সকাল সাড়ে আটটা । হঠাৎ ফোন বেজে উঠল । মাবিয়া ফোন দিয়েছে । আমি চশমা পড়ে নিলাম তারপর ফোন ধরে বললাম , “হ্যালো, মাবিয়া বল ।“ ঐ পাশে থেকে উত্তর এলো, “তনু তোকে কাল থেকে কতবার করে ফোন দিচ্ছি খেয়াল করছিস!“ “এইতো মাত্রই দেখলাম ।“ “ আজকে তো ১০ই ডিসেম্বর। আজকে কি তুই আবারও প্রতি বছর গুলোর মতোই...... “ “ হুম, তুই দেখা করতে পারলে ভালো হতো।“ “ তুই কি আর কখনো স্বাভাবিক হবি না! এভাবে আর কতটা বছর পাগলামি করবি! “ এই কথাটা বলা মাত্র মাবিয়া ফোনেই কান্না শুরু করে দিলো ।“ তুই তাহলে ঐখানে চলে আয় আমি সময় মতো পৌঁছে যাবো ।“ আমি আর মাবিয়াকে কোনো কথা বলতে না দিয়ে ফোনটা কেটে দিলাম ।আমারও চোখ ভিজে গেছে অনুভব করলাম । আমি আর আমিতে নেই । আগের আমি আর বর্তমান আমির ভিতরে অনেক পার্থক্য । আগে চিৎকার করে কাঁদতে পারতাম কিন্তু এখন নিজেকে অনেকটাই শক্ত করে নিয়েছি, নীরবে কাঁদতে শিখেছি । যাই হোক মাবিয়া আমার ছোট বেলা থেকেই বেস্টফ্রেন্ড । ও আমাকে অনেক ভালোবাসে ।আমাদের বন্ধুত্বটা অনেক দৃঢ় । আজ আমরা সবাই অনেক বড় হয়ে গেছি । মাবিয়ার এক বছর হলো বিয়ে হয়েছে । লাভ ম্যারেজ রাকিবের সাথে। রাকিবও আমাদের সাথেই পড়ত । আমিও আগের বছর একটা বড় কোম্পানতে চাকরি পেয়েছি । এখন ঘড়িতে সাড়ে নয়টা বাজে । বাড়ি থেকে বের হলাম । প্রথমে গেলাম সেই ফুলের দোকানটায় । প্রতি বছরের মতোই এবারো সাদা গোলাপ কিনলাম ।ঠিক দশটার সময় সেই রাস্তার মোড়ে ঠিক সেই জায়গাটাতে আমি চার বছর আগের মতো অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে ছিলাম যে কখন রুদ্র আসবে ।রুদ্র!! না...রুদ্রও আমাদের সাথেই পড়ত । ও ছিল রাকিবের বন্ধু । মাবিয়াকে চেনার অনেক আগে থেকেই আমি রুদ্রকে চিনতাম ।আমরা আগে পাশাপাশি ফ্ল্যাট থাকতাম । কিন্তু পরবর্তীতে আমরা ঐ ফ্ল্যাট ছেড়ে দিয়েছিলাম । তারপর রুদ্রর সাথে আর যোগাযোগ হয়নি । তার ৩ বছর পর আমি আর মাবিয়া অঙ্ক প্রাইভেট পড়ার জন্য একটা স্যারের কাছে গেলাম । দেখি সেখানে রুদ্রও পড়ে । বাট ইন্টারেস্ট ছিল না কোনো । ও আমাকে দেখে বলেছিল, “তনুকে অনেকদিন পর দেখলাম এখন অন্যরকম লাগে “ আমি বিরক্ত হয়ে বলেছিলাম, “ তো কি আগের মতোই ছোট থাকবো নাকি “ ও বলেছিল, “ এখন ভাবও বেড়ে গেছে দেখছি “ আমি একটু রাগ দেখিয়ে চলে এসেছিলাম । কিছু দিন পর ও আমাকে বলেছিল যে তোমার সাথে আমার একটু দরকার আছে তোমার ফোন নাম্বারটা দাও । আমি কোনো আপত্তি না করেই দিয়ে দিয়েছিলাম । ও আমাকে সেদিন রাতে ফোন দিয়ে বলেছিল আমার বন্ধু রাকিব তোমার বান্ধবী মাবিয়াকে মন থেকে পছন্দ করে ফেলেছে । আমি জানতাম মাবিয়াও রাকিবকে পছন্দ করে ।ওদের সম্পর্ক তৈরি করে দিতে গিয়ে কখন যে ওর আমাকে ভালো লেগে গিয়েছিলো । ও আমাকে যেদিন বলেছিল যে ও আমাকে ভালোবাসে, আমি ওকে থাপ্পড় মেরেছিলাম ।আসলে ভরসা করতে পারিনি তখন ওর ভালোবাসার প্রতি। তারপর থেকে ওর সাথে আর যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছিলাম।ও সত্যিই আমাকে খুব ভালোবাসতো এই কথাটা আমার বুঝতে ৩ বছর লেগেছিল ।তনু ও বুঝিয়েছিল আমাকে । যখন আমি ওকে ভালোবাসতে শুরু করলাম তখন ও দূরে যেতে লাগল । আসলে আমি চাইতাম ও আরেকবার এসে আমাকে বলুক । কিন্তু না তখন তো ছেলের ইগো বেড়ে গিয়েছিল ।রুদ্র রাকিবকে বলেছিল সবসময় আমাকেই কেন বলতে হবে মেয়ে তো কিছু বলে না শুধু রাগ দেখাতেই পারে । এই নিয়ে ওর সাথে ঝগড়াই হতো শুধু । কিন্তু সরাসরি না, রাকিব আর তনুর মাধ্যমে । ওরা ছিল আমাদের বার্তাবাহক । আমি আর রুদ্রই তো ওদের রিলেশনটা করিয়ে দিয়েছিলাম । যাই হোক আমাদের দুজনের ইগোর কারণে আর কথা বলা হয়নি । ইগো! ইগো জিনিসটা খুব খারাপ । তারপর ও বিদেশে পড়াশোনা করতে গেল । পরবর্তীতে ভেবে ছিলাম ও বোধ হয় আমাকে ভুলেই গেছে ।কষ্ট হতো অনেক দূরে থাকতে। ফোন নাম্বার ও ছিল কিন্তু ফোন দেওয়া হয়নি কখনো আর ওউ কখনো দেয়নি ঐ যে ইগো ।এখন থেকে চার বছর আগে হঠাৎ একটা ফোন এলো, “ হ্যালো “ “ কে তনু? “ “ জ্বী, কে বলছেন ? “ “আমি রুদ্র “ “ এই তুমি! এত বছর পর ফোন করছো কোন সাহস “ । রুদ্র বলল, “ তোমার ইগোটা দেখি আগের মতোই আছে। খোঁজ খবর তো নিবাই না আর আমি খোঁজ নিলেই দোষ। তোমরা মেয়েরা এত নাটক করে কি পাও বলো তো আমাকে কষ্ট দিতে তোমার খুব ভালো লাগে তাইনা ! আজকে বাজারের পাশের রাস্তার মোড়ে এসো ১০ টার দিকে দেরি যেন না হয় । “ আমি বললাম, “ পারবো না “ । রুদ্র একটু হেসে বলল, “ আবার নাটক করে এইবার আমি কিন্তু মাইর দিবো তোমাকে। তাড়াতাড়ি এসো কেমন ।“ এই বলে ফোনটা রেখে দিল । আমি মনে মনে ঝগড়া করবার প্রস্তুতি নিয়ে গেলাম । দেখলাম ঠিক ১০টার সময় উনি এসে হাজির । আমি যখনই ওর সাথে ঝগড়া শুরু করতে যাবো তখন ও মাটিতে বসে পড়ল আর বলল, “ জানি, আমাকে নিয়ে তোমার অনেক অভিযোগ । আমি সত্যিই অপরাধী তোমার কাছে আর আমার মনের কাছে । পারলে ক্ষমা করে দিও । তনু তুমি যদি চাইতা আমাকে এতটা সময় কাঁদাতে পারতে না । আমাকে যদি তুমি একবার বলতা তুমি আমাকে ভালোবাসো, আমি তোমার থেকে নিজেকে দূরে সরাতে পারতাম না । একা নিজেকে এতটা