বৃদ্ধাবাসে জানলা ধরে ঝাপসা চোখ দাঁড়িয়ে একা,
টালমাটাল দুখানি পা, আসে যদি মায়ের খোকা।
এটাই করে লালন পালন, টিমটিমে এক বাঁচার নেশা,
ভিতর ঘরে বইছে স্মৃতি, তরঙ্গিণী খরস্রোতা।
মায়ের মন- আসবে খোকা, শুন্য পথে দুচোখ পাতা,
আগের মতো জাপটে গলা, ভিজিয়ে দেবে আদিখ্যেতা।
জানলা বেয়ে পথ চলে যায়, গাছের সারি পাশ কাটিয়ে,
হয়তো খোকন ব্যস্ত ভীষণ, সন-তারিখের হিসেবে নিয়ে।
ছেলেটাও তো ছোট এখন সামলানো কি মুখের কথা,
আগে তো খুব দুষ্টু ছিল, কতরকম বায়না যে তার।
খাবার পাতে নিজের হাতে, একটা যদি দানা কাটে,
হাতে ধরে খাইয়ে দিলে, তবেই না ভাত মুখে ওঠে।
ঠিক হয়েছে বাবার মতো,ওরও ছিল এক ঝামেলা,
ভাত নিয়ে থাকবে বসে , নিজে তাও মেখে খাবেনা।
স্কুল পেরিয়ে কলেজ যখন, তখনও সেই এক বাহানা,
মা মেখে খাইয়ে দিলে তার নাকি স্বাদ আলাদা।
গাড়ি, বাড়ি,আধুনিকতা, ঢেকে রাখে সেসব কথা।
ঢাকা থাকে আঙ্গুল ধরে, টলোমলো হাঁটতে শেখা,
ঢাকা থাকে মায়ের আঁচল, জড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়া,
ঢাকা থাকে সেসব কথা, ঋণভার পাহাড়চুড়া।
ভিজে চোখে স্মৃতির ঘরে, ঘুরে যায় মা একলা,
দিবানিশি মন বিনুনি, নাতি আর ছেলে,বৌমা।
এমনি করে দিনের শেষে, সন্ধে নামে পাড়ায় পাড়ায়,
গাছের সারি ফিফিসিয়ে, আর্তনাদের গল্প শোনায়,
বৃদ্ধাবাসে চাদরগুলো, মনখারাপের বালিশ পাতে,
নিঃশব্দে কান্না গেলার, মন্ত্র শেখায় চুপকথাকে।
ন-মাস থেকে শুরু, যে মা তার প্রতিটা মুহূর্ত হাসিমুখে নিজেকে নিঃশেষ করে, নিজের সবটুকু ভালোবাসা,স্নেহ,মমতা দিয়ে বড় করে তুললো তার সন্তানকে,নিজের আঁচল দিয়ে মুছিয়ে দিলো তার সব কষ্ট, নিজের আয়ুর বিনিময় ঈশ্বরের কাছে প্রাথনা করলো সন্তানের পরমায়ু, নিজের অন্তর দিয়ে আশীর্বাদ করলো তার সাফল্য, সেই মাকেই যখন শেষ বয়সে ছুড়ে ফেলে দেয় সন্তান, তার কষ্টের তুলনা করা আমার সাধ্য নয়।
অভিশাপ নয় সেই মা কিন্তু তখনও বলে - ওদের ভালো হোক।