হঠাৎ সুপ্রতীকের ফেসবুকে একটা বন্ধুত্বের অনুরোধ এল। সুপ্রতীক বরাবরই অপরিচিত কোন ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলতে আগ্রহী নয়। তাই যথারীতি সেই বন্ধুত্বর রিকুয়েস্টটি গ্রহণ করল না। কিছুদিন পর অফিস থেকে ফিরে সুপ্রতীক বসেছে তার ল্যাপটপ নিয়ে। অনেকদিন ফেসবুকটা দেখা হয় না।ফেসবুক খুলতেই মেসেঞ্জারে মেসেজ।
“হ্যালো সুপ্রতীক কেমন আছো?”
সুপ্রতীক কোন উত্তর দিল না। নামটাও যে খুব পরিচিত লাগলো তা নয়। বিরক্ত হয়ে ল্যাপটপ বন্ধ করে দিল।
অন্যদিকে সুরঞ্জনা বেশ কিছুদিন ধরে চেষ্টা করে যাচ্ছে সুপ্রতীক এর সঙ্গে যোগাযোগ করার। সুরঞ্জনা বুঝতে পারছে না কেন সুপ্রতীক ওকে উত্তর দিচ্ছে না। যদিও সুরঞ্জনা জানে সুপ্রতীক কেমন ছেলে। ও কোনো মেয়ের সাথেই কথা বলতে কোনোদিনই পছন্দ করতো না । এখনো সেরকমই আছে হয়তো । যাইহোক সুরঞ্জনা ভাবছে “ হয়তো আমার নামটা বুঝতে পারেনি,কিংবা আমার নাম মনে নেই ওর। হতে পারে আমাকেই মনে নেই। মনে রাখার মতো খুব যে কিছু ছিল তাও তো নয়।” নিজের পরিচয় দিলে হয়তো সুপ্রতীক উত্তর দিত কিন্তু যেহেতু সুরঞ্জনা তার নিজের পরিচয় বলেনি তাই সুপ্রতীক কোন উত্তর দেয়নি। যাই হোক আজকে দুর্গাপূজোর নবমীর রাত। সুরঞ্জনা ফ্লাটের ব্যালকনিতে বসে বসে ভাবতে লাগলো পুরনো দিনের স্মৃতি কথা। “সে প্রায় কুড়ি বছর আগেকার কথা। তখন গ্রামের বাড়ি যাওয়া হতো দুর্গাপূজার সময় গুলোতে। তখন ক্লাস সেভেন হব হয়ত, সেইবার সুপ্রতীক দার সঙ্গে আলাপ হয়েছিল সেখানে। মামার বাড়ির কোনো এক দুঃসম্পর্কের জ্ঞাতিগোষ্ঠীর কেউ একটা হবে। সে বিশদ পরিচয়ে না গিয়ে আসল কথায় আসি। সুপ্রতীক দা তখন ক্লাস ইলেভেন। আলাপের সময় একবার দেখা হয়েছিল সেই একঝলক দেখেই আমার একটু ভাল লাগা তৈরি হয়ে গিয়েছিল, তখনও জানতাম না সেই ভাললাগা কখন গিয়ে গভীর এক ভালবাসায় পরিনত হবে। কিন্তু আমি এখনো জানিনা সুপ্রতীক দা আমাকে আমার মতো করে কি ভালোবাসে? নাকি সে আমাকে বন্ধুর মতো দেখে তাও যদি হয় আমি খুশি হব। আমি তাকে বন্ধু করতেও রাজি। কিন্তু আমাকে যদি অপছন্দ করে? এসব বিভিন্ন কথা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। সুপ্রতীক দার সঙ্গে কখনো সেই ভাবে যোগাযোগ করতে পারিনি। সে সময় ফোন ছিল না আবার ফেসবুক তো দূরের কথা। আজ ফেসবুকের দৌলতে যদিওবা সুপ্রতীক কে খুঁজে পেলাম কিন্তু সে তো আমায় পাত্তা দিল না। কতো চেষ্টা করলাম যোগাযোগ করার, কথা বলার।”
এসব ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ করে মোবাইল ফোনটা হাতে নিয়ে সুরঞ্জনা আবার মেসেজ করল সুপ্রতিক কে।
সুরঞ্জনা - “সুপ্রতীক তুমি উত্তর দাও না কেন আমার মেসেজের?”
