অভিমানী কিসমত

অভিমান (এপ্রিল ২০২৪)

মোঃ মাইদুল সরকার
মোট ভোট ৮০ প্রাপ্ত পয়েন্ট ৫.৩৫
  • ১২
  • ২০৯
খোলাহাটি ক্যান্টনমেন্টের ভিতর কিসমত আর ডলফিন নামের দুই ভাই-বোন যখন কোয়ার্টারে নতুন আসলো তখন ডলফিন কোন মেয়ের নাম হতে পারে এটা নিয়ে বেশ আলোচনা হলো ।তারপর থেকে কিসমতের সহপাঠীরা ও বন্ধুরা সব সময় তাকে ডলফিন মাছের ভাই বলে ক্ষ্যাপাত।

কিসমতী ব্যাপারটা নিয়ে মন খারাপ করে থাকতো ।কাউকে বলতেও পারতো না আবার সইতেও পারতো না। সে যতই বলতো তার ফোনের অন্য ভাল নাম আছে কিন্তু সেই নামে কেউ তাকে ডাকতো না সবাই শুধু ডলফিন ডলফিন করত।

স্কুলের দিনগুলো ভালোই চলছিল কিসমতের কিন্তু হুট করে কিসমতের বাবা তাকে মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে দিল।

কিসমতের বাবা আকন্দ সাহেব নিয়ত করে রেখেছিলেন ছেলে সন্তান হলে মাদ্রাসায় পড়াবেন। তাই চতুর্থ শ্রেণীতে অধ্যয়ণরত কিসমতকে মাদ্রায় দিয়ে দিলেন।

প্রতিদিনের স্বাভাবিক খেলাধুলা আর বাবা-মার কাছে থাকার আনন্দ থেকে বঞ্চিত হলো কিসমত। মাদ্রাসার পরিবেশে একদম মেনে নিতে পারল না। সব সময় মনমরা হয়ে থাকে সে। তাই সাপ্তাহিক বন্ধে বাসায় আসলে আর মাদ্রাসায় যেতে চাইতো না। এটা নিয়ে তার বাবা-মার সাথে বেশ মনমালিন্য ও ঝগড়া হতো।

প্রতিবারের মতো এই সপ্তাহেও কিসমত বন্ধে বাসায় এসেছে। বেশ খেলাধুলা করলো, বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিলো ।সবই ঠিক ছিল কিন্তু সে আর মাদ্রাসায় যেতে চায় না। তার মা তাকে বুঝালো তোমার বাবা অনেক রাগ করবে, মারধর করবে।

অনেক বুঝানোর পর কিসমত বলল, যাব আমাকে তাহলে আন্দাসা পিঠা বানিয়ে দাও। সারাদিন কাজকর্ম , রান্নাবান্না করার পর ছেলে যখন এই পিঠার বায়না ধরল তখন কিসমতের মা আয়েশা বেগমের আর ধৈর্য রইল না । তিনি বললেন, পিঠা কি মুখে বললেই হয়ে যা,য় এর জন্য চাল গুড়ি করতে হবে, গোলা করতে হবে তারপর পিটা হবে । তুমি সামনের সপ্তাহে এসে পিঠা খেয়ে যেও বাবা । এ সপ্তাহে বেশ ঝামেলা গেছে। আমি পারবো না, শরীরটাও ভালো লাগছে না।

এক কথায় দুই কথায় মা আর ছেলের মধ্যে ঝগড়া হয়ে গেল একচোট ।কিসমত রাগে অন্ধ হয়ে রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিল। এদিকে কিসমতের মা ছেলেকে অনেক ডাকাডাকি করলেন দুপুরে ভাত খাওয়ার জন্য । ছেলে তার দরজা খুলল না ভাতও খেলল না। যখন বিকাল হয়ে এলো তখন তিনি বললেন তোমার জন্য পিঠা বানিয়ে দিচ্ছি কিন্তু তবুও কিসমত দরজা খুলল না।

