা প্রবাসী শিপন ইমেলে ফারহানার ছবি দেখেই পছন্দ করে ফেলে তাকে। ফারহানার মায়ের সাথে তার যোগাযোগ হয় ব্যবসায় ও আত্মীয়তার সূত্র ধরে। দেশে এসে সে ফারহানাকে পাওয়ার জন্য বেপরোয়া হয়ে উঠে। ফারহান-ফারহানার প্রেমে বাধা হয়ে দাড়ায় পরশ্রীকাতর শিপন।
অর্থ বিত্ত ছাড়া আর কোন যোগ্যতাই নেই শিপনের। মা-কে সেকথা বুঝিয়ে বলেও লাভ হয়না। কিন্তু এত সহজে হাল ছাড়ার পাত্রী নয় ফারহানা।
ফারহানের সাথে দেখা করে সব খুলে বলে এবং তারা প্রতিজ্ঞা করে যে করেই হোক পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ হবে। এরই মধ্যে ফারহানার মা ফারহানাকে নিয়ে আমেরিকা যাওয়ার আয়োজন সেরে ফেলে।
বিমান বন্দরে মা-মেয়ে অপেক্ষা করছে। ফারহানার মন বলছে ফারহান আসবেই। যতই সময় ঘনিয়ে আসছে ততই যেন হৃদপিন্ডের ধক ধক আওয়াজ বেড়ে যাচ্ছে। ভালোবাসার মানুষটিকে ফেলে কি করে বিদেশ বিভূঁয়ে থাকবে ভাবতেই চোখের জল বাধা না মেনে গড়িয়ে পড়ে নীরবে। ফারহানের কথা বার বার মনে পড়ে যাচ্ছে। ময়মনসিংহের সেই রাতের স্মৃতিগুলো ভীড় করে পুনঃপুন।
ফারহান ফুলের তোড়া নিয়ে হাজির হওয়ার পর এদিক সেদিক খুঁজতে থাকে তার প্রেমিকাকে। অবশেষে পেয়ে যায় ফারহানাকে। ফারহানকে দেখে আর স্থির থাকতে পারেনা ফারহানা। দৌড়ে জড়িয়ে ধরে আবেগে কাঁদতে থাকে। মায়ের চোখও আটকে যায় মেয়ে ও তার প্রেমিকের এহেন আবেগঘন দৃশ্যে।
ত্রিশ বছর আগে এমনই একদিন এই বিমান বন্দর থেকে শুন্য হাতে ফিরতে হয়েছিল ফারহানার মা আয়েশা বেগমকে। সেই দংশন আজও তিনি ভুলতে পারেননি।
মেয়েকে তিনি নিরাশ না করে ফারহানের হাতে তুলে দিয়ে জীবনের একটা অধ্যায়ের সমাপ্তি টানেন । তিনি যে ভালোবাসা পাননি তার মেয়ে সে ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হোক সেটা তিনি কোন ভাবেই চাননা।
লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা
ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য
হার না মানা এক ভালোবাসার গল্প।
২৪ আগষ্ট - ২০২০
গল্প/কবিতা:
১০১ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ফেব্রুয়ারী,২০২৫