সেই খালপাড়, শীতের সকাল, ঘাসের ডগায় শিশির বিন্দু, বরুণের ফুল আর মরা পাতা, খালের উপর ঝুকে পরা ডালে মাছের জন্য মাছরাঙার অপেক্ষা। আহা! কি মনোহর দৃশ্য। আহ! জীবন কত সুন্দর।
বাহিরে শীতের মিষ্টি রোদ । মা পিঠা বানাতে ব্যস্ত। গরম পিঠা খাওয়ার জন্য ডাকাডাকি করেছেন। পাখিদের কিচিরমিচির শব্দ, বাচ্চাদের হইহল্লা তবুও ঘুম থেকে উঠতে ইচ্ছে করছে না । লেপটা জড়িয়ে আরো কিছুক্ষণ পড়ে থাকতে ইচ্ছে করছে।
বাবা আর কতক্ষণ ঘুমাবেন এবার উঠুন। মা নয় পুত্রবধুর ডাকেই ঘুম ভাংল বৃদ্ধ মানুষটির। হৃদয় রঞ্জন সাহা চোখ খুলে দেখলেন তিনি কলকাতায় নিজ বাসায় শুয়ে আছেন। ঘুমের মধ্যে স্বপ্নে তিনি অতীত সময়ে পরিভ্রমণ করেছেন।
কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে নিজেকে নিজের বর্তমান সময়ে ধারণ করার চেষ্টা করছেন হৃদয় রঞ্জন সাহা।
এতক্ষণ স্বপ্ন দেখছিলাম সেই দেশ, সেই প্রকৃতির, সেই পরিবেশের যেখানে তিনি জন্মেছেন। সেই দেশ যেখান থেকে তারা চলে এসেছিলেন তিপ্পান্ন বছর আগে, আজ যেটা স্বাধীন বাংলাদেশ নামে পৃথিবীতে পরিচিত। আহা সেই সময় এর কথা মনে হতেই বেদনায় বুকের ভেতরটা হাহাকার করে উঠে।
স্বপ্ন ভাঙ্গা নদীর মতোই তিনি যেন হঠাৎ থমকে গেলেন। বছরের পর বছর ধরে বুকের ভিতর লালন করে চলেছেন নিরবে নির্ভতে জন্মভূমিকে। কত দিনের বাসনা জীবনে একবার হলেও যাবেন ফেলে আসা জন্মভূমিতে, দেশের মাটি ছুঁয়ে দেখবেন কিন্তু কিছুতেই আর যাওয়া হয়ে উঠেনা।
রমা জোরে জোরে ডাকছে- বাবা আপনার চা ঠাণ্ডা হয়ে গেল। সেই কখন নাস্তা দিয়ে রেখেছি টেবিলে নাস্তাও ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে কখন খাবেন ?
আমার আবার একটু বেরোতে হবে। চট জলদি খেয়ে নিন। বাসন কোসনগুলো ধুয়ে মুছে যাই। বাজার থেকে ফিরতে দেরি হয়ে গেলে রাজ্যের কাজ জমে যাবে, এগুলো শেষ করে দুপুরের রান্না সারতে হবে। একটু হের ফের হলেই দেরি হয়ে যাবে তখন দুপুরের খাবার খেতে সবারই মুখ চুন করে অপেক্ষা করতে হবে।
পুত্রবধূ রমার এমন কথায় হৃদয় রঞ্জন সাহা আর স্বপ্ন নিয়ে জাবর কাটার সময় পাননা। অনিচ্ছা সত্ত্বেও তিনি গুটিগুটি পায়ে খাবার টেবিলের সামনে গেলেন এবং খাওয়ার জন্য খেলেন।
রমা বাজারে ব্যাগ খুজছিল। রমা বেশ চটপটে মেয়ে দুর্গার মত দশহাতে একা এই সংসার সামলে চলেছে।
আচ্ছা বৌমা রমেশকে সেই কত আগে থেকেই বলেছি যে একবার বাংলাদেশে যাব। কিন্তু কই তার তো কোনো বন্ধ ব্যবস্থা দেখছিনা, উদ্যোগ আয়োজনও চোখে পড়ছেনা। তবে কি মরার আগে আর দেশের মাটি ছোঁয়া হবে না আমার?