ওদিক থেকে সুপ্রতীক এর কোন উত্তর না পেয়ে সুরঞ্জনা অপেক্ষা করতে লাগল, ভাবতে লাগল তার মেসেজের উত্তর হয়ত আসবে। কিন্তু না সে আশায় বালি। এখন উপায় কি। সুরঞ্জনা আর ধৈর্য্য ধরে রাখতে না পেরে ওর এক প্রিয় বান্ধবীকে ফোন করল,বান্ধবীর নাম শ্রেয়া। শ্রেয়া কে ফোন করল সুরঞ্জনা তখনই।
শ্রেয়া - “কিরে বল। এতদিন পর হঠাৎ মনে পড়ল। সব ভালো তো?”
সুরঞ্জনা - “হ্যাঁ সব ভালো,তোর খবর নিশ্চয়ই ভালো”।
শ্রেয়া - “হ্যাঁরে সব ঠিকঠাকই চলছে”।
সুরঞ্জনা - “তোকে একটা সাহায্য করতে হবে, পারবি?”
শ্রেয়া - “আগে শুনি কি সাহায্য তারপরে বলছি”
সুরঞ্জনা - আমার এক দুঃসম্পর্কের আত্মীয় বলতে পারিস, আমি অনেকদিন ধরে তার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছি। কিন্তু সব রাস্তায় ব্যর্থ দেখে তোর কাছে সাহায্য চাইতে এলাম।
শ্রেয়া - তো আমাকে করতে হবে কি?
সুরঞ্জনা - তোকে আমার হয়ে সুপ্রতীকদাকে ফোন করে জিজ্ঞাসা করতে হবে যে ও আমার সাথে কথা বলতে চাই কিনা।
শ্রেয়া - ব্যস এইটুকু, বেশ ঠিক আছে আমি চেষ্টা করবো।
সুরঞ্জনা - অনেক ধন্যবাদ তোকে প্লিজ একটু তাড়াতাড়ি দেখ ব্যাপারটা।
শ্রেয়া - কেন রে ব্যাপারটা কি আসলে। আমি তো কিছুই বুঝতে পারছিনা।
সুরঞ্জনা - সেরকম কিছু না প্রায় কুড়ি বছর আগে আলাপ হয়েছিল একবার কিন্তু যোগাযোগের অভাবে আর সেরকম ভাবে কথা হয়নি তাই বন্ধুত্ব করতে চাইছি নতুন করে এই আর কি।
শ্রেয়া - আমার তো মনে হচ্ছে অন্য ব্যাপার, শুধু কি বন্ধুত্ব সুরঞ্জনা?
সুরঞ্জনা - বেশ তুই যদি সাহায্য করতে না পারিস বল।
শ্রেয়া - এত রেগে যাচ্ছিস কেনো বাবা। বেশ আর কোন প্রশ্ন করবোনা। চল আজকে রাখি। কোন খবর থাকলে তোকে আমি মেসেজ করে জানাবো।
সুরঞ্জনা অপেক্ষা করতে লাগলো নিশ্চই শ্রেয়া কিছু একটা ব্যবস্থা করবে। সুরঞ্জনা বরাবরই খুব আশাবাদী মানুষ। সে সহজে হাল ছাড়তে চায় না। একবার যেটা মনে করে করবে সে সেটা করেই ছাড়ে। যাই হোক এখন সুরঞ্জনার একটাই কাজ শ্রেয়ার মেসেজের জন্য অপেক্ষা করা।
এভাবে বেশ কিছুদিন অপেক্ষা করার পর সুরঞ্জনার ফোনে হঠাৎ মেসেজ আসে।
শ্রেয়া - হাই সুরঞ্জনা।
সুরঞ্জনা - হ্যাঁ বল কোন খবর আছে? যোগাযোগ করতে পেরেছিলি সুপ্রতীক দার সাথে?
