গ্রীম্মের তাপদাহে প্রকৃতি যখন উত্তপ্ত সেই ভর দুপুরে শহরে মার্কেট করতে গিয়াছে খুবই ঘনিষ্ট দুই বান্ধবী জয়া ও বৃষ্টি।তাদের মধ্যে খুবই ভাব। একজন আরেক জন ছাড়া কিছুই বুঝে না। যখন যেখানেই যাবে একসাথে যাবে ।তারা দু‘জনেই ভার্সিটির ছাত্রী।ক্লাস না থাকায় তারা ঠিক করল আজ শহরে কেনাকাটা করবে।
বৃষ্টি এক ধনী পরিবারের মেয়ে কিন্তু জয়া মধ্য পরিবারের মেয়ে। তারা একই হলে এক রুমে থাকে।
কারো কোন ব্যপারে একে অপরের সাথে অকপটে শেয়ার করে। লেখাপড়ায় জয়া বেশ ভাল তবে বৃষ্টি তেমন লেখাপড়া করতে চায় না। বাড়ী থেকে টাকা আসে ,তা দু‘হাতে অপরিকল্পিতভাবে ব্যয় করে।
কোন মানুষকেই সে মূল্যায়ন করতে চায় না। নিজেকে সে এক সম্রাজ্ঞী মনে করে।জয়া ,বৃষ্টির অনেক কাজেই সাহায্য করে । রাষ্ট্রবিজ্ঞানে তারা দু‘জনেই ২য় বর্ষে সম্মানে পড়ে। এইতো সবে উঠল ২য় বর্ষে । ফলাফল বৃষ্টির চলনসই,তবে জয়ার রেজাল্ট ফাস্ট ক্লাস। এতে বৃষ্টির কোন মাথাব্যাথা নেই।বৃষ্টি দেখতে খুব সুন্দরী,ফর্সা,স্লিম ফিগার, হাস্যোজ্জল থাকে সব সময় । অপরদিকে জয়া দেখতে খুব একটা খারাপ না ,গায়ের রং শ্যামলাবর্ন ,চেহারাটা সুন্দর। পোষাক পরিচ্ছদ মার্জিত।প্রয়োজন ব্যতীত জয়া কারো সাথে কথা বলে না। সবসময় লেখাপড়া নিযে ব্যস্ত থাকে ।জয়ার বন্ধুবান্ধব তেমন নাই বললেই চলে। কিন্তু বৃষ্টির বন্ধুর অভাব নেই।সবসময় বকবক করতেই থাকে মোবাইলে । সারা রাতই ফেজবুক/ইমুতে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেয়।মাঝে মাঝে এগুলো এখন বাদ দিয়ে লেখাপড়ায় মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ দেয় জয়া। কে কার কথা শুনে ? মোবাইলে সময় কাটানো এক নেশায় পরিনত হয়েছে বৃষ্টির ।ছুটিতেও বাড়ী যেতে চায় না বৃষ্টি।
আজ ভার্সিটিতে ক্লাস অফ থাকায় তারা শহরে কিছু কেনাকাটা করবে ভেবে দু‘জনে শহরে গেল।
দুপুরে দু‘জনেই হোটেলে খেয়ে নিল ।বিকেল হয়ে গেল । আজ একটু পদ্মার ধারে বেড়াবে,বৃষ্টি বলল।
চল্ জয়া ,পদ্মার ধারে একটু মুক্ত হাওয়ায় নিজেদের ভাসিয়ে দেই ? বলল বৃষ্টি।
অনিইচ্ছা সত্বেও জয়া রাজি হল।তারপর দু‘জনে মিলে পদ্মার ধার দিয়ে হাঁটতে লাগল।সন্ধা ঘনিয়ে আসল।
চল্ এবার হলে ফিরে যাই। বলল জয়া।
আর একটু বেড়াই। যাবতো বটেই। তবে আরও কিছুক্ষণ পর।বলল বৃষ্টি।
বাঁধের ধার দিয়ে হাটতে হাটতে অনেক দূর চলে এসেছে ওরা। অন্ধকার হয়ে এসেছে।রিক্সা নিযে যেতে হবে। কিন্তু লোকজনও নাই। আর রিক্সাও তো দেখা যাচ্ছে না ।
ঐ তো একটা রিক্সা এদিকে আসছে।জয়া বলল ।
এই রিক্সা ,যাবে ভার্সিটিতে ?
আপনারা কেন এতো রাত্রি করে এই নির্জন পদ্মার ধারে হাঁটছেন? জায়গাটা তো ভাল নয়? আপনাদের দেখেই তো রিক্সাটা ঘুরিয়ে এদিকে আসলাম। যাবেন তো চলেন।রিক্সাওয়ালা বলল।
কত ভাড়া নিবে,বল ? বলল জয়া।
আরে যা নেয় নিবে। চল্ উঠ রিক্সায় ।বলল বৃষ্টি ।
অন্ধকারে রিক্সাওয়ালাকে ভাল দেখা যাচ্ছিল না।তবে রিক্সাওয়ালা যে একজন তরতাজা যুবক ,এটা বুঝা যাচ্ছিল। রিক্সায় বসে জয়া আর বৃষ্টি জোরে জোরে কথা বলছিলো আর হাসছিলো।
আপনারা চুপ থাকেন। জায়গাটা ভাল না। আর এমন ভুল করবেন না।রিক্সাওয়ালা বলল।
আকাশে মেঘ ধরেছে। শহরে ইলেকট্রিসিটি হঠাৎ চলে গেল। রিক্সায়ও বাতি নেই। আস্তে আস্তে তাক করে রিক্সা চালাচ্ছে। এমন সময় রাস্তার অদূরে কয়েকজন লোক কি যেন ফিস ফিস করে বলছে।
হঠাৎ তারা রিক্সা রোধ করে এসে দাঁড়াল।বলল যার কাছে যা আছে দিয়ে দাও।রিক্সাওয়ালা বাঁধা দিলে তাকে ছুরি দিয়ে আঘাত করল ওরা ।রিক্সাওয়ালার হাতে চুরি মেরেছে।দর দর করে রক্ত পড়ছে।
রিক্সাওয়ালা ঐ অবস্থায় দুবৃত্তদের সাথে মারপিট শুরু করল।একপযায়ে মার খেয়ে পলায়ন করল দুবৃত্তরা। তবে জয়া ও বৃষ্টির মার্কেট করা জিনিসপত্র এবং বৃষ্টির মোবাইলটা নিয়ে গেছে।
এবার উঠেন রিক্সায়। রিক্সাওয়ালা বলল।
টিপি টিপি বৃষ্টি হচ্ছিল। বিদ্যুৎ চমকাচ্ছিল। তারজন্য রাস্তা দেখে দেখে রিক্সা চালাচ্ছিল।তারপর অনেক কষ্টে রিক্সাওয়ালা ভার্সিটিতে নিয়ে আসল।রিক্সা থেকে নেমে কত ভাড়া দিবে, রিক্সাওয়ালাকে বলল বৃষ্টি ।
ভাড়া লাগবে না । আপনারা যান হোস্টেলে । আচ্ছা আপনারা কোন্ সাবজেক্টে ও কোন বর্ষে লেখাড়া করেন ? বলল রিক্সাওয়ালা।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানে। ২য় বর্ষে পড়ি। নাম বৃষ্টি ও জয়া ।জয়া বলল।
কেন ভাড়া নিবে না ? টাকার জন্যই তো রিক্সা চালাও। আর আমাদের এতো কষ্ট করে নিযে এসেছো ? বলল বৃষ্টি।
তোমার বাড়ীতে কি বৌ-বাচ্চা নাই ? এই বয়সে তো লেখাপড়া করার কথা। তুমি গরীব তাই পেট চালানোর জন্য রিক্সা চালাও তাই না ? জয়া বলল।
জানিনা,কেন রিক্সা চালাই। তবে এটা নিয়তির খেলা । বলে রিক্সাওয়ালা চলে যেতে নিলে বৃষ্টি বাধা দেয় এবং একশত টাকার একটা নোট দেয় ।
একশত টাকার নোট তো ভাংতি হবে না ম্যাডাম? টাকা যখন দিবেনই তাহলে আমাকে চল্লিশ টাকা দেন।রিক্সাওয়ালা বলল।
টাকা টা যখন রিক্সাওয়ালা বৃষ্টিকে ফিরে দিতে নেয় তখন দেখে টাকার সাথে রক্ত।
তোমার হাতে চাকু মেরেছে ? ইস্ অনেকটুকু তো কেটে গেছে ? বৃষ্টির ওরনা ছিড়ে চাকু মারার জায়গাটা বেঁধে দেয় বৃষ্টি। তারপর জোড় করে টাকাটা রিক্সাওয়ালাকে দিয়ে দেয় বৃষ্টি।
তারপর রিক্সাওয়ালা চলে যায়।
রাতে জয়া আর বৃষ্টি গল্প করছিল,আচ্ছা ছেলেটার তো পরিচয় নেওয়া হয়নি। এতো ভাল মানুষ এখনো আছে পৃথিবীতে ? বৃষ্টি বলল জয়াকে।
মোবাইলটা তো নিযে গেছে। এখন কি করে আমার বন্ধুদের সাথে গল্প করব আজ রাতে,জয়া ? বৃষ্টি বলল।
আরে রাখ তো তোমার বন্ধুদের কথা? আজ ঐ রিক্সাওয়ালার কতাটা ভাবতো ? বলল জয়া।
রিক্সাওয়ালার নামটা পযন্ত জানা হলো না । যে কিনা এতো উপকার করল।বৃষ্টি বলল।
হাঁ ঠিক তাই। কেও উপকার করলে আমারা তাকে মনে রাখি না । আমার মন বলছে রিক্সাওয়ালা যেই সেই লোক নয়। হয়ত পেটের দায়েই শুধু নয় এর অন্য কোন কারন আছে ? বলল জয়া।
আরে দেখছি তুই রিক্সাওয়ালার প্রেমে পড়ে গেছিস্।ওর কথা এতো ভাবতে হবে কেন? রিক্সাওয়ালা তো রিক্সাওয়ালাই। বলল বৃষ্টি।
আচ্ছা রাত হয়েছে এখন ঘুমিয়ে পরো,কাল দেখা যাবে। বলল জয়া।
রাতে দু‘জনেই আলাপ করতে করতে ঘুমিয়ে পড়ল। সকালে উঠে নাস্তা সেরে ক্যাম্পসে যেতে যেতে আবার সেই রিক্সাওয়ালার কথা। অনেক রিক্সাইতো দাড়িয়ে আছে কিন্তু ঐ লোকটিকে তো দেখছি না । বৃষ্টি বলল।
তোমার জন্য রিক্সা নিয়ে কি এখানে বসে থাকবে ? চলো এবার ক্লাসে যাই। জয়া বলল।
ক্লাসে গিয়ে বন্ধুদের সাথে দেখা হতেই একজন বলল,কি রে বৃষ্টি ভুলে গেলি? রাতে তো মোবালে কথা বললি না ? অন্যকারো সাথে কি তাহলে..................।
একেকজনের একেক কথা শুনে বৃষ্টির কান ঝালাপালা হযে গেল।
হায়রে বন্ধুরা স্বার্থপর? একদিনেই এতো পরিবর্তন। বন্ধুরা সবাই বৃষ্টিকে খরচ করায় । আর মোবাইলে রাতে কথা বলে ইনজয় করে । তারা আসলে প্রকৃত বন্ধুও নয় আর ভালও বাসে না । তারা বৃষ্টির জীবনকে তছনছ করে দিচ্ছে অবিরত।ভাবছে বৃষ্টি।
কি চিন্তা করছিস বৃষ্টি। বলল জয়া ।
কি আর চিন্তা করব বল । এইসব বন্ধুদের কথা ভাবছি। বৃষ্টি বলল।
এতোদিনে বুঝলি বৃষ্টি ? তোর আরো আগে থেকেই এটা বুঝা উচিৎ ছিল। বন্ধুরা তোর জীবন তচনচ করে দিচ্ছিল। আমি তোকে আগেই বলতে চেযেছিলাম। কিন্তু বলিনি। তাহলে শুন, তুই যে ছেলেটাকে বেশী ভালবাসতিস্ সে তার বন্ধুর কাছে বলেছে, তোকে নই তোর টাকাকে ভালবাসে।জীবনে তোর মত আপ-টুডেট মেয়েকে সে কোনদিনই বিয়ে করবে না।তুই নাকি একটা খারাপ মেয়ে।তোর নাকি চালচলন ভাল নয়, ইত্যাদি ইত্যাদি।যে ছেলেটা আমায় বলেছে সে আমায় ভালবাসে । কিন্তু তুই যে ছেলেটাকে ভালবাসতিস সেও নাকি আমাকে ভালবাসে।প্রকৃত ভাল ছেলে চেনা বড় মুসকিল রে বৃষ্টি ? কথাগুলো বলল জয়া।
বৃষ্টির মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ল।ঠিকই বলছে জয়া।
আমি তো মনে করেছিলাম আমার খরচ করা,চলাফেরা ছেলেরা পছন্দ করে। আমি আমার বাবা মা কেও ভুলে গিয়াছিলাম। তাদের কথা মোটেই শুনতে ইচ্ছে করত না। তাদেরকেই শত্রু মনে হতো ।আজ তুই আমার জ্ঞানচক্ষু খুলে দিয়েছিস্ ।বলল বৃষ্টি।
এখনও সময় আছে লেখাপড়ায় মনোযোগী হও। ভাল করে লেখাপড়া করলে দেখবে ভাল ছেলেরা তোমার সাথী হওয়ার জন্য লাইন ধরবে।বলল জয়া ।
ওরা খারাপ জেনেও তো এখনও ওদের ভুলতে পারছি না রে জয়া ।বলল বৃষ্টি।
ধৈয্য ধর,আর সৃষ্টি কর্তার কাছে প্রার্থণা কর সব ঠিক হয়ে যাবে। সৃষ্টিকর্তা ভাল একজন তোর সাথী করে দিবে।বলল জয়া ।
সবই কপালের লিখন। কেন যে স্মাট ফোন চালাতাম । এটা একটা নেশা ,এখন বুঝতে পারছি।মনটা ভাল নেই তাই আজও একটু বেড়াতে যাব শহরে। বলল বৃষ্টি।
আবার বিপদে পড়ব নাকি? বলল জয়া।
আরে না না সেই রিক্সাওযালার রিক্সায় ঘুরবো।বলল বৃষ্টি।
তাকে পাব কোথায় ? নামও জানি না,তাছাড়া তার ফোন নম্বরও তো নেই। বলল জয়া ।
সঠিক সময়ে ঠিক হলের গেইটে চলে আসবে,দেখিস্ । বলল বৃষ্টি।
বিকালে হোস্টেল থেকে বের হতেই দেখে ঐ রিক্সাওযালা মুখে মাস্ক পড়া আর হাতে ব্যান্ডিজ অবস্থায় রিক্সা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
যাবে ভাই তুমি শহরে ? আমাদের নিযে পদ্মার ধারে ঘুরিয়ে আবার নিয়ে আসবে। কত নিবে শুনি।বলল জয়া।
যা হয় দিয়েন। চলুন তো।
দু‘জন রিক্সায় উঠেই বৃষ্টি বলল আজ বিকালটা পদ্মার ধার দিয়েই ঘুরাবে। সন্ধার আগেই নিয়ে আসবে হোস্টেলে ।
আচ্ছা তাই হবে । খুব কম কথা বলে রিক্সাওয়ালা।
তোমার বাড়ী কোথায় ? বাড়ীতে কে কে আছে ? বলল বৃষ্টি ।
আমার বাড়ি দিনাজপুর ঘোড়াঘাটে। মা বাবার আমি একমাত্র সন্তান। আমাদের কোন জমি জমা নাই। বাবার প্রতিদিনের রোজগারের উপর সংসার চলতো। গত বছর বাবা মারা গেছেন। তাই আমাকেই সংসার দেখতে হয় । কিন্তু দু:খের বিষয় গত কয়েক দিন হয় আমার মা ও মারা গেছেন। এখন আমি একা। আমার কেও ই নাই । নিজে রোজগার করে নিজের খরচ চালাই। বলল রিক্সাওয়ালা।
খুবই দু:খজনক ব্যাপার তো ? বলল জয়া।
পৃথিবীতে এমন মানুষও আছে ? যারা গারজিয়ান বিহীন সঠিক ভাবে সৎ পথে জীবনযাপন করে ? বলল বৃষ্টি।
সন্ধার আগেই হোস্টেল গেইটে এনে নামিয়ে দেয় রিক্সাওয়ালা ।রিক্সাওয়ালা চলে যাওয়ার সময বৃষ্টি হাত নেড়ে নেড়ে বিদায় জানায়। বৃষ্টির মনের মধ্যে কি যেন এক অজানা কথা উঁকি মারছিল।
রিক্সা থেকে নামার সময় বৃষ্টি লক্ষ্য করে তার সেই ঘনিষ্ট বন্ধু রবিন ওখানে দাঁড়িয়ে আছে। বৃষ্টির উপর রেগে আগুন হয়ে আছে বন্ধু রবিন।রবিনের আর এক বান্ধবী শিলার সাথে গল্প করছে।
রবিনের সাথে বৃষ্টির ১ম বর্ষে পরিচয় তারপর থেকেই খুব ভাব । এক সংগে প্রায়ই ঘুরাফেরা করতো।রবিন একটু বদমেজাজী। সব সময় বৃষ্টিকে তার নিজের পরামর্শমত চলতে বলতো। মনে হতো বৃষ্টি তার কত আপন জন। বৃষ্টি রবিনের চালচলন পছন্দ করতো না। রবিন ,বৃষ্টিকে ভাঙ্গিয়ে খেত সবসময়। কিন্ত এতোদিন বৃষ্টি বুঝতে পারে নাই।মাঝে মাঝে বৃষ্টিকে ব্লাকমিল করতো। বৃষ্টির করার কিছুই ছিল না। জয়া আগে থেকেই বুঝেছিল,কিন্তু বৃষ্টির মেজাজের ভয়ে কিছু বলতে সাহস করে নাই। জয়া এখনকার সমযের অপেক্ষায়ই ছিল। তাই রবিনের কৃত্তি কলাব ধীরে ধীরে বৃষ্টির কাছে সময় বুঝে ফাঁস করে দিচ্ছে।একসময় বৃষ্টি রবিন ছাড়া কিছুই বুঝতো না। বৃষ্টির মোবাইল ছিনতাই এর কথা রবিন জানে না। রবিন মনে করছে বৃষ্টি আর রবিনকে পছন্দ করছে না,অন্য কাওকে হয়ত ভালবাসছে।
রিক্সাওয়ালাকে বিদায় জানাতে দেখে রবিন রেগে আগুন হয়ে গেল।
কি ? ঘুরাফিরা হলো ? আমি বুঝি আর কারো সাথে ঘুরতে পারবো না ? এই দেখো সিঁথি.............। রবিন বৃষ্টির উদ্দেশ্যে বলল।
তুমি কিন্তু সীমা ছাড়িযে যাচ্ছো রবিন । এখন থেকে সংযত হয়ে কথা বলবে। আমি তোমার কেনা গোলাম না যে,তুমি যা বলবে আমাকে তাই শুনতে হবে?
তুমি এখন থেকে যা খুসি করতে পারো। যার সাথে খুসি ঘুরতে পারো ।রবিনকে বলল বৃষ্টি।
বৃষ্টির কথায় রবিন আরও রেগে গেল।আচ্ছা তোমাকে পরে দেখাচ্ছি। তোমার এতো ডেমাক কিসের ? রিক্সাওয়ালার সাথে প্রেম করছো তাই না ? রেগে বলল রবিন।
বৃষ্টি আর কিছু না বলে হোস্টেলের ভিতর চলে গেল।
রাতে বৃষ্টির ঘুম আসছে না । এ পাশ ওপাশ শুতে লাগল।
কি হযেছে রে তোর ? কি চিন্তা করছিস্ বৃষ্টি ? বলল জয়া।
না মানে, রবিন কিভাবে কথাগুলো বলল দেখছিস্ না । বলল বৃষ্টি।
ওর কথা বাদ দে। আর ওর কথা বলবি না। রবিনের মুখোস খুলে গিয়াছে। এটা তোর জন্য ভাল। বলল জয়া ।
প্রয়োজনে রিক্সাওয়ালার সাথে প্রেম করব,তবুও ভাল। তাও রবিনের সাথে আর কোন সম্পর্ক রাখব না।বলল বৃষ্টি ।
আমি ভাবছি রবিন তো একটা খারাপ ছেলে, না জানি তোর কি ক্ষতি করে ! বলল জয়া ।
পরদিন সকালে উঠে ক্লাসে গেল দু‘জনে।ক্লাসের ফাঁকে ক্যান্টিনে সেই রিক্সাওয়ালার সাথে দেখা।
কিন্তু ওর সাথে তো রিক্সা নেই। হাতে একটা খাতা নিয়ে ক্যান্টিনের পাশে দাঁড়িয়ে আছে। মুখে মাস্ক পড়া আর হাতের ব্যান্ডিজটা এখনো আছে।
ঐ রিক্সাওয়ালা না ? জয়া বলল।
হাঁ তাইতো মনে হচ্ছে ? চল তো দেখি ? নামটাই তো জানা হয়নি এখনো ? বৃষ্টি বলল।
কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলো,রিক্সাওয়ালা ভাই এখানে কি করছো ? তোমার নাম যেন কি? তোমার রিক্সা কোথায় ? জয়া বলল।
এমনি দাঁড়িযে আছি।রিক্সা তো সব সময় চালাই না। বিকালে কোন কোন দিন চালাই। আমার নাম প্রেম । বলল রিক্সাওয়ালা।
তোমার নামটা তো বেশ চমৎকার ?কিছু খাবে, রিক্সাওয়ালা ভাই। মাঝে মাঝে তোমার রিক্সায় আমাদেরকে নিয়ে বেড়ায়ে নিয়ে আসিও। বলল বৃষ্টি।
আচ্ছা, বলে প্রেম ওখান থেকে চলে গেল।
২/৩ দিন পর ক্যাম্পসে এক মাইকিং শুনতে পেল বৃষ্টি ও জয়া। মাইকিং করছে “আগামীকল্য বিকাল ৫.০০ ঘটিকায় মেধাবী শিক্ষার্থীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ এবং এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। সবাইকে উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে।”
মাইকিং শুনে বৃষ্টি জয়াকে বলল, আগামীকল্য অবশ্যই আমরা ঐ অনুষ্ঠানে যোগদান করব। মনটাও ভাল নেই,তাই একটু রিলাক্স দরকার।
পরদিন যথাসমযে অনুষ্ঠানে বৃষ্টি ও জয়া হাজির হলো । অনুষ্ঠানের শুরুতেই অতিথিদের আসন গ্রহনের পর একে একে বক্তব্যের মাধ্যমে বর্তমান ডিজিটাল যুগের প্রেক্ষাপট নিয়ে আলোচনা করল।
ভার্সিটির ভিসি মহোদয় মেধাবী শিক্ষার্থীদের কথা বলতে যেয়ে স্মাট ফোনের সুবিধা অসুবিধার কথা তুলে ধরলেন।যারা স্মাট ফোনের মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করে নতুন কিছু জানার চেষ্টা করছে এবং জনগনের জন্য কিছু করতে পারছে তারাই দেশের উন্নয়নে সহযোগীতা করছে। আজ তারাই মেধাবী শিক্ষার্থী হিসাবে পুরস্কৃত হচ্ছে আর যারা রাতের পর রাত জেগে লেখাপড়া বাদ দিযে বাজে ভিডিও দেখছে ,তারাই মোবাইল আসক্ত হয়ে নিজেদের সর্বনাস ডেকে আনছে। এগুলো নেশা থেকে বেরুয়ে আসতে হবে। শিক্ষক সমাজ ও অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে নইলে বর্তমান প্রজম্ম ধংসের দিকে চলে যাবে। ভবিষ্যত বাংলাদেশ অনুন্নয়নশীল দেশ হিসাবে পরিগণিত হবে।সবাইকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বজায় রেখে দেশকে এগিয়ে নিতে হবে।উপস্থিত সবাই করতালি দিয়ে ভিসি মহোদয়ের বক্তব্যকে স্বাগত জানান।
এরপর পুরস্কার প্রাপ্তদের নাম ঘোষনা করা হয়। ঘোষনা শুনে বৃষ্টি আর জয়া তো একেবারে হতবাগ।
এ যে প্রেম কুমার এর নাম বলছে ? কোন্ প্রেম কুমার রে জয়া ? বলল বৃষ্টি।
জয়া ঠাট্টা করে বলল, তোর সেই রিক্সওয়ালা প্রেম কুমার হয়ত হবে ?
না , এটা হতে পারে না । একজন রিক্সাওয়ালা কি ভার্সিটিতে পড়ে ফাস্ট ক্লাস পেতে পারে ? বলল বৃষ্টি।
বাইরে খুব বৃষ্টি হচ্ছে। ইলেকট্রিসিটি ও চলে গেছে। এর মধ্যে পুরস্কার দেয়া শুরু হয়েছে । এর মধ্যে প্রথমেই প্রেম কুমারের নাম ঘোষনা হল।
প্রেম কুমার এর নাম ঘোষনা হতেই মঞ্চে উঠে গেল সেই রিক্সাওয়ালা প্রেম কুমার। খুসিতে জয়া আর বৃষ্টি লুটিয়ে পরলো।
তারপর প্রেম কুমারকে সবার সামনে মাইকে তার প্রতিক্রিয়ার কথা বলতে বলা হল।প্রেম কুমার তার বক্তৃতায় বলতে লাগল,“কাহাকেও ছোট করে দেখার অবকাশ নাই।সৎ পথে রোজগার কোন অসম্মানীর কাজ নয়। অনেক কষ্ট করে আমি এ পযন্ত এসেছি । আমার কেও নাই। তাতে কি হয়েছে ? সবাই তো আপনারা আমার পাশে আছেন। অর্থ মানুষের প্রয়োজন আছে কিন্তু প্রয়োজনের অতিরিক্ত অর্থ অনেক সময় অনর্থের কারন হয়ে দাঁড়ায়। যা মানষকে বিপথে পরিচালিত করতে পারে। আর ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে ইন্টারনেটের বিকল্প নাই । তবে তা ভাল কাজে ব্যবহার করতে হবে।কষ্ট মানুষকে উচ্চশিখরে নিয়ে যেতে পারে যা আমি নিজেই প্রমান । আমি রিক্সা চালিয়ে লেখাপড়া করে যে সম্মানটুকু পেলাম তা হয়ত অর্থশালীরাও পাবে না। আমার একটা স্মাট ফোন ও নেই। থাকলে হয়ত ভাল বা মন্দের দিক চলে যেতাম। বেশীর ভাগ শিক্ষার্থীদের হাতেই স্মাট ফোন। আমার পরামর্শ আপনারা ইন্টারনেট ভাল কাজে লাগান। তাহলে বাংলাদেশ বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে।“ সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রেম কুমার তার বক্তব্যর সমাপ্তি করল।
সবাই করতালি দিয়ে প্রেম কুমারের বক্তব্যকে স্বাগত জানাল।
অনুষ্ঠান শেষে বৃষ্টি আর জয়া প্রেম কুমারের সাথে দেখা করল এবং অভিনন্দন জানাল।
পরদিন ক্যাম্পাসে বৃষ্টি, প্রেম কুমারের সাথে দেখা করে অতীতের ঘটনাগুলোর জন্য ক্ষমা প্রার্থণা করল। প্রেমকুমারও বিস্মিত হল,বৃষ্টির কথা বলার ভঙ্গিমা দেখে।
ঠিক আছে বৃষ্টি,ভাল থেকো,আবার পরে দেখা হবে।বলে চলে গেল প্রেমকুমার।
রাতে শুধু প্রেমকুমারের গল্প। কান ঝালাপালা হয়ে গেল জয়ার।
বৃষ্টি,তুই কি প্রেম কুমারের প্রেমে পরে গেলি নাকি রে ? জয়া বলল।
ঠিক তাই, কেন জানি ওকে ভুলতে পারছি না।দেখি কাল আবার দেখা করব। বৃষ্টি বলল।
এভাবে বৃষ্টি আর প্রেম কুমার ক্যাম্পাসে এক সংঙ্গে ঘুরাফিরা করতে লাগলো।
কিছুদিনের মধ্যেই তাদের মধ্যে বেশ ভাবের সৃষ্টি নিল।বৃষ্টি ,প্রেম কুমারকে আর রিক্সা চালাতে দেয় না। প্রেম কুমারের যা খরচ তা বৃষ্টিই চালায়।
অল্পদিনের মধ্যেই প্রেমকুমার বিদেশে উচ্চশিক্ষার অফার পেল। কিন্তু কি করবে সরকারী খরচে লেখাপড়ার সূযোগ পেলেও নিজেরও তো একটা খরচ আছে ? তা কি করে যোগার করবে প্রেম কুমার?
বিষয়টি বৃষ্টি জেনে প্রেম কুমারকে অভয় দিল,যে সব টাকা বৃষ্টি দিবে। পরে দেশে আসলে না হয় দিযে দিলেই হবে।
অবশেষে প্রেমকুমার উচ্চশিক্ষার জন্য দেশের বাইরে চলে গেল।
মোবাইলে যোগাযোগ হয় বৃষ্টির সাথে প্রেম কুমারের ।বৃষ্টির লেখাপড়া ভালই চলছে। এখন লেখাপড়ায় বেশ মনোযোগী হয়েছে বৃষ্টি।
এদিকে বৃষ্টির প্রেমিক রবিন যেন সোচ্চার হয়ে উঠেছে।ক্যাম্পাসে বৃষ্টির সাথে কথা বলতে চায় এবং সময় কাটাতে চায়। কিন্তু বৃষ্টি নারাজ।
বৃষ্টি কিছুতেই আর রবিনের ফাঁদে পা দিতে চাচ্ছে না।রবিনের মত নেশাগ্রস্থ ছেলেদের সাথে মিশেই তো বৃষ্টির জীবন তছনছ হতে যাচ্ছিল।যা বৃষ্টি হারে হারে এখন উপলব্ধি করতে পারছে।
বৃষ্টির কথায় কোন মেয়েই যেন,যেকোন ছেলেকে ভালভাবে না জেনে তার ভাল ভাল কথায় বিশ্বাস না করে।ইন্টারমেডিয়েট থেকে ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার পর পযন্ত ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যত জীবনের কোন সিদ্ধান্তই সঠিক হয় না।এই সময় আবেক বেশী কাজ করে। গারজিযানদের পরামর্শমত সবার চলা উচিৎ।রাতের পর রাত লেখাপড়া বাদ দিয়ে মোবাইলে কারো সাথে চ্যাটিং করা উচিৎ নয়।এটা একটা নেশায় পরিনত হয়,যা জীবনকে ধংসের দিকে নিয়ে যায়। জীবনটা নষ্ট হয়ে যায়।একথাগুলো বৃষ্টির জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে সবার উদ্দেশ্যে বলা।
বৃষ্টি এখন ঠিকঠাকমত লেখাপড়া করছে আর প্রেম কুমারের আসার প্রতিক্ষায় দিন গুনছে।
সৎচিন্তায় কোন প্রতিক্ষার পালার শেষে বিজয়ের মুকুটে ভুষিত হয়।কেওই বিমুখ হয় না।
লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা
ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য
গল্পে বৃষ্টির জীবনের ব্যর্থতা থেকে প্রেমের সাথে মিশে ভবিষ্যত জীবনের সুন্দর দিক ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। বৃষ্টির সংঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক এর পবিত্রতা তুলে ধরা হয়েছে।
২০ মে - ২০২০
গল্প/কবিতা:
৪৪ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