বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে সারা দেশে। কিন্তু হঠাৎ পুলিশের গুলি, রক্ত আর লাশ সেই আন্দোলনে যেন আগুনে ঘি ঢেলে দিল। তারপর তা ছড়িয়ে পড়ল দেশের সরবত্র।
ছাত্র-ছাত্রীদের এমন নিরহ আন্দোলনে পুলিশ আর পেটোয়া বাহিনী তাদের পিটিয়ে রক্তাক্ত করে ছাড়লো। প্রতিটা মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে সেই বিভদস্য দৃশ্য। মারা গছে কয়েকজন ছাত্র ছাত্রী।
কতগুলো তাজা প্রাণ ঝরে গেল এই দায় কার ? সাত দফা থেকে এবার শুরু হলো এক দফা আন্দোলন।
রবিন সেদিন বিকালে বেড়িয়েছে বাসা থেকে সন্ধ্যায় তার টিউশনি থেকে ফিরছিল হঠাৎ বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারী ও পুলিশের মাঝখানে সে পড়ে যায়। পুলিশ এলোপাথারি গুলি ছুড়ে চত্র ভঙ্গ করে দেয় আন্দোলনকারীদের। রাখিব চুপচাপ দাড়িয়ে থাকে রাস্তার মোড়ের বন্ধ দোকানের সার্টার ঘেষে তারপরও শেষ রক্ষা হয়না। একটা বুলেট এসে মুহূর্তের মধ্যেই রবিনের সব স্বপ্নকে ছারখার করে দেয়।
মাটিতে লুটিয়ে পড়ে সে আর রক্ত গড়িয়ে যায় রাজপথে। পুলিশ চলে গেছে, কিছু মানুষ তাকে ধরাধরি করে হাসপাতাল নেওয়ার চেষ্টা করে। সে চেতন এবং অবচেতন এর মাঝামাঝি অবস্থান থেকে সব শুনতে পায় কিন্তু কিছু বলতে পারি না।
উত্তেজিত জনতা পুলিশকে ধাওয়া করে, পুলিশ বক্সে আগুন দেয়। ক্ষোভের আগুনে পুড়তে থাকে নগরের অনেক স্থাপনা। পুলিশের উপর হজব পড়ব, ধ্বংস হবি তোরে এরকম অনেক অভিশাপ ভেসে আসে বাতাসে। অনেক গালি, অনেক বুল চলতে থাকে মুখ থেকে মুখে।
রবিনের কাছে মনে হয় হঠাৎ খুব শীত লেগে উঠেছে। সে মায়ের বুকের ওম খোঁজে হঠাৎ যেন সে ছিটকে পড়েছে অন্য কোথাও। সে মনে করে সে যেন নতুন করে অন্যরকম এক মাতৃ জঠরে স্থান পেয়েছে। যেখানে কেবল আন্দোলন, রক্ত আর লাশ আর গনমানুষের মিছিল।
সেখানে সবাই বলাবলি করছে, এবার সরকার পতন হবে ।তা না হলে আমরা ঘরে ফিরব না। এরকম খুনী সরকার আমরা চাইনা। সেখানে সে শুনতে পায় মুগ্ধ নামের কোন একজন বলছে, পানি লাগবে, পানি...........................।
রবিন কি করে বুঝাবে তার অনন্ত তৃষ্ণা জেগেছে। সে মুগ্ধ কে কি করে বুঝাবে এক বোতল পানি তার কিছুই হবেনা। সে ডাকছে আমাকে পানি দিয়ে যাও, ক্ষুধা লেগেছে বিস্কুট দিয়ে যাও। হঠাৎ তার মনে পড়ে মুগ্ধ কি করে তাকে পানি দিবে সেতো উত্তরায় আন্দোলনরত মানুষের তৃষ্ণা মিটাতে গিয়ে নিজেই অনন্ত তৃষ্ণা নিয়ে পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছে।
একটা ঘাতক বুলেট কপালে ঢুকে ঘাপটি মেরে বসে থাকতে চেয়েছে কিন্তু বেরিয়ে গেছে কানের কাছ দিয়ে। মুগ্ধের বন্ধুরা রক্ত বন্ধের চেষ্টা করে কিন্তু পারেনা। হাসপাতালে নেয়া হয় কিন্তু ডাক্তার বলে সে আর নেই। কেউ বিশ্বাস করতে পারেনা এত সুন্দর একটা ছেলে মারা গেছে। যে একটু আগেও বলছিল পানি লাগবে, পানি...........................কারে পানি লাগবে।
রবিন এত ডাকছে তবু কেউ শুনছে না কেউ তাকে এক ফোঁটা পানি দিচ্ছে না।
এক চুমুক পানির জন্য মীর মুগ্ধ, আবু সাঈদ, রিফাতসহ আরও যারা মারা গেছে সবাই সবাই এমন হাসফাস করছিল ?