শ্রেয়া - নারে কোনও উত্তর দিচ্ছে না অনেকবার চেষ্টা করলাম।
সুরঞ্জনা খুব হতাশ হলো। তাহলে কি আর কোনদিনই সম্ভব না সুপ্রতীকদার গলার আওয়াজটা শোনা? সব চেষ্টায় কি ব্যর্থ হলো।সুপ্রতীকদা কি আমার কথা জানলে একবারের জন্যও কথা বলবে না? আমি জানি সুপ্রতীকদা বরাবরই মেয়েদের থেকে দূরে থাকে।শুনেছিলাম কলেজ জীবনেও সে কোন মেয়ের দিকে চোখ তুলে তাকাতো না। অহেতুক কোন মেয়ের সঙ্গে গল্পগুজব করতেও কখনো শুনিনি। তাহলে সে কেনই বা এই মেয়েদের মেসেজ,মানে আমার বা শ্রেয়ার মেসেজর সে রিপ্লাই দেবে। এই ভাবতে ভাবতে আরো কিছু দিন কাটার পর সুরঞ্জনা আর ধৈর্য রাখতে না পেরে কল করল শ্রেয়াকে।
সুরঞ্জনা - শ্রেয়া কিরে কোন খবর পেলি?
শ্রেয়া - তোকে আজকে আমি ফোন করবো ভাবছিলাম। খুব ভালো হলো তুই আজকে ফোন করলি।
সুরঞ্জনা - কি খবর আছে বল আমি খুব উদ্বিগ্নতার মধ্যে দিন কাটাচ্ছি।
শ্রেয়া - তোর অপেক্ষার অবসান হলো আজ। এইনে সুপ্রতীকদার নম্বর।
সুরঞ্জনা - সেকিরে কি সাংঘাতিক ঘটনা করলি। যা আমি এতদিন পারিনি করতে, তুই কিভাবে করলি রে?
শ্রেয়া - প্রথম দিন আমি হাই হ্যালো করে মেসেজ করেছিলাম ওনাকে। কোন উত্তর না পেয়ে আমি ডাইরেক্ট মেসেজ করলাম। লিখলাম তোমাকে সুরঞ্জনা অনেকবার মেসেজ করেছে তুমি রিপ্লাই করোনি।সুরঞ্জনাকে তোমার মনে আছে হয়তো আজ থেকে কুড়ি বছর আগে গ্রামের পুজোতে তোমার সাথে আলাপ। এ কথা শেষ না করতে করতেই ফোন নম্বার দিয়ে দিল, ইঙ্গিত করল যেন তোকে আমি ফোন নাম্বারটা দিয়ে দিই ব্যাস এটুকুই এর বেশি আর কথা বলেনি ।
সুরঞ্জনা - শ্রেয়া তোকে কি বলে যে ধন্যবাদ জানাবো আমি বুঝতে পারছি না। ধন্যবাদ দিয়ে তোকে ছোট করবো না। তুই তো আমার প্রিয় বন্ধু, তুই সবটাই আমার জানিস আমি তোকে কতটা ভালোবাসি। বেশ দেখা হলে অনেক কথা হবে আজকে রাখি।
সুরঞ্জনা কিছুক্ষণ নিশ্চুপ হয়ে থাকল। শ্রেয়ার দেওয়া ফোন নম্বরটার দিকে তাকিয়ে থাকল অনেকক্ষণ। কিছুক্ষণের জন্য নির্বাক হয়ে গেল। সুরঞ্জনা ভাবল ফোন নম্বর তো পেলাম কিন্তু কি বলবো সুপ্রতীকদাকে। এবার একটু ভয় ভয় করতে লাগলো। ফোন নম্বরের দিকে তাকিয়ে থেকে আর লোভ সামলাতে না পেরে মেসেজ করল সুরঞ্জনা। মেসেজ টাইপ করতে করতে ভাবতে লাগল “সুপ্রতীক দা কি উত্তর দেবে? আর উত্তর যদি দেয় কি বলবে আমাকে। যদি আমাকে তিরস্কার করে আমি তো সে অপমান সহ্য করতে পারবো না। যাক একবার চেষ্টা তো করে দেখি এত কিছু ভেবে লাভ নেই।”
সুরঞ্জনা - সুপ্রতীকদা তোমাকে ফেসবুকে এতোবার মেসেজ করলাম তা সত্ত্বেও রিপ্লাই করলে না যে।
সুপ্রতীক - একদম বুঝতে পারিনি।
সুরঞ্জনা - এখন কি করে বুঝতে পারলে?
