বাবা- মা আদর করে নাম রেখেছিলেন “ স্বাধীন“।আজ তাঁরা আর বেঁচে নেই।এখন সবকিছু হারিয়ে এখন পথকলি এক সর্বহারা শিশু। পথে পথে ঘুরে বেড়ায় স্বাধীন। সবাই তাকে টোকাই স্বাধীন হিসাবে চিনে।
টোকাই স্বাধীনের সাথে আরও কয়েকজন এতিম ছেলে আছে,তারা একসাথেই দিনরাত্রি কাটায়।স্বাধীনের অন্যান্য বন্ধুদের বাবা মার ঠিকানা না থাকলেও স্বাধীনের কিন্তু ঠিকানা আছে।তবে এখন আর কেও নেই। ঠিকানা এখন রেল লাইনের ধারে। আবার কখনও কখনও পথের ধারে গাছের নীচে।খুবই কষ্ট ওদের।
এই কি কপালে ছিল? রাতে শুয়ে শুয়ে ভাবছে স্বাধীন।বাবা মা হারিয়ে সে ফুফুর বাড়ী থাকে।ফুফুর বাড়ী থাকাকালীন স্কুলের সীমানা পেরুতে পারে নাই সে।
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের কথা এবং ১৯৭১ সালের দেশ স্বাধীনের সময় বাঙ্গালী জতির আত্মত্যাগের কথা তার অন্তরকে সবসময় নাড়া দেয়।
স্বাধীনের বাবা খুবই গরীব ছিলেন। নিজের মাথা গোজার ঠাই ছিল না বললেই চলে। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে তিনি শহীদ হয়েছেন। তখন স্বাধীন খুব ছোট। কিছুদিন পর তার মাও মারা যান। স্বাধীন দু:সম্পর্কের এক ফুফুর কাছেই বড় হয়ে উঠে। কিন্তু চুরির একটা মিথ্যা অপবাদ দিয়ে স্বাধীনকে বের করে দেয় ফুফু। তখন কি আর করবে,পথে পথে ঘুরে বেড়ায়।তবে তার ছোট বেলায় বাবা হারানোর সব কথা মনে আছে। প্রায়ই সে ঐগুলো মনে মনে ভাবে আর গর্বে বুকটা ভরে যায় তখনই যখন মনে করে বাঙ্গালী জাতির দু:সাহসের কথা।
স্বাধীন টোকাই হলেও তার স্বাধীনচেতা মন বিবেককে সব সময় নাড়া দেয়।তার বাবা ছিলেন ভাষা আন্দোলনকারী একজন যোদ্ধা। কিন্তু আজ তার জীবনে কালো ছায়া নেমে এসেছে।তার বিশ্বাস ছিল সে ভাষা শহীদের ছেলে হিসাবে মূল্যায়ন পাবে।যখন সে কোন আশ্রয় পেল না,তখন সে টোকাইয়ের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতে লাগল।স্বাধীন দেশকে খুব ভালবাসে এবং মাতৃ ভাষাকে অন্তরে লালন করে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার স্বপ্ন দেখে।
আজ শহীদ দিবস,২১শে ফেব্রয়ারী। তাই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে,মসজিদ.মন্দিরসহ সকল স্থানে ১৯৫২ সালের ভাষা শহীদদের জন্য দোয়া ও মিলাদ মাহ্ফিল হচ্ছে।
স্বাধীন তার অন্যান্য টোকাই বন্ধুদের নিয়ে একটা প্রতিষ্ঠানের অনুষ্ঠান দেখতে গেল। সেখানে শহীদদের উদ্দেশ্যে গান বাজেছে মাইকে।তারপর অনেকেই ভাষা শহীদদের উদ্দেশ্যে বক্তৃতা দিচ্ছেন। একজন ভাষা শহীদের ছেলে বলছেন,“বাঙালি জাতি যুগে যুগে অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার থেকেছে। শক্তি বলে অসম হলেও তারা ব্রিটিশদের সামনে কখনো মাথা নত করেনি। পাকিস্তানী শোষকগোষ্ঠীর দুঃশাসন,অত্যাচারে জর্জরিত বাঙালি দৃঢ়কন্ঠে অন্যায়ের প্রতিবাদ জানিয়েছে। ৫২’র হার না মানা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠা করেছে নিজেদের মাতৃভাষার অধিকার । ধীরে ধীরে দৃপ্ত পদক্ষেপে এগিয়ে গেছে স্বাধিকার আন্দোলনের দিকে।
এ সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় বাংলার মাটিকে চিরতরে স্বাধীন করার বীজ বপন করা হয় ১৯৬৬ সালের ছয় দফার দাবীর মধ্যে দিয়ে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক উত্থাপিত ছয় দফা দাবী বাঙালী জাতির স্বাধীকার আন্দোলনের ভিত্তিস্তম্ভ স্বরূপ। ছয় দফা বাঙালীর “মুক্তির সনদ”। বহুকাল থেকে অন্যায়, অবিচার ও বৈষম্যের শিকার বাঙালী জাতি “ছয় দফা দাবী” প্রস্তাবের মধ্য দিয়ে নতুন দিক নির্দেশনা পেয়েছিল।
২১ ফেব্রুয়ারি ইউনেসকোর ঘোষণার ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে। যে জনগোষ্ঠীর মাতৃভাষা বিলুপ্ত হওয়ার ভয় নেই, তারা তো ভাষাকে চিন্তা-চেতনায় রেখে নিশ্চিত জীবনযাপন করতে পারে।“
২১শে ফেব্রয়ারী শহীদ দিবস জানি,মাতৃভাষা দিবস তাও জানি। কিন্তু ইউনেসকোর ঘোষণার ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে,এ কথাটি তো জানি না?স্বাধীন বলছে অন্যান্য টোকাইদের।
টোকাইদের ভিতর বয়সে একটু বড় নাম চাঁদু। চাঁদু বলল,“হাঁ রে স্বাধীন আমি কথাটা আগেও শুনেছি।“
“তাই নাকি? তুই কোত্থেকে শুনলি?“ বলল স্বাধীন।
“কেন? আমি একজন শিক্ষিত লোকের মুখে এর গল্পটা শুনেছি।“ বলল চাঁদু।
“আচ্ছা, গল্পটা বলতে পারবি?“ বলল স্বাধীন।
“হাঁ পারব।“বলল চাঁদু।
“বলতো দেখি শুনি।“ বলল স্বাধীন।
আচ্ছা শুনো তাহলে। চাঁদু বলতে লাগল, “কানাডার ভ্যাঙ্কুভার শহরে বসবাসরত দুই বাঙালি রফিকুল ইসলাম এবং আব্দুস সালাম প্রাথমিক উদ্যোক্তা হিসেবে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণার আবেদন জানিয়েছিলেন জাতিসংঘের মহাসচিব কফি আনানের কাছে ১৯৯৮ খ্রিষ্টাব্দে। সে সময় সেক্রেটারী জেনারেলের প্রধান তথ্য কর্মচারী হিসেবে কর্মরত হাসান ফেরদৌসের নজরে এ চিঠিটি আসে। তিনি ১৯৯৮ সালের ২০ শে জানুয়ারী রফিককে অনুরোধ করেন তিনি যেন জাতিসংঘের অন্য কোন সদস্য রাষ্ট্রের কারো কাছ থেকে একই ধরনের প্রস্তাব আনার ব্যবস্থা করেন। পরে রফিক, আব্দুস সালামকে সাথে নিয়ে “মাদার ল্যাংগুয়েজ লাভার্স অফ দ্যা ওর্য়াল্ড” নামে একটি সংগঠন দাঁড় করান। এতে একজন ইংরেজিভাষী, একজন জার্মানভাষী, একজন ক্যান্টোনিজভাষী, একজন কাচ্চিভাষী সদস্য ছিলেন। তারা আবারো কফি আনানকে “এ গ্রুপ অব মাদার ল্যাংগুয়েজ অফ দ্যা ওর্য়াল্ড”-এর পক্ষ থেকে একটি চিঠি লেখেন, এবং চিঠির একটি কপি ইউএনওর কানাডীয় দূত ডেভিড ফাওলারের কাছেও প্রেরণ করা হয়।
১৯৯৯ সালে তারা জোশেফের সাথে ও পরে ইউনেস্কোর আনা মারিয়ার সাথে দেখা করেন, আনা মারিয়া পরামর্শ দেন তাদের প্রস্তাব ৫ টি সদস্য দেশ – ক্যানাডা, ভারত, হাঙ্গেরি, ফিনল্যান্ড এবং বাংলাদেশ দ্বারা আনীত হতে হবে। তারপর বাংলাদেশের বিভিন্ন কর্মকর্তা প্রস্তাবের পক্ষে সমর্থন দানে ২৯টি দেশ অনুরোধ জানাতে কাজ করেন।
১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ইউনেস্কোর প্যারিস অধিবেশনে প্রস্তাব উত্থাপন করা হয় ও এতে ১৮৮টি দেশ সমর্থন জানালে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয় এবং ২০০০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে দিবসটি জাতিসঙ্ঘের সদস্যদেশসমূহে যথাযথ মর্যাদায় পালিত হচ্ছে।
২০১০ সালের ২১ অক্টোবর বৃহস্পতিবার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৬৫তম অধিবেশনে এখন থেকে প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করবে জাতিসংঘ। - এ-সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব সর্বসম্মতভাবে পাস হয়। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনের প্রস্তাবটি সাধারণ পরিষদের ৬৫তম অধিবেশনে উত্থাপন করে বাংলাদেশ। মে মাসে ১১৩ সদস্যবিশিষ্ট জাতিসংঘের তথ্যবিষয়ক কমিটিতে প্রস্তাবটি সর্বসম্মতভাবে পাস হয়।“
আচ্ছা চাঁদু, “শহীদ দিবস আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে সারা বিশ্ব আমাদের বাঙ্গালী জাতির মূল্যায়ন করছে। তবে কি আমি এখন আমার শহীদ বাবার মূল্যায়ন দেখতে পাব? আমিও কি ভাষা শহীদের ছেলে হিসাবে মূল্যায়ন পাব? আমার কি টোকাই নামের অবসান হবে?“
“জানি না ভাই।“ বলল চাঁদু।
“হায় রে মীরজাফর জাতি! “বলল স্বাধীন।আর বিড়বিড় করে বলতে লাগল-
জাগো জাগো মোদের বিবেক,জাগো শহীদদের আত্মা।
দেখে যাও কেমন আছি,পাঠালাম লিখে বার্তা।
তোমাদের ছেলেরা কি করছে দেখবে না ?
ভাষার জন্য প্রাণ দিয়াছ ,কাঁদছে মোদের মা।
আজ বাংলা ভাষা স্বীকৃতি পেয়েছে সারা বিশ্বময়
তোমরা কিন্তু শহীদ হয়েছো,শ্রষ্টাকে করবে জয়।
শহীদদের স্মরণে পালন করছি শহীদ দিবস
মাতৃভাষা পেয়ে মোরা কাজ করছি নিরলস।
বাংলা মোদের মায়ের ভাষা,বাং লা মোদের আশা
কে আর মোদের রুখতে পারে,আ ম রি বাংলা ভাষা।
লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা
ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য
শহীদ দিবস আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে সারা বিশ্বে বাঙ্গালী জাতিকে চিরদিনের জন্য অমর করে রাখবে।ধন্য মোদের দেশ আর ধন্য মোদের ভাষা শহীদ। ধন্য মোদের ভাষা।আ ম রি বাংলা ভাষা।
২০ মে - ২০২০
গল্প/কবিতা:
৪৪ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
বিজ্ঞপ্তি
“জানুয়ারী ২০২৫” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ জানুয়ারী, ২০২৫ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।
প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী