বলা হয় মৃত্যু আর প্রেম কখনো বলে কয়ে আসেনা। হুট করেই চলে আসে। আর যখন আসে তখন প্রেমিকের মনে একটা অকৃত্রিম ছায়া ফেলে যায়। কখনো কখনো সেই মনে বপন করে যায় অনুনয়ের বীজ। সেই বীজ থেকে ক্ষুদ্র অঙ্কুর জন্মায় দুটো প্রেমিক মনে, দেহে জাগায় শিহরণ আর মস্তিষ্কে লক্ষ লক্ষ তরঙ্গ অবলীলায় ছুটে বেড়ায় বহুদূর সীমানায়। তবে খুব অল্প সংখ্যক প্রেমিক জুটিরই মনের ক্ষুদ্র অঙ্কুরটা বৃক্ষ হতে পারে। কেননা প্রেমের সীমানায় সমুদ্র পাড়ি দিতে দিতে অনেকেরই অঙ্কুরটা দুমড়ে মুচড়ে যায় ।......
আধ্যাত্মিক বা অস্বাভাবিক ঘটনায় পূর্ণ এই পৃথিবী। তবে এই পৃথিবীর মানুষ গুলো সেই সব আধ্যাত্মিকতা মানিয়ে নিতে পারেনা। আজ থেকে প্রায় কয়েক বছর আগের গল্প বলছি তোমায়, জানো তো আমার মাত্র তের বছর বয়সেই প্রথম প্যানিক অ্যাটাক এসেছিলো। আমি তখন খুব ছোট। আমি কিছু আধ্যাত্মিক স্বপ্ন দেখে মানসিক ভাবে আহত হতে শুরু করি। সেগুলো সম্পূর্ণই ছিল সত্যিকার অনুভূতি, যা কখনো বিশ্বাস করার মত নয়।......
বলতে বলতেই দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে নক্ষত্র। তার খুব আসক্তি স্বপ্ন দেখার। তবে কেউ তাকে বোঝাতে পারছেনা যে তার ঘুমের স্বপ্ন ঘুম ভাঙলেই সমাপ্ত এর কোনও বাস্তব রূপ রেখা নেই। খুব মনোযোগ দিয়ে শুনতে থাকে ছেলেটা। কোনও বিরক্তি নেই , নেই কোনও অনীহা। এই মেয়েটার প্রতি তার অমায়িক টান। এই টানের কোনও কারণ সে জানেনা। নক্ষত্রের সাথে নভর প্রথম দেখা হয়েছিলো ঢাকা রেসিডেনশিয়াল মডেল কলেজে অনুষ্ঠিত বিজ্ঞান মেলায়। মনে হয়েছিলো অশরীরী আওভানে সে নিজেকে সামলে নিতে নিতে হেরে যাচ্ছে। খুব খাটাখাটনি করে নভ বিজ্ঞান মেলায় অংশ নিয়েছিল, সঙ্গে আরও দুই সহপাঠী। সেদিন প্রথম সে দেখেছিল নক্ষত্রকে। আজো তার দুই নয়নে দিনটি স্পষ্ট। তাদের স্টলের সামনে থেকে অবলীলায় আনমনে হেঁটে যাওয়া একটি মেয়ে, এক হাতে ছোট বোনে হাত। নভ একটা আওভানের আওয়াজ তুলেছিল। থমকে গিয়েছিলো মেয়েটা। সেখান থেকেই শুরু...মাত্র দুই মিনিট কথা আর মনে হচ্ছিলো যুগ যুগ ধরে পরিচয়। মেয়েটার দিকে তাকিয়ে নভ কোনও কথা বলতে পারছিলনা। এভাবে আওয়াজ তুলে থামানোর জবাবে মেয়েটাও কিছু না বলে একটা প্রশ্ন সূচক শব্দ করেছিল। মেয়েটির ইউনিফর্ম দেখে ছেলেটা বলেছিল " আমরা তো একই প্রতিষ্ঠানের ছাত্র। " কোনও জবাব দেয়না মেয়েটা, কি-ই বা বলবে সে? কেবল এক মৃদু হাসিতে যেন কত কথা বলে গিয়েছিলো নভ-র কানে-কানে। তবে ব্যাপার টা সেদিনই মিটে যায়নি। মেয়েটা এসেছিলো তার ছোট বোনের অংশগ্রহন দেখতে, তবে নিজে অংশ নিয়েছিল কৌতূহল বশত। কেউ কি তাদের বলে দিয়েছিল এই খানে এভাবে প্রথম তাদের দেখা হবে?...
মেয়েটা আবারও বলতে শুরু করে তার স্বপ্নের গল্প।... একদিন দেখেছিলাম কেউ একজন আমাকে নিয়ে যেতে এসেছে, বলছে তার সঙ্গে যেতে। সে যেতে থাকে আমিও তার পাশে। স্পষ্ট মনে পরে দেখেছিলাম তার দুটো হাত, কেমন যেন অন্য রকম। সামনা সামনি দেখলেও চিনে ফেলতে পারবো এমন স্পষ্ট মনে আছে। তারপর স্বপ্নটা ওখানেই শেষ। কিন্তু আমি জানি সেই স্বপ্নে ছেলেটা আমাকে তার দুটো হাত চিনিয়ে দিতেই এসেছিলো। ...
অন্য কেউ হলে হয়তো এতক্ষনে হেসে তামাশা করে দিত এই অর্থহীন স্বপ্ন গুলোর। তবে নভো ভিন্ন, নক্ষত্রের প্রতিটা কথাই তার কাছে অমৃত বার্তা যা সে কোনও দিন অবহেলা করতে পারেনা। একটা আকাশ কি পারে তার সূর্য-গ্রহানুকে অবহেলা করতে?... মনে পরে যায় নভর, কিছুদিন আগে নক্ষত্র বলেছিল পাঁচ বছর আগে সে স্বপ্নে একটা ভিন্নরকম গাছের পাতা দেখেছিলো। পাতাটায় চারটি মুখ ছিল আর দেখেছিল সেই স্বপ্নে দেখা ছেলেটাই তাকে সে চার মুখো পাতা উপহার দিচ্ছে। নক্ষত্র বুঝতে পারে বাস্তব জীবনেও এই পাতাটি সেই ছেলেটিকে খুঁজে পাওয়ার এক ইঙ্গিত। সেদিনের পর থেকে সেই তুচ্ছ পাতা পাঁচ বছর ধরেই নাকি নক্ষত্র খুঁজে ফিরে, কাওকে জানানো বাকি নেই, হারানো শিশুর মত খুঁজে চলেছে। তবে অবাক করা বিষয়টা হল নভ কে স্বপ্নটা বলার পরের দিনই রাস্তার পাশে নতুন গজানো এক গাছের গোঁড়ায় সেই পাতার গাছ দেখে চিৎকার করে উঠেছিলো মেয়েটা। নভ নিজ হাতে গোঁড়া সহ তুলে দিয়েছিল সেই পাতার গাছ। নক্ষত্র যতটা বিমোহিত হল তার চেয়ে বেশি প্রশ্ন বিদ্ধ হয়েছিলো। নভ কিভাবে কেবল মাত্র এক দিনেই .........
স্বপ্নের গল্প গুলো শুনতে শুনতে নভর ধীরে ধীরে আগ্রহ বাড়তে থাকে। আর নক্ষত্র ও তার তুচ্ছ জীবনের অস্বাভাবিক কথা বলার এক সঙ্গি পেয়ে যায়। তাদের দেখা হতে থাকে যেকোনো শিক্ষামূলক আয়জনে, অনুস্থানে বা কলেজ শেষে বাড়ি ফেরার পথটায়। তাদের আলাপন দাগ কাটতে থাকে দুটি বাড়ন্ত বয়সী মনে। নক্ষত্র যখন প্রথম নভকে দেখেছিল খুব অনীহা ছিল ছেলেটির প্রতি। তবে পরদিন ছেলেটি তাকে যোগাযোগের নম্বর দিয়েছিল। ক্লান্ত মনে হাঁটার সময় কখন যে নম্বরের টুকরো কাগজটা হাত থেকে পরে গিয়েছিলো খেয়ালই করেনি সে। তবে নভ অপেক্ষার সীমা রাখেনি, তার কাছে একেকটা দিন মনে হতে থাকে একেকটা প্রভাত ভঙ্গ। মনে হতে থাকে যেন হাতে পাওয়া একটি স্পর্শ তাকে ছাড়িয়ে খুব দূরে চলে গিয়েছে। নিজেকে কেমন অশান্ত , অবহেলিত মনে হতে থাকে তার। মেয়েটা কি অহংকারী? এতোটা?
প্রায় আটটি দিন কেটে যায়, নভ মেয়েটার ক্লাসের এক সহপাঠীর সহযোগিতায় নক্ষত্রকে খোঁজ করে। নক্ষত্র বুঝতে পারেনা কার কথা বলছে, তবে হঠাৎ করেই তার চোখ ভিজে যায়। অজানা এই অশ্রুর কারণ খুঁজতে না পেয়ে সে পথ ধরে। ছেলেটার চেহারা তার চোখে স্পষ্ট। তার মনে পরে সেদিন কাগজটা পথেই পরে গিয়েছিলো। কিভাবে সে যোগাযোগ করবে? বাড়ি ফিরে মায়ের সাথে কথা গুলো বলার পর ক্লান্ত শরীরে শুয়ে পরে। নিজেই বিড়বিড় করে বলতে থাকে; "এই ছেলেটা আমার স্বপ্নের ছেলে না, আমার স্বপ্নের পুরুষ আমার জন্য বড় দেয়াল ঘড়ির নিচে দাড়িয়ে খবরের কাগজ হাতে অপেক্ষা করবে, আমি স্বপ্নে দেখেছি।" কেউ বুঝেনা মেয়েটার এসব কথার অর্থ, কেউ যাচাই করেনা সত্যতা। তবে প্রকৃতি শিক্ষা দিয়ে যায় মানুষ কে প্রতিনিয়ত। ঘুম ভাঙ্গার পর কলেজের ব্যাগ থেকে বই বের করতে গিয়ে চমকে উঠে নক্ষত্র। হাতে তুলে নেয় সেই দিনের সেই টুকরো কাগজ আর সেই অপরিচিত ছেলেটির হাতের আবছা লেখা। মেয়েটা তার মনের সব কৌতূহল মেটাতে নম্বরটায় চেষ্টা করে আর শুনতে পায় এক মলিন, দুঃখী কণ্ঠ। পরিচয় পর্ব কিংবা কোনও ভূমিকা প্রয়োজন হয়না তাদের, মেয়েটা কথা বলে বুঝতে পারল এক জাতীয় পর্যায়ে বিজ্ঞান মেলায় যেন নক্ষত্র অংশ নেয় সেই কথা বলতেই ছেলেটা নম্বর দিয়েছিল। আর বলেছিল আর একটি দিন পরে ফোন করলেই নিবন্ধনের তারিখ সমাপ্ত হয়ে যেত। পরদিন বিস্তারিত জানতে ছেলেটির সাথে কলেজে দেখা করবে সে, খুব জর দেখিয়ে বলেছিল নক্ষত্র "আমার অপেক্ষা করা পছন্দ না, ঠিক ৯ টায় "। ফোন রেখে মেঝেতে বসে পরে মেয়েটা। এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে সে দুই বছর চেষ্টা করেছিল তবে আশানুরূপ কিছু হয়নি। এবার সে এই ছেলেটির মাধ্যমে জানতে পারল?...
পরদিন দ্বিতীয় ক্লাসের পর ঠিক ৯ টায় মেয়েটা কলেজ লাইব্রেরীতে যেতে নিলেই ঘটতে থাকে একেক ঘটনা। হঠাৎ করেই একটি মেয়ে অসুস্থ হয়ে পরে, তাকে ঘিরে কিছু সময় পার করার পর একজন শিক্ষক তাকে ডেকে পাঠায়, ফিরে এসে সে যেন ভুলেই গেলো ছেলেটার কথা। এমন সময় ঘড়ির দিকে চোখ পরে মেয়েটার। এগারোটা !!! খুব দেরি হয়েছে তার, এমন তো কখনো হয়নি, কেউতো কখনো তার জন্য অপেক্ষায় থাকেনি, ছেলেটা নিশ্চয়ই এতক্ষনে চলে যাবে। ভাবতে ভাবতে লাইব্রেরীতে পৌঁছে দেখল বদরাগী লিব্রারিয়ানের মুখো মুখী থাকা বড় দেয়াল ঘড়ির সামনে দাড়িয়ে খবরের কাগজ পড়তে পড়তে ছেলেটা অপেক্ষা করছে। অবিশ্বাস্য! সেদিন কোনও কথা আর হলনা। বদরাগী স্যারের চিৎকারে মেয়েটা কিছু বলতে পারেনি। তবে চোখে চোখে কত কথা বলেছিল তার হিসেব কারো কাছে নেই। মায়ের কাছে সব খুলে বলার সময় মা একবার বলেছিল ছেলেটার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিতে......
নভর জীবনে সব থেকে শিহরণ সৃষ্টি কারী দিন ছিল যখন এতো সময় প্রথম বারের মত সে অপেক্ষা করেছিল এমন কারো জন্য যে তার কেবল একদিনের ছবি। এতক্ষণ অপেক্ষার পর এসে এভাবে চলে যাওয়ায় সে ভীষণ রকম আঘাত পায়, মেয়েটাকে প্রথম দিনের পরিচয়ে তো খুব ভালই মনে হয়েছিলো। তবে কেন এমন করল, ভাবতে ভাবতে নভ এগিয়ে যেতে থাকে পথ ধরে। এমন সময় তার ফোনটা বেজে ওঠে। সেই অনাকাঙ্ক্ষিত মানুষটি ! হুট করেই যেন মাথা থেকে সমস্ত অভিমান, রাগ, প্রশ্ন মুছে যায়। ফোনটা ধরে কথা বলতে গিয়ে মেয়েটাকে খুব আপন মনে হতে থাকে তার। মেয়েটা ক্ষমা চাইছে তার কাছে। এতো বিনয়ী, এতো করুনা, এতো স্নেহের কণ্ঠ কিভাবে একটি মেয়ের মাঝে এতদিন আড়াল হয়ে ছিল ? ......
নক্ষত্র জাতীয় পর্যায়ে বিজ্ঞান মেলায় অংশ নিয়েছিল। মাত্র তিন দিনের এই অনুষ্ঠানে তাদের বন্ধুত্ব নতুন মোড় নিতে শুরু করে। সম্পূর্ণ কলেজে কেবল তাদের দুটো প্রকল্প ধারনাই বাচাই করা হয়েছে। ফলাফলে নভ প্রথম আর নক্ষত্র দ্বিতীয়। নক্ষত্র ভাবতে থাকে সেদিন নভ না জানালে এই জাতীয় মর্যাদা কোনোদিন সে পেত না। তার চোখে কৃতজ্ঞতার ছায়ায় লিখেছিল নভর নাম। এর পর থেকেই তাদের বন্ধুত্ব শুরু হয়েছিলো। একের পর এক স্বপ্ন বলা, স্বপ্ন গুলো নভর সাথে সত্যি হতে দেখা এগুলো সব কিছুই তো কাকতালীয় হতে পারেনা। নভ কি উদ্দেশে এসেছে তার জীবনে কেউ কি বলতে পারেনা?...
কলেজে এক ভিন্ন নাম হতে শুরু করে তাদের। একের পর এক পুরুস্কার অর্জন প্রতিষ্ঠানের নামটিও গৌরবের তালিকায় নিয়ে আসে। শিক্ষকদের তাদের প্রতি আশা জন্মায়। আর তারাও ধীরে ধীরে যে কোনও জায়গায় জুটি বেঁধে যাওয়া আরম্ভ করে।
ছেলেটার এক পক্ষের প্রেম তার মনে অসমাপ্ত তাড়না সৃষ্টি করে, তারা জানতে থাকে একে অন্যের ভালো মন্দ। ছেলেটির প্রশান্ত মনে এখন একটা সমুদ্র আছে। সেই সমুদ্র কেবলই একটি মেয়ের জন্য। মেয়েটা যে স্বপ্নের কথা বলতো সেগুলোর ব্যাখ্যা খুঁজতে শুরু করে সে। কৌতূহলের প্রবৃদ্ধ রূপ তাকে ঘিরে রাখে। এতো অল্প বয়সে নাকি প্রেম হয়না। তবে কবি মন বলে ওঠে প্রেমের কোনও বয়স থাকেনা। তাদের দুজনেরই আসক্তি বাড়তে থাকে। তবে মাঝখানে এক দেয়াল অনিশ্চয়তা। কি হবে এরপর? মেয়েটার মনে সেই স্বপ্ন রাজের অপেক্ষা, কবে আসবে সে? সে কি এসে গিয়েছে? এই ছেলেটিই কি তবে সেই ছেলেটি? ভাবতে পারে না আর সে। তার চারপাশের পৃথিবীটা কেমন দুলে ওঠে। কাঁপতে কাঁপতে তার দেহটা নিথর হয়ে পরে যায় মেঝে তে।......
তের বছর বয়সের পর আজ পাঁচটি বছর পর মেয়েটি আবারও প্যানিক অ্যাটাক করেছে। ডাক্তাররা বলেছেন তার যে সমস্যা সেটা এক বিশেষ মস্তিস্কের শক্তি যার কারনে ভবিষ্যতের বিশেষ ইন্ডিকেশন তার ব্রেন ওয়েভ রিসিভ করছে ঘুম বা যেকোনো অবচেতন সময়ে এটা হতে পারে যা সে গ্রহনের সময় আঘাত পাচ্ছে। এটা কোনও রোগ নয়। প্রতি হাজারে একজন এমন আছেই। তবে যে বস্তু বা ব্যক্তি সে স্বপ্নে দেখে টা বাস্তবে পেলেই সেই সব স্বপ্ন দেখা বন্ধ হবে অর্থাৎ ইন্ডিকেশন ওয়েভ আর আসবেনা।...
হাসপাতালের বিছানায় মেয়েটির পরিবারের সাথে ছেলেটাও অপেক্ষার দিন গুনছে। মাঝে মাঝে মেয়েটার বাসায় ও যেতে হচ্ছে তাকে বিভিন্ন প্রয়োজনে। একদিন ক্লান্ত শরীরে মেয়েটির বাড়িতে কিছু আজগুবি বইয়ের সারিতে একটা কালো বিবর্ণ ডায়েরি খুঁজে পায় ছেলেটা। বেশ কয়েক বছর পুরনো। মেয়েটা তাকে যেসব স্বপ্নের কথা বলেছিল তার সবই আছে, তবে বাড়তি কথা হিসেবে ছিল কিছু কাব্য কথা, কয়েকটা পাতায় ছিল নভ কে নিয়ে তার প্রশ্ন গুলো। যেদিন মেয়েটা হাসপাতালে গেলো সেদিন শেষ এই ডায়েরিতে লিখেছিল; "কেন স্বপ্ন রাজের সব কিছু নভর সাথে মিলে যায়? তবে আমি জানি আমার স্বপ্ন রাজ কে আমি তার দুটো হাত দেখেই চিনে নিতে পারবো!"
নভর কেমন যেন হিংসা হতে থাকে সেই কখনো না দেখা অবাস্তব সেই স্বপ্নের ছেলেটার সাথে। সে ভাবতে থাকে কেমন করে একটা মেয়ে এতো অল্প বয়স থেকেই এসব স্বপ্ন দেখছে? সে কি এসব স্বপ্ন অনুযায়ী চলবে? তার জন্য যে নভর মনে কত আবেদন কত আকুতি কখনই কি বুঝবেনা? কখনো কি জানবেনা? ডায়েরির শেষ বাক্যে লেখা ছিল ; "তুই স্বপ্নে এসে কিছু না বলে, না চেয়ে মন ছুঁয়ে ফেলেছিস, তোর নাম দিলাম নিষ্পাপ"...।
হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে থাকা নিথর শরীরটা নিয়ে সব পরিক্ষা শেষ। মেয়েটার জ্ঞান না ফিরলে কিভাবে মেনে নিবে নভ? কিভাবে? কি হবে তার? মেয়েটা এতো স্বার্থপর কেন? কেন ঘুমিয়ে আছে? ইনজেকশনের বারো ঘণ্টা পরে মেয়েটার জ্ঞান ফিরে। প্রায় তিন দিন সে এখানে। নভর চোখে মুখে উচ্ছাস। জ্ঞান ফিরে মেয়েটা সবার দিকে চোখ বুলালো। এরপর চোখ বুজে বিড়বিড় করে বলল আবারও একটা স্বপ্ন দেখেছি, এই স্বপ্নে আমি চিৎকার করে তাকে বলেছি তুমি বাস্তবে কেন আসনা? জবাবে সে বলল "যা আছে সব বাস্তবে"। নভ থমকে দাড়ায়। নক্ষত্র চোখ মেলে জিজ্ঞেস করে নভকে এর অর্থ কি? নভ আড়ালে চোখ মুছে নেয়, আর ফুলহাতা সার্টের হাতের কাপড়টা ভাজ দিতে দিতে তার অসস্থি প্রকাশ করে।
থমকে যায় নক্ষত্রের দুটো চোখ; নভর হাত দুটো দেখে অপলক তাকিয়ে নক্ষত্র সীমাহীন আলোড়নে ডুব দেয়...
আপনাদের দেওয়া হৃদয় ছোঁয়া বিষয়টি হল "কষ্ট" । কষ্ট সামঞ্জস্য সৃষ্টি করতে জানে যেকোনো মানুষের জীবনের গল্পে। কারণ, বলা হয়ে থাকে প্রতিটি মানুষের চোখে এক একটি আকাশ থাকে। যদি চোখে আকাশ না থাকতো তাহলে চোখে বৃষ্টি কি করে হতো? তাই প্রতিটি জীবনের গল্পেই কষ্ট লুকানো থাকে।
আমার লেখা গল্পটাও জীবনের সার্থকতার পরিধিতে আজকের বিষয়ের সাথে সামঞ্জস্য পূর্ণ ।