সুপ্রতীক - তোর নামটা মনে ছিলনা।
সুরঞ্জনা - তোমার নামটা আমার মনে থাকল কি করে?
সুপ্রতীক - তোর বন্ধু যদি পরিচয় না দিত আমি সত্যি বুঝতে পারতাম না।
সুরঞ্জনা - অনেকক্ষণ চুপ থাকার পর। ..কোথায় থাকো তুমি এখন?
সুপ্রতীক - দিল্লিতে, তুই কোথায় আছিস?
সুরঞ্জনা - আমি কলকাতায় অংকে অনার্স করে একটা স্কুলে পড়াচ্ছি।
সুপ্রতীক - বেশ আজকে অফিসের টাইম হয়ে গেছে। রাতের বেলা কথা হচ্ছে।
সুরঞ্জনার কেমন যেন মনে হলো সুপ্রতীক তার সাথে কথা বলতে পছন্দ করছে না। খুব একটা আগ্রহ প্রকাশ করছে না তার সঙ্গে কথা বলতে। যাইহোক অফিসের টাইম হয়ে গেছে সেজন্য হয়তো তাড়া ছিল।
সুরঞ্জনার মন আজকে বেশ উৎফুল্ল। অনেকদিন পর সুপ্রতিকদা কথা বলল। না কথা নয় জাস্ট মেসেজে কথা হল। কিন্তু কেমন যেন মনটা খুঁতখুঁত করছে।ভাবতে লাগলো “কেন এমন ভাবে কথা বললো সুপ্রতীক দা। তবে কি সে আমার সঙ্গে কথা বলতে চায় না। আমি জোরপূর্বক তাকে কথা বলতে বাধ্য করলাম।বেশ আমারও জেদ কম নয় তাই যদি হয় আমি আর তাকে কোনদিন ফোন করে বিরক্ত করব না।”
এরপর সুরঞ্জনা স্কুলের পথে হাঁটা দিল। সন্ধ্যেবেলায় স্কুল থেকে ফিরে একটু বিশ্রাম করছিল সুরঞ্জনা। হঠাৎ ফোন এসেছে। সুপ্রতীকদার নম্বর। একটু অবাকই হল। না ফোন ধরল না আর। প্রথমবার ফোনটা ফুল রিং হয়ে যাওয়ার পর দ্বিতীয়বার আবার রিং হচ্ছে। এইবার সুরঞ্জনা ফোনটা না ধরে আর থাকতে পারল না। ফোনটা ধরার সঙ্গে সঙ্গে ফোনের ওপার থেকে পুরুষ গলায় বলে উঠলো “কখন থেকে ফোন করছি ফোন ধরছো না যে?”
আপনি কে বলছেন?
যে নম্বরে মেসেজে কথা বললে সকালে এখন বলছ আমি কে বলছি।
না আসলে অতটা লক্ষ করিনি।
কেমন আছো সুরঞ্জনা?