বাবা জানেনই তো আমাদের অবস্থা। সংসারে শতটা চাহিদা হা করে থাকে। দুটোর মুখ বন্ধ করলে নতুন করে চারটা মুখ জগিয়ে উঠে। রমেশ আপনার জন্য প্রতি মাসে আলাদা করে টাকা জোগাচ্ছে তবু পেরে উঠছেনা। আপনার ছেলে আপনার কোন আশা অপূর্ন রাখবে না কিন্তু যা দিনকাল পড়েছে, সবকিছুর এত দাম বেড়েছে যে মধ্যবিত্ত এখন আর কোন সাধ মিঠাবার উপায় নেই।
রমা আরও বলে চলে- বাবা আপনার সাথে আমাদেরও যাবার ইচ্ছে আছে ওদেশে। জানিনা সেই আশা পূর্ণ হবে কিনা। যদি টাকায় না কুলোয় তবে আপনি আর রমেশ যাবেন আর যদি টাকার ব্যবস্থা হয়ে যায় তবে আমি ও আপনার নাতিও যাব।
আমার পিসিতো নারায়নগঞ্জ থাকেন। কত করে বলেন যাওয়ার জন্য। থাক সে কথা বাবা বলে আর কি লাভ। আমাদের স্বপ্ন আছে স্বপ্ন পূরণের ব্যবস্থা নাই, সাধ আছে সাধ মিঠাবার উপায় নাই।
দেরি হয়ে যাচ্ছে আপনি খেয়ে নিন। আমি বেরোচ্ছি তাড়াতাড়ি ফিরব আর সুরেশ স্কুল থেকে ফিরলে ওকে বলবেন- গাজরের হালুয়া আর গ্লাসে রাখা দুধ টুকু খেয়ে নিতে।
রমা বেরিয়ে গেল দেরি হয়ে গেলে বাজারে গিয়ে টাটকা, তাজা, সতেজ কোন জিনিস পাওয়া যাবে না। সব নিস্টা, বাসি, পচা মাল দোকানদার গছিয়ে দিতে চাইবে।
হৃদয় রঞ্জন সাহা নাস্তার পাট চুকিয়ে ছাদ বাগানের পায়চারি করছেন। তিনি ভেবে চলছেন দেশে গেলে তার গ্রামের বাড়ি যেখানটায় ঘর ছিল তিনি কি সেটা চিনতে পারবেন। সবকিছু কি আগের মতই আছে নাকি পাল্টে গেছে। অবশ্য পাল্টে যাওয়াই সময়ের ধর্ম। বাড়ির পাশে খালটা যদি এতদিনে ভরাট করা না হয়ে থাকে তাহলে তার না চেনার কোন কারণ নেই।
ওখানের অবস্থা কি হয়েছে কে জানে ? হয়তো তাদের ফেলে আসা পূজামণ্ডপ, তুলসীতলা পুকুরপাড় সবকিছুই শেষ হয়ে গেছে। সেখানে এখন তাদের চিহ্ন উপড়ে ফেলে মুসলিম পরিবার হয়তো সুখের বসতি গড়েছে। যত ভাবেন ততই মন খারাপ হয়।
রায়টের সময় হৃদয় রঞ্জন সাহার বাবা কীর্তি রঞ্জন সাহা নামে মাত্র সবকিছু মুসলিম পড়শির কাছে বিক্রি করে দিয়ে ইন্ডিয়ায় চলে এসেছেন। সেই পড়শি ছিল বিধবা মুসলিম মহিলা। বিধবা নারী হলেও তিনি ছিলেন বেশ প্রভাবশালী। তিনি বলেছিলেন-আপনারা যদি কোন দিন আবার এ দেশে আসেন নির্দ্বিধায় আমার এখানে আসতে পারবেন, বেড়াতে পারবেন। যতদিন মন চায় থাকবেন, ঘুরবেন, খাবেন কারণ আল্লাহ আমায় অঢেল ধন সম্পদ দিয়েছেন।
আর আপনারতো আমার পড়শি যুগ যুগ এক সাথে থেকেছি, সুখে দুঃখে সময় পার করেছি। ভাগ্যের ফেরে আপনাদের আজ দেশ ছেড়ে চলে যেতে হচ্ছে।
ধন সম্পদতো আর আমি কবরে নিয়ে যেতে পারবনা। মানুষের কাজে, কল্যানে, উপকারে যদি লাগে সেটাইতো স্বার্থকতা। মানুষের পরিবর্তন হয়, মনের পরিবর্তন হয়। মানুষ এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যায়, এক দেশ থেকে আরেক দেশে যায়। দেশান্তরী হয় কিন্তু জন্মভূমির কথা কখনো মন থেকে মুছে ফেলা যায়না।
