গাজীপুরের ভাওয়ালের শাল বনে আবির আর মায়ার জোছনা দেখার সাধ অনেক দিনের। তাই দিন ক্ষণ ঠিক করে একদিন বেরিয়ে পড়ে প্রেমেক যুগল মধ্যরাতে বন জোছনা দেখবে বলে। গাড়িতে বসে মায়া ভাবছিল জোছনা দেখতে দেখতে জোছনা স্নান ভাবতেই রোমান্টিক অনুভূতি ছড়িয়ে পড়ে দেহ মনে।
আবির মায়ার দিকে তাকিয়ে বলে, কি ব্যাপার তুমি কি মনে মনে জোছনা স্নান সেরে ফেলছ নাকি ?
মায়া আবিরের কাধে মাথা রেখে বলে, আমি প্রায় সময় লক্ষ করি, আমি যেটা ভাবি সেটা তুমি কিভাবে যেন ধরে ফেল। আর এ জন্যই তোমাকে আমার এত ভাললাগে।
-আমি যে তোমার ভাবনার করিডোরে হেটে বেড়াই তাই বুঝতে পারি।
মায়া অবাক হওয়ার ভান করে বলে, ও মা তাই নাকি !
-তাহলে পুতলের মত করে আমাকে সাজিয়ে রেখ তোমার অন্তরে।
-সেতো তুমি বললেও আছ না বললেও আছো। মাঝে মাঝে কি মনে হয় জান ?
মায়া জানতে চায়, কি মনে হয়।
-মনে হয় তোমার আমার প্রেম একজনমে নয়। হাজার বছর ধরে আমাদের পরিচয়। আর এই ভালোবাসাবাসি যেন অনন্তকাল চলবে।
-কিন্তু মিস্টার ভালোবাসা যত বড় জীবনতো ততো বড় নয়।
-প্রেমিক প্রেমিকা মাত্রই এই আফসোসের আগুনে পুড়তে হয়, তাইতো বলতে হয় এত অল্পদিনের আয়ু কেন দিলে তুমি বিধি লক্ষ যুগের আয়ু আমায় দিতে তুমি যদি, প্রিয়াকে আমার আমি বার বার ভালোবেসে যেতাম নিরবধি।
জীবনটা গান কিংবা গল্প, নাটক, সিনেমা নয়। এবার একটু ব্রেক দরকার । হালকা নাস্তা খেতে হবে। একটা নাস্তার দোকানে সিঙ্গারা, পেয়াজু, সমুচা আর কফি খেয়ে নিল মায়া আর আবির।
ঢাকা থেকে গাজীপুরের দূরুত্ব বেশি না হলেও জ্যামের জন্য মনে হয় দূরের রাস্তা। বিকালের রোদ ক্রমে ক্ষয়ে যাচ্ছে, একটু পরেই সন্ধ্যার অন্ধকার নামবে পৃথিবীর বুকে। এসময়টা বড় অদ্ভুত। পশু, পাখি, মানুষ নিজ নিজ গন্তব্যে পৌছতে ব্যস্ত থাকে।
কিন্তু চাইলেই সব পাওয়া যায়না। একটি অনাকাঙ্খিত দুর্ঘটনা আবির আর মায়াকে পৌছতে দিলনা তাদের গন্তব্যে। বাধ্য হয়ে তারা ঢাকায় ফিরে। ফিরতি পথে প্ল্যান করে ফেনী পরশুরাম সড়কের পাশে অবস্থিত কাজিরবাগ ইকো পার্কে বন জোছনা নামক ডাকবাংলোয় জোছনা দেখবে।
নানা ঝামেলায় বছর গড়িয়ে যায় কিন্তু তাদের আর ফেনী যাওয়া হয়ে উঠেনা। অবশেষে বর্ষার মাঝামাঝি সময়ে তারা চলে এলো ফেনী। ডাকবাংলোয় আগেই বুকিং দিয়ে রাখে আবির। দিনের বেলায় ঝুম বৃষ্টিতে ভিজে রাতে জোছনা দেখবে বলে জেগে থাকে প্রেমিক যুগল।
রাত বাড়তে থাকে, মানুষের আনাগোনা কমতে থাকে। রাতের জন্য গ্রিল, বাটার নান আর সালাড নিয়ে এসে মজা করে খেতে খেতে আবির বলে এখা থেকে বিলোনিয়া স্থল বন্দর কাছেই যাবে নাকি ?