কষ্ট দিতাম না । জীবন্ত হয়েও তোমাকে না পাওয়ার কষ্ট আমাকে মেরে ফেলতো পারতো না “ ও এসব বলতে বলতে কাঁদতে শুরু করলো। আমি আর ওর কান্না না দেখে নিজেকে সামলাতে পারছিলাম না সেদিন। চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করলাম । ও আবার কাঁদতে কাঁদতেই বলতে লাগল, “ আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি আর ভালোবাসি বলেই ৪ বছর পর আবার ফিরে এসেছি তোমার জন্য ।আর এখন আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই । আমার পরিবার আমার ভালোবাসার কথাটা জানতে পেরে খুব খুশি । মা সামেনের মাসে ঢাকা থেকে আসলেই আমাদের বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাবে তোমাদের বাসায় বুঝছো আর হ্যাঁ এই সাদা গোলাপটা তোমার জন্য। “ আমি গোলাপটা নিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলাম ।ও বলল, “ আরে পাগলি আজ তো ঝগড়া করতেছো না কেন! এত বছর পর দেখা কিছু তো বলো । আজকে ঢাকা যেতে হবে, সামনের মাসে আম্মুকে নিয়ে একবারে ফিরবো “ । আমি বললাম, “ আচ্ছা সাবধানে যাইয়ো, গিয়ে আমাকে ফোন দিবা কিন্ত “ “ বাহ! এত কেয়ারিং ভালোই “ । সেদিন কে জানতো এত কথা বলার মেয়েটা আর কখনোই তার ভালোবাসার মানুষটিকে আর দেখতে পাবে না কখনোই । সেদিনই ছিল রুদ্রর সাথে আমার শেষ দেখা ।আর সেদিন ছিল ১০ ই ডিসেম্বর । পরের দিনই ওর মৃত্যুর কথা জানতে পারি ।ওর গাড়ির সাথে সেদিন একটা ট্রাকের দুর্ঘটনা ঘটেছিল যার ফলে ও মারা যায় । সেদিনই খুব জোরে জোরে কেঁদেছিলাম । হঠাৎ হুশে ফিরলাম পিছন খেকে মাবিয়া আর রাকিব আমাকে ডাকতেছিল । ওরা বলল, “ কখন থেকে ডাকতেছি তোকে । “ আমি আবার বাস্তবতায় ফিরে আসলাম। বললাম, “ আচ্ছা ,চল তাহলে এখন কবরস্থানে যেখানে ৪ বছর আগে ওকে দাফন করা হয়েছিল । “ রুদ্রর কবরের ওপরে সাদা গোলাপটা রেখে দিলাম । দেখলাম রাকিব ও মাবিয়া খুব কান্না করছে । বোধ হয় ওরা ভাবছে এসব আমার পাগলামি । কিন্তু না, আমি রুদ্রকে সত্যিই অনেক ভালোবাসি ।ও আমার থেকে অনেক দূরে চলে গেলেও আমার মনে ওর জায়গাটা মোটেও শূণ্য নয় , আজও ওর ভালোবাসায় ভরা আছে ।।
লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা
ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য
কাউকে সত্যিকারেই মন থেকে ভালোবাসলে , সে হাজারো দূরে চলে গেলে আমাদের মনে কখনো তার জায়গাটা শূণ্য থাকে না । বরং তার ভালোবাসায় ভরা থাকে ।
২০ মে - ২০২০
গল্প/কবিতা:
৮ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