ফাতেমা এই ফাতেমা। একটু এদিকে আয় তো। পঞ্চম শ্রেণিতে পড়া ফাতেমা টিফিন পিরিয়ডে টিউবওয়েল থেকে হাত মুখ ধুয়ে ফিরছিল। ফাতেমার বান্ধবী মিথিলা তাকে পেছন থেকে ডাকতে থাকে।
মিথিলার ডাকে সাড়া দিয়ে ফাতেমার মিথিলার কাছে গিয়ে মাঠের এক পাশে বসল। ফাতেমার শুকনো মুখ দেখে মিথিলা জানতে চায়, কিরে টিফিন করিস নি?
নারে আজ আর টিফিন করা হয়নি।
-কেন ?
মিথিলার এই কেন প্রশ্নের উত্তর এক কথায় ফাতেমা দিতে পারেনা। তাই সে চুপ করে থাকে।
ফাতেমার এই নীরবতা মিথিলাকে আরো কৌতুহলী করে তোলে। সে বলে সকালে নাস্তা খেয়েছিস তো ?
এবারও ফাতেমা চুপ করে থাকে। মিথিলা তার ব্যাগ থেকে টিফিন বক্স বের করে নুডলস আর দুটো মিষ্টি ফাতেমার সামনে তুলে ধরে।
-নে আগে খেয়ে নে ।তারপর তোর কথা শুনবো কেন তুই নাস্তা খাস নি, টিফিন আনিস নি ?
ফাতেমা অভিমানী কন্ঠে বলে- না তোর টিফিন তুই খা। আমি আজ কিছু খাব না।
-বুঝলাম তোর বোনের উপর রাগ করেছিস তাই বলে আমার উপরও রাগ করে থাকবি ? আমি কি দোষ করেছি। তুই না খেলে আমিও খাব না।
মিথিলার এমন দরদ মাখা কথায় ফাতেমার চোখে জল আসে। তাকে এতোটুকু সান্ত্বনা দেবার, এরকম ভালোবাসা মেশানো প্রশ্ন করার বা কথা বলার মানুষই তো নেই।
সে চোখ মুছে প্রথমে নুডলস মুখে দেয় তারপর মিথিলাকে খেতে বলে। দুই বান্ধবী মিলে নুডলস আর মিষ্টি খায় তারপর পানি খেয়ে মুখ মুছে কথা শুরু করে।
মিথিলা বলে মন খারাপ ও না খাওয়ার কারণ কি ? তোর বোন কি আজ বকেছে নাকি। ফাতেমা মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়, হ্যা বকেছে।
মিথিলা বিস্তারিত জানতে চায়।
ফাতেমা বলে চলে ঘটনাটা-
আমি সকালে আপুর ঘুম কেন ভাঙ্গালাম। আমার খুব রুটি খেতে ইচ্ছে করছিল। প্রতিদিন ভাত খেতে ভালো লাগে না। আপু রেগে গিয়ে বলল, সারারাত অনলাইনে লাইভ করে টাকা কামাই সকালে যদি একটু ঘুমাতে না পারি তাহলে আমার চলবে কি করে। তুই ভাত না খেলে দোকান থেকে পাউরুটি এনে খা । আমাকে কেন বিরক্ত করছিস।
আবার অনুনয় করে বললাম আপু কত দিন রুটি খাইনা। দুটো রুটি বানিয়ে দাও। কথা শুনে আপু আরো রেগে গিয়ে বলল-
তোর ইস্কুলের টাকা, বাসা ভাড়া, লেখাপড়ার খরচ সব আমি চালাবো ।আবার সকালে আমাকে রুটি বানিয়ে খাওয়াতে হবে। আমিতো নিজেই নাস্তা খাইনা। ভারী জমিদার হয়েছিস।যা আমার চোখের সামনে থেকে। যা মন চায় তা খা ।না হলে, না খেয়ে স্কুলে যা । আমি একটু শান্তি মতো ঘুমাই।
মেজো বোন আরিয়ানার কথাগুলো বান্ধবী মিথিলাকে বলে ফাতেমা বড় করে একটা নিঃশ্বাস ছাড়ে।
ফাতেমা, মিথিলার দিকে তাকিয়ে বলে- তুই খুব ভাগ্যবতী রে । তোর বাবা আছে। মমতাময়ী মা আছে । তোকে অনেক দেখে শুনে রাখে। আদর করে ভালোবাসে।
আর আমাকে দেখ সেই ছোট্ট কালে বাবা মারা গেছে ।মা প্রবাসে চলে গেছে আমাদের তিন বোনকে ফেলে রেখে। শ্যাওলার মতো ভেসে যাচ্ছি কেবল। আজ এ বোনের বাসায়, তো কাল ও বোনের বাসায় থাকি।
বোনদের দোষ দিয়ে লাভ কি ? বড় বোনের স্বামী পছন্দ করে না আমি তাদের বাসায় থাকি তাই মেজো বোন তার কাছে নিয়ে এসেছে।
মেজো বোনের জীবনটা এলোমেলো হয়ে গেছে। ভালোবেসে বিয়ে করেছিল। কিন্তু সেই বিয়ে টিকলনা। তিন মাসের মধ্যেই ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে। মেজো বোনের শ্বশুরবাড়ির লোকেরা খুবই লোভী তারা প্রতিনিয়তই বোনের কাছ থেকে টাকা চাইতো। এত টাকা সে কোথা থেকে দিবে। তাই শেষ পর্যন্ত সংসার ভেঙে গেল।
এখন সে রাত জেগে অনলাইনে লাইভে নাচ, গানের কাজ করে।
রান্নাবান্না আমাকেই করতে হয়। আমি তো আর সব কিছু রাধতে পারি না। মেজ আপু বলে বলে দেয় আর আমি সেভাবেই করি। কোন দিন ভাল হয় কোন দিন হয়না।