-যাওয়া যায়।
-গা ছারা ভাবে বললে তার মানে ইচ্ছে নেই।
কথা ঘুরিয়ে মায়া বলল, ইস পাখির মত যদি ডানা থাকতো তবে প্রতিদিন উড়ে উড়ে ঘুরে ঘুরে কত নতুন জায়গা যে দেখতে পেতাম !
শুনে আবির বলল, আরে মানুষের পাখা লাগেনা। মনটাইতো পাখির মত উড়ে আর ঘুরে।
পাখি জীবন আমার পাখি জীবন..............বাকি জীবন আমি কাটাতে চাই পাখি জীবন......
আবির বলল এটা কি তোমার নতুন গান না কবিতা।
মায়া মুখ বাকিয়ে বলল, তুমি যেটা ভেবে সুখ পাও সেটাই। হা হা হা.............
মায়ার হাসিতে যোগ দেয় আবির। ওদের বাধ ভাঙ্গা হাসির মতই বাহিরে বাধ ভাঙ্গা জোছনা ছড়িয়ে পড়ে।
জোছনার আলো পৃথিবীতে আলোকিত করে এক স্বর্গের সুষমা যেন সৃষ্টি করেছে । অদেখা অদ্ভুত সুন্দর্য যেন ভরে গেছে চারপাশ।
অপরূপা তুমি অপরূপা মায়া ভরা জোছনাতে................
আসিফের গানটি গেয়ে উঠে আবির। মায়ার শুনতে ভালই লাগছে। আহা ! বেঁচে থাকা এত আনন্দের, এত সুখের।
অল্প কিছু জোনাকি যেন গল্পের আসর বসিয়েছে বাগানের ঝোপের আড়ালে। নিরব হয়ে তারা রাত্রির এই সৌন্দর্য দেখছিল তখন হঠাৎ করেই মায়া বলল, বোনের জোসনা দেখতে দেখতে কি রাত পার করবে মনের জোসনার খবর নিবে না।
কেন তোমার মনের গহিনে শব্দহীন জোসনার ভিতর কি আমি ছাড়া অন্য কেউ খেলা করে।
না অন্য কেউ খেলা করে না কিন্তু তুমিও তো সেখানে খেলা করছ না, শুধু জোছনা নিয়ে খেলে যাচ্ছ সেই তখন থেকে।
আসলে প্রেমে পড়লে মানুষের অদ্ভুত সব অনুভূতির সৃষ্টি হয়। আচ্ছা এই মুহূর্তে তুমি কি ভাবছো বলতো?
আবির বলব কি আবার ভাববো এইতো আজকের এই সৌন্দর্য যেন আগামী দিনেও আমাদের মন থেকে ম্লান হয়ে না যায়। আমাদের ভালোবাসা যেন আরো প্রগাঢ় হয় এতটুকুই।
মায়া হেসে বলল, জাস্ট এতোটুকুই ভাবছো আর আমি আরো কত কিছু ভেবে ফেলেছি। বিয়ের পর এমন জোছনা রাতে আমরা কোথায় থাকবো, কি করবো কি বলবো এমনকি বারান্দায় দাঁড়িয়ে তারা ভরা রাতের আকাশে তুমি আমার চুলের খোপায় ফুল গুজে দেবে আর আমি তোমাকে একটা সুন্দর কবিতা আবৃতি করে শোনাবো।
আবির বেশ অবাক হয়। বলে, তোমরা মেয়ে মানুষ ভাবতে পার, মুহূর্তেই তাল গাছ ছাড়িয়ে আকাশ।
আসলে যাপিত জীবন আর মানুষের কল্পনা কিংবা আবেগ যোজন যোজন দূরত্ব বহন করে।
-কে জানে তোমাকে না পেয়ে হয়তো আমি হাহাকার নিয়ে বেঁচে থাকব একটা জীবন। কি জানি আমাকে না পেয়ে তুমি হয়তো বিধাতাকে বলবে কেন মিলন লিখতে পারলে না আমাদের কপালে।
চাইলেই কি পারত না আবির মায়া এক হতে?
এই যে আবির একটু বেশি হয়ে যাচ্ছে কি বলছো এসব। তোমার এসব কথা শুনে আমার কিন্তু ভয় লাগছে।
আরে এমন জোসনা রাতে মাতাল হতে কার না ভালো লাগে। তাই হয়তো বলছি একটু আধটু আবোল তাবোল।
মায়া যেন হঠাৎ গম্ভীর হয়ে গেল, তাহলে কি আবির মনে মনে অন্য কিছু ভাবছে। এটা সম্পর্ক ভেঙ্গে যাওয়ার ইঙ্গিত নয়তো ?
আবির বুঝতে পেরে মায়ার সামনে এসে বলল, এই যে হাত দিলাম বাড়িয়ে, যাবনা তোময়া ছেড়ে হারিয়ে। ধরো ধরে হাত দুটি ধর, কর কর আরও আপন করো।
মায়া বুঝতে পাড়ল আবির তাকে হালকা করতে চাইছে, তাই সে দু’পাক নেচে সামনে এসে হাত ধরে বলল, আমি ছাড়া তুমি এই পৃথিবীতে হবে না আর কারো, আমাকেই ভালোবাসো আরো।
আবির মায়াকে জড়িয়ে ধরে বলতে থাকে কানে কানে-
সখি ভালোবাসা কারে কয় সে কি কেবলই যাতনাময়…...
আর যাতনা বাড়িয়ে লাভ নেই চলো ঘুমাবে চলো। আবার সামনের বছর এমন জোছনার দিনে এখানে আমরা জোসনা স্নান করবো । খুব ভালোলেগেছে আবার এই জায়গাটা।
খুব সকালে মায়ার ঘুম ভেঙ্গে গেল। সে পুকুরের পাড়ে হেটে বেড়াচ্ছে। হঠাৎ একটা বেড়া কাগজ নজরে পড়ল।
কোন এক প্রেমিকা লিখেছে-
প্রতিশ্রুতির প্রজাপতি সবসময় তার লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে পারে না। তাই আজকের পর থেকে তুমি আমি এই পৃথিবীতে ভিন্ন ভিন্ন সম্পর্কে জড়াবো। কিন্তু আমার মত তুমিও কোনদিন ভুলতে পারবেনা প্রথম ভালোবাস, প্রথম প্রেম। পৃথিবীতে যত দিন বেঁচে থাকবো আজকের রাতের মত জোসনা স্নান করা হলো না আর কোন দিন। ভালো থেকে তুমি, স্মৃতিতে রেখ আমায়।
মায়া রুমে ফিরল। সে দেখলো আবির তখনও ঘুমাচ্ছে। আবিরের ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে ভাবলো নাহ এবার বিয়েটা সেরে ফেলতে হবে। এই ছেলেকে ছাড়া সে অন্য কাউকে ভাবেত পারবেনা নিজের পাশে।
তার মন বলে উঠে – ওরে এত ভালোবাসা আমার বুকে নাহি ধরে, এই অন্তরে তুমি ছাড়া দিবানিশি আর কেউ না বসক করে।
ভালোবাসা গল্পগুলো হোক আবির আর মায়ার মত এমন সুন্দর পরিপাটি, মসৃণ, রোমান্টিক ও মিলনাত্মক।
লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা
ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য
আবির আর মায়ার ভালোবাসার গল্প আর বন জোছনা উপভোগ করার বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে।
২৪ আগষ্ট - ২০২০
গল্প/কবিতা:
৯৬ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