সেই বিভীশিখাময় রাতে বিদায় বেলায় সেই সাহসী নারীর কথা হৃদয় রঞ্জন সাহার মনে গেথে গেছে যদিও ছোট ছিলেন তথাপিও তিনি কথাগুলো ভুলে যান নাই। এইযে জীবন যুদ্ধ করে কলকাতায় টিকে আছেন। এই টিকে থাকা যে কত কস্টের কত যন্ত্রনার তা কেবল একজন দেশ হারানো মানুষই বুঝতে পারে। রিফিউজি বলে তার বাবাকে ও তাদেরকে কম হেনস্তা হতে হয়নি। সেই সময়ের পরিস্থিতি আজকের মত এত সহজ ছিলনা। পদে পদে লাঞ্চনা আর দেশ ত্যাগের গভীর অনুতাপ। বাবার মত তিনিও বুকের ভেতর তিনি বাংলাদেশকে লালন করছেন প্রতিনিয়ত। সেই ফেলে আসা দেশের মাটি, জল, প্রকৃতি সবকিছুই তাকে যেন মায়াবী হাতছানি দিয়ে ডাকে। মা যেমন সন্তান কে ডাকে। পড়শির যেমন পড়শিকে ডাকে। যে ডাক কিছুতেই ফিরিয়ে দেওয়া যায়না। সে ডাক যেন বুকের ভিতর বেজে চলে অস্টপ্রহর।
রমেশ প্রায়ই বাবাকে বলে আচ্ছা বাবা কেন তোমরা চলে এসেছিলে। যদি বাংলাদেশে থাকতে তাহলে তো আজ আমাদের অবস্থা আরও অনেক ভালো থাকতো । টিকে থাকার সংগ্রাম করতে হতোনা। একটা মাথা গুজার ঠাঁই পেতে এক জীবন শেষ হয়ে যেতনা।
সাধে কী চলে এসেছি। জীবন নিয়ে বেঁচে থাকাটাই তখন সবচেয়ে বড় চাওয়া-পাওয়া ছিল। কি ঘোর অমানিষা নামলো- দিন দুপুরে মানুষ মানুষকে, হিন্দু মুসলিমকে, মুসলিম হিন্দুকে, পড়শি পড়শিকে হত্যা করছে, রক্তে ভেসে যাচ্ছে সবুজ জমিন। চারদিকে অবিশ্বাস আর ক্ষণে ক্ষণে মৃত্যুর আতঙ্ক। পালিয়ে বাঁচাটাই এক মাত্র নিয়তি।
সূর্যাজান বিবি তার পুত্র-কন্যাদের মৃত্যুর আগে বলে গিয়েছিলেন শান্তি রঞ্জন সাহা বা হৃদয় রঞ্জন সাহা কিংবা তার বংশধরেরা যদি কখনো এ দেশে আসে এবং আমাদের বাড়িতে আসে তবে তাদের জন্য যেন মেহমানদারি করতে একটুও কার্পন্য না করা হয়। তারা যেন এটা অনুভব করতে না পারেন এদেশে তাদের শিকড়ের শেষ অংশটাকুও মুছে গেছে, এ দেশে তারা পরবাসী।
সূর্যাজান বিবি গত হয়েছেন অনেক আগেই কিন্তু তার কথা অনুসারে তার ছেলে এবং নাতিরা অপেক্ষা করে আছে যদি কখনো শান্তি রঞ্জন সাহা কিংবা হৃদয় রঞ্জন সাহা বা তাদের বংশধররা কেউ আসে তবে তারা তাদের যথাযথ মর্যাদা দিতে ভুলবেনা। দিন যায়, মাস যায়, বছর যায়, যুগ যায় কিন্তু কেউ আসে না। অপেক্ষারও শেষ হয়না।
সূর্যাজান বিবির ছোট ছেলে আনিস দেওয়ান ফ্রান্সে থাকেন বহু বছর ধরে। এক বিদেশিনি-কে বিবাহ করে সেখানেই স্থায়ী হয়েছেন। কর্মে কর্মে কেটে গেছে ত্রিশটি বছর।
দেশে যাব যাব করেও তার যাওয়া হয়ে ওঠে না । আনিস দেওয়ানের দুই পুত্র- অনিক দেওয়ান ও নৃদুল দেওয়ান। তারা ফরাসি ভাষা যেমন জানে তেমন বাংলা ভাষাটাও বাবার কাছ থেকে শিখেছে। আনিস দেওয়ানের দুই পুত্র বাংলাদেশ বলতে অজ্ঞান। বাংলাদেশে গিয়ে তারা গ্রাম দেখবে, নদী দেখবে, প্রকৃতি দেখবে, মানুষ দেখবে আরো কতকিছু দেখবে বলে বাবা-মায়ের কাছে বায়না ধরে। প্রতিবারই কোন না কোন কারণ এসে সামনে দাঁড়ায় আটকে যায় আনিস দেওয়ানের স্বপরিবারে স্বদেশ যাত্রা।