মায়ের মুখটা মনে পড়ে। বলেছিল, দেশের অবস্থা ভাল না, আজ পড়াতে যাস না। মায়ের কথা শুনে ঘর থেকে না বেড়ুলে কি সে বেঁচে থাকতো ? ঘরে থেকেওতো অনেকে মারা গেল। আসলে মৃত্যু এমনই যখন যেখানে আসার আসবেই। কেউ রুখতে পারবেনা। এবার অনার্স ফাইনাল শেষ হলে একটা চাকরির প্রস্তুতি নেয়া শুরু করত সে। অভাবের সংসারে হাল ধরতো ।মা আর বোনের মুখে হাসি ফুটাতে। কিন্তু একটা বুলেট সে হাসিকে চিরতরে হাত চাপা দিয়েছি, একটা বুলেট তার জীবন নামের অস্তিত্বকে বিলীন করে দিয়েছে।
রবিন ভাবছে সে কি মরে গেছে! মরে গেলেই কি মানুষের এমন অনুভূতি হয়। এত মানুষের জটলা তবু সে কাউকে কিছু বুঝাতে পারছে না কেউ তার কথা শুনছে না।
সে দেখে বয়স্ক মানুষের চোখে অশ্রু আর তরুণদের চোখে আগুন। সে আগুন ভষ্ম করে দেবে বাংলাদেশ শুধু বাংলাদেশ কেন দরকার পড়লে পুরো পৃথিবীটাই আগুনে জ্বালিয়ে দিতে পারে তারা।
আচ্ছা সে মরে গেলে কি তার প্রতিশোধ নেবে এইসব তরুণ ছেলেরা। নেবে, নিতেই হবে তা না হেল যে তার আত্মা শান্তি পাবেনা।
কিন্তু মায়ের মন কি তবু সান্তনা পাবে। এই গণহত্যার কি বিচার হবে ? নাকি এই সরকার আরো কিছু মানুষকে আয়না ঘরে ভরবে, জুলুম আর নির্যাতন করবে।
ছাত্র সমাজ বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন করে নতুন বাংলাদেশ নিয়ে আসবে। কত কিছুই তো ঘটতে পারে কিন্তু সে কি তা দেখে যেতে পারবে।
উফ! তার ঘুম পেয়েছে। অনেক ঘুম মনে হচ্ছে চিরজীবনের মতো ঘুমিয়ে নেই। কেউ যেন তাকে ডাক না দেয়। কেউ যেন তাকে স্পর্শ না করে। ঘুম থেকে জেগে দেখে যেন কেয়ামত হয়ে গেছে । হাশরের মাঠ কায়েম হয়েছে মানুষের বিচার কাজ শুরু হয়েছে।
সেখানে সে ফরিয়াদ করবে আল্লাহর কাছে। যারা তাকে অকারণে গুলি করেছিল তাদের বিরুদ্ধে নালিশ ঠুকে দেবে।
আচ্ছা যারা থাকে গুলি করেছে তারা কি জাহান্নামে যাবে, সে কি জান্নাতে যাবে ? শহীদ, শহীদ বলে গলা ভেঙ্গে ফেলেছে অনেক অল্প বয়সী ছেলে। আসলেই কি সে শহীদ, সে কি তবে জান্নাত প্রাপ্য। কে জান্নাতে আর কে জাহান্নামে যাবে সে ফয়সালা তো আল্লাহ দিবেন। তার কেন এত ভাবনা।
মৌমিতা কে আর কখনো বলা হলো না তোমাকে ভালোবাসি। একদিন তুমি আমি এই পৃথিবীতে প্রনয়ের ঘর বাঁধবো। সেই ঘরে সুখের প্রজাপতি উড়ে বেড়াবে অষ্টপ্রহর কিন্তু কোথায় সুখের প্রজাপতি অসহ্য যন্ত্রনায় যেন জীবন বেরিয়ে যাচ্ছে রবিনের। সে কিছুই বুঝতে পারছে না। মনে হচ্ছে সে একটা পাখি হয়ে গেছে, সে আকাশে উড়ছে।
সবকিছু কেমন সাদা কালো হয়ে গেল ।সে তেমন কিছুই আর চিন্তা করতে পারছে না। সে কিছু অনুভব করতে পারছে না । সে কিছু দেখতে পারছে না । তবে কি এখানেই তার জীবনের সমাপ্তি ! তবে কি নতুন বাংলাদেশ, একবার স্বাধীন করা বাংলাদেশে দেখে যেতে পারবে না ?
অন্ধকার রাত্রির গভীরে রবিন পাড়ি দিল অনন্তলোকে। নতুন একটি ভোর হলো। নতুন একটি বাংলাদেশ দেখলো লক্ষ কোটি জনতা কিন্তু রবিনের মত যারা প্রাণ তারা তা দেখে যেতে পারলনা।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা
ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য
আন্দোলন ও একটি বুলেট গল্পে সম্প্রতি দেশে ঘটে যাওয়া ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে।
২৪ আগষ্ট - ২০২০
গল্প/কবিতা:
৯৮ টি
সমন্বিত স্কোর
৪.৬৭
বিচারক স্কোরঃ ২.৫৭ / ৭.০পাঠক স্কোরঃ ২.১ / ৩.০
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
বিজ্ঞপ্তি
“জানুয়ারী ২০২৫” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ জানুয়ারী, ২০২৫ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।