(১) জায়গাটা বেশ নির্জন। চারিদিকে খুব বেশি লোক নেই। এসময়ে এখানে লোকজন থাকেও না। সন্ধ্যার পর কিছু শেয়ালের আনাগোনা হয়। শেয়ালের অবশ্য দোষ দেয়া যায় না। মুরগি যদি নিজেই নিজেকে বিলিয়ে দেয়, শেয়ালের তো দোষ দেয়া যায় না। শেয়াল তো আসবেই। সৌর জানে, এই জাইগাটা তার জন্য সুবিধার না। অন্তত তার বাবার সন্মানের জন্য তো নয়ই। তার বাবা একজন নাম করা ব্যবসায়ী। এসব জাগায় যদি কেউ সৌরকে দেখে ফেলে তবে তা বেশ অপমানজনক হয়ে উঠবে।
সৌর পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করল। তার কাছে একটা ঠিকানা আসে। টিকিট বাড়ি। এলাকার সবচেয়ে বড় পতিতালয়। সাধারনত সারা জেলা বা দূর-দূরান্তের গ্রামের মেয়েদের প্রথমে এই বাড়িতেই আনা হয়। এখানে নিশ্চয় কোনো না কোনো নারী-পাচারকারীর দেখা পাওয়া যাবেই। সৌর তাদের জন্য অপেক্ষা করছে। রামলাল নামের এক ডিলার তাকে এই ঠিকানা দিয়েছিল। সৌর কখনো ভাবতেই পারে নি তাকে এমন এক নোংরা জাগায় আসতে হতে পারে ! ঠিকানার নিচে একটা নাম্বর আছে। সৌর এখনো পর্যন্ত দুইবার কল করেছে। দুইবারই কোনো এক সুমধুর কন্ঠের মেয়ে ধরেছে। কোনো এক অজানা ভয়ে সৌর কথা বলতে পারছে না। অথচ এই সৌর নামের ছেলেই চেয়েছিল, অন্তত একতা অন্ধকারের মেয়েকে আলোতে আনতে। কিন্তু এখন …?
(২) মেয়েটির আসল নাম সৌর কখনো জানতে পারবে, এরূপ আসা সে ছেড়েই দিয়েছিলো। অথচ এই মেয়েটির সাথে সে টিকিট বাড়ির এক ঘরে শুধু ঐ এক রাত না, মাঝে মাঝেই থাকতো। তার মাঝে মাঝে মনে হয়, সে কোনো নরকে নয়; এক স্বর্গে বসে কোনো স্বর্গের পরীকে দেখছে। মেয়েটিকে দেখে সে করুনা অনুভব করল। মনে মনে সে তাকে একটা নামও দিল। মেঘা।
ঘটনা এখানেই শেষ হতে পারতো। কিন্তু সৌরতো প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। সেই প্রতিজ্ঞার শিকার হতে হল, সৌরের। নিয়মিত যাতায়ত শুরু করল সৌর। প্রথমদিকে, মেয়েটিকে উদ্ধার করার জন্য গেলেও এখন সে মেয়েটিকে ভালোবাসটে শুরু করেছে। সমাজ এটাকে কোন দৃষ্টিতে নেবে তা নিয়ে সৌরর কোনো মাথা ব্যাথা নেই। একদিন, টিকিট বাড়ির সামনে হটাৎ রামলালের সাথে দেখা হয়ে যায়।
রামলাল- কী বাবু, আপনি দেখছি মাঝে মাঝেই এখানে আসছেন। বিষয় কী?
সৌর- না, মানে আমি… আমি আসলে…
- থাক বাবু, বুঝতে পেরেছি। এই নরকের কীটগুলোকে স্বর্গের পরী লাগছে তো?
- এসব কি আবোল-তাবোল বলছেন?
- আচ্ছা বাবু, শুনলাম আপনি নাকি নিয়মিতই একটা মেয়ের সাথে দেখা করতে আসছেন? ঘটনা কী? এসব মেয়েরা কিন্তু ভালো না।
- আমি জানি। আমি যার সাথে দেখা করি, তার দেহ নোংরা হতে পারে কিন্তু মনটা কাঁচের মতো পরিষ্কার।
- ঐ ভাঙ্গা কাঁচে হাত কাটবেন না। মেঘা হচ্ছে এই পল্লীতে সবচেয়ে বিপদজনক মেয়ে। যে একবার তার ফাঁদে পা পড়েছে, সে আর সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ফেরত যেতে পারেনি।
- মেঘা? মেয়েটার নাম মেঘা?
- হ্যাঁ। মেঘা আমার নিজের মেয়ে।
সৌর হতবাক হয়ে গেল। একজন বাবা কি করে তার নিজের মেয়েকে দেহ ব্যাবসার মতো নিচ আর নোংরা কাজে নামাতে পারে? কিন্তু রামলালের পরের কথা শুনে সৌর শুধু হতবাক হয়নি, তার জীবনটা এলোমেলো হয়ে যায়। বেশ্যা জেনেও সৌর যে মেয়েকে ভালোবেসেছে, সে বেশ্যা হয়েছে রামলালের ব্যাবসায়িক চাপে। আর সেই চাপ প্রয়োগকারী আর কেউ না, সে সৌরের বাবা…