চৌমুহনী থেকে যে রাস্তাটি এক্সেস রোডের দিকে গেছে এবং শেষে হালিশহরে গিয়ে মিশেছে সে রেডি ধরে কিছু দূর এগিয়ে গেলেই দাইয়াপাড়ার মোড়। আর মোড়ের মুখের মুখে প্রথম বিল্ডিংটি হচ্ছে মঞ্জুলা মঞ্জিল। পূর্বে বিল্ডিংটির নাম ছিল হামিদ ভিলা।
হামিদ সাহেব মারা যাওয়ার পর বিল্ডিংটির নতুন মালিকের নামে নামকরণ করা হয় মঞ্জুলা মঞ্জিল।
চারতলা বিল্ডিং এর নিচতলায় থাকে ময়মনসিংহের একটি পরিবার ভাড়া থাকে। স্বামী, স্ত্রী ছাড়াও আরো তিনজন এ পরিবারের সদস্য।
এই পরিবারের সবাই উপার্জনক্ষম। যে যার কাজ আর স্বপ্ন নিয়েই ব্যস্ত। আনোয়ারা বেগম গার্মেন্টসে কাজ করেন তার স্বামী স্কুলের দপ্তরি। মেয়ে মনিরা এ বছর মাস্টার্স পরীক্ষা দিবে এবং সে নার্স পেশার সাথে জড়িত ।ছোট ছেলে শারীরিক প্রতিবন্ধী হলেও শাক সবজি বিক্রি করে প্রতিদিনই টাকা উপার্জন করে আর বড় ছেলে রোমেল নামকরা কম্পানিতে সেলসম্যান হিসেবে কাজ করে।
বড় ছেলে রোমেল সম্প্রতি কম্পিউটার কিনেছে। সে প্রতিদিন কাজ থেকে ফিরে কম্পিউটার নিয়ে বসে। তার স্বপ্ন একদিন সে কম্পিউটার দিয়ে ব্যবসায় দাড় করাবে যা দিয়ে ভালো ইনকামের ব্যবস্থা করবে। তার সেই স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে সে উদয় অস্ত খেটে যায়।
মঞ্জুলা মঞ্জিল এর দ্বিতীয় তলায় থাকেন ব্যবসায়ী কামরুল হাসান। ব্যবসায়ী কামরুল হাসানের স্ত্রী ও এক সন্তান নিয়ে তার সুখের সংসার। কামরুল ব্যবসার কাজে ব্যস্ত থাকে সারাদিন। ব্যবসায় কাজে ও নানান ঝামেলায় ব্যস্ত থাকায় বাসায় ফিরেন রাত করে। কামরুল হাসানের স্ত্রী রোকেয়া সারাদিন মান কাজ করে, মেয়েকে সামলিয়ে অবসর সময়ে বই নিয়ে বসে।
রোকেয়ার গল্প- কবিতা পড়া ও লেখা নিয়মিত অভ্যাস। নেশাও বলা যায়। সে ব্লগে ও বিভিন্ন ওয়েবসাইটে গল্প কবিতা প্রতিমাসেই লেখে থাকে। তার গল্প- কবিতা যেমন প্রকাশিত হয়, তেমনি পুরস্কারও পায়। রোকেয়ার স্বপ্ন একজন ভালো কবি ও গল্পকার হওয়া । সে চায় তার নাম দেশজুড়ে ছড়িয়ে যাক। সবাই তাকে গল্পকার ও কবি হিসেবে চিনুক জানুক। সেই স্বপ্নকে আঁকড়ে ধরেই সে লিখে চলে দিন রাত।
রোকেয়ার স্বামী অবশ্য তার এই লেখা লেখি পছন্দ করেননা। তিনি বলেন-কি হবে লিখে ? তারচেয়ে ভাল মেয়েকে সময় দাও, সংসারে মনোযোগ দাও। তাতেই লাভ।
কিন্তু রোকেয়া তার এই লেখার প্রতিভাকে নিভিয়ে দিতে চায় না। সে দমে যাওয়ার মেয়ে নয়।
তৃতীয় তলায় থাকেন মঞ্জুলা মঞ্জিল এর বর্তমান মালিক মঞ্জুলা বেগম। তিন মেয়েকে বিয়ে দিয়ে তিনি এখন ঝাড়া হাত পা। এক মেয়ে আমেরিকা থাকে। মেঝ মেয়ে লন্ডনে আর ছোট মেয়ে ঢাকায় থাকে। প্রতিমাসে না পারলেও চার পাঁচ মাস পরপর মেয়েরা তাদের আদরের মাকে দেখতে আসে। মাও মেয়ে অন্ত:প্রান। মঞ্জুলা বেগমেও মন চাইলে মেয়েদের বাসায় চলে যায়। দু’ চার দিন থেকে আবার চলে আসেন। এভাবেই মঞ্জুলা বেগমের দিনরাত কেটে যায়। তার স্বপ্ন বাসাটাকে পাঁচ তলা করা।
পাঁচ তলা কমপ্লিট করে তিনি হজ্ব করবেন। এখন এই বাড়ি বাড়ানো আর হজ্ব এর স্বপ্ন নিয়ে বিভোর হয়ে আছেন মঞ্জুলা বেগম। জীবনের এই পড়ন্ত বেলায় তার আর কোন চাওয়া পাওয়া নেই। জীবনের উপর দিয়ে কম ধকল তো গেল না। অনেক অনেক ঝরে ঝাপটা সয়ে স্বামীর মৃত্যুর পর মেয়েদের নিয়ে যে সংগ্রাম করেছেন। বলা যায় সেই সংগ্রামী তিনি সফল হয়েছেন। মেয়েদের উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করে ভালো ঘরে বিয়ে দিয়েছেন। এখন তিনি মরে গেলেও আফসোস নেই। মেয়েদের তিনি সবসময় সুখী দেখতে চেয়েছেন । মেয়েরা এখন সুখে আছে, তারা ঘর,বর, ধনে জনে পূর্ণ। একজন মায়ের আর কি চাওয়ার থাকতে পারে এর চেয়ে বেশি। মাঝে মাঝে এসব ভেবে শুকিয়ায় তার চোখে অশ্রু চলে আসে।
চতুর্থ তলায় থাকে বগুড়ার একটি জয়েন্ট ফ্যামিলি। দুই ভাই। আবিদ আর সফিক সাহেব। বড় ভাই আবিদ ব্যাংকে চাকরি করেন। সফিক শিপিং লাইনে ব্যবসায় জড়িত। আবিদ সাহেবের দুই ছেলে কোন মেয়ে নেই। অনেক শখ ছিল একটি মেয়ে সন্তানের। কিন্তু ওপরওয়ালা তার কপালে দুই ছেলেই লিখে রেখেছিলেন। চেষ্টাতো আর কম করেননি কিন্তু দুই ছেলের পর আর কোন সন্তান হয়নি এই দম্পত্তির। দুই ছেলে আরাফ আর আরিয়ান সম্প্রতি সরকারি চাকরিতে জয়েন করেছে।
সফিক সাহেবের কোন সন্তান নেই। অনেক বছর ধরেই একটি সন্তানের স্বপ্ন দেখে আসছেন। কিন্তু তার ভাগ্যে সন্তান আছে কিনা তিনি জানেন না।
আবিদ এবং আকিবা বেগম তাদের দুই ছেলের জন্যই পাত্রী দেখছেন। পিঠাপিঠি দুই ছেলেকে এক সাথে বিয়ে করিয়ে, বিয়ের ঝামেলা সারবেন।
ছেলেদের বিয়ে দিয়ে ছেলে ও বৌদের উপর সংসারে দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে এই দম্পতি হাফ ছেড়ে বাঁচতে চান। তারপর তারা অপসর জীবন যাবন করবেন। সংসারের কোন ব্যাপারে নাক গলাবেননা। খাবেন, দাবেন আর ঘুরে বেড়াবেন।
বগুড়া গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে গেলে ফেরার সময় বগুড়ার বিখ্যাত দই, গাভীর খাঁটি দুধ, গ্রামের তাজা শাক-সবজি, ফলমূল ও মাছ নিয়ে আসেন। বাড়িওয়ালী মঞ্জুলা বেগমকে তারা দই ও অন্যান্য জিনিস সৌজন্যতামূলক হিসেবে দিয়ে থাকেন । এতে মঞ্জুলা বেগম বেশ খুশি হন।
মঞ্জুলা বেগম বাড়ির মালিক তাই তিনি সে কথা মাথায় রেখে কখনো খালি হাতে বাসন-বাটি ফেরত দেন না। তার নিজের হাতে রান্না করা কোন নাস্তার আইটেম বা ফ্রিজে থাকা মিষ্টি কিংবা ফল-ফলাদি যাই হোক একটা কিছু দিয়ে পাঠান। সব ভাড়াটিয়ার সাথে মঞ্জুলা বেগমের ভালই খাতির ও সম্পর্ক রয়েছে।
এভাবেই মানুষ প্রতিনিয়ত তার স্বপ্ন বুনে যায়। স্বপ্নকে সফল করতে পরিশ্রম করে যায়। এতকিছুর পরও কারো কারো স্বপ্ন সত্যি হয় আবার কারো কারো স্বপ্ন ভেঙ্গে যায়।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা
ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য
মঞ্জুলা মঞ্জিল নামক বিল্ডিং-এ বসবাসরত কিছু মানুষের স্বপ্ন গল্পে তুলে ধরা হয়েছে।
২৪ আগষ্ট - ২০২০
গল্প/কবিতা:
৯৮ টি
সমন্বিত স্কোর
৪.৪৪
বিচারক স্কোরঃ ২.১৯ / ৭.০পাঠক স্কোরঃ ২.২৫ / ৩.০
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।