প্রত্যাশা

প্রত্যাশা (আগষ্ট ২০২০)

Samia Ahmed
  • ১১১
সামিয়া আহমেদঃ আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি। কিছুক্ষণ আগেও ঝকঝকে রোদ ছিল। এখন মলিন হয়ে এসেছে। হালকা ঠা-া বাতাস বইছে। শরতের বিকেলের এই স্নিগ্ধ বাতাস আমার ক্লান্তিকে দূর করে, অনির্বচনীয় আনন্দে ভরে দেয় মন। সারাটা বিকেল আমি বাঁধের ওপর বসে কাটাই। কখনও কখনও আশপাশে ঘুরে বেড়াই। দিগন্ত ফুঁড়ে নদীতে পাল তোলা নৌকা আসতে দেখলে আমার ভাবপ্রবণ মন পুলকিত হয়। মনের জানালার পর্দা সরিয়ে তখন উঁকি দেয় স্মৃতিগুলো …. কত কথাই না উদয় হয়; মনশ্চক্ষে একসময় ভেসে ওঠে মৃত বাবার ছবিটি, অসুস্থ মায়ের কষ্টমাখা মুখখানি, ছোট ভাই-বোনদের মলিন চেহারাগুলো।
আমার মুখাবয়বে তখন ছড়িয়ে পড়ে অপূর্ণতার কালো আভা। মনের আকাশে মেঘ জমে আঁধার কালোসমেত।
গতদিনের পাওয়া মেসেজটা ফোনেই আছে, বের করে আবার পড়ি। ছোটনের টাকার খুব প্রয়োজন। ওর পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন ফি এখনও পরিশোধ করা হয়নি। মায়ের বুকের ব্যথাটাও বেড়েছে। তাড়াতাড়ি ডাক্তার দেখানো দরকার। এদিকে মাসের শেষ, উপরন্তু গত মাসের টিউশনির মাইনেটা পর্যন্ত পাইনি।
কোনোরকমে দিন কাটাচ্ছি….নৈরাশ্যে অন্তর ভরে ওঠে। আপন বেকারত্বের মতো অভিশপ্ত জীবনের প্রতি ঘৃণায়, ধিক্কারে আমার অন্তর এক দুর্বিসহ যন্ত্রণায় ভরে ওঠে। ব্যথায় আরও যেন ভারাক্রান্ত; পুঞ্জীভূত নৈরাশ্য।
নাহ, আর ভালো লাগে না। উঠে চলে আসি।
সন্ধ্যা নেমেছে। লোডশেডিং চলছে। আগে লোডশেডিং আমার কাছে ছিল বিরক্তিকর ব্যাপার। আর এখন এই সন্ধ্যার লোডশেডিং আমার সবচেয়ে প্রিয় মুহূর্ত। কারণ আমার স্বপ্নের আলোড়ন সবই পাওয়া হয় লোডশেডিংয়ের কল্যাণে। লোডশেডিংয়ের নিরবতার মাঝে থাকলেই আমার মনের অভয়ারণ্যে স্বপ্নপ্রাসাদ গড়ি বড় যতন করে। হয়ত আমার স্বপ্নগুলো একদিন সত্যি হবে নয়ত স্বপ্নের আশা ছেড়ে বস্তবতাকে মেনে নিতে হবে।
তবু আমি জেগে জেগে স্বপ্ন দেখি। কল্পনা এসে এক নতুন জগৎ গড়ে। আমার সোনালি অতীতকে ঘিরে এক নতুন স্বপ্ন যেন পাখির কুজনের এক মধুর স্বর্গরাজ্যের সৃষ্টি করে। কিন্তু বর্তমানের দুঃখকষ্টের রেখাগুলোর সামনে তাতে ভাটা পড়ে। হতাশায় পরিপূর্ণ এ বর্তমান জীবন স্বপ্নভঙ্গের বেদনায় মূহ্যমান হয়।
তখন স্মৃতিপটে জেগে ওঠে অতীতের সেই দিনগুলো…..
বাবা ছিলেন একটি বেসরকারি স্কুলের গণিত শিক্ষক। শিক্ষকতার পাশাপাশি ছাত্র পড়িয়ে বেশ ভালোই আয়-রোজগার করতেন। গ্রামের মধ্যে আমাদের পরিবারটি বেশ সচ্ছল ছিল। পরিবারে আমরা ছিলাম বাবা-মাসহ চার ভাই-বোন এবং ছোট চাচা। আমি ছিলাম বাড়ির বড় ছেলে। গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে পার করেছি কৈশোর। তখন বুঝিনি জীবনের উদ্দেশ্য, কোথায় তার গন্তব্য। বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেয়াই ছিল আমার মূল কাজ। তখনও স্বপ্ন দেখতাম, তবে বড় হবার নয়, গ্রামের সুন্দরীদের নিয়ে, বান্ধবীদের নিয়ে। আমার ডায়রির পাতাগুলো পরিপূর্ণ হতো ওদের নিয়ে গড়া কল্পনার রাজ্য দিয়ে। আজ পর্যন্ত একজনও আমার জীবনে আসেনি। শুধু শুধু জীবনের মূল্যবান সময়গুলো নষ্ট করেছিলাম ওদের পেছনে। সে সময়ের ডায়রিগুলো মাঝে মাঝে পড়ি। এখন চোখের তারায় ভেসে ওঠে পাষাণ শেওলাদের প্রলেপ এঁকে দেয়া কর্দমাক্ত প্রতিটি ডায়রির পাতা।
