প্রক্সি

বৃষ্টি ও প্রেম (সেপ্টেম্বর ২০২০)

স্বপন চক্রবর্তী
  • ৬০৮
আজও লেট । অন্তরা আরো একটু সরে আসে ভেতরের দিকে। দোকানের একেবারে সামনেটা থেকেই শোকেস শুরু। তাই দোকানে ওঠার জো নেই। ফুটপাতে দাঁড়িয়ে সাটারএর কভারটার নিচে যতটুকু বাঁচানো যায়। বৃষ্টিটা আবার মুষুলধারে নামলো। যত বিরক্তি বাড়ছে, তত রাগ বাড়ছে অনিকের ওপর। আসার কথা সাড়ে পাঁচটা, এখন সাড়েছটা বাজতে চললো। অনিকের এই লেটটা অভ্যেসে দাঁড়িয়ে গেছে, রোজ নিজেই টাইম দেবে আর লেট্ করবে। আসুক আজ, একটা হেস্ত নেস্ত করতেই হবে। রাগের গোড়ায় সার ও জল দিয়ে একটু মাটিটা খুঁচিয়ে দিলো অন্তরা।
"দিদি কটা বাজে" - ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলো অন্তরা, একটা ডেঁপো ছেলে ওর মুখের দিকেই তাকিয়ে - যেন ঘড়িতো নয় মুখটা দেখবো বলেই ডাকলাম।
"ছটা পঁচিশ" - বলেই উল্টো দিকে আর একটু ঘুরলো অন্তরা। এসবই অনিকের জন্য, এখনো দেখা নেই। রাগে কান দুটো ঝা ঝা করছে।
"একটু সরে দাঁড়াবেন"- বলে প্রায় গায়ের ওপরেই উঠে পড়ছিলো ছেলেটা।
অনিক, মুখে সেই বত্রিশ পাটি অলআউট হাসিটা।
চোখ দিয়ে যতটা সম্ভব আগুনের হলকা বের করেই হাঁটা শুরু করলো অন্তরা। অনিকও পেছন পেছন। রাগ আর বৃষ্টি হাঁটার স্পীডটা বাড়িয়ে দিয়েছে, অনিক মাঝে মাঝে হালকা দৌড়ে নিচ্ছে সমান সমান থাকতে। বৃষ্টিটা মুষুলধারে হচ্ছে না কিন্তু ভেজার জন্য যথেষ্ট। হাটতে হাটতেই বললো অন্তরা " তুমিতো পাঁচ মিনিট অ্যাডভান্স।"
"এই ধূর, তুমি ইয়ার্কি মারছো, এখনতো ছটা পঁচিশ বাজে। " অনিক গদো গদো, রাগ ভাঙানোর চেষ্টায়।
"তোমার ঘড়ি চলছে ?" অন্তরা রাগ আর বিদ্রুপের ঝলকানির ঝাপ্টা মারলো আবার।
"বৃষ্টিতে ভিজলে তো রাগ ঠান্ডা হবার কথা" অনিক চেষ্টা চালিয়ে যায় সামলানোর "আচ্ছা আমাদের পৌঁছতে হবে কোথায় ? মানে গন্তব্যস্থল আর কি,,, "
"এই তো বাস স্টপে, পৌঁছে গেছি প্রায়। " কঠিন গলায় বললো অন্তরা ।
কিছুক্ষন চুপ চাপ। সাধারণত এই সময় অনিক শুধু অনুসরণ করে, বিস্ফোরণের কোনো সুযোগ দিতে চায় না।
বাস স্টপে পৌঁছে দাঁড়িয়ে পড়লো অন্তরা। বৃষ্টিটা ধরেছে এখন। অনিক ওর পেছনেই দাঁড়িয়ে বোঝার চেষ্টা করছে কি হতে চলেছে। আর থাকতে না পেরে জিজ্ঞেস করেই ফেললো " আমরা কোথায় যাচ্ছি?"
