শায়মা হক খুব দ্রুত হাঁটছে কারণ বৈশাখের আকাশে মেঘের ঘনঘটা। স্কুলের ঠিকমতন পৌঁছানো তার প্রতিদিনের অভ্যাস। তাছাড়া শিক্ষিকা যদি স্কুলে দেরি করে আসেন তবে ছাত্রছাত্রীরা তো আরও দেরি করবে। তারা তো শিক্ষকদের কাছ থেক্ই শিখবে ।তাই যত ঝামেলাই থাকুক স্কুলের উপস্থিতিতে কখনো গড়িমসি করে না সকলের প্রিয় শিক্ষিকা শায়মা হক দোলা।
দৌলত হোসেন উচ্চ বিদ্যালয়ের বিশাল মাঠে যখন শায়মা পা রেখেছে তখনই গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি শুরু হয়েছে। তাই শায়মা দ্রুত সাইট ব্যাগ থেকে ছাতাটা বের করে মেলে ধরল।
কিন্তু বাতাসের তোর বাড়তে থাকায় ছাতা যেন উল্টে যেতে চাচ্ছে। বৃষ্টি বাড়ার আগেই সায়মা স্কুলে পৌঁছে গেল। তা না হলে ভিজতে হতো। ভেজা কাপড় নিয়ে ক্লাশ করা বিরক্তকর তাছাড়া ঠান্ডা-জড়ের সম্ভাবনাতো আছেই।
আজ তৃতীয় ক্লাসটা ছিলো নবম শ্রেণীর বাংলার ক্লাশ। কাকতালীয়ভাবে একটি বৃষ্টির কবিতা আজ পড়াতে হয়েছে শায়মাকে। বাহিরে বৃষ্টির সাথে কবির লেখা কবিতার ছন্দ, অলংকার আর শব্দের ঝংকার যেন প্রকৃতির সাথে মিলে মিশে একাকার হয়ে গিয়েছে।
অনিবার্য কারণ বসত আজ স্কুল তাড়াতাড়ি ছুটি হয়ে গেল। ক্লাস শেষে ছাত্র-ছাত্রীরা যখন চলে গিয়েছে তখন দোতালা বারান্দার গ্রীলে দাঁড়িয়ে শায়মা মনে পড়ে যায় ফেলে আসা জীবনের দিনগুলোর কথা । এইতো কয়েক বছর আগেও সে এই বিদ্যালয়ের ছাত্রী ছিল। বৃষ্টির দিনে তারা ভিজতে ভিজতে স্কুলে আসত। স্কুলে আসার পর পলিথিনে করে বয়ে আনা শুকনা জামা কাপড় করে ক্লাশ করতো। স্কুল ছুটি হলে বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে বাড়ি ফেরা। আহা! কোথায় হাড়িয়ে গেল সেই দিনগুলো !
