করোনারে ভয় পাই না গো আফা। ভয় পাই মানুষেরে। করোনা ভুল কইরা করুণা করলেও করতে পারে। কিন্তু আমাগো গার্মেন্টসের মালিকেরা কোনোদিন করুণা করবো না গো আফা। এই যে করোনার ভয়ে দুনিয়ার বেবাক মানুষ ঘরের ভিত্রে ঢুইকা গেছে, আনন্দ করতে ভুইলা গেছে, কেউ জোরে কথা পর্যন্ত কয় না, কি জানি হা করলে যদি করোনা গলার ভিতরে ঢুইকা গলা চিপ্পা ধরে, সেই দমবন্ধ দিনেও কি আমরা গার্মেন্টসের শ্রমিকেরা করোনারে বুড়া আঙুল দেখাইয়া ঝাঁকের কই এর মতো কিলবিল কইরা জান হাতে লইয়া মাইলকে মাইল পথ পাড়ি দিয়া শহরে ঢুকি নাই? গাড়ি নাই, ঘোড়া নাই, নৌকা নাই, লঞ্চ নাই, তারপরও আল্লাহর দেয়া ঠ্যাং দুইটারে একটু বিরাম দেই নাই গো আফা। চাকরি বাঁচান লাগবো। মালিকেরা কইছে টাইম মতো না থাকলে চাকরি নট হইয়া যাইবো। আমি জীবন থাইক্কা নট হমু কি না জানি না। কিন্তু চাকরির থাইক্কা নট হইলে জীবন আমার এমনেই নট হইয়া যাইবো। আমরা দলে দলে কাফেলার মতো শহরে ঢুকছি। করোনার লগে কোলাকুলি করছি। কারণ আমরা জানি করোনা ছাড় দিলেও ক্ষুধা আমগোরে ছাড় দিবো না। আল্লাহর দুইন্নাইতে ক্ষুধার মতো এত বেরহম আর কিছু নাই। মানুষ আমাগোরে কত নিন্দা মন্দ করছে, কত গালাগালি করছে, কিন্তু পেটের খবর কি কেউ লইছে? আহারে ক্ষুধা! 
বাচ্চাগুলান যখন ভাতের অভাবে কাঁদে বুকটা তখন গলা কাটা মুরগির মতো তড়পড়াইতে থাকে।
গরীবের আবার অসুখ বিসুখ! ভালো দিনেই আমাগো কথা ভাবনের সময় আছিল না কারো। আর এখনকার এই অবিশ্বাসের দিনে আমাগো কথা ভাববো কেউ এমন দুরাশা আমরা কস্মিনকালেও করি না। জন্মে যেমন আমাগো কোনো হাত আছিল না, আমরা জানি মরনেও আমাগো কোনো হাত নেই। সর্প হইয়া দংশন করো, ওঝা হইয়া ঝাড়োর মতো, আমাগোর নাম ভাঙ্গাইয়া মালিকেরা সরকার থাইক্কা প্রনোদনা না কি কইয়া নিজেগো পেট পুরাইছে, নিজেগো আখের ঠিকই গোছাইছে, আর এখন শেষ মুহূর্তে আমাগোর পেটে লাত্থি দেওনের যোগাড় করছে।
আল্লাহ মালিক গো রে এত ক্ষুধা কেন দিলা যে ওই ক্ষুধার লাইগা ওরা আমগোরে কাঁচা খাইয়া ফেলতে চায়। আমগো রক্ত দিয়া তারা ঘরের বউ মাইয়ার লাইগা টকটকে লাল লিপস্টিক কিনে। আমগো কলিজা ছিঁইড়া নিজেরা পুডিং বানাইয়া খায়। আমগো চোখের পানিরে কী সুন্দর সুন্দর বোতলে ভইরা চুমুকে চুমুকে গলা ভিজায়। 
আবার এনারাই বড় বড় অনুষ্ঠানে গিয়া আমগো অধিকারের লাইগা কী সুন্দর বক্তৃতা দেয়! বক্তৃতা শুইনা সবাই হাত তালি দেয়। সাবাশ, সাবাশ কয়। অনুষ্ঠান থেইক্কা বাড়ি ফিরা গিয়া তারা আমাগো চাকরি ডিসমিসের চিঠি সাইন করে।
আমরা শ্রমিকেরা দিন রাইত খাটা খাটনি কইরা, ওভার টাইম কইরা মালিকগো কোটি কোটি টাকার শিপমেন্ট ঠিক রাখি, বিদেশ থেইকা কাড়ি কাড়ি ডলার আইনা দেশের চাক্কা সচল রাখি, মালিকেরা ভিআইপি , সিআইপি হয়, ভিভিআইপি হয়, কত রকমের সম্মান পায়, বিদেশ যাওনের, থাকনের, খাওনের আরাম পায়, আর আমরা বেতন বোনাসের দাবিতে রক্ত ঝরানো বাদে একটা ঈদ পালন করতে পারি নাই। প্রতিবার ঈদ আসে, আর আমরা আতংকে থাকি এইবার বেতন বোনাসের দাবিতে আন্দোলন করতে গিয়া কার কার মাথা ফাটবো, রক্ত ঝরবো। এক একবার গার্মেন্টসে আগুন লাগলে আমরা জ্যান্ত কাবাব হইয়া যাই। আগুনে পোড়ার চিৎকার শুনছেন কোনোদিন আফা! আল্লাহ যেন দুশমনরেও এমন কইরা ঝলসাইয়া না দেয়। কইলজা খাঁ খাঁ হইয়া যায়! পুইড়া মইরা যাওনের পরেও ক্ষতিপূরণের টাকার হিসাব করনের সময় আমাগো নাম ঠিকানাও থাকে না। পুইড়া যাওনের সঠিক হিসাব মেলে না। এই সমাজে আমরা জন্ম থেইকাই বেওয়ারিশ! এই করোনায় সরকারি হিসাব মতোন এহনো তিন মাসে লাশের সংখ্যা হাজারে পৌঁছায় নাই গো আফা। রানা প্লাজা যেদিন ধ্বইসা পড়ছিল দুইদিনেই হাজারের বেশি লাশের ভারে পুরা দেশটা ওজন হইয়া গেছিল। কিন্তু আমাগো জন্মের দাম নাই দেইখা লাশের সারি কবরে না পৌঁছাইতেই রানা সাহেবেসহ বেবাক মালিক ঠিকই এসির তলে বইসা ঠান্ডা বাতাস খায়। আমাগো মালিকেরা ভিআইপি, সিআইপি....। আমাগো রক্ত মাড়াইয়া তারা ট্রফি আনতে যায়। ট্রফি হাতে লইয়া কী সুন্দর হাসি দিয়া ফটু তুলে। সেই ফটু আমাগো গার্মেন্টসে ঝুলানো থাকে। আমরা চাইয়া চাইয়া দেখি, মালিক কী সুন্দর হাসে! আমাগো ঘাম, রক্ত দিয়া কেনা ট্রফি...।
