হিসাব-নিকাশ শেষে বরপক্ষই লাভবান হয়েছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কারণ, বরের ভূমিকায় থাকা হাসান মাহমুদ একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের সামান্য বেতনের কর্মজীবী। সেদিক থেকে নববধু রুপাই এগিয়ে আছে, কেননা, সে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা। তাই মেয়ের গায়ের রঙে বর পক্ষের বিশেষ আপত্তি থাকলেও বিয়েতে কোন বিপত্তি ঘটেনি, কারণ, কন্যার চাকুরীই এ সমস্যার নিষ্পত্তি করে দিয়েছে। মেয়ের ধার্মিকতা, সদাচারণে তুষ্ট বরের মা-জননী। কাজেই হাসান মাহমুদের তো কথা না বলাই শ্রেয়। হাসান মাহমুদের পিতৃ-মাতৃভক্তির বদান্যতা সম্পর্কে রুপার বাবা মঈন আহমেদ আগেই অবগত হয়েছিলেন। বাবা-মা ও দুই ভাইয়ের ছোট পরিবার, মা-বাবার প্রতি সন্তানদের শ্রদ্ধা-ভক্তি, ভালো ঘর সব মিলিয়ে কৃষ্ণ বর্ণের কন্যার বাবা মঈন সাহেব আপত্তি করার কোন কারণ খুঁজে পাননি।
সবকিছু ঠিকঠাকই চলছিল। স্বামী হিসাবে হাসান মাহমুদ মন্দ নয়। মা, বাবা, ভাই, স্ত্রী সবার প্রতিই সাধ্যমতো কেয়ারফুল। নতুন পরিবেশে রুপা খুব একটা অস্বস্তি বোধ করছে না। মাতৃহারা রুপা শাশুড়িকে মা হিসাবেই পেয়েছে। হাসান মাহমুদের ছোট ভাই হুসাইন মাসুদ অনার্স শেষ করেছে। কিন্তু পরিবার, পড়াশোনা আর কম্পিউটারই তার জগৎ যেন। রুপা এমনিতেই খুব হাসিখুশি, অমায়িক স্বভাবের। শ্বশুর বাড়ির এমন পরিবেশ সে বেশ উপভোগ করছে। কিন্তু জীবনের শতভাগ পূর্ণতা লাভের অধিকার বোধ হয় সবার থাকে না। কী আর করা! মেনে নিতে হয়, রুপাও মেনে নিয়েছে। খুব প্রয়োজন ছাড়া শ্বশুর বাবা রুপার সাথে কথা বলেন না। রুপা প্রথম দিকে এতটা গুরুত্ব না দিলেও একসময় তার বুঝতে অসুবিধা হয়নি যে, শ্বশুরের নিকট তার চেয়ে তার চাকুরী তথা তার বেতনের গুরুত্বই বেশি। পরিবারের সবার সাথে সম্পর্ক ভালো হলেও শ্বশুরের মন সে জয় করতে পারেনি।
তার গায়ের রঙ নিয়ে স্বজনেরা কথা তোলেন, রুপার শ্বশুর শিহাব মাহবুবও কণ্ঠ মেলাতে কসুর করেন না। শিহাব মাহবুবের সামনে স্ত্রী-সন্তানরাও যেন অসহায়। বাড়ির পাশ দিয়ে বয়ে গেছে রেললাইন। রাতে ঘুম আসে না। ট্রেনের শব্দ আজকাল বড় ভালো লাগে রুপার। রাত জেগে ট্রেনের আওয়াজ শোনে।
মাস আরেকটা শেষ হলো। বরাবরের মতো আজও সে অনেক কেনাকাটা করেছে। শ্বশুরের জন্য একটা দামী পাঞ্জাবী কিনেছে। কিন্তু শ্বশুর বাবা স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, রুপার মতো কালো মেয়েকে তিনি ছেলের বউ করে এনেছেন কেবল টাকার জন্য। টাকা দেওয়ার শর্তেই সে কেবল এই বাড়িতে থাকতে পারে। প্রয়োজনে, ছেলেকে আবার বিয়ে দেবেন।
একটিও কথা বলতে পারেনি রুপা। গোপনেই কেবল গোপন অশ্রু সংবরণ করেছে। অভিমানী কাউকে কিছুই বলেনি। কারণ, সে জানে ফলাফল শূণ্য।
ভোরের ট্রেন চলে যায়, সেই শব্দ সবাই শুনতে পায়, কিন্তু কেউ জানতে পায় না, ট্রেনের এই গতি থামিয়ে দিয়েছে একটি জীবনের গতিকে। যখন জানা গেল, তখন সকল লালসা থেকে রুপা মুক্ত।
সময়ের আবর্তনে সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে যায়। হয়তো শিহাব মাহবুব ভাবছেন এবার ছেলের জন্য উদার মনের সুন্দরী বউ, বেতনের পরিমাণ আরেকটু বেশি!
লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা
ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য
কালো মেয়েরা সমাজে উপেক্ষিত। এই উপেক্ষা তাদের জীবন কখনও বয়ে আনে করুণ পরিণতি।
১৮ জুলাই - ২০২০
গল্প/কবিতা:
৮ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