অনেকক্ষণ চুপ থাকার পর সুরঞ্জনা উত্তর দিল - তোমার কথা বলো।
সুপ্রতীক ফোনের ওপার থেকে - সুরঞ্জনা সকালের জন্য দুঃখিত। আমি বাড়িতে ফ্যামিলির সামনে তোমার সাথে ভালোভাবে কথা বলতে পারিনি।
সুরঞ্জনা অনেকক্ষণ নিরব হয়ে থাকল। ফ্যামিলির মানে কি বলতে চাইছে সুপ্রতীক দা। আমিও যা, কি আবার বলবে ফ্যামিলি মানে ওর বাবা মা ভাই বোনদের কথা বলছে। আমিও বোকার মত অন্য রকম ভাবছি , ভাবছি ওর বউ দুটো বাচ্চা এটা হচ্ছে ওর ফ্যামিলি। আমার ভাবনাগুলো যত উল্টোপাল্টা। সে তো ঠিকই ঘরের সামনে কথা বলাটা খুব একটা স্বাভাবিক নয়। এসব ভাবার পর সুরঞ্জনা উত্তর দিল
আচ্ছা ঠিক আছে কোন অসুবিধা নেই।
সুপ্রতীক গম্ভীর গলায় - কোন অসুবিধা নেই মানে, জানতে চাইলে না যে আমার ফ্যামিলি মানে কে কারা
সুরঞ্জনা - প্রয়োজন বোধ করলাম না।
সুপ্রতীক - সুরঞ্জনা বিয়ে করেছ?
সুরঞ্জনা - বেশ তো আছি, বিয়ের সময় হলে নিশ্চয়ই করব।
সুপ্রতীক - আর পাঁচটা বছর আগে যোগাযোগ করতে পারতে তো সুরঞ্জনা।
সুরঞ্জনা তখনও বুঝতে পারেনি ও কি বলতে চাইছে। পাঁচটা বছর আগে করলেই বা কী হতো আর পাঁচটা বছর পরে যোগাযোগ করেছি তাতেই বা কি অসুবিধা হচ্ছে।
সুরঞ্জনা - আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না কি বলতে চাইছো সুপ্রতীক দা
সুপ্রতীক - তুমি তো জিজ্ঞাসা করলে না আমি কোথায় কি করছি। আমার সম্পর্কে নিজে থেকেই বলছি দিল্লীতে একটি আইটি সেক্টরে আছি। বিয়ে করেছি প্রায় পাঁচ বছর হয়ে গেল দু'বছরের একটা ছেলেও আছে।
সুরঞ্জনা কি বলবে কিছুই বুঝতে পারলো না। সুরঞ্জনা বলল বেশ তো খুব ভালো তার মানে জমিয়ে সংসার করছো।
সুপ্রতীক - হ্যাঁ বলতে পারো ভরপুর সংসারী মানুষ।
সুরঞ্জনা - সুপ্রতীকদা আমি একটু ব্যস্ত আছি তোমার সঙ্গে আমি একটু পরে কথা বলি।
সুপ্রতীক - ওকে নো প্রবলেম।এখন সন্ধ্যেবেলা একটু বাইরে ছিলাম তাই কল করলাম আজকে হয়তো আমি আর কথা বলতে পারব না কারণ বাড়ি চলে যাচ্ছি এখন। কালকে নিশ্চয়ই কথা হচ্ছে।
সুরঞ্জনা ফোন রাখার পর সঙ্গে সঙ্গে চোখ জলে ভরে উঠলো। ভাবতেই পারিনি সুপ্রতীক এত তাড়াতাড়ি বিয়ে করে নেবে। আমার ধারনাটা ভুল ছিল তাহলে? সুপ্রতীক কোনদিনই আমায় ভালবাসেনি। আমার একতরফা ভালোবাসা ছিল বলেই হয়তো এটা হয়েছে। যাই হোক আমার আর সুপ্রতিকের কথা না বলাই শ্রেয়।
পরেরদিন সকালে উঠেই মেসেজ এল সুরঞ্জনার ফোনে।
সুপ্রতীক - সুরঞ্জনা তোমায় অনেক কথা বলার আছে।
সুরঞ্জনা কিছুক্ষণ ভাবার পর বলল - আমার সাথে কি কথা থাকতে পারে সুপ্রতীক দা?
সুপ্রতীক - আজকে আমার ওয়ার্ক ফ্রম হোম। ঘর থেকেই কাজ করব আর মিসেস গেছে অফিসে। ফাকা পেয়ে মনে হল তোমার সাথে একটু গল্প করি।
সুরঞ্জনা ভাবল আমি কারো অবসরের খোরাক হতে চাই না। কিন্তু কীভাবে সুপ্রতীকদাকে এ কথা বলি।
সুপ্রতীক ফোনের ওপার থেকে ভাবতে লাগলো সেই কুড়ি বছর আগে যুবক বয়সে জীবনে প্রথম ভালোবাসা যে ছিল তাকে যে এ ভাবে এত বছর পর খুঁজে পাবো সেটা কখনো ভাবি নি। মনের গভীরেই এত বছর ধরে যাকে যত্ন করে রেখে দিয়েছিলাম তার মনেও যে আমি এতটা অংশজুড়ে আছি কিনা সেটা আমি জানি না কিন্তু আমার জীবনে সুরঞ্জনা ছিল প্রথম প্রেম সেটা তো ভুলে যাওয়ার নয়। ওকে কোনোদিনই বলা হয়নি ‘আমি তোমাকে ভালোবাসি’।আচ্ছা সুরঞ্জনা কি আমাকে ভালোবাসে? তাই যদি না বাসবে তাহলে কেনইবা কুড়ি বছর পর আমাকে সোশ্যাল মিডিয়াতে খুঁজে বার করলো। ইন্টারনেটের অব্যবস্থা, ফোনের সুবিধা এসব না থাকায় সুরঞ্জনার সঙ্গে সে ভাবে যোগাযোগ করতে পারিনি। কিন্তু সব কিছু সুবিধা থাকলেও কি আমি যোগাযোগ করতে পারতাম,জানিনা।ভেবেছিলাম ওর হয়তো এতদিনে বিয়ে হয়ে গেছে, তাই মিছামিছি যোগাযোগ করে কি লাভ। কিন্তু সময়ের ও দূরত্বের ব্যবধান আমাদের মনের গোপনে থাকা সুপ্ত প্রণয়কে মুছে ফেলতে পারিনি। অন্তরের অন্তস্থলে রয়ে গেছে সে মধুমাখা প্রেম। যা ছিল আমার জীবনের প্রথম এবং সত্য ভালোবাসা।
এত কিছু ভাবার পর ফোনের ওই দিক থেকে সুরঞ্জনা বলছে - কি হলো সুপ্রতীকদা কথা বলছো না যে? চুপ কেন?
সুপ্রতীক -না সেরকম কিছু না! ওই একটু স্মৃতিতে ভিড় করে এসেছিল অতীত।
জানো সুরঞ্জনা। আজ থেকে কুড়ি বছর আগে তোমায় যখন প্রথম দেখেছিলাম সুরঞ্জনা, একঝলকে তুমি আমার মন জয় করে নিয়েছিলে। তারপর তোমায় অনেক খুঁজেছি কোথাও পায়নি। পাঁচ বছর আগে বিয়ের সম্বন্ধ আসে, তারপর বিয়ে হয়ে যায়। তোমায় একবার যদি আমি যোগাযোগ করতে পারতাম তাহলে আমি তোমাকে জানাতে পারতাম তুমি কতটা অংশ জুড়ে ছিলে আমার মনে।
সুরঞ্জনা ভাবতে লাগল একি বলছে সুপ্রতীক দা।
তাহলে তো আমার নিজের মনের কথা বলতেও আর কোন বাধা থাকল না।
সুরঞ্জনা - সুপ্রতীকদা কেন তুমি আমার সঙ্গে যোগাযোগ করো নি?
সুপ্রতীক - পাগলী সুপ্রতীক দা নয়, বল সুপ্রতীক, আমি তোমার সেই সুপ্রতীক।
সুরঞ্জনা - আমি কখনো কোনদিন বুঝতে পারিনি তুমি আমাকে পছন্দ করতে। তাহলে কেন ফেসবুকে যখন মেসেজ দিলাম রিপ্লাই করলে না?
