নিশি রাতের ছায়া

ভয় (সেপ্টেম্বর ২০২২)

মোঃ মাইদুল সরকার
  • ১০
  • ৬৬
সায়মন ঘুমিয়েছিল। ঘুমোতে যাওয়ার আগে সে বাগানের হাসনাহেনা ফুলের সৌরভে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে ছিল। অনেকেই বলে জোসনা রাতে হাসনাহেনা ফুলের ঘ্রাণে নাকি সাপও পাগল হয়ে যায় । তাই সাপ পাগল করা গন্ধের টানে হাসনাহেনা গাছের নিচে চলে আসে।

সায়মন অনেকদিন ধরেই লক্ষ্য করেছে, রাতের বেলা তাদের বাগানে এই হাসনাহেনার গোড়ায় কোন সাপ আসে কিনা ? যদি আসে সাপটাকে দেখার বড় ইচ্ছা ছিল কিন্তু তার চোখে এখনও কোন সাপ ধরা পড়েনি।

তবে সে মাঝে মাঝেই একটা কালো বিড়ালকে দেয়ালের আশেপাশে দেখতে পায়। বেশ বড় একটা বেড়াল। বেড়াল সাধারণত এত বড় সাইজের হয়না। সে বেড়ালটাকে কখনোই ভালোভাবে দেখতে পারিনি, কারণ যখনই সে বিড়ালটাকে ভালোভাবে দেখতে গিয়েছে তখনই সেটা হয় কোথাও চলে গিয়েছে বা লুকিয়ে পড়েছে অথবা অদৃশ্য হয়ে গিয়েছে।

এটা বিড়াল ছাড়া যে অন্য কিছু হতে পারে এই কল্পনা কখনো সায়মনের মাথায় আসেনি।

সায়মনের ছোট বোন নীলা বেশ চটপটে মেয়ে। স্কুলের নবম শ্রেণীর ছাত্রী। পড়ালেখায় যেরকম ভালো তেমনি এরূপ গুনে বিদ্যা বুদ্ধিতেও অতুলনীয়।

সেদিন রাত এগারোটার মধ্যে নীলা পড়ালেখা শেষ করে ঘুমিয়ে পড়েছিল। ঘুমের মধ্যে সে স্বপ্ন দেখতে পেল- তার মা আনোয়ার বেগম তার মুখের উপর ভয়ঙ্কর দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে। একই সময়ে তার মা দরজার কাছে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে বলছে, নীলা তুই কিছুতেই বিশ্বাস করিস না ওই মহিলাটা তোর মা। আমি তোর আসল মা। ও একটা শয়তান , একটা জাদুকর ।ও একটা জিন। ওকে মা বলে ভুল করবিনা।

নীলার দিবে ঝুকে থাকা মুখটা নীলাকে বলছে, আমাকে যদি মা না ডাকিস, মা না বলিস, তবে তোর ওই আসল মাকেই আমি শেষ করে দেবো। তারপর তার সে কি বিকট কুৎসিত হাসি। সে বুঝতে পারছিলনা কোনটা তার আসল মা । ভয়ে আতঙ্কে নীলার ঘুম ভেঙে গেল।

সে দেখতে পেল একটা কালো ছায়া যেন মশারির উপর থেকে ধীরে ধীরে মিলিয়ে যাচ্ছে হাওয়ায়। সে চিৎকার করে উঠতেই পাশের রুম থেকে তার ভাই সায়েম এসে বলল কি হয়েছে ?

