মৃদুল মহা বিপদে পড়েছে। বিপদটি মেয়ে ঘটিত। কিভাবে এ অবস্থা থেকে স্বাভাবিক হবে তা বুঝতে পারছেনা। যাকে নিয়ে এই সমস্যার সূত্রপাত তার অবশ্য কোনো বিকার নেই। তিনি এই মুহূর্তে খুব আরামে পা দুলাচ্ছেন। অবশ্য পা দুলানোর জন্য দোষ দেয়া যাচ্ছে না। তবে দেখতে দৃষ্টিকুটু লাগছে। মৃদুল মেয়েটির বয়স বুঝার চেষ্টা করল। কিন্তু পারল না। মেয়েদের বয়স বুঝতে না পারার অনেক কারন থাকতে পারে। মৃদুলের এই মুহূর্তে কোনো কারণ মাথায় আসছে না। তবুও বুঝার চেষ্টা করল। মেয়েটির মাথায় হিজাব পরা। এটা বড় সমস্যা হবার কথা না। সে মুখ ঢেকে রাখেনি। তবে মুখ দেখে বয়স বুঝা যাচ্ছে না। আরেকটি কারন হতে পারে। মেয়েটি অসম্ভব সুন্দর। এত সুন্দর মেয়ে সহজে চোখে পড়েনা। সুন্দরী মেয়েদের পনের থেকে পঁচিশ এই বয়সটি অন্যরকম। আলাদা করে বুঝা যায় না। পনেরো ভাবলে পনেরো আবার পঁচিশ ভাবলেও তাই সঠিক মনে হয়। এটাই কি কারন। হয়তবা। আরেকটি কারণও আছে। মেয়েটির চোখ খুবই তীক্ষ্ণ। এত সুন্দর একটি মেয়ের এরকম সুন্দর চোখ থাকাই স্বাভাবিক। মেয়েটির নাম তানিশা। মৃদুল তানিশা নামের অর্থ মনে করার চেষ্টা করল। কিন্তু পারল না। একবার ইচ্ছে হল ওর বোনের বরকে ফোন দিয়ে জিজ্ঞাসা করবে। উনার বাংলা ভাষা জ্ঞান অসম্ভব রকমের ভাল। সমস্যা হল উনাকে যদি জিজ্ঞাসা করা হয় তানিশা নামের অর্থ কি। তাহলে পাল্টা প্রশ্ন করবে এর কাছাকাছি নাম যেমন আনিশা, মাইশা, রাইসা এদের অর্থ জানে কিনা। না জানলে এদের অর্থ, বিপরীত শব্দ, কোন বিদেশি ভাষা থেকে এই শব্দগুলো এসেছে ইত্যাদি বোনাস হিসাবে শিখিয়ে দিবে। নাহ কাউকে জিজ্ঞাসা করতে হয়নি। অনেককক্ষন মাথার ভিতর যুদ্ধ করে মৃদুল নিজেই অর্থ উদ্ধার করতে পারল। তানিশা মানে হল উচ্চ আকাঙ্ক্ষা। তবে তানিশা নামের এই মেয়েটির কোন উচ্চ আকাঙ্ক্ষা আছে কিনা তা বুঝার উপায় নেই। বেশী সুন্দরী মেয়েদের কে নিয়ে অনুমান করা খুব সহজ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এরা হয় কিছুটা বোকা প্রকৃতির। সেই সাথে কিছুটা অহংকারী। তবে তানিশাকে দেখে বোকা কিংবা চালাক কোনটাই বুঝা যাচ্ছেনা। যাদেরকে দেখে অনুমান করা যায় না এরা হয় বিপদজনক। মৃদুল আজই জুড়ী কলেজে লেকচারার হিসাবে যোগদান করেছে। সে কোনো বিপদে জড়াতে চায় না।
-স্যার, আপনাকে আরো একটু সময় বসতে হবে। এখনো আপনার রুম পরিস্কারের কাজ চলছে। গত কদিন ধরে যে পরিমান তুফান আর বৃষ্টি হচ্ছে। আমরা ভেবেছিলাম আপনি আসতেই পারবেন না।
মৃদুল মুখে কিছু বলল না। শুধু ওহ বলে মাথা ঝাঁকাল। সমস্যা নেই অথবা খুব সমস্যা। এর মানে দুটোই হতে পারে। যাই বুঝুক। কয়েকদিন ধরে আবহাওয়ার যা অবস্থা। আসলে আজ জুড়ী আসতে পারবে তা নিজেও বিশ্বাস করেনি। কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে রাস্তা ডুবে যায় যায় অবস্থা। সুনামগঞ্জে বন্যা শুরু হতে সময় নেয় না। আর একটু দেরি করলে আর আসার কোনো উপায় ছিল না। তাহিরপুর থেকে কিছু রাস্তা মোটর বাইকে। আর কিছু রাস্তা নৌকায়। এভাবেই আসতে হয়েছে। তারপর সুনামগঞ্জ শহর থেকে বাসে করে সোজা জুড়ী এসেছে। ওর জন্য আপাতত থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে কলেজ কমিটির সভাপতির বাসায়। মৃদুল অবশ্য এসব নিয়ে আর মাথা ঘামাচ্ছে না। শুধু একটু পর পর দেয়ালে টানানো বিশাল ঘড়িটায় চোখ ভুলাচ্ছে। আর দরদর করে ঘামছে।
-স্যার, গান শোনতে পারছেন?
মৃদুলের কানে স্পষ্টভাবে গানের আওয়াজ কানে এল। পাশের বাসায় মান্নাদের কন্ঠে গান বেজে চলেছে। মৃদুল আশ্চয্য হয়ে গেল। আগে ব্যাপারটা ধরতে পারেনি। এবার তানিশার পা দোলানোর কারনটি বুঝতে পারল। এখন আর খারাপ লাগছে না। এখন মনে হচ্ছে চোখের সামনে একটি অপ্সরী মেয়ে গানের তালে তালে পা দুলাচ্ছে। এর চেয়ে সুন্দর দৃশ্য আর কিছু হতে পারত? মোটেই না। মৃদুল গানের কথা গুলো শোনার চেষ্টা করল। গভীর বিষাদের গান। মনে হচ্ছে বুকের খুব গভীর থেকে ভেসে আসছে গানের কলিগুলি। এখন নিজেরই গানের তালে তালে পা দুলাতে ইচ্ছে করছে। মৃদুল ভীষণ লজ্জা পেল। তানিশা মনে হয় ব্যাপার টা বুঝতে পেরেছে।
স্যার, আপনি কি লজ্জা পাচ্ছেন?
তানিশা সরাসরি চোখের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাস করল। সমস্যা হল এত সুন্দর চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলা যায় না। প্রেমে পড়ে যেতে হয়। মৃদুল চোখ সরিয়ে ফেলল। মাথা নিচু করে বলল,
-লজ্জা পাব কেন?
বলার সময় গলাটা একটু কেঁপে গেল। সে মিথ্যা বলেছে। এমনিতেই কখনো মিথ্যা বলতে পারেনা। এবার অনিচ্ছা সত্ত্বেও বলতে হল। খুব গুছিয়ে বলতে পারেনি তা নিজেই বুঝতে পারল। তবে তানিশা সম্পর্কে একটা ব্যাপার পরিস্কার। মেয়েটি অসম্ভব সুন্দরী হলেও কোনভাবেই অহংকারী মনে হচ্ছে না।
-স্যার পাশের বাসায় কে বাজাচ্ছে শোনবেন?
-কে?
-আচ্ছা আমি বলে দেয়ার আগে আপনি একটু ধারনা করুন তো?
-আমি কিভাবে বলল? আমি তো আগে কখনো তোমাদের বাসায় আসিনি।
-তাতে কি হয়েছে। আপনি জাস্ট একটু অনুমান করে বলুন।
-নাহ আমি পারব না। আমার অনুমান শক্তি দুর্বল।
-তা অবশ্য আপনাকে দেখেই বুঝা যায়। সবাই আমাকে কি বলে জানেন?
-কি বলে?
-আপনিই বুঝার চেষ্টা করুন।
মৃদুল বুঝতে পারল তার ছাত্রী অসম্ভব বুদ্ধিমতী। কিন্তু মুখ ফুটে কিছু বলল না।
-আমি বললাম না, আমার অনুমান শক্তি খুব দুর্বল।
-আচ্ছা, তাহলে আমিই বলে দেই। সবাই বলে আমি খুব বুদ্ধিমতী।
বলেই হিহি করে হাসল। হাসির শব্দে মৃদুল ভয় পেয়ে গেল। বাসার অন্যন্য মানুষ কি ভাববে। প্রথম দিনেই টিচারের সামনে হাসাহাসি কেউ ভালোভাবে নিবে না।
-স্যার, পাশের বসার রুপম ভাই আমার জন্য পাগল।
-তোমার জন্য পাগল মানে?
তানিশা আকাশ থেকে পড়ল। এই যুগে এরকম বোকা মানুষ কিভাবে হয়!
-মানে হল, উনি আমাকে অনেক পছন্দ করে। তাই রাতের বেলায় আমাকে গান শোনায়।
-তোমাকে শোনানোর জন্য গান বাজায় কিভাবে বুঝতে পারছো? হতে পারে ওই ছেলের এটা প্রিয় গান।
-স্যার, আপনি এসব বুঝতে পারবেন না।
মৃদুলের আর বুঝার ইচ্ছেও হল না। কেন জানি রাগ লাগছে। কিছুটা কী হিংসা? হয়তবা। এতক্ষণে থাকার জায়গা পরিষ্কার শেষ হয়েছে। জায়গা বলতে তানিশাদের বাসার ছাঁদের চিলেকোটার রুম। মৃদুল রুমে এসে লাইট বন্ধ করে জানালার পর্দা খুলে দিল। এখনো মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। রাতের আঁধারে তা দেখা যাচ্ছে না। তবে মাঝেমধ্য বজ্রপাতের গগনবিদারী শব্দ আর আকাশ জুড়ে বিজলীর রেখা ঝড়ো আবহাওয়ার অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে।
রাতে খুব ভাল ঘুম হল। এমনকি ঘুমের ভিতর একটি চমৎকার স্বপ্ন দেখল। তবে কাউকে বলার মত না। বেশ লজ্জার।
বাহারি ফুল দিয়ে সাজানো বাসর ঘর মনে হচ্ছে কারো বিয়ের প্রথম রাত। একটু পর মৃদুল নিজেকে বরের বেশে দেখে বুঝতে পারল আজ তার নিজেরই বিয়ে। বেশ লজ্জা লজ্জা একটা ভাব নিয়ে রুমের ভিতরে প্রবেশ করল। দেখল, সুন্দর করে সাজানো বিছানার এক কোণায় একটি মেয়ে ঘোমটা দিয়ে বসে আছে। বুঝাই যাচ্ছে মেয়েটি খুব লজ্জা পাচ্ছে। মৃদুল কি করবে বুঝতে পারছে না। অনেক সাহস করে তার নববধুর কাছে এসে বসল। কাছে আসতেই একটা অদ্ভুদ মাদকতা মেশানো পরিচিত একটা সুগন্ধি নাকে এল। খুব পরিচিত মনে হচ্ছে। তবে মনে করতে পারলনা। অনেকক্ষণ বসে থাকার পর নববধুর ঘোমটা তুলে চমকে গেল। নববধুর বেশে মেয়েটি তানিশা। মৃদুল ঘোরের ভিতর চলে গেল। বুঝতে পারছে না এ কি করে সত্যি হয়। ভালো করে চেয়ে দেখল তানিশা পা দোলাচ্ছে। কিশোরী মেয়ের মত। তবে কোথাও কোনো গান ভেসে আসছে না। বরং পায়ের নূপুরের শব্দ সুরেলা আবেশ তৈরি করেছে। মৃদুল সাহস করে তানিশাকে জড়িয়ে ধরল। সাথে সাথে অদ্ভুত মাদকতা মেশানো সুগন্ধিটি ঘরময় ছেয়ে গেল।
মৃদুলের যখন ঘুম ভাঙল তখন ভোর রাত। পাশের মসজিদ থেকে ফজরের আজান হচ্ছে। পাশে হাত দিয়ে তানিশাকে খুঁজল। না পেয়ে বুঝতে পারল এতক্ষন যা দেখেছে পুরোটাই স্বপ্ন। বেশ লজ্জার আর বিব্রতকর ব্যাপার। প্রথম একটু লজ্জা লজ্জা লাগলেও একটুপর অন্যরকম ভাললাগা কাজ করতে শুরু করেছে। ছোটবেলা থেকেই শোনে এসেছে, ভোর রাতের স্বপ্ন নাকি সত্যি হয়। মৃদুল আর কিছু ভাবতে পারল না। আবার ঘুমিয়ে পড়ল। ঘুমের ভিতর কানে আসল কিছু শোরগোল, অনেক হইচই। তবে এর কোনো কিছুই মৃদুলের ঘুম পুরো ভাঙাতে পারল না।
সকালবেলা তানিশার বাবা বসে আছে মৃদুলের সামনে। উনার মুখ গম্ভীর। কোনো কথা বলছেন না। গতকাল রাতে বাসায় ভয়ংকর একটা ঘটনা ঘটে গিয়েছে। উনার বড় মেয়েটির নাম তানিশা। মেয়েটি পাশের বাসার একটি ছেলের হাত ধরে পালিয়েছে। মৃদুল কিছু না বলে জানালা দিয়ে দূরের মেঘালয়ের পাহাড়ে দিকে তাকাল। সেখানে স্তরে স্তরে আরো কালো মেঘ জমা হচ্ছে। কয়েকদিন ধরে চলা আষাঢ় মাসের বৃষ্টি। সহসা থামবে বলে মনে হচ্ছে না।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা
ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য
প্রেম ভালোবাসার জন্য আমাদের যুগের পর যুগ পাশে থাকতে হয়না। আমাদের চীরনিরন্তন বাঙালি সমাজে প্রেমে পড়ার জন্য একটি বর্ষণমুখর সন্ধ্যাই যতেস্ট। ছায়াপ্রিয়া গল্পেও তার ব্যতিক্রম হয়নি।
১৮ জুলাই - ২০২০
গল্প/কবিতা:
৪ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
বিজ্ঞপ্তি
“জানুয়ারী ২০২৫” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ জানুয়ারী, ২০২৫ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।