করোনারে ভয় লাগে না গো আফা। ভয় লাগে ক্ষমতাওয়ালা মানুষেরে। এই করোনায় গরীবের মরনের খবর পাইছেন আপনারা? শুনছেন কোনো খবরে গরীব মরছে শ্বাসকষ্টে। অক্সিজেনের অভাবে? শুনেন নাই। শুনবেন কেমনে? আমরা তো জন্ম থেইকাই অচ্ছুৎ! আমাগো মালিকেরাই নাকি অক্সিজেন পায় না, হাসপাতালে জায়গা পায় না, করোনা পরীক্ষা করাইতে পারে না। আর আমরা তো সমাজের কাছে জন্ম থেইকাই করোনা। আমাগোরে ধরা যায় না, ছোঁয়া যায় না, খালি কারণে অকারণে থাপড়ান যায়, লাত্থি মারন যায়, ঘাড় ধাক্কা দেওন যায়। বড়লোকগো বেবাক কামে এই আমাগোরে লাগে। জোঁকের মতো আমগো রক্ত চুইষষা নিয়াও শান্তি নাই তাগো। আল্লাগো, তুমি আমাগো মালিকগো মনে শান্তি দাও গো আল্লাহ! গরীবের জন্মই হইছে মরনের লাইগা। তারপরও হালার জন্মের সংখ্যাও কি কমছে আফা? আমাগো মালিক গো দুঃখ দেখেন নাই আফা, শ্রমিকগো নাকি করোনা কম হয়। আহারে! মালিকেরা আসলে জানেই না, শ্রমিক গো করোনাই হয় না। করোনা জানে শ্রমিকের মতো এত তুচ্ছ জীবন কব্জা কইরা ফায়দা নাই। যেসব রাঘব বোয়ালরে কেউ কব্জা করতে পারে নাই আইজ পর্যন্ত তাগোরে কব্জা করনের লাইগা করোনা নিজেই খোদার কাছ থেইকা দায়িত্ব নিয়া আইছে।
করোনারে ভয় পাই গো আফা। করোনারে ভয় পাই না। মানুষেরে ভয় পাই। করোনা হয়তো মারবো না। কিন্তু মানুষ ঠিকই মারবো। বড় বেরহমের মতো মারবো। মানুষের থেইকা ভয়ংকর আর কেউ নাই গো আফা...। মানুষ আর ক্ষুধারে ভয় পাই গো আফা। আল্লাগো, মানুষের দিলের বেরহম সুরাত দেইখা এই দুইন্না থেইকা এমনিতেই মন উইঠঠা গেছে। মরনের সাহস নাই দেইখা রেল লাইনে ঝাঁপ দিতে পারি না। মানুষ কেমনে মইরা যায়! এত মায়ার দুইন্নাই থুইয়া মানুষ কেমনে মইরা যায় গো আফা! আমরা তো জন্ম থেইকাই মরা। হেরপরও বাঁচনের এত খায়েস হয় ক্যান আফা? আল্লাগো তুমি তোমার দুইন্নাইতে সব মানুষের দিলে মায়া দিলা না ক্যান আল্লাহ? কারো কারো কথা শুনলে, কারবার দেখলে মনে হয় হের দিলে তুমি সীল মোহর মাইরা দিছ। মায়াহীন, দয়াহীন সিল মোহর।
করোনারে ভয় পাই না গো আফা! করোনা আর নতুন কইরা কী মারবো! মানুষেরে ভয় পাই। মানুষের লোভরে ভয় পাই। কী লোভ মানুষের…!            
                        
            
            
            
                        
            
            
                        
            
         
        
               
   
    
                    
        
        
            
            
                 ১৬ জুন  - ২০২০ 
                                        
                            গল্প/কবিতা:
                            ১ টি
                        
                    
            
            
         
     
    
        
বিজ্ঞপ্তি
        এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
    
    
        প্রতি মাসেই পুরস্কার
        
            বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
        
        
            লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
            
                - 
                    
                    
                        প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
                        প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
                    
                 
                - 
                    
                    
                        দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
                        প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
                    
                 
                - 
                    
                    
                        তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
                    
                 
            
         
     
    
    
        আগামী সংখ্যার বিষয়
        
        
            
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ  ২৫ নভেম্বর,২০২৫