সুপ্রতিক - তোমার নামটা আমার মনে ছিল না কারন তোমাকে যখন প্রথম দেখেছিলাম তখন অনেক ছোট ছিলাম তাই বুঝতে পারিনি । তার জন্য ক্ষমা চাইছি সুরঞ্জনা।
সুরঞ্জনা - সুপ্রতীক তুমি আজও আমার মনের মধ্যে একই রকমভাবে রয়েছো কুড়ি বছর ধরে। কিন্তু তোমার বিয়ে হয়ে গেছে শুনে তোমাকে আমি আর বিরক্ত করতে চাইনি।
সুপ্রতীক - কেন ভয় পাচ্ছো। ভয়ের কিছু নেই।
সুরঞ্জনা - তোমার ফ্যামিলি আছে এসব ঠিক নয় সুপ্রতীক।
সুপ্রতীক - কিন্তু একবার যখন তুমি আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছ আর তো সম্ভব নয় তোমার সঙ্গে কথা না বলে থাকা।
সুরঞ্জনা - বেশ তাহলে তাই হবে তুমি যা চাইবে।
সুপ্রতীক - কলকাতা আসবো খুব শিগগিরই, দেখা করবে তো?
সুরঞ্জনা - তুমি বলছো আর আমি করব না সেটা হয়।
সুপ্রতীক - বেশ তাহলে খুব শিগগিরই দেখা হচ্ছে।
এইভাবে কথোপকথনের পর বেশ কিছু মাস কেটে গেল সবার জীবন সবার মত চলছে।
হঠাৎ সুপ্রতীক সুরঞ্জনা কে ফোন করে জানায় “কালকে কলকাতা এয়ারপোর্টে আসতে পারবে ?”
সুরঞ্জনা - আমি তো আসতে পারবো কিন্তু তোমার ফ্যামিলি থাকবেনা?
সুপ্রতীক - না আমি একা আসছি।
সুরঞ্জনা - বেশ আসবো।
বিকেল চারটে ফ্লাইট ল্যান্ড করবে কলকাতা এয়ারপোর্টে। সুরঞ্জনা স্কুল থেকে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে চলে গেল এয়ারপোর্টের দিকে।
কুড়ি বছর পর দেখা হবে সুপ্রতীক এর সঙ্গে ভাবলেই কেমন শরীরে শিহরণ দিচ্ছে । পৌঁছে গেলো এয়ারপোর্টের গেটের কাছে। সুপ্রতীক এখন অনেক চেঞ্জ হয়ে গেছে। বয়সটা অনেক হলেও এখনো সেই কলেজপড়ুয়া রয়ে গেছে। সুরঞ্জনাকে অনেক দূর থেকে হাত দেখাচ্ছে,সুরঞ্জনা ভাবছে কিভাবে চিনল আমায় সেটাই বুঝতে পারছি না। এসে বলল হ্যালো সুরঞ্জনা আমি সুপ্রতীক চিনতে পারছো।
সুরঞ্জনা - তোমায় চিনতে না পেরে আবার উপায় আছে।
একটা উবার নিয়ে চলে গেল মিলেনিয়াম পার্কে। অনেক কথোপকথনে মেতে উঠেছে দুজনে ,যেন মনে হচ্ছে দুজনে কলেজ থেকে ক্লাস ফাঁকি দিয়ে চলে এসেছে পার্কে। মিলেনিয়াম পার্কে গিয়ে গঙ্গার ধারে গাছের তলায় বসল দুজন। সুপ্রতীক হাতটা ধরে বলল - কতদিন ধরে চেয়েছিলাম এই হাতটা ধরার। কুড়ি বছর অপেক্ষা করতে হবে সেটা বুঝতে পারিনি সুরঞ্জনা।
সুরঞ্জনা - সুপ্রতীক আমার খুব ভয় করছে, তুমি একজন বিবাহিত।
সুপ্রতীক - তাতে কি তুমি তো বিবাহিতা নও।
সুরঞ্জনা - আজকের দিনটা মনে রেখে দেবো চিরকাল সুপ্রতীক।
