জয়ী

নারী তুমি জয়িতা (মার্চ ২০২৩)

দীপঙ্কর বেরা
  • ৫৯
কোথায় যাব? কি করব?
ভাবতে ভাবতে জয়িতা স্টেশনে আসে। স্টেশনের নাম দেখতে পাচ্ছে কিন্তু পড়তে ইচ্ছে করছে না। কেন না সব স্টেশনের নাম এক। হাতে পিঠে পায়ের ব্যথাটা টনটন করে উঠছে। তাও না হয় সহ্য করা যায় কিন্তু মাথার? রক্ত শুকিয়ে জমাট বেঁধে গেছে। ঠোঁটের কোণ থেকে রক্ত পড়া বন্ধ। কিন্তু দাগটা রয়ে গেছে।
এসব লুকানোর চেষ্টা করে কোন লাভ নেই। যে ক'টা লোক আসছে যাচ্ছে তারা সবাই পাগলি ভাবছে। হাতে কোন পোটলা নেই। কখন খাওয়ার বা জল খেয়েছে মনে নেই।
মৃত্যু খুব সহজ। কিন্তু তার আর তারপর নেই। আর মান ইজ্জত এ সবই ঠুনকো। কেউ যখন চেনে না সেখানে এসব হারানোর আর ভয় নেই।
তাছাড়া প্রভাসের কাছে কোন মান ইজ্জত ছিল কি? মদ খেয়ে যেন গরু ছাগলের মত মারত। আজকাল তাতে যোগ দিয়েছে পেটের ছেলে সৌম্য। অবাক হয়ে যায় জয়িতা। কোলে পিঠে আদরে সোহাগে ভরানো ছেলেটা কেমন করে মাকে বলে - তোমার মত মা জীবনে দেখি নি। তুমি নিষ্ঠুরের একশেষ।
মনিকা বলে - বড্ড সেকেল। ব্যাক ওয়ার্ড।
- একটা রুটি হবে? আমার কাছে কিন্তু পয়সা নেই।
কিছু না বলে মাঝ বয়সী লোকটা একটা রুটি এগিয়ে দেয়।
- অনেকক্ষণ থেকে দেখছি তুমি পেছনে পেছনে আসছ? ব্যাপারটা কি?
- আমি তো এমনি এমনি আসছি। দেখছি এইসব ঝুপড়ির কোথাও যদি একটু থাকার হয়। গুটিসুটি মেরে থেকে যাব।
সেই থাকা থাকতে থাকতে জড় করে ছোটো ছোটো ছেলে মেয়েদের। গল্প বলে। আবোল তাবোল। তবে সেখানে শুধু মানুষের ছায়া থাকে।
তাই শুনে গদাধর খেতে খেতে বলল - জানিস তো আমি কিন্তু পুরুষ আর তুই মেয়ে। খামছে ধরার ইচ্ছে হলে কি করবি?
জয়িতা থামে না। বলে - আগে হলে চিৎকার চেঁচামেচি জুড়ে দিতাম। এখন বুঝে গেছি শরীর বড় সাংঘাতিক। কেউ আদর করে, কেউ মারে, কেউ ভক্তি করে, কেউ পাশে রেখে হেঁটে চলে। মনের যত প্যাঁচ সব চলে আসে শরীরে। বড় বিচিত্র।
দুবেলা শুধু দুমুঠো খায় ভাগ করে। এ সব শুনে গদাধর ঘাবড়ে যায়। বলে - এই কি সেই রুটির শোধ।
জয়িতা ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের নিয়ে চলল ভাঙা চোরা বস্তির স্কুলে।
রাধুনি পেয়ে দিদিমণি খুশি। বলে - তুমি কি পড়াশুনা জানো?
- একটু আধটু জানি। তবে কখনো কাওকে পড়াব না বা পড়তে বলব না।
দিদিমণি হেসে ফেলে। রাগ করে বড় স্যার। বলে - কেন?
কেঁদে ফেলে জয়িতা। বলে - আমার ছেলেটাকে কত পড়ালাম। পণ্ডিত হল মানুষ হল না। মেয়েটা কোথায় কার হাত ধরল জানতেই পারলাম না। পড়াশুনা করাতে করাতে জীবনের বিশ বছর পেরিয়ে গেল। গুছানো সংসার ধীরে ধীরে ভেঙেচূরে পড়াশুনার হাত ধরে ছড়িয়ে পড়ল। স্বামীরও তো বড় ডিগ্রী। তাই হয়তো আমার জন্য মারের জোর আরও বেশি। মানুষ হওয়ার শিক্ষা আর পড়াশুনার শিক্ষা আলাদা হয়ে গেছে। চেয়ে দেখুন।
জয়িতা দেখালো একটা মেয়ে একটা ছেলে সিগারেট টানতে টানতে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে। তাদের মধ্যে ছেলেটা কেমন একটা টান দিয়ে সিগারেট লুকানোর চেষ্টা করছে। ধোঁয়া আলতো করে নিজের চারপাশে ধীরে ছাড়ছে। আর মেয়েটি সিগারেটে একটা টান দিয়ে এমন ভাবে ধোঁয়া ছাড়ছে যেন বিশ্ব সংসারকে ছুঁড়ে ফেলে দিতে চাইছে।
এই স্কুলের এক কোণে জয়িতার জীবন কাটে। ছেলে মেয়েদের এমন ভাবে পরিপাটি করে খেতে দেয়। গুনগুনিয়ে গান শোনায়। মানুষের গল্প বলে। শান্ত জীবনের দুষ্টুমি শিশু মন কেমন যেন আকাশ আকাশ।
এটা কোন গ্রাম আগে কোন গ্রামে ছিল কোন স্টেশন পেরিয়ে কত দূরে এল এ সব আর মনে রাখে না জয়িতা। এ রকম নদীর পাড় বরাবর বস্তিতে কত আসে কত যায় তার খোঁজও রাখে না কেউ।
জয়িতার কথা কেউ জানত না যদি না এক এন জি ও এসে পৌঁছাত। তাদের সঙ্গে এক মেয়ে মনিকা। অনেক ক'টা বছর পেরিয়ে গেছে। রীতিমত তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠে জয়িতা - তোমরা এসেছো মানব সেবা করতে? দুঃখী মানুষের সেবা করতে? লজ্জা করে না তোমাদের জন্যই দুঃখী মানুষের সৃষ্টি হয়।
স্যার যত থামাতে চেষ্টা করে তত জ্বলে ওঠে জয়িতা। ফিরে যেতে যেতে বার বার ফিরে ফিরে দেখে মনিকা। উচ্চ পদে আছে টাকা পয়সা আছে। কিন্তু জীবন বিচ্ছিন্ন। অথচ এত জন দুঃখী মানুষের পাশে উঁচু মাথা আজ জয়িতা।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
জাকিয়া জেসমিন যূথী গদাধর খেতে খেতে বলল - জানিস তো আমি কিন্তু পুরুষ আর তুই মেয়ে। খামছে ধরার ইচ্ছে হলে কি করবি? জয়িতা থামে না। বলে - আগে হলে চিৎকার চেঁচামেচি জুড়ে দিতাম। এখন বুঝে গেছি শরীর বড় সাংঘাতিক। কেউ আদর করে, কেউ মারে, কেউ ভক্তি করে, কেউ পাশে রেখে হেঁটে চলে। মনের যত প্যাঁচ সব চলে আসে শরীরে। বড় বিচিত্র। দুবেলা শুধু দুমুঠো খায় ভাগ করে।..... অসাধারণ লেখনী। অল্প কথায় অনেক কিছু বলে দেয়া জীবনের গল্প।
মোঃ মোখলেছুর রহমান কেউ আদর করে, কেউ মারে, কেউ ভক্তি করে, কেউ পাশে রেখে হেঁটে চলে। মনের যত প্যাঁচ সব চলে আসে শরীরে। বড় বিচিত্র। চমৎকার ভাবনা।
ফয়জুল মহী অনবদ্য এক লেখা।নিখুঁত ছন্দে লেখা।
বিষণ্ন সুমন একটু আন প্যারালাল গল্প। আমার ভালো লেগেছে।

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

জীবনের গল্প

২৬ মে - ২০২০ গল্প/কবিতা: ২৬ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