এ বছর ডিসেম্বর মাসে যে করে হোক বাংলাদেশের যাওয়ার একটা ব্যবস্থা হয়ে গেছে। এই উপলক্ষে পরিবারের খুশির বন্যা বয়ে যাচ্ছে। প্রায় ত্রিশ বছর পর আনিস দেওয়ান বাংলাদেশের মাটিতে স্বপরিবারে পা রাখল। আনিস দেওয়ান এর স্ত্রী স্কারলেট দেওয়ান বাংলাদেশে এসে অভিভূত এমন সুন্দর সবুজ প্রকৃতির দেশ, মানুষের সারল্য ও অতিথিয়তায় মুগ্ধ। এদেশের পাহাড়, সাগর, নদী, পুকুর, জল প্রকৃতি যেন স্বপ্নের মত মনে হতে লাগল তার কাছে।
স্বামীর কাছ থেকে যতটুকু শুনেছিল বাস্তবে যেন আরো সুন্দর বাংলাদেশ নামের ছোট্ট এই ভূখন্ডটি। আরো আগে কেন আসা হলো না সেটা নিয়ে এখন বেশি আফসোস করতে রাগলো সে।
দেওয়ান পরিবারের সবার জন্যই কমবেশি উপহার নিয়ে আসা হয়েছে সুদূর ফ্রান্স থেকে। চাচতো ভাই মমিনের সাথে বেশ ভাব হয়েছে অনিক আর নৃদুলের। গাছে চড়া, নৌকায় চড়া আর গ্রাম ঘুরে বেড়ানো সবকিছু মমিন সুন্দর ভাবে ফরাসি দুই ভাইকে শিখিয়ে দিচ্ছে। অনিক আর নৃদুলকে সাঁতার শেখানোর জন্য উঠে পড়ে লেগেছে মমিন দেওয়ান। গ্রামের ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা কি করে সাঁতারে এত পারদর্শী সেটা দেখে অনিক আর নৃদুল অবাক।
হৃদয় রঞ্জন সাহা আজকাল স্বপ্নে শুধু তাঁর জন্মস্থানকেই ঘুরেফিরে দেখেন। তিনি ভেবে পান না কেন তিনি শুধু জননী আর জন্মভূমিকেই স্বপ্নই দেখেন। তবে কি তার জীবনের বেলা শেষ হয়ে আসছে? হাতে যদি নগদ কিছু টাকা থাকতো তবে তিনি এই বুড়ো বয়সে একাই চলে যেতেন লাল সবুজের দেশে সেখানে ঘুরে ঘুরে দেখতেন পূর্বপুরুষের স্মৃতি বিজড়িত বট, অশ্বত্থ, তমাল ছায়া ঘেরা নিজের গ্রামটিকে।
অনেক চেষ্টা তদবির করার পর অবশেষে একদিন সেই মাহেন্দ্রক্ষণ আসল। হৃদয় রঞ্জন সাহার মনোবাসনা পূর্ণ হল। বাংলাদেশে যাওয়ার বন্দোবস্ত হলো প্রায় পঞ্চান্ন বছর পর। স্বপ্নযাত্রা হল কলকাতা থেকে বাংলাদেশে। এক জীবনে এর চেয়ে খুশির দিন, আনন্দে দিন হৃদয় রঞ্জন সাহাদের জীবনে আর আসেনা।
কলকাতা থেকে কলকাতার বিখ্যাত রসগোল্লা, সন্দেশ, দেওয়ান বাড়ির মেয়েদের জন্য শাড়ি কাপড়, পুরুষদের জন্য পাঞ্জাবি আর শখের কিছু জিনিস নিয়ে তারা বাংলার মাটিতে পা রাখলেন। ঢাকা থেকে কুমিল্লা জেলার মেঘনা থানায় গিয়ে উপস্থিত হলেন। গ্রামের চেহারা যেমন পাল্টে গেছে নামও পাল্টে গেছে। বুড়িয়ার চর থেকে হয়েছে সেননগর। প্রতি ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে গেছে, রাস্তাঘাট পাকা হয়েছে। রিক্সা, সিএনজি, অটো, মাইক্রো চলছে। থানা সদর থেকে বাস যায় ঢাকা শহরে। গ্রামের বাজারের অবস্থার উন্নতি হয়েছে- পাকা সেমি- পাকা সারি সারি দোকান। বাজারের আকারও অনেক বড় হয়েছে। বাজার পেরিয়ে গ্রামে ঢুকতেই স্মৃতির ওপার থেকে উঠে আসে অতীতের দিনগুলো । অবশেষে বাড়ির পাশে সেই খাল দেখে তিনি চিনতে পারেন তাদের বাড়ির অবস্থান।
এদিকে এই পরিবারটিকে ঘিরে ততক্ষণ গ্রামের উৎসাহী কিছু মানুষ মিছিলের মত যোগ দিয়েছে এবং খবর ছড়িয়ে পড়েছে হৃদয় রঞ্জন সাহা কলকাতা থেকে তার পৈতৃক ভিটা দেখতে এসেছেন । খবরটা দেওয়ান বাড়িতে পৌঁছতে দেরি হয়না সূর্যাজান বিবির উত্তরাধিকারীরা তৎপর হয়ে উঠেন। তারপর হৃদয় রঞ্জন সাহা কে অভিবাদন জানান এবং তাদেরকে বাড়িতে নিয়ে যান। আপন আত্মীয় কিংবা অতিথিদের যেরকম পরম যত্ন নিয়ে আপ্যায়ন করা হয় ঠিক তেমনি একদা দেশ ছেড়ে চলে যাওয়া পরিবারটিকে আপ্যায়িত করা হলো।
দেওয়ান পরিবারের এই ভালোবাস, সহমর্মীতা, আপ্যায়ন, উদারতা পেয়ে মনের অজানা ভয়, শংকা কোথায় যে কুয়াশার মত উবে গেল তা টের পেলনা হৃদয় রঞ্জন সাহার পরিবারের কেই।
সপ্তাহখানেক হৃদয় রঞ্জন সাহারা সেননগর গ্রামে ছিলেন। এর মধ্যে তিনি খুঁজে বেড়িয়েছেন তার পুরনো দিনের বন্ধুদের, খেলার সাথীদের হরিমতি, ইন্দুবালা, হরিদাস, নারায়ন, পলাশ স্যানালসহ আরো অনেককে। আত্মীয় স্বজন যারা এদেশে রয়ে গিয়েছিলেন খোঁজ খবর নিয়ে দেখা সাক্ষাত করেছেন তাদের সাথেও। বাল্য বন্ধুদের মধ্যে মাত্র দুটি পরিবার এখনো আগের মতই টিকে আছে আর বাকিরা পারি জমিয়েছে ভারতে, কেউ কেউ পরপারে।
হৃদয় রঞ্জন সাহার কেবলি মনে হতে লাগলো রায়টের সে সময় যদি বিভীষিকা তাদের এলাকাতেও না ছড়িয়ে পড়তো । আতঙ্ক মৃত্যুদূতের মত পিছু না নিতো তবে তারাও বাংলা নামের এই সবুজ শ্যামল স্বাধীন দেশের নাগরিক হয়ে সুখে শান্তিতে বসবাস করতে পারতো।
আগামীকাল হৃদয় রঞ্জন সাহারা বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যাবেন তাই রাতে দেওয়ান বাড়িতে বিশেষ ভোজের ব্যবস্থা করা হয়েছে । অনেক রাত পর্যন্ত খাওয়া-দাওয়া ও পুরনো দিনের কথা বলাবলি করে গভীর রাতে হৃদয় রঞ্জন সাহা ঘুমাতে গেলেন।
পরদিন তিনি আর চোখ খুললেননা। ঘুমের মধ্যে্ জন্মভূমির স্পর্শ আর সান্নিধ্যে চলে গেলেন অনন্তের ওপারে।
বিষাদের ছায়া নেমে এল হৃদয় রঞ্জন সাহারা পরিবার ও দেওয়ান পরিবারে । তার শেষ কৃত্য পালিত হল এদেশেই। হয়তো তিনি এটাই চেয়ে ছিলেন দেশের মাটিতে মৃত্যু হোক তার। সেই সাধ পূর্ণ করে তিনি পারি জমালেন ওপারে। এভাবেই শেষ হলো একটি জীবন নামের নদী।
লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা
ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য
দেশান্তরীত একজন মানুষ ও একজন প্রবাসীর স্বদেশে ফেরার প্রতি যে টান, হৃদয়ের যে আকুতি সেই আখ্যান গল্পে তুলে ধরা হয়েছে।
২৪ আগষ্ট - ২০২০
গল্প/কবিতা:
৯৮ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