স্কুলের ঘন্টা পড়েছে দুই বান্ধবী ক্লাসে ফিরে যায়। মিথিলা, ফাতেমার জীবনের কাহিনী শুনে বেশ কষ্ট পায় । সে এরপর দিন থেকে প্রতিদিন বাড়তি টিফিন নিয়ে আসে অর্ধেক সে নিজে খায় আরঅর্ধেক ফাতেমাকে খেতে দেয়।
মিথিলা তার মাকে বলেছে তার বান্ধবী ফাতেমার কথা। ফাতেমা তার বোনের বাসায় থাকে তার বোন তাকে তেমন আদর, যত্ন করে না। তাই প্রায় সময় না খেয়ে স্কুলে আসে ফাতেমা। আমি ওকে আমার এখান থেকে প্রতিদিন একটু টিফিন খাওয়াতে চাই।
শুনে মিথিলার মা বলে, হ্যা বান্ধবীকে টিফিন খাওয়াবে এটাতো আর এমন বেশি কিছু না। তোমার বন্ধুকে তুমি খাওয়াবে সেটাতো ভালো কথা।
মায়ের কথা শুনে মিথিলার অনেক ভাল লাগে। যাক বন্ধুর বিপদে সে পাশে থাকতে পারবে।
এভাবে প্রতিদিন মিথিলার কাছ থেকে টিফিন খেতে ফাতেমার ভালো লাগেনা। সে মাঝে মাঝে টাকা এনে দোকান থেকে এটা সেটা কিনে মিথিলাকে খাওয়াতে চেষ্টা করে। আবার কোন কোন দিন নিজেই কিছু একটা রান্না করে নিয়ে আসে। ভাল হোক মন্দ হোক সেটা দুই বান্ধবী মিলে খায়।
মিথিলা বলে আরে ফাতেমা তোমার তো রান্নার হাত খুব ভালো। এত অল্প বয়সেই তুমি তাহলে পাকা রাধুনী হয়ে গেছো।
ফাতেমা বলে না হয়ে উপায় কি ? বেঁচে থাকতে হলে আমাদের মতন মেয়েদের অনেক কিছু করতে হয়।
মিথিলা বলে, আমিতো কিছুই রাধতে পারিনা। কোন কাজও পারিনা।
ফাতেমা বলে, তোমর কিছু করতে হবেনা কারণ তোমার মা আছে, বাবা আছে। সময়ের সাথে সাথে তুমি সব শিখে নিবে।
শহরের যে বিল্ডিং এ ফাতেমা থাকে সেখানে অন্যান্য ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা ফাতেমাদের বাসায় তেমন আসে না, মিশেও না। ফাতেমা ইচ্ছা করেই পাশের ফ্ল্যাটে মাঝে মাঝে যায়। পাশের ফ্ল্যাটের আপুদের সাথে কথা টথা বলে। কিন্তু সে বুঝতে পারে তার এই যাওয়াটা কেউ পছন্দ করেনা । তাই সে একা একাই মন খারাপ করে বাসায় থাকে নয়তো ছাদে ঘোরাফেরা করে।
মিথিলা কয়েকদিন ধরে স্কুলে আসছে না ফাতেমা প্রতিদিনই মিথিলার জন্য অপেক্ষা করে কিন্তু না মিথিলা আসেনা।
ফাতেমা অনেক কিছু ভাবে কিন্তু কি করবে বুঝে উঠতে পারে না। অবশেষে একদিন মিথিলাদের বাসায় যায়।
মিথিলা জ্বর ঠান্ডায় আক্রান্ত ।ফাতেমা মিথিলার শিয়রের এর পাশে বসে কপালে জলপট্টি দিয়ে দেয়। বলে এত টেনশন করিও না। আমি বলছি তুমি ভালো হয়ে যাবে । আবার স্কুলে যাবে আগের মত। আমরা একসাথে খেলাধুলা করব খাওয়া-দাওয়া করব। তোমাকে ছাড়া আমার ভাল লাগেনা, সময় কাটেনা।
-আমার জন্য দোয়া করিও বন্ধু যেন তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাই।
- অবশ্যই।
মিথিলার মা ফাতেমাকে যথেষ্ট আদর আপ্যায়ন করে ।ফাতেমা এক বুক ভালোবাসা নিয়ে বাসায় ফেরে।
কিছুদিন পর মিথিলা সুস্থ হয়ে আবার স্কুলে যাওয়া শুরু করে । আবার ফাতেমার সাথে তার দেখা হয়, কথা হয়। দুই বান্ধবী আবার মেতে উঠে লেখা পড়ায়, হাসি, গানে।
ফাতেমা ভাবে মিথিলার মতন একজন বান্ধবী পেয়েছে এ জীবনে এর চেয়ে বড় পাওয়া তার বুঝি আর কিছু নেই।
রাতে ঘুম আসছেনা ফাতেমার। পাশের রুমে বোন জোরে গান ছেড়েছে-
এ জীবন কেন এত রং বদলায়
কখনো কালোমেঘ,
কখনো ঝড়োবেগ
কখনো প্রেমের আবেগ এসে,
নিজেকে... জড়ায়।
আসলেই ছোট্ট ফাতেমা বুঝেনা জীবন কেন এত রং বদলায় ?
লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা
ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য
স্কুল পড়ুয়া দুই বান্ধবীর গল্প। যারা দুঃসময়ে একজন আরেকজনের পাশে এসে দাড়ায়।
২৪ আগষ্ট - ২০২০
গল্প/কবিতা:
৯৬ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