"আমরা নয় আমি! আমি বাড়ি যাচ্ছি।" আবার আগের স্বর অন্তরার।
"না মানে আমি যে তোমার সাথে সাথেই এলাম। " আর কোনো ভনিতা নয়,এবার সত্যিই অনুনয়, বুঝতে পারছে ব্যাপারটা সিরিয়াস হয়ে গেছে।
"আমি তো তোমায় আস্তে বলিনি। " অন্তরা আরো গম্ভীর " আমার বাস আসছে।" অন্তরা সত্যি সত্যি বাসে ওঠার জন্য সামনে এগোলো ,পেছনে থেকে অনিক বোঝানোর চেষ্টা করছে,পাবলিক প্লেস, যতটা করা যায়, বাদবাকিদের চোখ কান বাঁচিয়ে।
সেদিন বাসে উঠেই পড়েছিল অন্তরা, বাসের জানলা দিয়ে অনিকের করুন মুখটা অন্তরাকে ভাঙতে থাকে দুটো টুকরোতে। একপাশে দলা পাকানো কষ্ট, মন করছে এখুনি ছুটে গিয়ে পেছন থেকে বলে ওঠে - কি হয়েছেতো, আর করবে লেট। তারপর অনিকের মুখের সেই পাল্টানোটা,সেই উপচে ওঠা হাসিটা আবার ফিরুক, সত্যি এতটা না করলেও হতো। অন্য টুকরোতে তখনও জমা রাগ। যা হয়েছে ঠিকই আছে, এতটা উদাসীনতা ঠিক নয়। যদি একটু বদলায় আজকের পর।

বইয়ের পাতাটায় পেজ মার্কারটা গুঁজে দিয়ে,বইটা বন্ধ করলো সরমা। চশমাটা খুলে টেবিলে রাখলো। বাইরে খুব বৃষ্টি হচ্ছে। সেই দুপুর থেকেই কালো মেঘ করে দফায় দফায় বৃষ্টি আসছে। আজ আর বোধহয় আসবে না পূর্ণিমা।
ওর এই একটাই দোষ, হরদম কামাই। কিন্তু অনেক পুরোনো আর বিশ্বাসী, নয়তো একলা ঘরে সরমার পক্ষে সব দেখেশুনে সামলে রাখা বেশ কঠিন। আজকাল যা সব হচ্ছে, কাগজ খুললেই - "ফ্ল্যাটে ডাকাতি পরিচারিকার যোগসাজোগ " নয়তো " খুন করে সর্বস্ব লুট বাড়ির পরিচারিকা গ্রেপ্তার " তার চেয়ে বাবা কামাই করুক ।
দেখতে দেখতে তিন বছর হয়ে এলো প্রায়, এই একলা জীবন। টিভি দেখতে কোনোদিনও তেমন টান অনুভব করেনি সরমা । একটা সময় পর্যন্ত ছিল চিরসঙ্গী মোবাইল, কিন্তু মে মাসের এক তারিখের পর ফোন করতে বা কল রিসিভ করা ছাড়া মোবাইল টেবিলেই পরে থাকে।
একটাই ছেলে দুবাইতে। বৌ বাচ্চা নিয়ে ওখানেই রয়েছে। তাও তো হবে আট-ন বছর। বছরে একবারই দেশে আসে, পুজোর সময়। সরমা কয়েকবার গেছে দুবাইতে, ওদের ফ্ল্যাটে। বেশিদিন থাকতে ইচ্ছা করেনি। কেমন যেন সব মিথ্যে, সাজানো, মলের ভেতর বরফের ছোট্ট এক টুকরো জমি, সেখানেই বাচ্ছাগুলো খুঁজে নিচ্ছে আনন্দ, খুশি। এটাই ওদের ছেলেবেলার স্মৃতি। মনে মনে হেসেছিলো সরমা, মায়াও হচ্ছিলো।