কি রঙিন দিন ছিল। বন্ধু বান্ধবী, পড়ালেখা, গল্প, আড্ডা আর খেলাধুলার কোন ফাঁকে যে সময় চলে যেত টের পেত না । তার মনে পড়ে যায় রুবিনাকে। যে ছিল প্রানের বান্ধবী। এক সাথে বৃষ্টিতে ভিজতে না পারলে দুজনের মন খারাপ হয়ে যেত। তাই অন্য বান্ধবীরা তাদের দুজনকে ‘বৃষ্টি বিলাস’ বলে ডাকতো। রুবিনা স্বামী সন্তান নিয়ে সিলেটে ভালই আছে।
শায়মার মনের কোনে ভীর করে কত কথা, কত স্মৃতি। প্রথম প্রেমের পত্র এই স্কুলের এই বারান্দার গ্রিলের কাছে দাঁড়িয়ে রওনক শায়মাকে দিয়েছিল।
শায়মা দুরুদুরু বুকে পত্র হাতে নিয়ে বইয়ের ভাঁজে রেখে দ্রুত মেয়েদের কমন রুমে চলে গিয়েছিল। কারণ কেউ দেখে ফেললে সর্বনাশ তো হবেই। বাবা-মা কানে গেলে হয়তো এই স্কুল থেকেই ছাড়িয়ে নিয়ে অন্য কোন স্কুলে ভর্তি করে দিবে।
রওনক তুমি আজ কোথায় আছো ? কেমন আছো ? জান্নাতের বাগানে নিশ্চয় পরিভ্রমণ করছো। আমার প্রথম প্রেম তুমি, আমার প্রথম ভালোবাসা হারিয়ে গেছো আকাশের ঠিকানায়। মনে মনে কথাগুলো বলে উদাসভাবে বাহিরের বৃষ্টির পতন দেখছিল শায়মা আর ভাবছিল প্রতিটি মানুষের প্রথম প্রেম কি ভুল মানুষের সাথে হয় । তা না হলে রওনক তাকে এত ভালোবাসত সেও রওনাক এর জন্য কত পাগল ছিল কিন্তু বাস্তবতা হলো আজ তারা দুজন দুই মেরুর বাসিন্দা।
একহারা গড়নের রওনক ছিল যেমন হ্যান্ডসাম তেমনি জাদুকরী গানের কন্ঠ আর তার বেত ফলের মতো চোখগুলো কখনো ভুলার নয়। আজও সেই চোখ যেন শায়মা ডাকে নীরবে-নিভৃতে। শায়মা রওনকের চোখের প্রেমে পড়েছিল, যার প্রতিটি পলকে পলকে নতুন নতুন প্রেমময় কাব্য রচিত হত। ওর গান যেন হৃদয়ে ঝংকার তোলে। বার বরা শুনতে মন চায়।
রওনক বৃষ্টি ভালোবাসতে। খুব বৃষ্টি হলেই সে নেমে পড়তো ভিজতে তা স্কুলেই হোক কিংবা বাড়িতে। তুমুল বর্ষার বর্ষনে রওনক যখন ভিজে একাকার তখন গোপনে তার দিকে চেয়ে এক অচেনা শিহরন অনুভব করতো শায়মা। বৃষ্টিস্নাত কদমফুল উপহার দিত প্রতি বর্ষায়।
রওনকের হাতে হাত ধরে দূরের নদী তীরে বৃষ্টিতে ভেজার স্মৃতি যেন প্রথম চুম্বনের মতই অমলিন।
রওনকের পাগলামী ছিল মাত্রা ছাড়া। হাতের মধ্যে এসিড দিয়ে পুড়িয়ে লিখেছিল এস+আর। একটা সময় মনে হতো দুজন ছাড়া পৃথিবীতে বেঁচে থাকা মূল্যহীন। অথচ দুর্ঘটনায় মারা যাওয়া রওনকে ছাড়া আজ শায়মা ঠিকই বেঁচে আছে।
একটি মৃত্যু পাল্টে দিল সবকিছু। রঙিন দিন হয়ে গেল সাদাকালো। সময় যেন মহাকালের মত স্থির আর প্রত্যাহিক ঘটনা যেন বৃষ্টির ফোঁটার মত ছড়িয়ে পড়ছে চারদিকে।
রওনক যেদিন মারা গিয়েছিল সেদিনও আকাশ ভেঙ্গে এমন বৃষ্টি নেমেছিল। রওনক আর বিলাসী বৃষ্টির স্মৃতি নিয়ে হয়তো বেঁচে থাকতে হবে আমরন শায়মা হককে।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা
ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য
একজন শিক্ষিকা তার মৃত প্রেমিককে নিয়ে বৃষ্টির দিনে যে স্মৃতিচারণ করে সেই আখ্যান গল্পে তুলে ধরা হয়েছে।
২৪ আগষ্ট - ২০২০
গল্প/কবিতা:
৯৯ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।