তোমার আমার এই শুভক্ষণ তোলা থাক ইতিহাসের পাতায়। জানি এর কোন পরিণতি নেই তবুও তুমি আমি চলব চিরকাল,অনন্তকাল ভালোবাসার হাত ধরে । আমি জানি সুপ্রতীক কোনদিনই সম্ভব নয় আর কোন কিছুই। কিন্তু তবুও তুমি আমার আর আমি তোমার জন্য এটাই যেন সত্যি। সেই সন্ধ্যেটা কথোপকথন শেষ করে সুরঞ্জনা বাড়ি ফিরে এলো।
ঠিক এক বছর পর। । সুরঞ্জনা এখন ব্যাঙ্গালোরে। হাজবেন্ডের চাকরির জন্য চলে আসতে হয়েছে ব্যাঙ্গালোর। ব্যাঙ্গালোরে এসো সুরঞ্জনা একটা নতুন চাকরি নিয়েছে।আজকে দুর্গাপূজার শুভ নবমীর রাত। ব্যাঙ্গালোরে ফ্ল্যাটের ব্যালকনিতে বসে সুরঞ্জনা ভাবতে লাগলো “ঠিক এক বছর আগে সুপ্রতীকে সোশ্যাল মিডিয়ায় খুঁজে পেয়েছিলাম । সেই রাতও ছিল নবমী নিশি, ইতিমধ্যে কেটে গেছে বেশ কিছুটা সময়। কত কথা হয়েছে ওর সাথে। এয়ারপোর্ট থেকে মিলেনিয়াম পার্ক সেই সন্ধ্যাটা আজও ভুলতে পারিনা। কিন্তু আমি নিজের ইচ্ছাতেই ওর সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করেছি। ওর সংসার জীবনে কোনো অসুবিধা আসুক সেটা আমি কখনো চাইনি। একজন প্রকৃত ভালোবাসার মানুষকে বিপদে ফেলা কখনই উচিত বলে মনে হয়নি আমার। তাই নিজের ইচ্ছা থেকে সরে এসেছি সুপ্রতীক এর কাছ থেকে। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করেছি স্বেচ্ছায়। কিন্তু এই নবমীর রাতে ব্যালকনিতে বসে মনে হচ্ছে আজ, সুপ্রতীকের জন্য যে ভালোবাসা অন্তরে লালন করেছি তা কোনদিনই ভুলে যাওয়ার নয়। সেই সুপ্ত প্রেম অনন্ত কাল ধরে হৃদয় বহন করব। মনের গোপনে যে সুপ্ত প্রণয় রয়েছে কেউ টের পাবেনা । ঠিক যেমন দুটি পাখি থাকে একটি নীড়ে, সুরঞ্জনা আর সুপ্রতীক ও তাই। কিছুক্ষণের জন্য চারিদিকে শূন্যতায় ছেয়ে গেল। এখন আমার সংসার হয়েছে। সবকিছুই আছে আমার। সব থেকেও যেন কিছু নেই। সুপ্রতীক ছাড়া জীবন শূন্য বোধ হয়।” এইভাবেই সুপ্রতীক আর সুরঞ্জনার সুপ্ত প্রণয়ের শূন্যতা বহন করে যাচ্ছে আজও।
লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা
ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য
শূন্যতায় ভরা একটি সুপ্ত প্রেমের কাহিনী। সুপ্রতীক আর সুরঞ্জনার জীবনে সব কিছু থাকা সত্বেও একে অপরকে না পাওয়ার যে শূন্যতা, তা বহন করে যাচ্ছে তারা আজও। ‘শূন্যতা’ বিষয়ের আলোকে সেই প্রণয় কাহিনীর গল্পই আজ আমার আলোচ্য।
২৩ আগষ্ট - ২০২০
গল্প/কবিতা:
৪ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