নীলা কোন মতে বলল, ছায়া। একটা কালো ছায়া আমার মুখের উপর তাকিয়ে ছিল। যেই না ঘুম ভেঙেছে ওমনি সেটা ধীরে ধীরে হাওয়ায় মিলিয়ে গেল। উফ কি ভয়ংকর। বাপরে বাপ কি বিকট চেহারা। আমার খুব ভয় লাগছে ভাইয়া।

আরে পাগলি তুই স্বপ্নে দেখেছিস । ভয়ের কিছু নেই । দোয়া পড়ে শরীর বন্ধ করে ঘুমা তাহলে আর কোন কিছু তোকে সমস্যায় ফেলতে পারবে না।

এক গ্লাস পানি খেয়ে নীলা আবার ঘুমানোর চেষ্টা করে । অনেকক্ষণ তার চোখের পাতায় ঘুম আসেনা। বিভিন্ন প্যারানরমাল বিষয় তার মাথায় ঘুরপাক খেতে থাকে। অদ্ভুত সব ভাবনায় কখন যে সে ঘুমিয়ে গেছে তা বলতে পারবেনা।

সকালে ঘটনাটা নীলা তার মা-কে বলতেই মা বলল, তুই অহেতুক এসব নিয়ে ভাবিস তাই এমন উদ্ভট স্বপ্নে দেখেছিস।

বিকেলে বৃষ্টি হচ্ছে নীলা বারান্দায় একটা গল্পের বই পড়ছে। নীলার মা টিভি ছেড়ে একটা ড্রামা সিরিজ দেখছে। তিনি নীলাকে বললেন, মা নিলা বৃষ্টির ছাডট এসে জামা কাপড় গুলো ভিজিয়ে দেবে । তুই বারান্দা থেকে জামা কাপড় গুলো নিয়ে রেখে দেতো।

নীলা বলল, আচ্ছা মা রাখছি। রাখছি বলে সে আবার বই পড়ায় মনোনিবেশন করলো একটু পর নীলা দেখল তার মা বারান্দা থেকে সব জামাকাপড় নিয়ে তার রুমে খাটের উপর রেখে দিয়েছে।

নীলা বই পড়া শেষ করে মায়ের রুমে গিয়ে বলল, মা তুমি বারান্দা থেকে জামা কাপড় গুলো কেন আনতে গেলে ? পড়া শেষ করে আমি ই তো নিয়ে আসতাম।

মেয়ের কথা শুনে আনোয়ারা বেগম বলেন, কি বলিস তুই ? আমি তো সিরিয়াল দেখছি সেই কখন থেকে। আমি তো বারান্দায় যাইনি। তোকে না বললাম জামাকাপড় গুলো নিয়ে আসার জন্য, তুই আনিস নি ?

কি বলো মা তুমি ? তুমি নিজেই তো আমার রুমের খাটের উপর রেখে এলে এক গাদা জামা কাপড়। তাই তো আমি তোমাকে জিজ্ঞেস করতে আসলাম। আমি থাকতে তুমি কেন আনতে গেলে ।

আনোয়ারা বেগম মেয়ের কথা শুনে চাপা আতঙ্কে উঠে দাঁড়ালেন এবং বারান্দায় এসে দেখলেন সত্যিই জামা কাপড় গুলো নেওয়া হয়েছে। নীলার খাটের উপর স্তুপ করে রাখা আছে।

কিন্তু প্রশ্ন হল তিনি তো যাননি, নীলাও আনেনি তাহলে কে আনলো ?

দিন দুপুরে একি ভৌতিক কান্ড শুরু হলো তার বাসায়।

সেদিন রাতে দুইটার সময় সায়মনের ঘুম ভেঙে গেল হঠাৎ করে। সে বারান্দায় দাড়িয়ে হাসনাহেনার ফুলের গাছটার দিকে তাকাতেই দেখল হাসনাহেনা গাছের এখানে একজন দাঁড়িয়ে আছে। দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটি সায়েম নিজে। সায়মন যেন ভূত দেখার মত চমকে উঠলো। সে ভয়ে বাবা-মাকে ডাকতে লাগলো।

এত রাত্রে ছেলে কেন রফিক সাহেব কে ডাকছে ? বেশ বিরক্ত নিয়ে তিনি ঘুম থেকে উঠে এসে দেখলেন, সায়মন বাগানের দিকে তাকিয়ে আছে অদ্ভুত দৃষ্টিতে।

বাবার সাড়া পেয়ে মায়মন বলল, বাবা ওখানে ওটা কি বলে আঙ্গুল উচিয়ে হাসনাহেনা গাছটিকে ইসারা করে। রফিক সাহেব সেদিকে তাকিয়ে বলেন, কই ওখানে তো কিছু নেই বাবা ।



আছে। অবশ্যই একটা কিছু আছে। আমি যেটা দেখেছি সেটা বলে তোমাকে বোঝাতে পারবো না। বিশ্বাসও করাতে পারবো না। ওখানে আরেকটা সায়মন দাঁড়িয়ে ছিল বাবা।

কিছু দিন যেতে না যেতে এক রাতে আনোয়ারা বেগমও দেখতে পেলেন বাগানে একটা ছায়া যেন হাটাহাটি করছে। ভয়ে তার শরীর কাঁটা কাঁটা দিয়ে উঠল। তিনি দোয়া পড়তে পড়তে বুকে ফুঁ দিলেন।


এসব দেখে শুনে আনোয়ারা বেগম স্বামীর সাথে চিল্লা পাল্লা শুরু করলেন। আগেই বলেছিলাম, এই বাসায় না উঠতে। কত দিন ধরে বন্ধ, পরিত্যাক্ত হয়ে আছে কে জানে।

এরকম বাসায়ইতো জ্বীন, ভূতদের আড্ডা। তা কে শোনে কার কথা। এখন ডেলা সামলাও।


পরের দিন রফিক সাহেব একজন মাওলানা ডেকে এনে মিলাদ পড়ালেন এবং দোয়া করার জন্য বললেন।

মাওলানা সাহেব বললেন আপনার বাড়িতে আগে থেকেই জ্বীন ছিল কিন্তু ওদের চলাচলে অসুবিধা হওয়াতে ওরা বিভিন্নভাবে আপনাদেরও সমস্যা করতেছে।

আমি তাবিজ দিয়ে গেলাম। বাড়ি বন্ধ করে গেলাম । সাবধানে থাকবেন ওদেরকে জ্বালাতন করবেন না । তাহলে ওরা ও আপনাদের জ্বালাতন করবে না। আর পশ্চিমের বাস্তাটা বন্ধ করে দিন, ওদিক দিয়েই ওরা চলাচল করে।


দোয়া ও তাবিজে কাজ হলো। প্যারানরমাল ব্যাপারগুলো আর ঘটছেনা। ধীরে ধীরে বাড়ির সবার মন থেকে ভয় কেটে গেল।

এর পর থেকে নিশি রাতে রফিক সাহেবের বাসায় আর কোন ছায়া দেখা যায়নি।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মোঃ নুরেআলম সিদ্দিকী গল্পের ধারাবাহিকতা আরেকটু বড় হওয়া দরকার ছিল। তবুও বলব সুন্দর হয়েছে। শুভ কামনা রইল।।
ভালো লাগেনি ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২
ঠিক বলেছেন ভাই। ভবিষ্যতে আরও বড় গল্প দিব। ধন্যবাদ।
ভালো লাগেনি ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২
mdmasum mia দারুন একটা গল্প পড়লাম।
ভালো লাগেনি ১ সেপ্টেম্বর, ২০২২
doel paki Fine Story
ভালো লাগেনি ১ সেপ্টেম্বর, ২০২২
ফয়জুল মহী চমৎকার লেখা, অনেক গভীর থেকে এসেছে। শুভকামনা রইল প্রিয়।
ভালো লাগেনি ১ সেপ্টেম্বর, ২০২২
ধন্যবাদ। ভাল থাকবেন।
ভালো লাগেনি ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

কোন পরিবারে যখন রাতের বেলা প্যারানরমাল কিছু দেখা যায় তখন সে ভয় ও আবহের সৃষ্টি হয় সে বিষয়টি গল্পে তুলে ধরা হয়েছে।

২৪ আগষ্ট - ২০২০ গল্প/কবিতা: ৮৭ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

বিজ্ঞপ্তি

“মে ২০২৪” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ মে, ২০২৪ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী