অন্ধকারে আলোর ছোঁয়া

প্রত্যাশা (আগষ্ট ২০২২)

Dipok Kumar Bhadra
মোট ভোট ২০ প্রাপ্ত পয়েন্ট ৪.৬৩
  • ৮২
এতো কষ্ট আর সহ্য করতে পারছে না রনি। বাবা মা অসুস্থ্য। রাত হলেই বাবা খুক খুক করে কাশতে থাকে। কাশতে কাশতে অনেক সময় গলা দিয়ে রক্ত উঠে। সাড়া রাত কষ্টে চিৎকার করে। মা অনেকটা সুস্থ হলেও অন্নকষ্টে শরীরটা দূর্বল। রনি ৮ম শ্রেনী পযন্ত লেখা পড়া করে সাংসারিক অবস্থার কথা বিবেচনা করে লেখাপড়া ছেড়ে দিয়েছে। এখন প্রতিদিন মানুষের দ্বারে দ্বারে কাজের জন্য ধর্ণা দেয় । দিনমুজুর করে যা পায় তাই দিযে বাবার ঔষধ ও কোন রকমে পেট বাচানোর ব্যবস্থা করে।
এভাবে চলছিল রণির পরিবারের দিন। ছোট বেলা থেকেই রণির আশা ছিল বড় হয়ে লেখা পড়া করে কিছু একটা হবে। কিন্ত অল্প দিনের মধ্যেই সংসারের দৈন্যতার কারনে সে আশার গুড়েবালি হয়ে গেল ।
এতো অল্প বয়সে লেখাপড়া ছেড়ে দিতে হলো। দিনমুজুর করে সংসারের খরচ চালাতে হিমসীম খাচ্ছিল রনি।সকালে বাসা থেকে বের হতো কাজের সন্ধানে। কিছু না কিছু কাজ করে যা রোজগার করতো তা দিয়ে চাল,ডাল ইত্যাদি কিনে সন্ধায় বাড়ী ফিরতো।কোন কাজকেই রণি ছোট করে দেখতো না।ছোট কাজে কে কি বলবে বা বলতে পারে সেদিকে কোন খেয়াল করতো না রণি।
বাবা মাকে বাঁচাতে তার সর্বপরি চেষ্টা। রাতে শুয়ে শুয়ে ভাবতো সে একদিন বড় কিছু হবে। কিন্তু কিভাবে? তা চিন্তা করে ঠাউর করতে পারতো না।সব সময় মনে বড় আশা নিয়ে সকল কাজ করতো।
একদিন রাতে বাবা হঠাৎ দেহ ত্যাগ করেন। এতে রণি খুব ভেঙ্গে পড়লেও জীবনের হাল একেবারেই ছাড়েনি। মা কে নিয়ে অনেক কষ্টে দিনাতিপাত করতো। কোন সময় কুলির কাজ, দিনমুজুর খাটা অবশেষে রিক্সা চালানো তারপর আবার আবার ভাড়ায় অটো চালানো । এভাবে জীবন চালাতে লাগলো রণি।
একদিন একজন ভদ্রবেশী লোক এবং তার স্ত্রী অটোতে উঠল। ভাড়া যাই হোক না কেন তাদের গন্তব্যস্থলে তাড়া তাড়ি যেতে হবে। তাড়াতাড়ি যাওয়ার কথা বলে অভদ্রচিত ভাবে অটোতে উঠেই বলে,” ইস্কাটন রোডে ২২২নং বাসার ওখানে যা। তাড়াতাড়ি যাবি কিন্তু।ভদ্রলোক এবং স্ত্রী রণিকে মানুষই মনে করছে না।যেতে যেতে রণিকে অকথ্য ভাষায় গালি দিয়ে কথাবার্তা বলছে। একসময় রণি অটো থামিয়ে বলে, আপনারা এমন ভাবে কথা বলছেন কেন ? আমি কি আপনাদের কিছু বলেছি ? এভাবে আমার সাথে কথা বললে আমি আপনাদের নিয়ে যেথে পারব না। আপনারা অন্য অটো দেখেন। এই কথা বলাতে ভদ্রলোক নেমে রণিকে কিল ঘুষি মারতে লাগল। ভদ্রলোকের সংগে থাকা মহিলা পায়ের জুতা খুলে রনির মাথায় আঘাত করতে লাগল। আর বলতে লাগল,এই ছোট লোকের বাচ্চা ,মুখেমুখে তর্ক করিস্? জানিস্ আমরা কে? মেরে একদম শেষ করে দেবো।এদিকে মারের চোটে রণির মাথা ফেটে রক্ত বের হচ্ছে। এক এক অনেক লোক সেখানে জড় হলো। কিন্তু কেও রণির পক্ষে কথা বলল না। সবার ঐ ভদ্রলোকের পক্ষেই সাফাই গাচ্ছে।
ভদ্রলোক নাকি ওখানকার এক নামকরা কোম্পানির মালিক। গাড়ি নষ্ট হওয়ার কারনে আজ অটোতে যাচ্ছে।আর অটোওয়ালা এই ধনাড্ড কোম্পানির মালিকের মুখে মুখে তর্ক করছে। ছি: মান সম্মান আর থাকলো না । বলছে স্বচোক্ষে দর্শন কারীরা।ভদ্রলোক অন্য অন্যে অটোতে অফিসে চলে গেল।
আর মাথার রক্ত মুছতে মুছতে অটো নিয়ে রওনা দেয় রণি।
ডাক্তারখানা থেকে ব্যন্ডিস করে বাসায় ফেরে রণি। মা রনিরে এ অবস্থা দেখে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। রণিও মাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে কেঁদে বলতে থাকে,“ দেখে নিও মা একদিন এই বড়লোকদের আমি উপযুক্ত জবাব দিব। শুধু সময়ের ব্যাপার। ওরা আজ বড়লোক আছে,কাল তো নাও থাকতে পারে? একথা বড়লোকরা ভাবে না গরীব লোককেদেন মানুষই ভাবে না।
“ তুই কি পারবি বাবা বড় হতে? মা বললেন।
“অবশ্যই পারব মা। এটা আমার বিশ্বাস। সৎ থাকলে একদিন অবশ্যই মানুষের মত মানুষ হওয়া যায়।এই প্রত্যাশা নিয়ে আমি কাজ করে যাচ্ছি। তুমি শুধু আমার জন্য দোয়া করিও।
কয়েকদিন পর সুস্থ হলে আবারও অটো চালানো শুরু করে রণি। একদিন রাকে এক ভদ্রলোকের গাড়ী রাস্তায় নষ্ট হলে ,তিনি ড্রাইভারকে গাড়ী সাড়িয়ে বাসায় নিয়ে আসতে বলে রণির গাড়ীতে গিয়ে বসে।রণি যাথারীতি ভদ্রলোককে তাঁর বাসার সামনে নিয়ে নামিয়ে দেয়। ভাড়া পাঁচশত টাকা কিন্তু ভদ্রলোক রণিকে একখানা একহাজার টাকার নোট দিয়ে তড়িঘড়ি করে নেমে যান। রণি টাকা ফেরৎ দিতে নিলেও তিনি আর ফেরৎ নেন না। ভদ্রলোক বলেন, রেখে দাও,কাজে লাগবে।
তারপর রণি অটো নিয়ে সরাসরি বাসায় আসে। পরে দেখতে পারে ভেদ্রলোক অটোতে একটা ব্রিপকেস ফেলে রেখে গেছে।রণি তো হতভম্ব। এখন কি হবে? ভদ্রলোক কত না জানি চিন্তা করছেন?
“ বাবা খেতে আয়,মা ডাকছেন রনিকে।
“ না মা আমি আসছি। এই বলে দ্রুত রনি ভদ্রলোকের বাসার দিকে রওনা হয়।রণি গিয়ে ভদ্রলোকের বাসায় কলিং বেল চাপে।
ভদ্রলোক বের হয়ে এসে রনি হাতে তাঁরই ব্যাগ দেখে তো অবাক! এখনো পৃথিবীতে এতো ভাল মানুষ আছে? ভদ্রলোক ভাবতে থাকেন।
তারপর ভদ্রলোক বলেন, এই বাচাধন, তুমি কি জানো এই ব্যাগে কি আছে?
না তো। তাছাড়া ওটা জানার আমার কি প্রয়োজন। আপনার ব্যাগ পেয়েছেন? এবার দেখুন সব ঠিকঠাক আছে কি না।
“ আমাকে দেখতে হবে না। জানি সব ঠিকঠাকই আছে। কারণ ঐ ব্যাগে আমার পাঁচ কোটি টাকা আছে। যদি তুমি নিতে তাহলে তো আসতে না? যাক তোমার সততা আমাকে মুগ্ধ করেছে। তুমি কি আমার কোম্পনিতে কাজ করবে? আমার কেও নেই । যদি তুমি আস তবে তোমাকে আমার কোম্পনির দায়িত্ব দিতে পারি।
ধন্যবাদ স্যার। বিষয়টি আমার মা কে বলতে হবে। মা যদি সম্মতি দেন তবে আমি আবার আসব।
এই বলে রণি চলে গেল। রাতে মাকে সব কথা খুলে বলল। অতপর মায়ের সম্মতিক্রমে ঐ ভদ্রলোকের কোম্পনিতে এমডি পদে কাজ করতে লাগল।
এদিকে সেই অভদ্রলোক এবং তার স্ত্রী তাদের কোম্পনিতে লজ খেয়ে একেবারে পথে বসেছে। তারা ঠিক করল যে,তাদের তো অভিজ্ঞতা আছে যেকোন এক বড় কোম্পনিতে চাকুরী করবে।
ঘুরে ঘুরে তারা রণির কোম্পনিতে এসে ইন্টার ভিউ এর জন্য ধর্ণা দিল। অবশেষে তারা রণির সামনে ইন্টারভিউ দিতে আসলে রণি তাদের চিনে ফেলে। তারাও রণিকে চিনতে পারে। অবশেষে তারা তাদের ভুল স্বীকার করে এবং রণি মুখে তার আশা প্রতাশার কথাও জানতে পারে। মানুষের জীবন যে পরিবর্তন হতে পারে তার প্রমান রণি। রণির জীবনের প্রত্যাশা পূরণ হলো ।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

মানুষ একাগ্র চিত্তে সৎ চিন্তায় তার প্রত্যাশা পূরণ করতে পারে।রণির জীবন কাহিনী তার প্রমান।

২০ মে - ২০২০ গল্প/কবিতা: ৪৪ টি

সমন্বিত স্কোর

৪.৬৩

বিচারক স্কোরঃ ১.৬৩ / ৭.০ পাঠক স্কোরঃ ৩ / ৩.০

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "ছোটবেলা”
কবিতার বিষয় "ছোটবেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