আষাঢ় মাস । পড়ন্ত বিকালে পশ্চিম আকাশে কালো ঘন মেঘ যেন অন্ধকার করে ধেয়ে আসছে পৃথিবীর দিকে । অফিস ছুটির পর বের হয়ে সাবিনা দেখল, যে কোন সময় বৃষ্টি নামবে । তাই অফিস থেকে বের হয়ে একটু এগুতেই নামল প্রচন্ড বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়া । ছাতাও ছিল না সাবিনার কাছে । একটু এগুতেই দেখল একটা ছাউনি । নীচে গিয়ে দাঁড়াল । রাস্তা কোন লোকজন নেই । এমন কি কোন রিক্সাও নেই আশেপাশে । অঝোরে বৃষ্টি পড়ছে । বৃষ্টি থামার কোনই আলামতই নাই । চারিদিকে অন্ধকার নেমে এসেছে । কি করবে তিনি যে একা একা ।এদিকে বৃষ্টির ঝমঝম শব্দে তার মনটাও যেন কেমন করছে ।
সাবিনা সবে মাষ্টাস পাশ করে একটিা চাকুরী পেয়েছে । তাঁর পিতামাতার তিনি একমাত্র সন্তান । বাবা একটা সরকারী চাকুরী করতেন । এখন তিনি অবসরে দিন কাটাচ্ছেন । বাবার শরীর টাও তেমন ভাল যাচ্ছে না । মা গৃহীনি ।
বৃষ্টির দিনগুলো সাবিনার খুবই প্রিয় ছিল । কারন বৃষ্টির দিনে টিনের চালে বৃষ্টি পড়ার শব্দ আগে থেকেই খুব ভাল লাগতো, সাবিনার । কিন্তু এই ভাল লাগার অনুভুতি বলার কোন লোক তো তাঁর নেই ।বৃষ্টির দিনে মানুষের মনের মধ্যে জমে থাকা সব চিন্তা যেন উঁকি মারে ।সাবিনা কোন কিছু সঠিকভাবে চিন্তা করতে বৃষ্টির দিনই বেঁছে নিতেন। বাড়ীতে একা একা থাকলে এামনটি বেশী অনুভব হয় তাঁর । মনে মনে ভাবতে ভাবতে সন্ধা ঘোর হয়ে আসল । ভুলেই গিয়াছিলেন যে, ঘোর অন্ধকারে তিনি রাস্তায় একা আছেন । কিভাবে তিনি বাড়ীতে যাবেন ? একথাটিও ভুলে গিয়ে বৃষ্টির প্রেমে অধোর হয়ে নিজেকে ডুবিয়ে দিয়াছিলেন এতোক্ষণ ।
এমন সময় সাবিনা দেখতে পেলেন, একজন যুবক ছাতা মাথায় ওখানকার রাস্তা দিয়ে হেঁটে হেঁটে যাচ্ছেন ।কোন দিকে না তাকিয়ে মাথাটা নিচু করে কি যেন ভাবতে ভাবতে যাচ্ছেন । বৃষ্টির ঝনঝনানির শব্দে তাঁরও হয়তো সাবিনার মতই অবস্থা হয়েছে । এ যে ভাই, শুনছেন, এই যে দেখুন এখানে, আমি বলছি । বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে, আর মেঘের গর্জনে সব একাকার হয়ে যাচ্ছে । বৃষ্টির মধ্যে যে মানুষের মনের আমল পরিবর্তন হয় তা আজ মর্মে মর্মে উপলব্ধি করতে পারছেন সাবিনা । যাই হোক , বেশ কয়েকবার ডাক দেওয়ার পর, যুবকটি সাবিনার ডাকে সারা দিলেন এবং কাছে এগিয়ে আসলেন, বললেন, আমাকে কিছু বলছেন ?
হ্যাঁ ভাই, আপনাকেই বলছি, বললেন সাবিনা । আমি অফিস থেকে বেরুনোর পরই বৃষ্টির কবলে পড়েছি । একটা রিক্সাও পাচ্ছি না, ছাতাও নেই আমার কাছে ।হেঁটে ভিজে ভিজে যে যাব, তা-ও আমি একা যেতে পারছি না, ঘোর অন্ধকার হয়ে এসেছে , তার উপর আবার বৃষ্টি । দয়া করে ,একটা রিক্সা ডেকে দিবেন ?
যুবক বললেন , এই বৃষ্টির মধ্যে তো রিক্সা পাওয়া খুবই কঠিন । আরও একটু এগিয়ে যেতে হবে । তাহলে রিক্সা পাওয়া যেতে পারে । যদি কিছু মনে না করেন, তাহলে আমার ছাতার নীচে আসতে পারেন । সাবিনা কি আর করবেন , বৃষ্টিতে সম্পূর্ন্ শরীর ভিজে গেছে । সন্ধ্যাও ঘনিয়ে আসছে ।একটু ইতস্তত ভাবেই ছাতার নীচে আসলেন সাবিনা । দুইজন হাঁটতে হাঁটতে সামনে যেতেই একটা চায়ের ছোট দোকান দেখতে পেলেন । ইলেকট্রিসিটি নেই । তাই একটা মোমবাতি জ্বালিয়ে দোকানদার চা বানাচ্ছে ।বৃষ্টির জন্য কোন লোকজনও নেই ।
যুবকটি বললেন, চা কি হবে ?
হবে, বললেন দোকানদার ।দুইটা চা দেন দেখি, বললেন , সংগে থাকা যুবক।
সাবিনা কিছুই বলছেন না । বৃষ্টিতে ভিজে আজ কেমন জানি তাঁর মনের মধ্যে তোলপার করছে । এ যেন এক আলাদা অনুভূতি । সাবিনা মনে মনে ভাবছেন , যাকে কোনদিন দেখিনি, চিনিও না , তার সাথে একসংগে একছাতার নীচে হেঁটে আসা,তারপর নিস্তব্ধ পরিবেশে চা পান করা, তাও আবার রাত্রি বেলায় ।
তখনও বৃষ্টি হচ্ছেই।বৃষ্টি আরও জোরে নামছে।বৃষ্টির শব্দে মনটাও যেন স্থিরভাবে কোনকিছু খুঁজার চেষ্টা করছে। চা এর কাপে মুখ রাখতেই মেঘের গর্জনে মাটি কেঁপে উঠছে । তবুও মনের মধ্যে দোলা দিচ্ছে । একটা অজানা অনুভূতি শরীরে শিহরন জাগাচ্ছে ।
অনেকক্ষণ পর বৃষ্টি একটু কমলেই দুইজন উঠে পড়ল ।দেখতে পেলেন একটা রিক্সা আসছে ।
সাবিনা বললেন, “এই রিক্সা যাবে ? “ কোথায় যাবেন ম্যাডাম, “ বলল রিক্সাওয়ালা ।“
এই তো সামনেই, খামারবাড়ীর পাশ্বেই ।ঐ দিকেই যুবকটিও যাবেন ।
যাব,উঠে বসুন । বলল রিক্সাওয়ালা ।
সাবিনা বৃষ্টির মধ্যেই ছাতার নীচ থেকে এসে রিক্সায় উঠলেন ।
এদিকে বৃষ্টিতে ভিজে গেছে তাঁর সবাঙ্গ । যুবককেও বলতে হয় রিক্সায় উঠতে । কারন আর কোন রিক্সা নেই ঐখানে ।যিনি এতক্ষণ ধরে সংগে ছিলেন তাঁকে রেখে চলে যাওয়াটার সমীচীন মনে হচ্ছে না ।
এদিকে অচেনা একটা মানুষকে রিক্সায় একসংগে যাওয়াটাও কেমন দেখায়, ভাবছেন সাবিনা ।
বৃষ্টিতে ভেজা সন্ধায় মনের পরিরতন হওয়ায়, একসংগে রিক্সায় যাওয়াটাও তেমন খারাপ কিছু নয় মনে মনে ভাবছেন সাবিনা ।
আসুন রিক্সায় , আমাকে নামিয়ে দিয়ে এই রিক্সায়ই আপনি যেতে পারবেন যুবকটি কি যেন ভাবলেন, তারপর রিক্সায় এসে বসলেন ।
এতোক্ষণও ভদ্রলোকের তেমন পরিচয় নেওয়া হয়নি সাবিনার ।তাই রিক্সায় যেতে যেতে কথাবাতা বলতে লাগলেন । সাবিনার কাছে মনে হল কত দিনের পরিচিত এই যুবকটা ।
মাষ্টাস পাশ করা এই যুবকও নতুন চাকুরী পেয়েছেন ।একটা মেছে থাকেন, ইত্যাদি ইত্যাদি..................।
আলাপচারিতা শেষ হতে না হতেই সাবিনার বাসার সামনে রিক্সা এসে দাঁড়াল ।ভাড়া দিতে দিলেন না যুবকটি ।
আবার দেখা হবে, বলে চলে গেলেন যুবক ।
সাবিনা বাসায় এসে ভিজা কাপর চোপর পরিবর্তন করে নিজের কক্ষে একা একা ভাবছেন।
আজ কেন এমন লাগছে ? আমার মন কেন ঐ যুবকের কথা স্মরণ করছে বার বার । তাহলে কি বৃষ্টির কারনে মনের অজান্তেই ভিতরের চাওয়াটা বার বার উঁকি মারছে ।আমি কি............................। হতে পারে ,বৃষ্টির কারনেই মনের মধ্যে দোলা দিচ্ছে ।এভাবে ভাবছেন সাবিনা ।
আসলে বৃষ্টির শব্দে বা বৃষ্টিতে ভিজলে মনের মধ্যে প্রেমের আবির্ভাব হয় যা খেকে মানুষের মনের মধ্যে এক শিহরন জাগে । এই জাগরণ মানুষকে সকল কাজেও পবিত্র প্রেমের বন্ধনে আবদ্ধ করে ।
সুতরাং বৃষ্টির সাথে প্রেমের নিবির সম্পর্ক্ রয়েছে , যা থেকে মানুষের মনের মধ্যে এক অনুভূতির সৃষ্টি হয় । মনের আনন্দকে কাজে লাগিয়ে মানুষ জীবনে সফলতার লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে ।সাবিনার মধ্যেও ঠিক তাই ঘটেছিল ।
লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা
ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য
সাবিনার বৃষ্টিতে ভেজার সংগে তাঁর মনের পরিরতন লক্ষ্য করা গেছে। বৃষ্টির রিমঝিম শব্দে মানুষের মনে দোলা দেয় । নতুন কিছু ভাবতে শেখায় বৃষ্টি ।সব কিছু ভুলে গিয়ে বৃষ্টির তালে তালে সাবিনার মনে প্রেমের বিন্ বেজে উঠেছিল । গল্পটিতে বৃষ্টি ভেজা সন্ধ্যায় সাবিনার মনের জগতে অচেনা , অজানা একজনের আগমন বাসা বেঁধেছে যা বৃষ্টির কারনেই হয়েছে । বৃষ্টির মধ্যে প্রেমের আলিঙ্গন ফুঁটে উঠেছে এই গল্পে ।বৃষ্টি আর প্রেমের যে নিগুর সম্পর্ক্ রয়েছে তা এই গল্পের মধ্যে প্রতিফলন ঘটানো হয়েছে ।
২০ মে - ২০২০
গল্প/কবিতা:
৪৪ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