ঝড়ো বাতাস

ঘূর্ণিঝড় (জুলাই ২০২৪)

মোঃ মাইদুল সরকার
  • ৭৭
-মা, ও মা খিদা লাগছে। ভাত দেও না। ভাত খামু, অনেক খিদা লাগছে।

সাত বছরের ছেলে মাহিনের কথায় তার মায়ের যেন সংবিৎ ফিরে এলো। গত রাতের ঝড়- তুফান আর ঘূর্ণিঝড়ের কারণে উপকূলীয় এলাকায় অনেক বাড়িঘর, সহায় সম্পদ নষ্ট হয়ে গেছে। ক্ষয় ক্ষতির তালিকা করলে তা দীর্ঘ হবে। সেই তালিকায় আমেনা বেগম এর নাম অবশ্যই থাকবে।

নিজের ভিটামাটির দিকে এতক্ষণ তাকিয়ে শুধু ভাবছিলেন গতকালও সব ছিল, আজ সব শেষ। রিক্ততা আর শূন্যতা যে অজগরের মুখের মত হা করে সবে গিলে খাবে। কি করে এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠবেন এই এক ভাবনা ছাড়া আমেনা বেগমের আর কোন ভাবনা ছিল না সকাল থেকে। তাই তার ছেলে মাহিন এর কথা তার কানে যাচ্ছিল না ।

তাছাড়াও ভয়ে রাত ভর কেউ ঘুমাতে পারেনি। প্রবল বাতাসে যখন ঘর উড়ে যাবার দশা তখন আমেনা বেগম শুধু আল্লাহ রসূল কে ডেকে গলা শুকিয়ে ফেলেন। আল্লা রক্ষা কর, আল্লা রক্ষা কর..................এই জপ করতে করতেই রাত পার করেন। আল্লাহ তাদের জীবন রক্ষা করলেন কিন্তু ঘর রক্ষা হলোনা।

মাহিন যখন দেখল তার মা তার কথায় সারা দিচ্ছেনা তখন সে মায়ের শরীরে হাত দিয়ে একটু ঝাকিয়ে দিল। ছেলের স্পর্শ পেয়ে ভাবনার জগত থেকে ফিরে এলেন আমেনা। চোখ দিয়ে তখনো জল গড়িয়ে পরছে।

তাদের পাড়ার অনেকেরই ঘর উড়ে গেছে । কারো ঘর পড়ে গেছে। কেউ মারা গেছে। কেউ আহত। ঘূর্ণিঝড় লন্ড ভন্ড করে দিয়ে গেছে উপকূলবর্তী গ্রামটি। স্বজন হারানোর কান্না আর সব হারানোর বেদনা মিলে পরিবেশ কেমন যেন বিষাদময় হয়ে উঠেছে।

আমেনা বেগম ছেলেকে বললেন, বাবা ঘরই তো নাই, ভাত থাকবো কোথা থেকে। তুই বাজারে যা, গিয়ে দেখ দোকানীদের কোন কাজ কাম করে দিতে পারিস কিনা ? তাহলে হয়তো তোকে কিছু দিবে খেতে ।

মায়ের কথা শুনে মাহিন বাজারে চলে গেল । সেখানেও একই অবস্থা দোকানপাট ভেঙে পড়ে আছে । দোকানীদের বিভিন্ন জিনিসপত্র পড়ে আছে।

দোকানিরা যে যার মতন জিনিসপত্র আগলিয়ে রাখার চেষ্টা করছে। কেউ কেউ একা কুলিয়ে ‍উঠতে পারছেনা।

এদিক সেদিক ঘোরাফেরা করার সময় দোকানদার বজলু মাহিনকে ডাক দিল, এ ছ্যামড়া এদিকে আয় । আমার লগে একটু কম করে দে, তোকে টাকা দিমু।

বজলু তার মুদি দোকানের বিভিন্ন জিনিসপত্র কুড়িয়ে যাচ্ছে আর মাহিনন তাকে সাহায্য করছে। কাজের ফাঁকে মাহিনকে বলল, আমার তো ঘর খান কোন মতে খাড়া রইছে কিন্তু দোকান খান গেছে ।তোগো কি খবর ঘর আছে না নাই।


মাহিন বলল, নাই। ভাইঙ্গা গেছে।

ঘামানো শরীর নিয়ে বজলু বলে, গরীবের কপালইতো ভাঙ্গা, ঘর ভাঙ্গবোনা তো কি ভাঙ্গবো ?

হালার এই ঘূর্ণিঝড়ের দুঃখে মন চায় উপকূল ছাইড়া কোন দিকে যাইগা।

মাহিন বলে, আপনে গেলে আমারেও লইয়া যাইয়েন। আর ভাললাগেনা। ক্ষুধার কষ্ট সইতে পারিনা।

এভাবে দুপুর পর্যন্ত কাজ করার পর বজলু মাহিনকে তার বাড়ি নিয়ে ভাত খেতে দিল আর বিদায় বেলায় ২০০ টাকা দিল।

এদিকে সকালের নাস্তা না খাওয়া, দুপুরে ভাত খাওয়া আমেনা বেগম আসন্ন বৃষ্টির হাত থেকে বিভিন্ন জিনিস পত্র রক্ষার জন্য কাজ করেই যাচ্ছেন।

বাড়ি ফিরে মাহিন তার মায়ের কাছে গিয়ে দুইশত টাকা দিয়ে বলল, মা কাজ কইরা এই টাকাটা পাইছি। তুমি রাইখা দেও। আমেনা বেগম খুশি হলেন কিন্তু তার সে খুশি স্থায়ী নয়। তিনি কিভাবে ঘর ঠিক করবেন সেই চিন্তায় কাহিল।

আকাশ মেঘলা তাই বৃষ্টি ও রাত নামার আগেই আপাতত কয়েকটা ইট জোগাড় করে মাহিনের টাকায় চাল এনে ভাত রাধার ব্যবস্থা করলেন। সাথে ডাল আর আলুর ভর্তা। বড় তেড়পাল দিয়ে সব জিনিসপত্র ঢেকে রাতটা পার করলে মায়ে পুতে।

সরকারের ত্রাণ সহায়তা এবং বিভিন্ন কোম্পানির ত্রাণ সহায়তার তৎপরতায় অনেক অভাবী মানুষের মতন মাহিন্রাও কিছু পেল। চাল, ডাল, আলু, পেয়াজ, কম্বল এবং নগদ টাকা। সেই টাকা দিয়ে এবং ঋণ করে কোন মতে আমেনা বেগম তার ঘরটা দাঁড় করালেন।

দেখতে দেখতে গ্রামের সবাই আবার ঘুড়ে দারিয়েছে। দোকানগুলো নতুন করে তোলা হয়েছে, রাস্তা ঘাট ঠিক করা হচ্ছে। ঝড়ের পর আবার যেন সুদিন ফিরে এলো।

এদিকে বজলু তার ব্যবসা বাড়িয়েছে। তাই দোকান সামলাতে মাহিনকে তার দোকানে কাজ দিয়েছে। মাহিন এখন দোকানে কাজ ব্যস্ত সময় পার করে। তার এই সামান্য বেতনের টাকা আর আমেনা বেগম টুকিটাকি কাজ করে এবং নিজেদের ক্ষেত খামারে বিভিন্ন ফসল ফলিয়ে তা বিক্রি করে সংসার ভালোই চলছে।

মাহিন একটা এনজিও স্কুলে পড়তে শুরু করেছে। তার খুব লেখা পড়ার শখ। সন্ধ্যায় সে স্কুলে যায়। তার ইচ্ছা ঝড়ো বাতাসের সাথে চিরকাল লড়াই না করে লেখা পড়া শখে জীবনটাকে গড়ে নেওয়া। আমেনা বেগমও চান তার ছেলে বড় হোক, বিশাল বড় যাতে তাদের আর অভাব অনটন না থাকে।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
ফয়জুল মহী অসাধারণ মনোমুগ্ধকর উপস্থাপন।
doel paki আহারে জীবন !
জীবন যেখানে যেমন। ধন্যবাদ।
mdmasum mia ঝড়ো বাতাস থামুক।
ধন্যবাদ।ঝড়ো বাতাস থামুক। মানুষ নিরাপদে বাঁচুক।

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

ঘূর্ণিঝড় উপকূলে আঘাত হানলে মানুষের জীবনে যে দুর্দশা নেমে আসে তা গল্পে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে।

২৪ আগষ্ট - ২০২০ গল্প/কবিতা: ৯৩ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "গণহত্যা”
কবিতার বিষয় "গণহত্যা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৮ সেপ্টেম্বর,২০২৪