তনিমা হেটে যাচ্ছে রাস্তার পাশ দিয়ে গাড়ি, রিকশা, সিএনজি, টেক্সি চলে যাচ্ছে তার পাশ দিয়ে সেদিকে তার ভ্রুক্ষেপ নেই।
বাসায় ছেলে মেয়ে কেউ নেই। স্বামী অফিস থেকে ফিরেনি। তনিমা একটা নাস্তার আইটেম তৈরি করবে কিন্তু হঠাৎ করেই গোল মরিচ শেষ হয়ে যাওয়ায় এবং মসলা না থাকায় সে নিজেই হেঁটে হেঁটে বাজারে গেল।
ফিরতি পথে একটা চায়ের দোকানে তার চা খেতে ইচ্ছে হলো। তেলে ভাজা পরোটা আর চা অর্ডার করে সে বসে আছে। শহরতলীর এদিকটায় মেয়েরা সাধারণত দোকানে বসে চা বা নাস্তা খায়না। কিন্তু তনিমার এসব নিয়ে কোন মাথা ব্যাথা নেই। কে কি ভাবল, কে কি বলল এসব ভেবে হঠাৎ খেতে চাওয়ার শখটা মাটি চাপা দেওয়ার মত মেয়ে অত্যন্ত তনিমা নয়। দোকানটায় চোখ বুলাতেই হুট করে একটা শালিক পাখি দোকানে ঢুকে গেল। তনিমা বেশ অভাক হঠাৎ শালিক পাখি কেন দোকানে ঢুকলো নিশ্চয়ই ভুল করে ঢুকে পড়েছে।
কিন্তু তনিমাকে অবাক করে দিয়ে শালিক পাখিটি দোকানের এক পাশে রাখা খাঁচার ভিতর নিজে নিজেই গিয়ে বসলো। তনিমা খেয়াল করে দেখল শালিক পাখিটি বেশ অদ্ভুত, তার গলায় কোন পশম নেই এবং মাথার উপরে অল্প কয়েকটি পশম আছে যা ঝুটির মতো দেখাচ্ছে এবং পাখিটির এক পা ভাঙ্গা।
সে বুঝতে পারল পাখিটি ভুল করিনি সে নিজেই ভুল করেছে কারণ পাখিটি এই দোকান মালিকের পোষা পাখি।
ভাজা পরোটা আর ধুমায়িত চা এসে গেছে। চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে একটা তৃপ্তির ভাব চোখে মুখে টের পেল তনিমা।
তনিমার পুরো নাম তনিমা হামিদ শায়লা। শায়লা নামটি তার বাবার খুব পছন্দের একটি নাম। বাবার কথা মনে হতেই স্মৃতির কুয়াশা ভেদ করে বাবার মুখটি ভেসে উঠলো।
১৯৭১ সালের এপ্রিলের মাঝামাঝি দেশে তখন শুরু হয়েছে ঘোরতর যুদ্ধ। বাবা একদিন বিদায় নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন দেশমাতাকে শত্রুমুক্ত করার জন্য।
তনিমা আর তার ছোট ভাই হাসান-কে নিয়ে তার মা তাদের নানির বাড়ি তে গিয়ে উঠলেন। নানির বাড়ি ঢাকা থেকে অনেক দূর। মুন্সিগঞ্জের গোসাইরচর গ্রাম। গ্রামের পাশেই রয়েছে নদী। নদী আর সবুজ প্রকৃতি তনিমার ছোট্ট মনে যেন ক্ষণে ক্ষণে দিয়ে যায় দোলা।
ঢাকার বা তাদের বাসায় একটি শালিক পাখি ছিল খাঁচা বন্দী।
বাবা বলেছিল যাওয়ার সময় যদি দেশ স্বাধীন হয় তবে তিনি এসে এই শালিক পাখিটিকে মুক্ত করে দিবেন। মুক্ত দেশের মুক্ত আকাশে পাখি স্বাধীন ভাবে উড়ে বেড়াবে এই ছিল তার স্বপ্ন।
দিন যায় মাস যায় কিন্তু বাবা আর ফিরে না। ১৬ই ডিসেম্বর বিজয়ের দিন। লাল সবুজ পতাকা হাতে নিয়ে অগণিত মুক্তিযোদ্ধা ফিরে আসে কিন্তু ফিরে আসে না তনিমার বাবা। অসংখ্য বীর শহীদের মত মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে বাংলার বুকে মিশে গিয়েছে তনিমার বাবা।
শত্রুমুক্ত একটি দেশ উপহার দিয়ে চিরতরে পরপারে পাড়ি জমিয়েছেন তনিমার বাবা আনোয়ার হোসেন।
চা পরোটা শেষ করে বাসায় ফিরে তনিমা। আজন্ম বাবার স্মৃতি আগলে রেখেছেন মা। মায়ের মৃত্যুর পর এখন সেই সব স্মৃতির অংশীদার কিংবা ভাগীদার তনিমা।
মশলাপাতি রেখে বাবার ব্যবহৃত শার্ট, চিঠি, রোমাল স্পর্শ করে বাবাকেই যেন স্পর্শ করে তনিমা।
অজান্তে চোখের অশ্রু গড়িয়ে পড়ে সুতার কারুকাজ করা রুমালের উপর।
ছেলে ফাহিম আর মেয়ে সাবিলা কলেজ থেকে বাসায় ফিরে দেখে মা স্মৃতিকতর হয়ে কাঁদছেন। মা-কে তারা কলেজের ঘটে যাওয়া বিভিন্ন কথা বলে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে। অতীত থেকে বর্তমানে ফিরে আনতে নানা ছলে নানান কথা বলে।
তারা গর্ব করে বলে, তাদের নানা মুক্তিযুদ্ধে গেছে বলেই তো আজ তারা এরকম একটি স্বাধীন দেশের নাগরিক।
সত্যিই তো তনিমার মতন এমন হাজারো কিশোর তরুণী বাবাকে হারিয়েছে বলেই তো দেশমাতৃকাকে পেয়েছে বাংলার মানুষ। যুদ্ধ জয়ে শহীদদের বিজয় গাঁথা চির অম্লান হয়ে থাকবে।
তনিমার বাবার রুমালে লেখা ছিল-
‘আমি যদি চলে যাই জীবনের তরে
স্মৃতিটুকু রেখে দিও তোমারি অন্তরে।’
হ্যাঁ স্মৃতিটুকু রয়ে যাবে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে। তনিমারা কোন দিন ভুলে যাবেনা বাবার স্মৃতি। দেশ ভুলে যাবেনা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা
ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য
তনিমা নামের এক মেয়ের বাবাকে নিয়ে যুদ্ধ দিনের স্মৃতি ও স্মৃতি চিহ্ন রুমাল নিয়ে কাহিনি তুলে ধরা হয়েছে গল্পে।
২৪ আগষ্ট - ২০২০
গল্প/কবিতা:
৯৮ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।