চমৎকার একটা রোদেলা দিন! আর মনের আনন্দ নিয়ে বিকশিত ফুল রেইন লিলির দিকে তাকিয়ে আছে দিহান। গত রাতের বৃষ্টির পর সকালে এই রেইন লিলি ফুটে থাকার দৃশ্যটা মন ভাল করে দিল দিহানের। কিন্তু পরক্ষনেই স্বপ্নের কথাটা মনে পড়ে গেল আর তার মুখটা আস্তে আস্তে মলিনতায় রূপ নিল।
প্রেমে পড়লে প্রেমিকাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখা কমন একটি ব্যাপার। দিহান দিয়ার প্রেমে পড়েছে। দিয়া এখনো সবুজ সংকেত দেয়নি। তবে দিহান অপেক্ষায় আছে অল্পকদিনেই সবুজ বাতি জ্বলে উঠবে।
দিয়াকে নিয়ে কোন এক নদীর পাড়ে গল্প করছে দিহান। নদীর পাড় ভর্তি কাশ ফুলে। হঠাৎ দিয়া এক অদ্ভুত আবদার করলো। সে বলল, দিহান আমি এক লাভে এই নদীতে নামবো। তুমি চোখ বন্ধ করে রাখবে। আমি নদীতে ডুব দিয়ে উঠার পর তুমি চোখ বন্ধ করে আমার গালে যদি চুমো দিতে পার তবেই তোমার সাথে আমার প্রেম হবে। দিহান রাজি হলো। দিয়া লাভ দিয়ে নদীতে পড়ল। নদীর জলে আলোড়ন হলো। দিয়া আধা মিনিট পড় ভেসে উঠল এবং একটু ডান দিকে সরে গেল।
দিহান পা টিপে টিপে নদীর কিনারায় চলে গেলো। একটু দামলো । দোটানায় পড়ে গেল দুহাত পিছিয়ে ডান দিকে সরে এলো। তারপর দিয়ার মুখোমুখি হয়ে ওর গালে চুম্বন করলো।
লটারী জিতে যাওয়া বিজয়ীর মতো খুশিতে আত্মহারা হয়ে চোখ খুলে দিয়া জড়িতে ধরলো। কিন্তু একি ! এ যে দিয়া নয়! তারই ক্লাশমেট পরাগ। স্বপ্নের মাঝে যেন দুঃস্বপ্নের গ্লানি। বাস্তবতা মনে করে দিহান চিৎকার করে উঠল। তুই এখানে কি করছিস ?
তারপর তার ঘুম ভেঙ্গে গেল। সে দেখল দিয়া বা পরাগ কেউ নেই। সে তার বিছানায় বসে আছে। স্রেফ একটা স্বপ্ন দেখেছে।
নাস্তা শেষ করে দিহান কলেজের উদ্দ্যেশে বেড়িয়ে পড়ল। কলেজে গিয়ে সে দিয়াকে খুঁজতে থাকে কিন্তু প্রথমেই তার দেখা হয় পরাগের সাথে। একটা অদ্ভুত দৃষ্টি নিয়ে সে পরাগের দিকে তাকিয়ে থাকে। সেই স্বপ্নটা আবার চোখের সামনে চলে আসে। এবার যা ঘটে তার জন্য দিহান বা পরাগ কেই প্রস্তুত ছিলনা।
দিহান দেখে কলেজটা নদী হয়ে গেছে। আশে পাশে কেউ নেই। দিয়া নদী থেকে স্নান শেষে উঠে এসেছে। তার চুল বেয়ে অসংখ্য পানির ফোটা মুক্তা দানার মত ঝড়ে পড়েছে। দিয়াকে আগুন সুন্দরী মনে হচ্ছে। জলের ছিটায় সে রূপের আগুন যেন দাউ দাউ করে জ্বলছে। দিহান সব ভুলে দিয়ার কপালে একটি চুম্বন প্রজাপতি একে দেয়। কিন্তু চুম্বনের পর দেখে এতো দিয়া নয় পরাগ। স্বপ্নের মত সে বাস্তবেও পরাগকে চুমো দিয়েছে। আর এদিকে ক্যাম্পাসের সবাই অবাক হয়ে ওদের দু’জনের দিকে তাকিয়ে আছে।
হঠাৎ কোথা থেকে পাখির মত উড়ে এল দিয়া। দিহানকে উদ্দেশ্য করে সে বলল, তুমি আমার ভালোবাসার যোগ্য নও। হতভম্ব দিহান কি করবে বুঝতে পারছেনা। পরাগও মাথা নত করে দাড়িয়ে আছে।
আচমকা মাথা ঝাড়া দিয়ে সে বাস্তবে ফিরল। পরাগের সামনে দাড়িয়ে সে এসব কি ভাবছে। এমন দিবা স্বপ্নও মানুষ দেখে। আসলে প্রেম কি তার মাথা নষ্ট করে দিয়েছে। সে এসব আবোল তাবোল কি ভাবছে।
আসলে দিয়াকে নিয়ে কল্পলোকের অনেক স্বপ্নই দিহান দেখে কিন্তু ইদানিং পরাগের সাথে দিয়ার মাখামাখি দেখে সে পরাগের উপর খুবই রেগে আছে। আর এই কারণেই সে উল্টা পাল্টা স্বপ্ন দেখছে। তাই দিয়া যখই স্বপ্নে দেখে সেই কল্পলোকে পরাগও হাজির হয়।
দিহানকে এভাবে চুপ করে দাড়িয়ে থাকতে দেখে পরাগ বলল, কিরে তোর কি হয়েছে আমার দিকে এভাবে তাকাচ্ছিস কেন ? আজকে আমায় নতুন দেখছিস নাকি ?
