ঘটনাটা ঘটেছিল ২০০১ কিংবা ২০০২ সালে মাহিন তখন হোস্টেলে থাকে। কলেজে পড়ে। সকালের পত্রিকা পড়ছিল এক সকালে। হঠাৎ তাদের পার্শ্ববর্তী এক থানার খুনের ঘটনায় চোখ আটকে গেলো। রুদ্ধশ্বাসে পড়তে লাগলাম সেই কাহিনি-
সোনারচর নামক গ্রামের দরিদ্র এক কৃষকের জমি দখল করতে চায় এলাকার প্রভাবশালী এক ব্যক্তি। হুমকি, ধমকি ও টাকার লোভ দেখিয়ে যখন কাজ হলোনা তখন তাদের নামে মামলা করা হলো। তো সেই মামলায় হাজিরা দেওয়ার জন্য মাসে মাসে হাজিরা দিতে হয় কৃষককে কুমিল্লা কোর্টে গিয়ে। একদিন সকালে নাস্তা খেয়ে ছোট ছোট ছেলে দুটিকে মাঠে কাজ দেখিয়ে সেই কৃষক আর তার বউ গেলো কুমিল্লায় মামলার হাজিরার জন্য।
ফিরতে তাদের দেরি হয়ে গেল। দাউদকান্দি ট্রলারঘাটে আসতে বিকেল হয়ে গেলো। তাড়াতাড়ি বাড়ি যাবার জন্য তারা সিরিয়ালের ট্রলানে না উঠে রিজার্ভ ট্রলার নিল। ট্রলারে প্রায় ২ ঘন্টা লাগে সোনারচর যেতে। সময়টা বর্ষাকাল। সারাদিনের ক্লান্তিতে কৃষক ট্রলারের পাটাতনে ঘুমিয়ে গেলো আর তার বউ বসে বসে ঝিমোচ্ছে।
চারদিকে সন্ধ্যা যেন ঘনিয়ে আসছে, ঘনিয়ে আসছে তাদের উপর বিপদও বুঝি কেয়ামত নেমে এলো তাদের উপর। হঠাৎই ডেকসেট বেজে উঠলো সাথে প্রচন্ড জোড়ে গান। ট্রলারে থাকা লোকগুলো সবাই সেই প্রভাবশালীর ভাড়াটে খুনি। প্রথমেই কৃষককে মারতে শুরু করলো তারা। বলল-জমির সাধ মিটিয়ে দিব আজ। বেগতিক দেখে কৃষক যখন ওদের উপর চরাড় হলো অমনি ধারালো অস্ত্র দিয়ে একের পর এক কোপ মারতে থাকলো নিরীহ কৃষকের উপর। রক্তের বন্যা বয়ে গেলো ট্রলার জুড়ে। তার স্ত্রী তাকে বাঁচাতে চাইলে তার উপরও নেমে এলো বর্বরতা। তার গোপন অঙ্গে শরীরের শাড়ি খুচিয়ে ঢুকানোর চেষ্টা করা হলো তারপর শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। তাদের আত্মচিৎকার শোনা যাচ্ছিলনা প্রচন্ড শব্দের গান বাজনার কারনে। দূরে দু’একটা ট্রলার আসা যাওয়া করলেও তারা মনে করছে ধীরে চলা ট্রলারে বুঝি পিকনিক চলছে, গান বাজনা ছেড়ে আনন্দ ফুর্তি হেচ্ছে। নদী পথের নির্জন জায়গায় নৃশংস হত্যাকন্ডের শিকার হলেন হতভাগা দুজন মানুষ।
এদেকে ছেলে দুটি অপেক্ষা করতে করতে রাত নামলো তবুও তাদের বাবা মা ফিরনা দেখে তারা প্রতিবেশীর কাছে তা বললো। প্রতিবেশীরা তাদের শান্তনা দিল হয়তো কুমিল্লায় কাজে আটকা পরেছে আগামীকাল ফিরে আসবে। কিন্তু কে জানতো বাচ্চা দুটির বাবা-মা আর কোন দিন ফিরে আসবেনা। কথা বলবেনা। আদর করবেনা। ডাকবেনা। খাওয়াবেনা। পরের দিন বিকালে অন্য এক কৃষক ক্ষেতে কাজ করছিল পাশেই কবরস্থান। সেখানে শেয়াল কি কুকুর কি যেন টেনে বের করার চেষ্টা করছে। সে এগিয়ে যেতেই প্রানীটি পালিয়ে গেল। সে দেখলো মানুষের হাত বা বের হয়ে আছে সে গ্রামে গিয়ে বলতেই লোকজন এসে মাটি খুড়ে ক্ষত বিক্ষত কৃষক ও তার বউকে দেখে হতবাক হয়ে গেলো। এলাকায় আলোড়ন পড়ল জোড়া খুনের ঘটনায়। পত্রিকায় নিউজ হলো কিন্তু আসামি ধরা পড়েছে কিনা মাহিন তা জানেনা।
ঘটনাটা মাহিনের মনে আলোড়ন তুলল। ঝড় বয়ে গেলো দেহ মনে। সে প্রতিজ্ঞা করলো-যে করেই হোক এর একটা বিহিত করতে হবে।
জনি আর লিটন বাবা মাকে হারিয়ে নির্বাক। খালা এসে তাদের জোড় করে নিয়ে গেলো। বলল-কিছুদিন আমার লগে থাক। কে জানে কবে আবার তগো উপরেও শনিরদশা নাইমা আইয়ে। কয়ডা দিন যাক তারপর আবার ভিটাত ফিরা আইছ। ছেলে দুটো কাঁদতে কাঁদতে বাবা-মা ও নিজেদের হাজারো স্মৃতি পিছনে ফেলে খালার সাথে দাউদকান্দি চলে গেলো।
ছুটিতে মাহিন বাড়িতে গিয়ে জানতে পারলো তাদের গ্রামে দুটি ছেলে এসেছে বেড়াতে সম্প্রতি তাদের বাবা মাকে নাকি হত্যা করা হয়েছে। সে ছুটে গেলো ছেলে দুটিকে দেখতে। মাহিন তাদের কথা শুনে যা বুঝতে পারলো তা হচ্ছে-ওদের আর্থিক অবস্থা খারাপ এবং কোর্ট কাচারি করার মত লোক নেই। মাহিন ছেলে দুটির অশ্রু মুছে দিয়ে বলল-তোমাদের এই কান্না আমি বৃথা যেতে দেবনা। বাবা মায়ের হত্যার বিচার তোমরা একদিন পাবেই।
জনি আর লিটনের খালাও বলল- বাবা তুমি যদি আমাগো সাহায্য কর যত অর্থ খড়ি খালে দিমু, দরকার হয় জমি বেইচা টাকা দিমু, তবুও বইন আর বইন জামাইয়ের খুনিগো ফাঁসি দেখবার চাই।
আপনি ঘাবড়াবেন না চাচী। আমরা আছি আপনার পাশে। অপরাধী যত শক্তিশালী হোকনা কেন মজলুমের দোয়া আল্লাহর দরবারে কবুল হবেই। আর দেশে আইন আছে, শাসন আছে, বিচার আছে। ওরা কিছুতেই পার পাবেনা।
মাহিনের বাবার বন্ধু নাম করা উকিল। বাবাকে বলে সে উকিল শফিক সাহেবের সাথে দেখা করে কথা বলল। এই হত্যাকান্ডের বিচার কিভাবে আইনি প্রক্রিয়ায় করা যায় সেটা নিয়ে আলোচনা করলো। কিন্তু শফিক সাহেব তাকে বলল-বাব তুমি কেন এসবে জড়াচ্ছ ?
চাচা আজ যদি আমার বাবা-মা খুন হতো আপনি কি তাদের জন্য কিছুই করতে না। এভাবে যদি আমরা কেউ না কেউ এগিয়ে না আসি তবে দেশে এমন ঘটনা বাড়তেই থাকবে।
শফিক সাহেব বললেন-বড় মাছ ছোট মাছকে গিলে খাবে এই বোধ সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয়ে আছে। মানুষগুলো মাছের চেহারা পরিত্যাগ করে মানুষ হয়ে উঠবে এমন কোন লক্ষন দেখা যাচ্ছে না।
তবে তোমার মত যুবকেরা যদি মানব প্রেমে, দেশ প্রেমে ঝাপিয়ে পড়ে তবে এই দেশ টিকে থাকবে হাজারো ঝড় ঝঞ্জা পাড়ি দিয়ে।
তারপর বললেন-মামলায় জয়ী হতে হলে তোমাকেও আমার হয়ে কাজ করতে হবে। আমার নিজস্ব কিছু কৌশল আছে, সেই কৌশলের একটি অস্ত্র হতে হবে তোমাকে।
কিছু দিন পর মাহিন নিজেকে প্রস্তুত করে অভিযানে নামে সে এখন সোনারচরের সেই প্রভাবশালী আজগর সওদাগরের এক চলা। নাম পাল্টে সে এখন মন্টু। মন্টু দিন দিন আজগরের ভরশার পাত্র হয়ে উঠছে। এভাবে কাজ করে করে সবকিছু রেকর্ড করে রাখে মন্টু তারপর সেই দিনের ঘটনায় যারা জড়িত তাদের সাথেও তার শখ্য গড়ে উঠে এবং সবকিছুর বর্ণনা সে গোপনে রেকর্ড করে নেয়।
এভাবে সমস্ত তথ্য জোগাড় করে সে একদিন কেটে পড়ে। শফিক সাহেবের হাতে সকল তথ্য প্রমান হাজির করে। সফিক সাহেব এবার উড়ে পড়ে লাগে আদালতে আজগর সওদাগরকে খুনী হিসেবে প্রমাণ করে। স্বাক্ষী ও নিজের কথার রেকর্ড শুনে আজগর শিউরে উঠে। সে ভেবে পায়না কিভাবে এত আগের ঘটনার কথা রেকর্ড হলো। আদালত তাকে জোড়া খুনের দায়ে কারাদন্ড দেয়।
মাহিনের কারণে একজন দেশদ্রোহী, দাগী অপরাধী, খুনী ধরা পড়ে। ফাঁস হয় তার কুকীর্তি, মুখ খুলতে থাকে এলাকার ভুক্তভুগীরা। সোচ্ছার হয় জনগন।
হাসি ফুটে এতিম দুই বালকের মুখে। মানুষ খুশি হয়। দোয়া করে মাহিনের জন্য। সে যেন সারা জীবন এভাবে দেশ ও জনগনকে ভালোবেসে যেতে পারে।
অপরাধ করে কেউ পার পায়না। একদিন তার বিচার হবেই হয়তো পৃথিবীতে নয়তো পরকালে।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মোঃ নিজাম উদ্দিন
বাহ! চমৎকার দেশপ্রেমের গল্প। ভোট রেখে গেলাম প্রিয় গল্পকার। আমার পাতায় আমন্ত্রণ রইল। অসংখ্য ধন্যবাদ ও শুভকামনা নিরন্তর।
লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা
ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য
জোড়া খুনের ঘটনায় এলাকা তোলপাড়। দেশ প্রেমি এক তরুনের জন্য অপরাধী ধরা পড়ে। এতিম দুটি ছেলে বাবা-মা হত্যার বিচার পায়।
২৪ আগষ্ট - ২০২০
গল্প/কবিতা:
৯৬ টি
সমন্বিত স্কোর
৪.৫
বিচারক স্কোরঃ ২.১ / ৭.০পাঠক স্কোরঃ ২.৪ / ৩.০
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।