বিকালে যখন অনেক ডাকাডাকি করার পরেও কিসমত দরজা খোলো না তখন তার মায়ের এবং বোনের ভয় শুরু হলো। কিসমতের কোন সাড়া শব্দও পাওয়া যাচ্ছেনা। এক অজানা ভয় গ্রাস করে নিল আয়েশা বেগম ও ডলফিনকে। কিসমতের বাবা আকন্দ সাহেব অফিস থেকে বাসায় আসলেন সন্ধ্যার আগে। কোনভাবেই দরজা খোলতে না পেরে দরজা এক প্রকার ভেঙে ভিতরে ঢুকে দেখেন যা সর্বনাশ হওয়ার তা হয়ে গেছে।
অভিমানে তাদের ছোট্ট ছেলে পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছে। ফ্যানের সাথে ফাঁস লাগিয়ে ঝুলছে কিসমতের দেহ। তাপর তাদের আহাজারিতে যেন চারপাশ কেপে উঠে, পুত্র হারানোর শোক সহজে কেউ ভুলতে পারেনা।


কিছুদিন আগেই কিসমতের খালা কিসমতদের বাসায় বেড়াতে এসেছিলেন। সানোয়ারা বেগম তার বোনকে বলছিল কি দিনকাল পড়েছে রে ছোট, কথায় কথায় ছেলেমেয়েরা গলায় দড়ি দেয়। আমার দেবরের বাসা ঢাকায়। তার পাশের বাসের এক মহিলা তার মেয়ের উপর বেশি গোয়েন্দাগিরি করতেন। মেয়ে কোথায় যাচ্ছে কি করছে কার সাথে কথা বলছে কার সাথে খেলছে সব ব্যাপারে নাক গলাতেন। মেয়ে পছন্দ করে কোন একটা জিনিস চাইলে তিনি সেটা কিনে দিতেন না। তিনি বলতেন আগে তুমি পড়ালেখা ভালো করো তারপর পাবে। মেয়ে যখন পড়ালেখা ভালো করত তখন তার মা তাকে বলত আরো ভালো করো তখন দিব। এভাবেই বলতে বলতে দিন চলে যেত। মেয়েটির মনের অভিমান জমে জমে পাহাড় হয়। প্রতিবার না পাওয়ার বেদনার সাথে যোগ হয় প্রত্যাহিক জীবনের জটিলতা। একদিন বিকালে ছোট্ট ব্যাপার নিয়ে মা মেয়েতে ঝগড়া হয়। মেয় মায়ের অভিযোগ মেনে নিতে পারেনি। সবার অজান্তে গলায় দড়ি নিয়ে ঝুলে পড়ে সিলিং ফ্যানের সাথে।

খালার এই গল্প কিসমতও শুনেছে। তাইতো সেও না পাওয়ার বেদনায় অভিমানে দুনিয়া ছেড়েছে।

বোনের কথাগুলো আয়েশার কাছে কেমন গল্পের মত মনে হয়েছিল। কিসমতের মা ব্যাপারটা তেমন একটা সিরিয়াস ভাবে নেই নি। তিনি মনে করেছেন ছেলে মেয়ে রাগ করতেই পারে তাই বলে কি কথায় কথায় গলায় দড়ি দিবে। এখন যখন নিজের ছেলে এভাবে হুট করে চলে গেছে তখন তার বোধদয় হয়েছে।

আজও কিসমতের মায়ের চোখের জল শুকায়নি অভিমানের আর কোন সন্তান যেন পৃথিবীর মায়া ছেড়ে চলে না যায় তিনি শুধু তার চোখের জলে এই ফরিয়াদ করেন।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
শ্রেয়া চৌধুরী সুন্দর প্রকাশ
Nafi Al Ahnaf সুন্দর গল্প,অনেক ভালো
ধন্যবাদ । ভাল থাকবেন।
Apon Chowdhury ভালো লিখেছেন।
ধন্যবাদ সাথে থাকার জন্য।
mdmasum mia অভিমানে ঝরে যায় অনেক প্রাণ।
ঠিক বলেছেন। ধন্যবাদ।
doel paki আহা! এমন করে না ফেরার দেশে চলে যাওয়া মেনে নেয়া যায়না।
আসলেই মানা যায়না। ধন্যবাদ।
ফয়জুল মহী ভীষণ সুন্দর লিখেছেন প্রিয়

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

অভিমান করে কিশোর ছেলে যখন পৃথিবী ছেড়ে চেলে যায় তখন মায়ের ও পরিবারের যে অবস্থা হয় সেটাই গল্পে তুলে ধরা হয়েছে।

২৪ আগষ্ট - ২০২০ গল্প/কবিতা: ৯৬ টি

সমন্বিত স্কোর

৫.৩৫

বিচারক স্কোরঃ ২.৬৮ / ৭.০ পাঠক স্কোরঃ ২.৬৭ / ৩.০

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