না মানে দিয়াকে খুঁজছিলাম। ওকে দেখেছিস ?
-হ্যা দেখেছি।
-কোথায়?
-লাইব্রেরিতে।
-চল ওর সাথে দেখা করি।
পরাগ বলল, নারে তুই যা। আমার একটু জরুরী কাজ আছে, আমাকে মোহাম্মদপুর যেতে হবে। দিহান লাইব্রেরীতে গিয়ে দেখল দিয়া একটা গল্পের বই পড়ছে।
দিহান কাছে যেতেই দিয়া ভ্রঁ কুচকে তাকিয়ে থাকলো। দিহান বলল, তোমার সাথে আমার কিছু কথা ছিল।
পরে বললে হয়না, আমার এখন কথা বলতে ইচ্ছে করছেনা।
দিহান চলে এলো। দিয়া আসলে পরাগকে মনে মনে ভালোবাসে। তাকে নিয়েই স্বপ্ন দেখে। যেমন আজও সে স্বপ্নে দেখেছে সে লাইব্রেরিতে গল্পের বই পড়ছে পরাগ এসে পিছন থেকে তার চোখ ধরে বলছে, বলতো আমি কে ?
আসলে দিয়া স্বপ্নটার বাস্তবায়ন চাইছে। সে আশা করছিল স্বপ্নের মত পরাগ এসে তার চোখ হাত দিয়ে বন্ধ করে বলবে বলতো আমি কে ? পরাগের যায়গায় দিহানকে দেখে দিয়া বিরক্ত হলো।
দিহান চলে যেতে যেতে পরাগের উপর আবার রাগতে লাগলো।
দিয়া ঝিম মেরে বসে আছে, সে জানে না পরাগ তো মোহাম্মদপুর চলে গেছে। দিয়া পরাগকে নিয়ে কল্পলোকে বসবাস শুরু করে দিয়েছে। কিন্তু পরাগ জানেনা দিয়া তাকে কতটা ভালোবাসে।
বেশ কিছুদিন আগের ঘটনা। দিয়া স্বপ্ন দেখলো কোন এক ব্রীজের রেলিং এ দাড়িয়ে সে আর পরাগ পরামনন্দে ফুচকা খাচ্ছে। তাই পরাগকে দিয়া জনাল চলনা একদিন আমরা আগুলিয়া ব্রিজে ফুচকা খেতে যাই। পরাগ মুখ কুচকে বলল, ফুচকা আমার একদমই পছন্দ নয়। তার উপর এত দূর গিয়ে ফুচকা খেতে হবে কেন ?
কথা শুনে দিয়া দমে গেল। কে কিছুতেই বলতে পারলনা এটা সে স্বপ্নে দেখেছে।
এভাবেই স্বপ্নলোকের বাসিন্দা হয়ে সময়ের স্বপ্নচক্রে আটকে আছে দিহান ও দিয়া। শুধু দিহান কিংবা দিয়া নয় এমন হাজারো তরুণ তরুনী।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা
ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য
প্রেমিক প্রেমিকা প্রেমে পড়ে স্বপ্ন ও স্বপ্নলোকের ভাবনায় কত কি অদ্ভুত কর্মকান্ড করে থাকে সেই বিষয়টি গল্পে তুলে ধরা হয়েছে।
২৪ আগষ্ট - ২০২০
গল্প/কবিতা:
৯৬ টি
সমন্বিত স্কোর
৪.১
বিচারক স্কোরঃ ১.৭ / ৭.০পাঠক স্কোরঃ ২.৪ / ৩.০
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
বিজ্ঞপ্তি
“নভেম্বর ২০২৪” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ নভেম্বর, ২০২৪ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।