আমাদের পরিবারের সমস্ত সুখস্বপ্ন আর প্রত্যাশার প্রাসাদ ভেঙে দিয়েছিল বাবার মৃত্যু। সেদিন বড় রকমের আঘাত পেয়েছিলাম। জীবনের বাস্তবতা সেদিন থেকে বুঝতে পেরেছিলাম। কিন্তু বড্ড দেরিতে, যখন আমার ভবিষ্যৎ জীবনের বাতি প্রায় নিভু নিভু। দায়সারা লেখাপড়া করে কোনোরকমে গ-িগুলো পার করে বেকারের খাতায় নাম তুলেছি। ঠিক তখনই মাথায় উঠেছে সংসারের বোঝা, যার ভারে দেহের ভারসাম্য আমি যথারীতি পাইনি। বাবার মৃত্যুর পর ভেবেছিলাম ছোট চাচা পাশে দাঁড়াবে, স্নেহের হাতটি মাথায় রাখবে। জানি না সেই স্নেহের মমতায় ভরা তার হাতটি আজ কোথায় লুকিয়ে আছে। চাচা হয়ত আজ আমদের পরিচয় দিতে লজ্জা পান।
নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য আজ বছর পাঁচেক হলো শহরে এসেছি। চাকরির বয়সটা আর দুই বছর পরে খসে পড়বে। অনেক চেষ্টা করেছি, কিন্তু ফলাফল শূন্য। পত্রিকার পাতায় চাকরির পরীক্ষার রেজাল্ট দেখতে দেখতে আমার চোখ দুটো বেশ ক্লান্ত। আমার লোভাতুর চোখ দুটো রেজাল্টের সময় বেশ পরিশ্রম করে। এইতো গতবার রোল নম্বরটা পাবার আশায় পাঁচ-ছয় বার করে পত্রিকার পাতা খুললাম।
এবারকার পরীক্ষাও খুব ভালো দিয়েছিলাম, আশা ছিল টিকব। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস। রেজাল্ট খুঁজতে যেয়ে কষ্টে চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে এসেছিল, ঝাপসা চোখে পত্রিকার রঙিন পাতাগুলো দেখলাম সাদাকালো। এক সময় নিজে নিজেই কুঁকড়ে যাই লজ্জাবতী লতার লজ্জাকর ভূমিকায়।
স্বপ্ন নামের শব্দটির মাঝে আমি আবার ডুবে যাই একচিলতে সুখের আশায়। জানি, আমার কাক্সিক্ষত সুখেরা বাঁসা বেধেছে বাকির খাতায়। তবু প্রত্যাশার টানে দুচোখের ওপর ধরে আছি কায়াহীন স্বপ্ন নামের কোনো বাইনোকুলার। যেটার মধ্যে দিয়ে দেখি আমার ভবিষ্যতের সুখস্বপ্নগুলো।
আজ থার্টিফাস্ট নাইট। স্বপ্নহারা বছরের শেষ দুয়ারে দাঁড়িয়ে থাকা আমি এক ক্লান্ত পথিক। ২০১৮-এর শেষ দিনটির শেষ মুহূর্তের মৃদু বাতাসের পরশ নেয়ার জন্য আমার ক্লান্ত পদক্ষেপ। মৃদু বাতাস বইছে, কালো আকাশের বুকে নকশী কাঁথার মতো ফুটে উঠেছে ঝিলমিল তারা। মিটিমিটি আলোয় জানান দিয়েছে তাদের পূর্ণতা প্রাপ্তির কথা।
বছরের শেষ রাতের জোৎস্না আজ খুব উজ্জ্বল। হাঁটতে হাঁটতে জোৎস্নাগুলোকে দেখছি। হইচই আর পটকা ফোটার শব্দ শোনা যাচ্ছে। ঘড়িতে শুরু হয়ে গেছে নতুন বছরের সময় গণনা।
নতুন বছরকে ঘিরে আমার প্রত্যাশা এবং সান্ত¡না শুধু একটাই চলার মতো একটা চাকরি পাব নিশ্চয়ই। প্রতি বছরের শেষদিনের এই প্রত্যাশাটুকু আমার প্রাণে বুলিয়ে দেয় একরাশ সান্ত¡না।
প্রতিদিনের মতো আজও রাত শেষে একটি জ্বলজ্বলে সূর্য উঠেছে পূর্ব দিগন্তে। পাখিরা গাইছে প্রভাত সংগীত। সুবাস বিলিয়ে ঝরে পড়েছে তাজা বকুলেরা।
এভাবে বেড়ে উঠেছে আজকের নতুন বছরের নতুন দিনটির বয়স। পুরাতন একটি পৃথিবী। সূর্যটাও পুরাতন। কিন্তু আজকের দিনটি নতুন।
বিছানায় শুয়ে শুয়ে আধবোজা চোখে খুলে দিলাম আমার নতুন স্বপ্নের জানালা। প্রত্যাশার টানে দু’চোখের উপর স্বপ্ন নামের বাইনোকুলারটি ধরলাম সামনের দিকে, দেখি আমার প্রত্যাশার রঙধনুরা জেগে উঠেছে প্রতিটি দিগন্তের নীল আঙিনায়…।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
ফয়জুল মহী মনোমুগ্ধকর কথামালায় প্রতিশ্রুতিশীল লেখা । কোমল পরশে শ্রুতিমধুর  চয়ন।

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

প্রত্যাশা প্রায়শই অসম্পূর্ণ বাসনা দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। অন্যদিকে আশা অপূর্ণ ইচ্ছা সম্পর্কে নয়। আশা সর্বদা এমন কিছু নিয়ে থাকে যা সম্ভবত ঘটে থাকে। প্রত্যাশা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হওয়ার সম্ভাবনা কম।

প্রত্যাশা প্রায়শই অবাক করে দেয়। আশা নিয়মিত বিস্মিত হয় না। এটি এমন কিছুর কারণে যে আপনি কিছু আশা করে বাস্তবতা দেখতে পাচ্ছেন। অন্যদিকে প্রত্যাশায় বাস্তবতার অনুপস্থিতির কারণে এটি প্রায়শই অবাক হয়ে যায়।

প্রত্যাশার ফলাফল প্রায়শই হতাশায় থাকে যেখানে আশা প্রায়শই হতাশায় পরিণত হয় না। আপনার মন একটি রাজ্যে বা আশার ক্ষেত্রে প্রস্তুতি। অন্যদিকে প্রত্যাশার ক্ষেত্রে আপনার মন প্রস্তুতি অবস্থায় নেই।

২০ জুলাই - ২০২০ গল্প/কবিতা: ১ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

বিজ্ঞপ্তি

“মে ২০২৪” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ মে, ২০২৪ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী