বৃষ্টির দিন

প্রত্যাশা (আগষ্ট ২০২০)

  • ১০
  • ৩৬
“বিষ্টির মা! বিষ্টি নামছে– ও কাজলি! নাম্, আইজ থাক– আইজ থাক রে বু!”
“কী লো? কী হইছে? মরণ আমার। বিষ্টিরে ভয় করি ক্যামনে? ক!”
আকাশের কালো মেঘগুলোর দিকে তাকায় কাজলি। খুব শীঘ্রই হয়তো বৃষ্টি নামবে। সন্ধ্যা হয়ে এলো বলে। আজকে মহাজনকে বলেছে কাজটা একটু বেশি করে করবে। সবাই বিকেলের দিকেই চলে গেছে। মালতি আছে শুধু। একটু পর সেও চলে যাবে।
তড়িঘড়ি করে উপরে উঠে আসে মালতি। আকাশের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে। মেঘগুলো যেন আজই কোথা থেকে উদয় হলো। আজ আষাঢ়ের সাতাশ। বৃষ্টির এতগুলো দিন গেল তবু বৃষ্টি এলো না। আজই আসতে হলো!
“ও বু! আজ মনে হয় বর্ষা বাড়ব খুব! চল রে বুবু, যাই আইজ–”
“ও মালতি? আমাগোরে গাঁয়ে কি বান আইছে নাকি রে?” অন্যমনস্ক কাজলি মাথার উপর থেকে ইটগুলো ছাদের কোণাটায় রাখতে রাখতে বলল।
“মরণ! তুই যেই জায়গায়, আমিও সেই জায়গায়। আমি কি জানি? তোর মনে আছে শ্যাষ কবে গেলাম বাপের বাড়ি? মরলেও মনে হয় আর যাওয়া নাই। এইখানেই কোনোখানে কব্বর দিবো তরে, আমারে আর ভাইজান রে।”
আচমকা একটা শরীরের সমস্ত ভার যেন এসে পড়ল মালতির গালে। বেশ জোরেই মেরেছে কাজলি। কিছুক্ষণ হতবাক হয়ে তাকিয়ে থেকে শেষে এক দৌড়ে পালাল মালতি।
মালতি চলে গেছে সন্ধ্যার শুরুতে। খোলা আকাশের নিচে একটা একতলা বাড়ির ছাদের কোণায় বসে আছে কাজলি। দেশে এখন মহামারি। কে কোন দিকে যায় কোনো ঠিক নেই। এই তো কাল পাশের বাড়ির উৎপল দাদার বউ মারা পড়ল। ইস! কত ভালো ছিল বউদি! অনেক আদর করত কাজলিকে।
মালতির জন্য বেশ খারাপ লাগছে। কাজলি বুঝতে পারছে, ও খারাপ ভাবে বলেনি। কিন্তু কেন জানি শাহেদের নামে খারাপ কিছু শুনলেই রাগে মাথায় আগুন ধরে যায় যেন। মেয়েটাকে বেশি জোরে মারা ঠিক হয়নি– এত চিন্তা আর ভালো লাগছে না। শেষ ইট কটা রেখে ভেজা শরীর নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামছিল হঠাৎ পেছন থেকে কে যেন টেনে ধরল।
“ওমা! কে আপনে? আঁচল টানেন ক্যান?”
একটু পরেই মানুষটাকে চিনতে পারল কাজলি। সাক্ষাৎ যম! এই বাড়ির মালিকের ছেলে– সত্য। পড়ালেখায় ভালো, ডাক্তারি পড়ছে; কিন্তু স্বভাব অত্যন্ত খারাপ। একবার কাজলিকে ডেকে নিয়ে গিয়ে খারাপ প্রস্তাব দিয়েছিল। সেবারই ধরা পড়ে শাহেদের সেই অজানা রোগ। আস্তে আস্তে স্বামীকে সারিয়ে সেবার তুলেছিল ঠিকই, কিন্তু এবার কি পারবে তাকে বাঁচাতে?
অনেক বৃষ্টি হচ্ছে। রাতও হয়েছে, তাই কেউ নেই আশেপাশে যে ডাকবে। সত্য কাজলির শাড়িটা ধরে জোরে একটা টান দিলো। ভেজা শাড়িটা খুলল না ঠিকই কিন্তু অনেকটুকু ছিঁড়ে গেল। খানিকটা পেটের অংশ বেরিয়ে পড়েছে। মরণকামড় থেকে বাঁচতে যেমন মানুষ শেষ চেষ্টাটা করে, ঠিক তেমনি চিৎকার করতে করতে একটা ছুট দিলো কাজলি। লজ্জায়, ভয়ে যেন মুষড়ে গিয়েছে ও।
বাড়ির একেবারে সামনে এসে পড়েছে। তবুও একবার পেছন ফিরে তাকাল; মরণদূতের মতো পিছু করছে না তো? না, নেই। একবার ভাবল– কাল থেকে কি আর কাজে যাবে না?
পরক্ষণেই মনে হলো, আজকের টাকাটা নেওয়া হয়নি। তিনশ টাকা দেবে বলেছিল মহাজন। আর পঞ্চাশ টাকা চেয়ে নেবে ভেবেছিল। ঘরে চাল নেই, গত দুই মাসে বাড়ি ভাড়া দিতে পারেনি। পরের মাসে না দিতে পারলে বের করে দেবে বলেছে।
ছোট্ট ঘুপরিতে ঢুকতে ঢুকতে ভাবল, কাল আরও কাজ চেয়ে নেবে মহাজনের কাছ থেকে– ওকে ছাড়া ঘরটা কেমন যেন খালি খালি লাগে।
শাহেদের জন্য সবটুকু সহ্য করতে পারে কাজলি। বাঁচবে না কেন? অবশ্যই বাঁচবে। তবে কেন কাজলি দিন-রাত খেটে মরছে? ওর জন্যই যে এখনো এই ছোট্ট দেহটাকে বাঁচিয়ে রেখেছে কাজলি– হোক তা না খেয়েই। এই আশাটাই যেন প্রতিদিনের সব ক্লান্তি ধুয়ে-মুছে দিতে এতটুকুও সময় নেয় না।
ক্ষুধার্ত কাজলি যেন কোনো এক শক্তিবলে ঘুমের দেশের রানি হয়ে গেছে আজ। মুখে তার এক টুকরো চিলতে হাসির ছোঁয়া। যেন আজ কিছুই ঘটেনি তার জীবনে।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
রুহুল আমীন রাজু মুগ্ধ, শুভকামনা।
অসংখ্য ধন্যবাদ।
ফয়জুল মহী মনোযোগ দিয়ে পড়লাম । মুগ্ধ হলাম লেখায়
শেষ প্রহর একখণ্ড বাস্তব চিত্র। দাদা অনেক ভালো লিখেছেন।
ধন্যবাদ দিদি।
Jalal Uddin সত্যি! একটা গূঢ় তথ্য আছে লেখাটায়।

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

মানুষ বাঁচে ভালোবাসায়, মানুষ বাঁচে আশায়। সেরকম জীবনযুদ্ধে জয়ী এক নারীর গল্প এটি। কাজলিরা সব সময় লড়ে যায়- কখনো কোনো বাঁধা তাদের পথের কাঁটা হয়ে উঠতে পারে না। প্রিয় মানুষের অসুখ সেরে ফিরে আসার এক সুপ্ত প্রত্যাশা, মধুময় আশা নিয়ে বাঁচে কাজলি। সব অন্যায় অবিচার সয়ে যায় নির্লিপ্তে। কেউ হয়তো বলবে এরা প্রতিবাদী নয়। তবে এরা কিন্তু অসম্ভব প্রত্যাশী, অসম্ভব রকমের সুন্দর মন নিয়ে ছোট্ট গণ্ডিতে এদের বাস। সেই প্রত্যাশার মানুষগুলোর ছোট্ট একটি প্রত্যাশার গল্প নিয়েই আমার এ নিবেদন। কখনো কি ভাবি আমরা এসব মানুষের দিনলিপির ছোট্ট অংশগুলি?

২৯ জুন - ২০২০ গল্প/কবিতা: ৩ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