রাতে আর কিছু খেতে ইচ্ছে করছে না। শরীরটাও বড্ডো ক্লান্ত লাগছে , কেমন ম্যাজম্যাজ করছে । একটু জল খেয়ে আবার চেয়ারে হেলেন দিয়ে বইটা তুলে নিলো , খুললো না।
দীপেশের ছবিটার দিকে চোখ গেলো সরমার। এই গল্পের অনিক আর দীপেশের মধ্যে একটা অদ্ভুত মিল আছে,এটা কি কাকতালীয় নাকি সবকিছুতেই আজকাল দীপেশকে খুঁজে বেড়াচ্ছে বলে এটা মনে হচ্ছে।
কিন্তু দীপেশও এমন ছিল, লেট্ করতো আর এক এক দিন নতুন নতুন বাহানা।
প্রথম দিনটার কথা আজও বেশ মনে আছে সরমার। ওর তখন ক্লাস টুয়েলভ আর দীপেশ সবে ইঞ্জিনিয়ারিং-এর ফার্স্ট ইয়ার। পনেরো মিনিট লেট্। দীপেশ আসতেই কেঁদে ফেলেছিলো সরমা। লজ্জা, ভয়, নাকি প্রথম দেখা হওয়ার উত্তেজনা । ঠিক কারণটা কখনোই খুঁজে পায়নি, পরে মনে হয়েছিল ব্যাপারটা একদম বাচ্ছাদের মতো হয়ে গেছিলো।
তবে প্রথম দেখা হওয়ার উত্তেজনাটা একেবারেই অন্যরকম। হাতে একটা চিরকুট পেয়েছিলো বন্ধু মারফত। তখন তো আর মোবাইল ছিল না এতো, যে হোয়াটসআপ বা ফোনে রিহের্সাল দিয়ে একটু সড়গড় হওয়া যাবে। ওটাই ছিল আসল অভিযান, যেটা আগের সাত দিন থেকে জমতে শুরু করে পরের সাত দিন পর্যন্ত থাকতো ।
দীপেশ লেট করে কোনো হীনমন্যতায় ভুগতো না। উল্টে সরমাকে বলতো " দেখো হাতের পাঁচটা আঙ্গুল কি সমান ? তাইতো এদের আলাদা আলাদা করে চেনা যায়। আমি বিলম্ব করেছি বলেই তুমি সময়নিষ্ঠ। "
দীপেশ কথা বলতে শুরু করলেই, সরমার কেমন যেন গুলিয়ে যেত সব কিছু। সরমা পাল্টা বলতো " ঠিক আছে, কাল থেকে আমি আরো লেট করবো।"
"তাহলে তো তুমি আমাকেই ফলো করছো। তোমার নিজস্বতা কোথায়।" খুব স্বাভাবিক ভাবেই বলতো দীপেশ।
একটু পর সরমা যখন বিষয়টা থেকে অন্য কিছুতে চলে গেছে, তখন সরমাকে থামিয়ে, একটু সময় নিয়ে সেই ফাজলামো।
"কি কেমন দিলাম বোলো "
আসলে দীপেশ ছিল একমুঠো খোলা বাতাস। বিয়ের পরও যতটুকু পেয়েছে, শুধু হুল্লোড় করে গেছে। বেশিরভাগটাই তো বাইরে বাইরে। শেষ বেলায় যখন একসাথে থাকার কথা, তখনি চলে গেলো, সারা জীবন দেরিতে আসা লোকটা যাবার বেলা আগে চলে গেলো।
ছবিটার দিকে আবার চোখ চলে যায় সরমার, কি স্বতঃস্ফূর্ত হাসি। মনে মনে নিশ্চই বলছে - কি কেমন দিলাম বোলো ….
চোখের কোনটা ঝাপসা হতে হতে কিছুটা জল গড়িয়ে নিচে নেমে এলো। প্রথম চার পাঁচ মাস প্রচুর কেঁদেছে, এখন ধীরে ধীরে বুঝতে পেরেছে সময়ের আগে কিছু হবার নয়। ছটফট করতে পারে, হাত পা ছুড়তে পারে কিন্তু অপেক্ষা করতেই হবে।
একটা দীর্ঘশ্বাস নিজে থেকেই পথ খুঁজে বেরিয়ে এলো। গাটাও মনে হচ্ছে গরম গরম লাগছে , জ্বর আসবে নাকি কেজানে, কি রে বাবা করোনা হলো নাতো আবার ? নিজে থেকেই হেসে ওঠে সুরমা। কে আছে যে তাকে গিয়ে বলবে বা দেখাবে। তবে ছেলে অনেক চেষ্টা করেছিল নিজের কাছে নিয়ে যেতে, বউটাও ভারী মিষ্টি, সেও কম বলে নি, কিন্তু সরমা যায়নি। প্রথম প্রথম হয়তো ঠিক থাকবে কিন্তু তারপর, পাঁচটা আঙ্গুল তো সমান নয়, ভিন্ন ভিন্ন মন, ভিন্ন ভিন্ন মত, তারপর সংঘাত। তার চেয়ে এই ভালো দূরে থাকলে ভালোবাসাটা বেঁচে থাকে,আকর্ষণটাও থাকে।
শেষ বেলায় আর কারুর বোঝা বাড়িয়ে কি হবে। তারপর খিটি মিটি, একবার শুরু হলেই বাড়তে থাকে। এইতো বেশ আছে।
কিন্তু জ্বর হলে দেখার লোক থাকে না। সত্যি দীপেশ থাকলে এতক্ষনে ওর কোলে মাথা রেখে অনায়াসে ঘুমিয়ে পড়তে পারতো । যদি ঘুম না আসতো, দীপেশকে বলতো একটু চুলে বিলি কেটে দিতে।
প্রচন্ড মিস করে দীপেশকে ।
আবার বইটা খুলে ধরে সরমা । চশমাটা পড়ে ইতস্তত আগের পাতাগুলো ওল্টাতে ওল্টাতে হঠাৎ একজায়গায় থমকে যায় চোখ।
"পনেরোই আগস্ট আজ কোনো ডাক্তার পাওয়া যাবে না, তার ওপর এতো রাত । "
উত্তেজিত হয়ে সরমা পেছনের দিকে কয়েকটা পাতা ওল্টায়।
আজ পনেরোই আগস্ট। ছুটির দিন। যদিও ওদের এখনতো রোজই ছুটি, তবুও একটা বিশেষ দিন তো। অন্তরা ভাবলো অনিককে একটু সারপ্রাইস দেবে। অনিকের হাই কলেস্টেরল লেভেল ধরাপড়ার পর থেকে, বাড়িতে ভাজাভুজি একেবারেই বন্ধ। মশলা যতটা না দিলে নয়। তবে একদিন একটু অন্যরকম করা যেতেই পারে। পনেরোই অগাস্ট উদযাপন। একদিন একটু আধটু অনিয়ম করলে কিছু হবে না।
খাবার টেবিলে লুচি আর পায়েস দেখে অনিক বাচ্ছাদের মতো লাফিয়ে উঠলো
"আজি এ প্রভাতে লুচির ঝড়,
কেমনে আসিল থালার উপর,
কেমনে পশিল মুখগহ্বরে লুচি বেষ্টিত পরমান্ন,
না জানি কেন রে এতদিন পরে পড়ান কহিল ধন্য ধন্য…… "
"থাক থাক খাওয়ার সময় আর রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে টানা টানি করতে হবে না, বিষম লেগে যাবে।" অনিককে আলত আদুরে ধমকে থামিয়ে দেয় অন্তরা।
"এই দেখলে দেখলে কেমন করে তুমি দমিয়ে দিচ্ছ, স্বাধীনতা দিবসে বাক স্বাধীনতাও নেই। " কপট রাগ দেখায় অনিক।
"দেখেছো আজ সূর্য ওঠেনি। " যেন সূর্য না ওঠার একটা গুরুত্বপূর্ণ কারণ বলবে অনিক এইবার।
অন্তরা দেখলো সত্যি আকাশ বেশ মেঘলা, খেতে খেতে চোখেই জিজ্জেস করলো কারণ।
অনিক একটা গোল ফুলকো মতন লুচি তুলে বললো "এই দেখো কাজে ফাঁকি দিয়ে ঘুরতে বেরিয়েছ। "
এসব ফাজলামো দেখে দেখে অন্তরা অভ্যস্ত, তাই কোনো সারা না করেই খেয়ে চললো।
এবার অনিক আসল কোথায় এলো "সূর্য যদি পারে আমরা পারিনা কেন, চলো তবে আজ হৈ চৈ - টই টই সারাদিন । খাওয়া দাওয়া বাইরেই হবে। "
"না না খাওয়া দাওয়া বাইরে না বাড়িতেই। এমনিতে সকালে লুচি আবার বাইরের খাওয়া। অতটা হবে না।" অন্তরা একটু শাসনের সুরেই বাধা দেয়।
" বেশ, বাড়িতে খাওয়া কিন্তু বাইরে রান্না। " অনিক আজ যেন দিনটাকে অন্যরকম করেই ছাড়বে।
অন্তরাও আজ একটু অন্যরকম কাটাতে চাইছিলো। বড্ডো একঘেয়ে হয়ে যাচ্ছে জীবনটা। অন্তরার সম্মতি পেয়ে অনিক বলে ওঠে " তবে আজ রান্নার লোককে বলে দাও ছুটি। আমরা এখন বেরিয়ে যাবো, সারাদিন বাইরে কিন্তু খাবার নিয়ে এসে রাত্রে বাড়িতে গল্প করতে করতে, সেই পুরোনো দিনগুলোর মতো, অনেক রাত পর্যন্ত খাবার টেবিলে।"
"কিন্তু তোমার শরীর ……" অন্তরাকে থামিয়ে দেয় অনিক। "একটা দিন তো নিজেদের মতো করে বাঁচি।" আর কিছু বলতে পারে না অন্তরা।
এতো সেই পনেরোই অগাস্ট দিনটাই ফিরে আসছে, শুধু সরমা আর দীপেশের জায়গায় অনিক আর অন্তরা , সেই লুচি পায়েস, সেই কবিতা,সেই একই আবদার অনিকের । যেন প্রক্সি দিয়ে যাচ্ছে বইটা। সরমা দু তিনটে পাতা উল্টে সামনের দিকে যায়। এইতো সেই রাত এইতো ………
খাবার টেবিলে অনেক রাত হয়ে গেলো, প্রায় দেড়টা। অন্তরা তারা দিলো "এবার ওঠো, সকাল থেকে অনেক হয়েছে, ওষুধটা খেয়ে বসো, আমি একটু গুছিয়ে নিয়ে আসছি। "
উঠতে গিয়ে হটাৎ বসে পড়লো অনিক। "কি হলো আবার " অন্তরা এগিয়ে এলো।
" বুকের কাছটা ব্যথা করছে হটাৎ, বোধহয় গ্যাসের ব্যাথা হবে। আজ অনেক উল্টোপাল্টা খাওয়া হয়েছে তো। "
"আজ সকালে তুমি ওষুধ খেয়েছিলে ?" অন্তরা আঁতকে উঠলো।
অনিককে চুপ করে থাকতে দেখে ঝাজিয়ে বললো "যেটা আমি দেখবো না সেটাই হবে না, আজকে একটু রান্নাঘরে ঢুকেছি অমনি গোলমাল, তোমার কি কোনো দায়িত্ব নেই। "
"এতো টেনশন করছো কেন, গ্যাসের ব্যাথা এখুনি ঠিক হয়ে যাবে।" অনিক উঠে হাত ধুতে ধুতে বললো " আর দায়িত্ব ? তোমার দায়িত্ব আমার, তালে তুমি যে যে দায়িত্ব নিচ্ছ সেগুলো তো আমিও নিচ্ছি। " হাসতে গিয়েও অনিকের মুখটা যন্ত্রনায় বেঁকে গেলো।
মুখ থেকে একটা অস্ফুট আওয়াজ বেরিয়ে এলো যেন। আবার স্বাভাবিক হবার আপ্রাণ চেষ্টা করছে, মুখে বললো " আমাকে একটু ধরোতো, বিছানায় যাবো। মাথাটা কেমন ঘুরে গেলো মনে হয়ে। "
অনিককে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে, মোবাইলে রিং করতে করতে, নিজেকে নিজেই বললো "পনেরোই আগস্ট আজ কোনো ডাক্তার পাওয়া যাবে না, তার ওপর এতো রাত । "
অন্তরা অনিকের কাছে এসে বসলো। রাত দুটো পনেরো । পাশের ফ্ল্যাটে কাউকে ডাকবে ? এখন এতো রাতে কাকে ডাকতে যাবে ? এইতো তিনটে রিং করলো, ওপাশ থেকে কোনো সারা নেই। অন্তরার হাত পা অবশ হয়ে আসছে কি ? না না শুধু শুধু এসব ভাবছে, যত সব আজে বাজে চিন্তা।
অনিক হাতটা বাড়িয়ে অন্তরার হাতটা ধরলো। হটাৎ অন্তরার মনে পড়ে যায় অনিককে ডাক্তার প্রেস্ক্রিপশানের শেষে একটা ওষুধ লিখে দিয়েছিলো, বলেছিলো হার্ট এটাক বা এরকম কোনো এমার্জেসি হলে নিতে। অন্তরা জিজ্ঞেস করে অনিককে “ তুমি কি প্রেস্ক্রিপশানের শেষের ওষুধটা নিয়েছিলে ? কোথায় সেটা ?”
" চিন্তা করো না, হার্ট এটাক নয়। আমার হার্টএ তুমি আছো, এখানে এটাক করবে এতো সাহস কার। " অনিককের হাসিটা পুরোপুরি বেরোতে পারছে না, কোথাও যেন খুব কষ্ট হচ্ছে।
অন্তরা বুজতে পারছে কিছু একটা অঘটন ঘটতে যাচ্ছে, নিজের ওপরেই রাগ হয়ে অন্তরার, কেন মনে করে ওষুধটা নেয়নি ? আজকেই বা এতো বাড়াবাড়ির কি দরকার ছিল ?
অনিকের মুখটার সামনে মুখ নিয়ে গিয়ে অন্তরা বলে ওঠে " দেখো তুমি কিন্তু বলেছো আমার সাথেই থাকবে , সারা জীবন পাশে থাকবে বলেছিলে।..…..
"ও মাসিমা , মাসিমা …. ও মাসিমা " সরমার ঘুমটা ভেঙে যায়। পূর্ণিমা ডাকছে। "কি গো এই অবেলায় এমন করে ঘুমোয় নাকি, ওই জন্যই তো কি সব স্বপ্ন দেখছিলে আর গো গো করতেছিল। "
পূর্ণিমার কাছে একটা চাবি থাকে। সরমা ঘড়ি দেখলো রাত আটটা বাজে। পূর্ণিমা কখন এসেছে টেরই পাই নি , চশমাটা টেবিলেই রয়েছে, বইটা হাতে ধরেই কখন গুমিয়ে পড়েছিল।
পূর্ণিমা বললো " কি খাবে কিছুই তো বললে না, তুমিতো অঘোরে ঘুমুচ্ছিলে, আমিও আর ডাকিনি। ডাল ভাত আর সকালের পোনা মাছের তরকারিটা গরম করে দিয়েছি , রাতটা চালিয়ে নাও , সকালে এসে দেখবোখন । যা বৃষ্টি বাপ্ রে বাপ্। "
এবার মনে পড়তেই হাত বাড়িয়ে চশমাটা টেবিল থেকে নিলো সরমা, চোখে পড়ে বইটা খুললো, পেজ মার্কারটা সেই আগের জায়গায় গোজা রয়েছে। এবার বইটা ওল্টাতে শুরু করে সরমা, তন্ন তন্ন করে খুঁজতে থাকে সেই পাতাগুলো……..পনেরোই আগস্ট-এর প্রক্সি দেওয়া পাতাগুলো।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
ফয়জুল মহী দারুণ এক লেখা ।
ভালো লাগেনি ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে ফয়জুল ভাই

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

গল্পটিতে দীপেশএর ভালোবাসা সরমার স্মৃতির ঘরে বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ে, কখনো সেই বৃষ্টি দেখা যায় চোখের কোন বেয়ে গড়িয়ে পড়তে, কখনো নিঃশব্দে ঝরে যায় মুষলধারা বৃষ্টি ........অনেক গভীরে প্রেম ও বৃষ্টি মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় সরমার হৃদমাঝারে।

১২ মে - ২০২০ গল্প/কবিতা: ৭ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "নগ্নতা”
কবিতার বিষয় "নগ্নতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ মে,২০২৪